সাংবিধানিক
বিতর্কিত ইসরায়েলি নজরদারি প্রযুক্তি সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের ভয়ঙ্কর হাতিয়ার: টিআইবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত বিতর্কিত নজরদারি প্রযুক্তি কেনার বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো ‘বিতর্কিত ইসরায়েলি নজরদারি প্রযুক্তি সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের ভয়ঙ্কর হাতিয়ার; প্রয়োগের সুনির্দিষ্ট নীতিমালার দাবি টিআইবির’ শিরোনামের এক বিবৃতিতে সংস্থাটি নিজেদের উদ্দেগ প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে দুর্নীতি পর্যবেক্ষক সংস্থাটি বলেছে, সুনির্দিষ্ট নীতির অনুপস্থিতিতে এই জাতীয় প্রযুক্তির ব্যবহার বেশ কয়েকটি মৌলিক সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করার গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোন সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতি অনুযায়ী জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে এত ভয়ংকর হাতিয়ার কেনা হয়েছিল, কী উদ্দেশ্যে, কী প্রেক্ষাপটে, কার স্বার্থে তা ব্যবহার করা হবে- এ মৌলিক প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইসরায়েলি সাবেক গোয়েন্দা কমান্ডার পরিচালিত একটি কোম্পানির কাছ থেকে নজরদারি প্রযুক্তি কিনেছে, যেটি গত বছরের জুনে দেশে এসেছে।
আরও পড়ুন: লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আহ্বান টিআইবি’র
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য ও যোগাযোগের গোপনীয়তা, নিরাপত্তা, বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে এবং সর্বোপরি মানুষের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলা প্রযুক্তির ক্রয় ও ব্যবহার সম্পর্কে সরকারের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল থেকে সরাসরি কিছুই কেনা হয়নি’-সরকারের এই ব্যাখ্যার অর্থ এই না যে এই ইসরায়েলি প্রযুক্তি আমদানি করা হয়নি।’
প্রকাশিত সংবাদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে ইসরায়েল ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় সাইপ্রাসের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে প্রায় ৬০ কোটি টাকায় কেনাকাটা করা হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান ইসরায়েলি মিডিয়া প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলেছেন, জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) কমান্ডার এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমনকি ২০২১ এবং ২০২২ সালে এই প্রযুক্তিটি কীভাবে পরিচালনা করতে হয় তা শিখতে গ্রিসে গিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি এই তথ্য মিথ্যা হয়, তাহলে তা প্রমাণ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারের। সর্বোপরি, এই প্রযুক্তি ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে পৌঁছেছে, তাতে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সব পক্ষকে সম্পৃক্ত করে একটি সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন না করা পর্যন্ত এই প্রযুক্তি ব্যবহার বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে জনস্বার্থকে পদদলিত করে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ নজরদারিভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রসঙ্গে সিইসির বক্তব্য আত্মঘাতী ও অপরিণামদর্শী: টিআইবি
নির্বাচনে সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিতে আইনি সংস্কারের সুপারিশ টিআইবির
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারের অবসান
‘রো বনাম ওয়েড’ রায় বাতিল হওয়ার প্রেক্ষিতে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারের অবসান ঘটালো মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার এই আলোচিত রায় ঘোষণার পর ইতোমধ্যে দেশটির আলাবামা, টেক্সাস ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের অনেকগুলো গর্ভপাত ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে বলেছে, ‘গর্ভপাত করা মার্কিন নারীদের সাংবিধানিক অধিকার নয়।’
এই রায়ের ফলে এখন দেশটিতে কয়েক কোটি প্রজননক্ষম নারী গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার হারাবেন। এতে গর্ভপাতবিরোধী অঙ্গরাজ্যগুলো চাইলে তা নিষিদ্ধ করতে পারবে।
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার একমাত্র গর্ভপাত ক্লিনিকের নির্বাহী পরিচালক কেটি কুইনোনেজ বলেন, ‘রায় শোনার পর বহু রোগী কান্নায় ভেঙে পড়েন,এমনকি তারা কথা পর্যন্ত বলতে পারছিল না।’
আরও পড়ুন: নরওয়েতে বন্দুকধারীর গুলিতে ২ জন নিহত, আহত এক ডজনের বেশি
তিনি আরও জানান, তার কর্মীরা কয়েক ডজন রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করেছেন।
কেটি কুইনোনেজ বলেন, ‘কিছু রোগী হতবাক হয়ে গিয়েছে। কী করতে বা বলতে হবে, তা তারা বুঝতে পারছেন না।’
যুক্তরাষ্ট্রের ৯টি রাজ্যে অবিলম্বে গর্ভপাত বন্ধ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট রো রায় বাতিল করার পর মার্কিনিদের মধ্যে ক্রোধ, আনন্দ, ভয় ও বিভ্রান্তির মতো মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গর্ভপাত অধিকার সমর্থকরা এটিকে ইতিহাসের একটি অন্ধকার দিন বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে,গর্ভপাত বিরোধীরা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে।
ইউএস হাউসের সংখ্যাগরিষ্ঠ হুইপ ও সাউথ ক্যারোলিনার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি জিম ক্লাইবার্ন বলেছেন, ‘এই দেশ রক্ষণশীলতার দিকে ঝুঁকছে, নাগরিকদের মানবাধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে।’
ইতোমধ্যে দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে এই রায়ের বিরোধিতায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই রায়কে ‘একটি দুঃখজনক ত্রুটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বাইডেন রায়ের সমালোচনা করে অঙ্গরাজ্যগুলোকে গর্ভপাতের অনুমোদন দিয়ে আইন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: স্পেনের ছিটমহল মেলিলায় প্রবেশের চেষ্টাকালে নিহত ১৮
গর্ভপাতবিরোধীরা একে বিপুলভাবে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে পছন্দের স্বাধীনতার পক্ষের আন্দোলনকর্মীরা এ রায়ের নিন্দা করেছেন।
রায়ের পর গ্যারেট বেস নামক একজন গর্ভপাতবিরোধী বলেন ‘গর্ভবতী মা ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা তৃণমূলে থাকা আমেরিকানদের সঙ্গে কাজ করব। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার ফল এই রায় ঘোষিত হলো, আমি এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।’
অন্যদিকে ব্যক্তিস্বাধীনতার সমর্থকরা আদালতের এই সিদ্ধান্তটিকে ‘অবৈধ’ এমনকি ‘ফ্যাসিবাদ’ এর একটি রূপ বলে নিন্দা করেছেন।
১৯৭৩ সালের ঐতিহাসিক রো বনাম ওয়েড মামলায় সাত-দুই ভোটের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল। রায়ে বলা হয়,একজন মহিলার গর্ভপাতের অধিকার মার্কিন সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। ওই রায় যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে গর্ভপাতের নিরঙ্কুশ অধিকার দিয়েছে। তবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেছে।
কিন্তু তার পর থেকে গত কয়েক দশকে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাতবিরোধী রায় দেয়ার ঘটনা বেড়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট ডবস বনাম জ্যাকসন নারী স্বাস্থ্য সংস্থা মামলা বিবেচনা করতে গিয়ে নতুন রায়টি দিয়েছে। ওই মামলায় ১৫ সপ্তাহ পরে গর্ভপাতের ওপর মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল।
রক্ষণশীল বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ শীর্ষ আদালত অঙ্গরাজ্যের পক্ষে রায় দিয়েছে। এতে কার্যত গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল হয়ে গেল।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৫০