হাওরাঞ্চল
কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে পানি বাড়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
উজানের পাহাড়ি ঢল, টানা বৃষ্টি ও বর্ষার পানিতে কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন নদীতে বাড়ছে পানি। ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন সড়কের অংশ ও ফেরিঘাট। ফলে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বন্ধ করে দিয়েছে ফেরি চলাচল। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা।
কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ বছরে ছয়মাস সড়কপথে যাতায়ত করে জেলা শহরে। এবার হাওরে কিছুটা বিলম্বে পানি আসায় বুধবার (২১ জুন) হাওরাঞ্চলের সকল (র্পাঁচটি) ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর।
ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠে পড়ায় ফেরি বন্ধ করা হয়েছে। ফলে, চলাচল করেনি গাড়ি, বিপত্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। বালিখলা হতে মিঠামইন পর্যন্ত ও চামড়াঘাট হতে ইটনা পর্যন্ত সড়কে ভেঙে ভেঙে নৌকা ও অটোরিকশা করে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে নদীর পানি বৃদ্ধি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় হাওরাঞ্চলে ব্যাপক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, এখনও নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, করিমগঞ্জ-মিঠামইন সড়কের বালিখলা ও কামালপুর ফেরিঘাট, করিমগঞ্জ-ইটনা সড়কের চামড়া ঘাট, বড়িবাড়ি ও বলদা ফেরিঘাট এবং সংশ্লিষ্ট ডুবো সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠে পড়ায় ফেরি বন্ধ করা হয়েছে। এতে, যাত্রীরা ছোট ছোট নৌকা ও অটোরিকশা করে জেলা শহরে যাতায়াত করে।
অষ্টগ্রাম উপজেলার খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের বায়েজিদ মিয়া বলেন, শুষ্ক মৌসুমী আমরা জেলা শহরে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারি। বুধবার মিঠামইন এসে দেখি ফেরি বন্ধ, বাধ্য হয়ে ভিন্নভাবে কিশোরগঞ্জ যেতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি কমলেও দেখা দিয়েছে ভাঙন
মিঠামইন সদর ইউনিয়নের অটোরিকশা চালক মমিন উল্লাহ (২৩) বলেন, সড়ক ডুবে যাওয়ায় আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব। অটোচালিয়ে আমার সংসার চলে। এখন এই পথে মানুষ কম আসবে, রুজিরোজগার কম হবে, বলা যায় বেকার থাকব। কষ্টে চলতে হবে বর্ষার সময়।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, হাওরের সবগুলো ফেরিঘাট বর্ষার পানিতে তলিয়ে গেছে। হাওরের অনেক রাস্তাঘাটও তলিয়ে গেছে। হাওরাঞ্চলের পরিবেশে ফেরি চালু করার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই, সকল ফেরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে
১ বছর আগে
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ১৭টি সেতুর উদ্বোধন সোমবার
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দুয়ার খুলছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের রাণীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের মধ্যখানে কুশিয়ারা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর। জগন্নাথপুর উপজেলায় ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাণীগঞ্জ সেতুর নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এই সেতুসহ সুনামগঞ্জের ১৭টি সেতুর উদ্বোধন হবে সোমবার (৭ নভেম্বর)। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, এ জেলার প্রায় ২৫ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে সিলেটে যেতে হতো। এতে অর্থ ও সময়ের ব্যয় হতো। দীর্ঘদিন ধরে এ জেলাবাসীর দাবি ছিল ডাবর-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি মহাসড়কের ৩০ কিলোমিটার এলাকায় জগন্নাথপুরের রাণীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের মধ্যখানে কুশিয়ারা নদীর ওপর সেতু স্থাপনের।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
কিন্তু সুনামগঞ্জের অনেক রাজনীতিবিদ মহান জাতীয় সংসদে এমপি-মন্ত্রী হয়ে প্রতিনিধিত্ব করলেও আশ্বাস দিয়েও সেতু বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান হাওরবাসীর স্বপ্নের এ সেতুর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেন।
এতে প্রধানমন্ত্রীও সম্মতি জানান। ফলে এ প্রকল্পের অনুমোদন হলে ২০১৭ সালে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করে এমএম বিল্ডার্স এন্ড কোম্পানি।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সেতুর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কাজ বন্ধ ছিল কিছুদিন।
ফলে ২০২২ সালের আগস্টে এসে কাজ শেষ হয়। পরবর্তীতে সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম এ সেতুর উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ সেতু খুলে দেয়ার পর দুর্ভোগ-ভোগান্তি কমবে সুনামগঞ্জের ২৫ লাখ মানুষের। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের দুরত্ব কমবে ৫৫ কিলোমিটার, সময় বাঁচবে প্রায় আড়াই ঘন্টার মতো।
সেতুর কাজ সস্পন্ন হওয়ার পর পরই প্রতিদিন কুশিয়ারার দুই পাড়ে লেগে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। অনেকেই এ সেতুটিকে হাওরাঞ্চলের পদ্মাসেতু বলে থাকেন। সেতুটি যেমন সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু তেমনি দৃষ্টিনন্দনও।
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সাংসদ পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন সুনামগঞ্জবাসী।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী ৭ নভেম্বর সারাদেশের ১০০টি সেতু উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে রাণীগঞ্জ সেতুসহ সুনামগঞ্জের ১৭টি সেতু উদ্বোধন হবে।
এতে সুনামগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার কমবে। এর আগে ২০০৩ সালে ধলাই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু ছিল কোম্পানীগঞ্জের ধলাই সেতু (দীর্ঘ ৪৩৪.৩৫ মিটার)।
উদ্বোধন হওয়া রাণীগঞ্জ সেতু দৈর্ঘ্য এর দিক দিয়ে এ সেতুরও রেকর্ড ভাঙল।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, ১৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি
২ বছর আগে
রাস্তা নয়, হাওরাঞ্চলে ফ্লাইওভার নির্মাণ হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী
হাওরাঞ্চলে আর কোনো সড়ক নির্মাণ করবে না সরকার, তবে প্রয়োজনে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, সরকার হাওরে আর সড়ক নির্মাণ করবে না। যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে।
রবিবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নে বন্যাদুর্গত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী এ সময় বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বড় প্রকল্প আসছে৷ প্রথমে ত্রাণ, এরপর নির্মাণ। যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে তাদেরকে সহায়তা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, যা সহায়তা আসছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও এ মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। ধৈর্যের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার উজ জামান এবং সঞ্চালনা করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নূর হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রীর একান্ত রাজনৈতিক সচিব হাসনাত হোসেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দোলন রানী তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হাজী তহুর আলী, মাওলানা আবদুল কাইয়ূম, শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালেদ চৌধুরীসহ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: নৌকাডুবি: হাওরে নিখোঁজ তিনজনের লাশ উদ্ধার
ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কিশোরগঞ্জের হাওরের ধানচাষিরা
২ বছর আগে