বিশিষ্টজন
মেডিটেশনকে ভ্যাটমুক্ত করার আহ্বান বিশিষ্টজনদের
প্রস্তাবিত চলতি বাজেট থেকে মেডিটেশনের উপর স্থায়ীভাবে ভ্যাট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, সংসদ সদস্যসহ বিশিষ্টজনেরা। মেডিটেশন বা ধ্যানকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে গ্রহণ করে এ সেবাকে পুরোপুরি ভ্যাটমুক্ত করার আহ্বান জানান তারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, যেখান থেকে মানুষের সেবা শুশ্রূষা বা সুস্থতার একটা পদ্ধতি করা হয় মেডিটেশন হচ্ছে সেরকম একটা মাধ্যম বা পথ। এর উপর সাধারণত কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স হওয়ার কথা না। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভলি এবং যৌক্তিকভাবে এটা রিভিউ করা দরকার।
কবি অসীস সাহা জানান, মেডিটেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত উপকার হয়, চিন্তা-চেতনার বিকাশও হয়। তাই মেডিটেশনের উপর যেন কোনো ভ্যাট আরোপ করা না হয়। এটা যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে এক্ষেত্রে যারা উদ্যোগ নিয়েছেন, শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে-তা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের লাখ লাখ মানুষ।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তিনি মানবিক মানুষ এবং মানবিক কাজে তার ভূমিকা সর্বত্র নন্দিত। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীরও এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়া উচিত। এবং তিনি যদি হস্তক্ষেপ করেন তবে এ ধরনের বৈপরীত্যমূলক কাজে যে ক্ষতি হয় সে ক্ষতিটা অন্তত হবে না এবং বহু মানুষ উপকৃত হবে। মেডিটেশন আরও বেশি বিস্তৃত হোক এবং সারাদেশে ছড়িয়ে যাক, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাক এটাই আমার প্রত্যাশা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, যারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন, তাদের মনোজগত ও দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীর পরিবর্তন ঘটে। তাদের হৃদয় পূর্ণ হয়ে ওঠে মমতা ও সমমর্মিতায়। এটি নিজের পরিবারের সদস্য ও আপনজনদের জন্যেই শুধু নয়, অচেনা অজানাদের জন্যেও তাদের সমমর্মিতা খুব গুরুত্ব পায়। এ অনুভূতিটা হয় সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ। ইতিবাচক এই দৃষ্টিভঙ্গি জীবনকে করে তোলে প্রশান্ত, স্থির। এতে ইতিবাচক আবেগের প্রাবল্যও বৃদ্ধি পায়। ফলে মস্তিষ্কের গঠন ও কর্মপন্থায় পরিবর্তনের সূচনা ঘটে। ইলেক্ট্রো-এনসেফালোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হয়েছে। গবেষকরাও বলছেন, নিয়মিত মেডিটেশনের কথা। শারীরিক-মানসিক সুস্বাস্থ্য অর্জনসহ সবদিক থেকে ভালো থাকার এই চর্চা মেডিটেশন বা ধ্যানের উপর কর না নিয়ে এটিকে চিকিৎসা সহায়ক হিসেবে স্থায়ীভাবে ভ্যাটমুক্ত করা হোক।
এর আগে সংসদে চলতি বাজেট বক্তৃতায় মেডিটেশনের উপর ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। মঙ্গলবার নীলফামারী-৪ আসনের আহসান আদেলুর রহমান, এমপি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, আপদকালীন বরাদ্দ বাড়াতে হবে, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে হবে। মেডিটেশন সেবা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা। স্বাস্থ্য সেবা ভ্যাটের আওতামুক্ত। মেডিটেশন সেবাকেও স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে স্থায়ীভাবে ভ্যাটের আওতামুক্ত করার আবেদন করছি।
পটুয়াখালী-৩ আসনের এসএম শাহজাদা, এমপি সংসদে তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, কোভিডের কারণে অনেকেরই অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। এই যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এটা নেয়ার জন্য মেডিটেশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ মেডিটেশনের ওপর আবার ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এই দুটি জিনিস পরস্পর-বিরোধী হয়ে যাচ্ছে। একদিকে সিগারেটের উপর ভ্যাট কম হচ্ছে, কর কম হচ্ছে অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্য চর্চার জন্য যে মেডিটেশন তার উপর আবার ভ্যাট বসানো হচ্ছে। আমি মনে করি, মানসিক স্বাস্থ্য থেকে ভ্যাট বসিয়ে ইনকামের যে টার্গেট নেয়া হয়েছে সেই টার্গেটই যদি আবার সিগারেটের উপরে আরও চড়াও করে দেওয়া হয় তাহলে সে টার্গেটটা অন্তত পূরণ হবে। এই দুটো জিনিস অর্থমন্ত্রীকে বিবেচনা করার জন্য স্পিকারের মাধ্যমে আবেদন করছি।
পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেটের কয়েকটি কর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা দরকার: ড. আতিউর
ঢাকা-৮ আসনের রাশেদ খান মেনন, এমপি তার বাজেট বক্তৃতায় প্রশ্ন রেখে বলেন, মেডিটেশনকে মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিধায় একে করের বাইরে রাখা প্রয়োজন। কোভিড প্রতিক্রিয়ায় মানুষের মন যখন বিপর্যস্ত সেখানে মেডিটেশনের আশ্রয় নিলে তাকে বেশি মূল্য দিতে হবে। কেন মাননীয় স্পিকার?
সোমবার সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রহুল হক বলেন, মেডিটেশনে ট্যাক্স দেয়া হয়েছে। সেটা কমিয়ে গতবারের মতো জিরো করার জন্য আমি আহ্বান জানাই।
খুলনা-৫ আসনের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ তার বক্তব্যে বলেন, মেডিটেশন পরে একটি শুল্ক ধার্য হতে যাচ্ছে। এ শুল্ক যাতে ধার্য্য না হয় সে দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া সংসদের বাজেট বক্তৃতায় মেডিটেশনের উপর থেকে ভ্যাট আরোপ প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রস্তাব করেন বরিশাল-৪ এর পংকজ দেবনাথ এমপি।
প্রসঙ্গত, মেডিটেশন সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে। অথচ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জন্যে প্রকাশিত উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসার গাইডলাইনে যৌথভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন জীবনধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম চর্চার কথা বলা হয়েছে।
পড়ুন: বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসন বড় চ্যালেঞ্জ: এফবিসিসিআই
২ বছর আগে