টাঙ্গুয়ার হাওর
বর্ষাকালে বাংলাদেশের সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান
অপূর্ব জলপ্রপাত ও পর্বতমালা থেকে শুরু করে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে সমুদ্র সৈকত, ভ্রমণপিপাসুরা বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় খুঁজে পাবেন প্রকৃতির উদারতা। আর যদি বর্ষাকালে বাংলাদেশের সেরা ভ্রমণ স্থানগুলো খুঁজে বের করতে হয়, তাহলে বলতে হবে বর্ষাস্নাত বাংলাদেশ আরো বেশি মনোরম, মনোমুগ্ধকর এবং আবেদনময়ী। বৃষ্টির দিনে জানালা থেকে হাত বাড়িয়ে হালকা বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করা সর্বাঙ্গে নৈসর্গিক শিহরণ জাগায়। তবে জাদুকরী ঋতুটিকে পুরোপুরি উপভোগ করতে হলে পা ফেলতে হবে ঘরের বাইরে। চলুন, জেনে নেয়া যাক বর্ষণমুখর দিনে ভ্রমণের জন্য দারুণ কয়েকটি জায়গা সম্পর্কে।
বর্ষাকালে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, সিলেট
সিলেট থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে রাতারগুলের এই ডুবে যাওয়া বনে রয়েছে প্রায় ৭০-এর বেশি প্রজাতির গাছপালা এবং প্রাণী।
বর্ষাকালে ভারত থেকে অত্যধিক পানি নদী দিয়ে প্রবেশ করলে বনের সাথে যুক্ত গোয়াইন নদী প্লাবিত হয়। আর তখনি বনটি তার স্বর্গীয় সৌন্দর্য্যে জীবন্ত হয়ে ওঠে। বনের পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং গাছের ছাউনি ছাতার মতো বনকে ঢেকে দেয়। এ সময় নৌকায় করে নদী পেরোনোর সময় পাখির কিচিরমিচির ও পাতায় বৃষ্টির পানি পড়ার মৃদু শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়।
সিলেট শহরের খাদিম চা বাগান ও খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে অল্প সময়ে শ্রীঙ্গি ব্রিজ অথবা জাফলং গামী যে কোন গাড়িতে করে সারিঘাট হয়ে গোয়াইনঘাট বাজার। রাতারগুল জলাবন ঘোরার জন্য শ্রীঙ্গি ব্রিজ বা গোয়াইনঘাট বাজার থেকে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়।
পড়ুন: ভ্রমণের উপকারিতা: দেশ বিদেশ ভ্রমণ আপনার মধ্যে কি পরিবর্তন আনতে পারে?
টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ
বর্ষাকালে শুধু সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সেই আদিম প্রাকৃতিক দৃশ্যই নয়; একটি হাওরের আরও অনেক কিছু দেয়ার আছে। পূর্ণিমার রূপালী মোহাবিষ্ট নৌকার ছাদে কাটানো একটি রাতের কথা কল্পনাতেও ভালো লাগা ছড়িয়ে দেয়। বৃষ্টির পর ত্বকে চাঁদের আলো মেখে আকাশের বিশালতার নীচে শুয়ে থাকার অনুভূতি অতুলনীয়। আর হাওরের গভীরে ঢুকতে শুরু করলে আপনার যান্ত্রিক জীবনের সমস্ত তাড়াহুড়ো জলের গুঞ্জনের মাঝে নিমেষেই হারিয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জ থেকে সুরমা নদীর উপর বড় ব্রীজটির কাছেই পাওয়া যায় তাহিরপুরের গাড়ি। আর তাহিরপুরের নৌকা ঘাটে অপেক্ষা করে টাঙ্গুয়ার হাওর বেড়ানোর নৌকা।
পড়ুন: সিলেট শহরের দর্শনীয় স্থান: অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক নগরী
বিছানাকান্দি, সিলেট
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের মতো সিলেটের বিছানাকান্দিতেও বর্ষা মৌসুমে ফুল ফোটে। মেঘালয়ের সেভেন সিস্টার থেকে নেমে আসা স্রোত বিছানাকান্দিকে পাহাড়, জলপ্রপাত এবং নদীর মিলনে পরিণত করে। এই জায়গাটির বিশেষত্ব হল এর মনোরম খাসিয়া পর্বতগুলো। সেগুলো এতই উঁচু যে মাঝে মাঝে পাহাড়ের চূড়া ছুঁয়ে মেঘ দেখতে পাওয়া যায়। বর্ষায় পানির বিশাল স্রোত ঝরনা হয়ে হ্রদ তৈরি করে পিয়াইন নদীর সাথে সংযুক্ত হয় যার দৃশ্য সত্যিকার অর্থে নেশা ধরিয়ে দেয় যখন।
বিছানাকান্দি ভ্রমণে প্রথমে সিলেটের আম্বরখানা থেকে হাদারপার যেতে হবে। এখানকার নৌকা ঘাটের নৌকাগুলোই বিছানাকান্দি নিয়ে যায়। তবে জায়গাটি ষোল আনা উপভোগ করতে সবাই বিছানাকান্দি ও পান্থুমাইয়ের জন্য একত্রে নৌকা ভাড়া করে নেয়।
পড়ুন: ঢাকার কাছেই প্রকৃতির মাঝে ক্যাম্পিং সাইট
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন, খুলনা
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হওয়ায় প্রতিটি প্রকৃতিপ্রেমি নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এই অপার প্রাচুর্যে। সবুজের সতেজতায় ভিজিয়ে রাখা ছাড়াও সুন্দরবন ছোট ছোট দ্বীপে পরিপূর্ণ যেগুলো সারা দিন উপভোগ করা যায়, বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময়। ঘন বনের মধ্য দিয়ে হাঁটার ক্ষেত্রে হিরন পয়েন্ট, বা নীলকোমল, সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান।
একটু সময়সাপেক্ষ হলেও, সুন্দরবন পৌছানোর জন্য স্টিমার হয়ে প্রথমে খুলনা যাত্রাটি গ্রামবাংলার মনোরম প্যানোরামার অনুভূতি দিবে। খুলনা থেকে সুন্দরবনে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নৌ পরিবহন। এক্ষেত্রে বন পরিদর্শন করার জন্য একটি ব্যক্তিগত মোটর লঞ্চ বা স্পিডবোট ভাড়া করা যেতে পারে।
পড়ুন: ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ গাইড: দর্শনীয় স্থান সমূহ, খরচ
জাফলং, সিলেট
বাংলাদেশের এই সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ওপারে আছে ভারতের ডাওকি। ডাওকি নদী পাহাড় থেকে জাফলং হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাফলংয়ের বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়িয়ে ভারতের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী দেখা যায়।
এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রপাত এক মনোরম দৃশ্যের অবতারণা করে। এছাড়া ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুও পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। বর্ষার সময় ভারতীয় সীমান্তে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সর্পিলাকার ডাওকি নদী যেন তার প্রাণশক্তি ফিরে পায়। ডাওকি নদীর পানির স্বচ্ছতাও জাফলংয়ের অন্যতম আকর্ষণ।
ঢাকা থেকে সিলেট পৌছার পর শহর থেকে বাসে বা সিএনজি অটোরিকশায় দুই ঘন্টার মধ্যেই জাফলং যাওয়া যায়।
পড়ুন: ঘুরে আসুন মালদ্বীপ: অপরূপ এক দ্বীপদেশ ভ্রমণ গাইড
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পটুয়াখালি
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতটি পর্যটকদের কাছে সমুদ্র কন্যা নামে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই দেখা যায়।
এখানকার পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণগুলো হচ্ছে ৩৬-ফুট লম্বা সোনার বৌদ্ধ মূর্তি, শুটকি পল্লী, ফাতরার চর, লাল কাঁকড়ার দ্বীপ এবং মনোমুগ্ধকর মায়ামী গঙ্গামতির চর। এছাড়া যে কুয়ার নামে এই শহরের নামকরণ সেই ঐতিহাসিক কুয়া দেখতেও ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় জমান।
পূর্বে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে প্রায় ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা লাগলেও, পদ্মা সেতু হওয়ার পর এই সময়টা কমে নেমে এসেছে প্রায় ৫ ঘন্টায়। তাই এখন কুয়াকাটাকে আরো অভিজাত করে সাজানো হচ্ছে পর্যটকদের জন্য।
পড়ুন: হিমাচল, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান ও খরচ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার
১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতটি মুলত শীতকালে দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু যারা এর বর্ষাকালের রূপ দেখেননি তারা জীবনে দারুণ কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সামনে অবিরাম নীল জলরাশির সাথে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মিথস্ক্রিয়ার কোন কিছুর সাথে তুলনা চলে না।
আর অবিরাম বর্ষণ ভেজা হাওয়ার পূর্ণতা দিয়ে এক অদ্ভূত মুগ্ধতা সৃষ্টি করে। স্নান, সূর্যস্নান, সাঁতার কাটা এবং সার্ফিংয়ের জন্য সমুদ্র সৈকতের নিজস্ব জনপ্রিয়তা রয়েছে। নিরালায় এই সুন্দরের স্বাদ নিতে অনেকেই এই অফপিক সময়টাকেই বেছে নেন।
ঢাকা থেকে সড়ক কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পৌছাতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা, যেখানে আকাশপথে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা।
পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা ১০টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা, জলপ্রপাত কোথায়? কীভাবে যাবেন?
