দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দুয়ার খুলছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের রাণীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের মধ্যখানে কুশিয়ারা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর। জগন্নাথপুর উপজেলায় ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাণীগঞ্জ সেতুর নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এই সেতুসহ সুনামগঞ্জের ১৭টি সেতুর উদ্বোধন হবে সোমবার (৭ নভেম্বর)। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, এ জেলার প্রায় ২৫ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে সিলেটে যেতে হতো। এতে অর্থ ও সময়ের ব্যয় হতো। দীর্ঘদিন ধরে এ জেলাবাসীর দাবি ছিল ডাবর-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি মহাসড়কের ৩০ কিলোমিটার এলাকায় জগন্নাথপুরের রাণীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের মধ্যখানে কুশিয়ারা নদীর ওপর সেতু স্থাপনের।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
কিন্তু সুনামগঞ্জের অনেক রাজনীতিবিদ মহান জাতীয় সংসদে এমপি-মন্ত্রী হয়ে প্রতিনিধিত্ব করলেও আশ্বাস দিয়েও সেতু বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান হাওরবাসীর স্বপ্নের এ সেতুর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেন।
এতে প্রধানমন্ত্রীও সম্মতি জানান। ফলে এ প্রকল্পের অনুমোদন হলে ২০১৭ সালে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করে এমএম বিল্ডার্স এন্ড কোম্পানি।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সেতুর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কাজ বন্ধ ছিল কিছুদিন।
ফলে ২০২২ সালের আগস্টে এসে কাজ শেষ হয়। পরবর্তীতে সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম এ সেতুর উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ সেতু খুলে দেয়ার পর দুর্ভোগ-ভোগান্তি কমবে সুনামগঞ্জের ২৫ লাখ মানুষের। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের দুরত্ব কমবে ৫৫ কিলোমিটার, সময় বাঁচবে প্রায় আড়াই ঘন্টার মতো।
সেতুর কাজ সস্পন্ন হওয়ার পর পরই প্রতিদিন কুশিয়ারার দুই পাড়ে লেগে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। অনেকেই এ সেতুটিকে হাওরাঞ্চলের পদ্মাসেতু বলে থাকেন। সেতুটি যেমন সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু তেমনি দৃষ্টিনন্দনও।
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সাংসদ পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন সুনামগঞ্জবাসী।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী ৭ নভেম্বর সারাদেশের ১০০টি সেতু উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে রাণীগঞ্জ সেতুসহ সুনামগঞ্জের ১৭টি সেতু উদ্বোধন হবে।
এতে সুনামগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার কমবে। এর আগে ২০০৩ সালে ধলাই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু ছিল কোম্পানীগঞ্জের ধলাই সেতু (দীর্ঘ ৪৩৪.৩৫ মিটার)।
উদ্বোধন হওয়া রাণীগঞ্জ সেতু দৈর্ঘ্য এর দিক দিয়ে এ সেতুরও রেকর্ড ভাঙল।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, ১৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি