বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড
চলতি বছর দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩০ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করবে
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে চলতি বছরের মধ্যে অব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাও ৫০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে সরকারি সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে, গ্রিড ও অফ-গ্রিড বিদ্যুৎসহ দেশের মোট স্থাপন করা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ক্ষমতা বর্তমানে ২৮ হাজার ১৫৯ মেগাওয়াট।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যে এটি ৩১ হাজার ২৭৩ মেগাওয়াট হবে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি অব্যবহৃত থাকবে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট। এ ছাড়া ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ অফ-গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩ হাজার ২৪৮ মেগাওয়াট।
অফ-গ্রিড বিদ্যুৎ বিশেষ করে, ক্যাপটিভ বিদ্যুত উৎপাদনে কোনো বড় পরিবর্তন নেই।এ ধরনের বিদ্যুৎ প্রধানত শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২২ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছরের একই সময় পর্যন্ত এই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট। অর্থাৎ এক বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ২ হাজার ৪২৯ মেগাওয়াট।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে: চীনা কর্মকর্তা
বর্তমানে আরও ৩ হাজার ১১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাইপলাইনে রয়েছে যা আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩১ হাজার ২৭৩ মেগাওয়াটে পৌঁছাবে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সব মিলিয়ে এই বছর গ্রিডে ৫ হাজার ৫৪৩ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। যদিও এই সময়ের মধ্যে চাহিদা আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বাড়তে পারে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মজার ব্যাপার হলো সমস্ত নতুন বিদ্যুৎ বেসরকারি খাত থেকে আসছে, সরকারি প্ল্যান্ট থেকে নয়।’
তবে, বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে ভাড়ায় চালিত প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার বিশাল বৃদ্ধিতে খুশি হতে পারে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৫০ শতাংশ অব্যবহৃত রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ বা পরিচালন ব্যয় পরিশোধের ক্ষেত্রে এটি কর্তৃপক্ষের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত অর্থবছর (২০২২-২৩) আমাদের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে ২৬ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছিল এবং এই চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ৩৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে।’ ২০২১-২২ অর্থবছর যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা।
ক্যাপাসিটি পেমেন্টের সঙ্গে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো- দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র এক বছর আগে ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেলেও পেমেন্টের ৯০ শতাংশের বেশি অর্থ প্রদান করা হবে বৈদেশিক মুদ্রায়।
আরও পড়ুন: খুলনায় তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন
ক্যাপাসিটি চার্জ হলো বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) অধীনে এক ধরনের জামানতযুক্ত পেমেন্ট। বেসরকারি উৎপাদনকারীর কাছ থেকে বিপিডিবি বিদ্যুৎ নিলেও সেই অর্থ দিতে হয়, না নিলেও দিতে হয়।
বিপিডিবির আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই বছর আগের তুলনায় চলতি অর্থবছরে আমাদের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়বে।
সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নতুন কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এরই মধ্যে গ্রিডে যুক্ত হয়েছে বা সংযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৬২০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের বাশখালীর এস আলম গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাটে রিলায়েন্স পাওয়ার এলএনজি-ভিত্তিক প্ল্যান্ট থেকে ৭১৮ মেগাওয়াট, এলএনজি-ভিত্তিক জিই-সামিট মেঘনাঘাট-২ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৫৯০ মেগাওয়াট এবং মেঘনাঘাটে এলএনজি-ভিত্তিক ইউনিক গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৫৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে গ্রিডে।
সরকারি পরিসংখ্যানে আরও জানা গেছে, বিপিডিবি তহবিলের ঘাটতি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। কারণ বেসরকারি খাতে এটির বকেয়া বিল এখন এই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ২৫ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বিপিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তবে বেসরকারি খাতের মে ও জুলাইয়ের বিল যোগ করা হলে তা ৩৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।’
বিদ্যুৎ খাতের পরিস্থিতিকে আমদানিনির্ভর জ্বালানি সরবরাহের উপর ভিত্তি করে ভুল নীতির ফলাফল উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিপিডিবির বোঝা কমাতে ‘বিদ্যুৎ নেই পেমেন্ট নেই’ পদ্ধতি চালু করতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বন্ধে কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে ‘ফোর্স ম্যাজেউর’ প্রয়োগ করা উচিত।
দ্বিতীয়ত, সরকারকে আমদানি-ভিত্তিক এলএনজি-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: গ্রীষ্মের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় তথ্য সংগ্রহ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
১ বছর আগে