শ্রীমঙ্গল চা-বাগান, মৌলভীবাজার
বিপুল সংখ্যক চা বাগান এবং সাত রঙের চায়ের উৎপত্তির কারণে মৌলভীবাজারের এই উপজেলাটিকে বলা হয় বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী। শ্রীমঙ্গলের প্রবেশ পথেই স্বাগত জানাবে সাতগাঁও চা-বাগানের সহায়তায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের তৈরি চা-কন্যা ভাস্কর্য।
চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই)-এর ভেতরে দক্ষিণ দিকে পড়বে ফিনলের চা-বাগান। ভানুগাছের পথ ধরে সামনে এগোলেই দেখা যাবে জেরিন টি-এস্টেট। তারপর লাউয়াছড়ার কিছু আগেই জঙ্গলঘেরা পথে হাটলে পাওয়া যাবে নূরজাহান টি-এস্টেটের।
শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কমলগঞ্জ যাওয়ার পথে পড়বে লাউয়াছড়ার মনোরম উদ্যান। কমলগঞ্জ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ঘেরা চা-বাগানের মধ্যে চোখে পড়বে সুবিশাল মাধবপুর লেক। মাধবপুর লেক থেকে ধলাই সীমান্ত পর্যন্ত চলে যাওয়া পথের দুপাশে শুধুই চা-বাগান।
সিলেটের বিমান বন্দর, রেলওয়ে বা বাস ষ্টেশন থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে অনায়াসেই শ্রীমঙ্গল যাওয়া যাবে। গাড়ি রিজার্ভ করে চা-বাগানগুলো ঘুরে দেখা যেতে পারে।
পড়ুন: কলকাতা ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার উপায় ও খরচ
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, সিলেট
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর সিলেটের উত্তর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে, এটি সিলেটের বৃহত্তম পাথর উত্তোলন স্থান। এই দর্শনীয় স্থানটির প্রধান আকর্ষণ হলো- মেঘালয়ের মেঘ, পাহাড়ী ঝরনা, এবং ধোলাইয়ের বালুকাময় উপকূল।
বর্ষার পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা সাদা পাথরগুলো ধলাই নদের বুকে মিশে ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে ভোলাগঞ্জ যাওয়ার সড়কের অবস্থা খুব একটা আরামদায়ক নয়। সিলেট সদরের যে কোন স্থান থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা প্রাইভেট কারে করে পৌছা যায় প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের ভোলাগঞ্জে।
পড়ুন: সিলেট শহরের দর্শনীয় স্থান: অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক নগরী
নীলাচল, বান্দরবান
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সুদূর সমুদ্রের স্পর্শ থেকে শুরু করে গাছপালা ও পাখির কিচিরমিচিরে পরিপূর্ণ এই প্রকল্পটি ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়েছিল। এই পর্যটন কেন্দ্রটি এত উচ্চতায় অবস্থিত যে, এর সৌন্দর্য আকাশের বিশালতাকেও হার মানায়।
নীলাচলে পর্যটকদের সুবিধার্থে ছোট-বড় অনেক রেস্ট হাউস রয়েছে। আর শিশুদের খেলার জন্যও রয়েছে আকর্ষণীয় ব্যবস্থা। নামের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিটি বিশ্রামাগারের রংও করা হয়েছে নীল। বর্ষায় ভেজা প্রকৃতির মায়া বিমোহিত করবে বৃষ্টিভেজা সকালে। দূরের তাজা বন, আকাশে কালো মেঘ এবং দূর সৈকতের গর্জন সবকিছু মিলে প্রকৃতির এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে।
ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি বান্দরবান যাওয়া যায় ১০ থেকে ১১ ঘন্টার মধ্যে। অতঃপর বান্দরবান থেকে নীলাচল যেতে সিএনজি ভাড়া নিতে হয় অথবা কোন গ্রুপের সাথে উঠে পড়তে হয় চান্দের গাড়ি বা জিপে।
পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
পরিশিষ্ট
বর্ষাকালে বাংলাদেশের সেরা ভ্রমণ স্থানের মধ্যে এই ১০টি নদীমাতৃক দেশটির শুধুমাত্র একটি দিক পূরণ করবে। বৃষ্টির মৌসুমে পুরো বাংলাদেশটাই যেন সেজে উঠে আপন মায়ায়। নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় জলজ সৌন্দর্য্যের পরশ পাওয়ার এটিই সর্বোত্তম সময়।
ভ্রমণ করার জন্য যে দর্শনীয় স্থানটিই বেছে নেবেন, তা আপনার বাকি জীবনকে প্রভাবিত করবে। তাই ভ্রমণের জন্য জায়গাটির সাথে সামঞ্জস্য উপযুক্ত সময়টাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে ঋতুটি পোকা-মাকড় ও রোগ-জীবাণু ছড়ানোর জন্যও অনুকূলে থাকে বিধায় নিরাপদের ভ্রমণের তাগিদেই ভ্রমণপিপাসুদের নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত।
২ বছর আগে
সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ২১ ঢাবি শিক্ষার্থীসহ উদ্ধার প্রায় ১০০
টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে বন্যায় আটকে পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১০০ জনকে সুমনগঞ্জের ছাতক উপজেলা থেকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।
রবিবার সকালে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।উদ্ধারকৃতদের সিলেটে আনা হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাতে একটি ট্রলার রেস্তোরাঁ থেকে তাদের উদ্ধার করলেও ছাতকে তা আটকা পড়ে।
আরও পড়ুন: ভ্রমণে গিয়ে সুনামগঞ্জে বন্যায় আটকা পড়েছেন ঢাবির ২১ শিক্ষার্থী
তিন দিন আগে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার জেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন পানসি রেস্টুরেন্টে আশ্রয় নেয়।
আটকে পড়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শোয়েব আহমেদ এক বার্তায় জানিয়েছেন, ‘আমাদের খাদ্য ও পানীয় জলের ভীষণ প্রয়োজন এবং এখানে কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। এখানে, আমাদের বেশিরভাগ ফোনের ব্যাটারি শেষ। এবং দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে সেটা সঠিকভাবে কাজ করছে না।’
আরও পড়ুন: ভয়াবহ বন্যায় বন্দি সিলেটবাসী
২ বছর আগে
ভ্রমণে গিয়ে সুনামগঞ্জে বন্যায় আটকা পড়েছেন ঢাবির ২১ শিক্ষার্থী
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির কারণে জেলা শহরের একটি রেস্তোরাঁয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২১ জন শিক্ষার্থী আটকা পড়েছেন।
তিনদিন আগে তারা টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে যান এবং বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে তারা ‘পানসী রেস্টুরেন্ট’ নামে জেলা শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আশ্রয় নেন।
আটকা পড়া ২১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৯ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এবং বাকি দুজন অন্য বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে সাতজন নারী শিক্ষার্থীও রয়েছেন।
শোয়েব আহমেদ নামে বন্যায় আটকা পড়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের খাদ্য ও খাবার পানির ভীষণ প্রয়োজন এবং এখানে কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। আমাদের অধিকাংশের ফোনের চার্জ ফুরিয়ে গেছে এবং দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে সঠিকভাবে কাজ করছে না।’
দ্রুত উদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তারা খুবই খারাপ ও অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার শঙ্কা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমি স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়েছি। প্রয়োজন হলে প্রশিক্ষিত উদ্ধারকারী দল পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এখনো ভালো ও সুস্থ আছে। আমি এসপি, ডিসির সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের জরুরি সহায়তা, খাবার ও উদ্ধারের জন্য বলেছি।’
এদিকে শুক্রবার সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও অনেক এলাকা। পূর্ব থেকেই প্লাবিত হওয়া এলাকায় পানি আরও বাড়ছে।
শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সকল ক্লাস-পরীক্ষা আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এছাড়া বন্যার কারণে সমগ্র সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে সারা সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতিতে শাবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণা
এ উপকেন্দ্রের এক্সেন প্রকৌশলী সুরঞ্জিত সিং বলেন, ইতোমধ্যে উপকেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে (কন্ট্রোল রুমের বাইরের অংশ) বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে এটা চলমান থাকলে কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করতে বেশি সময় লাগবে না। যদি কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করে তাহলে এই গ্রিড উপকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে। এই গ্রিড বন্ধ করলে সারা সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
এর আগে গত মাসের বন্যায় দক্ষিণ সুরমা, উপশহরসহ কয়েকটি এলাকার বিদ্যুতের সাব স্টেশন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।
২ বছর আগে