দেশে শনিবার ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে
দেশে আজ শনিবার (১৩ মে) দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে। কারণ গ্যাসের ঘাটতির কারণে কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকটি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডকে (বিপিডিবি) দুপুর ১২টায় প্রায় ২ হাজার ৫১ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে; যখন ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১০ হাজার ৭৪৯ মেগাওয়াট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তার ধারণা, এদিন দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে।
বিপিডিবির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি না বলে এমনটা ঘটেছে। এর ফলে অনেক কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে।’
এর আগে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জানিয়েছিল, সুপার সাইক্লোন মোখার প্রভাবে শুক্রবার রাত ১১টা থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দুটি ভাসমান টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়লেও দেশে তীব্র লোডশেডিং
ফলে শনিবার চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হবে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিগগিরই সরবরাহ শুরু হবে।
এর ফলে চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ বা আংশিকভাবে বন্ধ থাকবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জি. মো. কাউসার আমীর আলী জানান, ঢাকা মহানগরীর তার আওতাধীন এলাকায় ১ হাজার ১৫৭ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে শনিবার বেলা ১১টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল ৮১৯ মেগাওয়াট। অর্থাৎ, প্রায় ৩৪৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, তার কোম্পানির আওতাধীন এলাকায় দিনে ৩৫০ থেকে ৩৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়।
শনিবার সন্ধ্যার পর লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে তিনি ইউএনবিকে জানান।
আরও পড়ুন: রেকর্ড তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন, তবুও বাড়ছে লোডশেডিং
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান: দেশব্যাপী ১৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং
১ বছর আগে
জাতীয় পাওয়ার গ্রিডে বিপর্যয়: দেশের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডে বিপর্যয় হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৫ মিনিট থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ বাদে সারা দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) কর্মকর্তাদের মতে, দেশের পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে যমুনা নদীর পূর্ব দিকের জেলাগুলোর কোথাও কোথাও ট্রান্সমিশন লাইন ট্রিপ হয়েছে।
পিজিসিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, রংপুর বিভাগের মাত্র কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
আরও পড়ুন: সময়মতো বিদ্যুৎ বিল শোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন
গ্রিড বিকল হয়ে যাওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে একের পর এক কেন্দ্র বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিপিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান জানান, বিপিডিবি এবং পিজিসিবি উভয়ের প্রকৌশলীরা বিদ্যুৎ সঞ্চালন পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।
দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ওই বিভাগের বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।
পিজিসিবি কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন যে তারা গ্রিড ব্যর্থতার সঠিক কারণ ও অবস্থান এখনও শনাক্ত করতে পারেনি।
২০১৭ সালের ২ মে দেশের ৩২টি জেলায় গ্রিড বিপর্যয়ের সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছিল।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাংককে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান নসরুল হামিদের
বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ চায় বিজিএমইএ
২ বছর আগে
সারাদেশে লোডশেডিং অব্যাহত
সারাদেশে লোডশেডিং অব্যাহত থাকায় মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন গ্রাহকরা।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যমতে, ১৪ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের কম উৎপাদন হওয়ায়, দেশে প্রায় এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়।
ফলে রাজধানীর ভেতরে ও বাইরের গ্রাহকেরা ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হচ্ছেন বলে জানান বিপিডিবির এক কর্মকর্তা।
তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির জন্য বিদ্যুত উৎপাদন হ্রাসকে দায়ী করে বলেন, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিপিডিবিকে প্রায় তিন হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে।
শুধু ঢাকা শহরেই ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান মেটাতে তার এলাকায় ৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘ডিপিডিসি এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে জনগণের ভোগান্তি কম হবে।
দেখুন:
রাজধানীর ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, লালবাগ, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, মগবাজার, তেজগাঁও, কাকরাইল, শান্তিনগর, আগারগাঁও, কলাবাগান, কাওরানবাজার ও তেজতুরিবাজার এলাকা।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংকটের কারণে দেশব্যাপী লোডশেডিং বাড়ছে
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) আওতাধীন এলাকাগুলোকেও বেশ কিছু স্পেল ব্ল্যাক আউটের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
ডেসকোকে তার এলাকায় ১৩৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী।
তিনি জানান, ডেসকোকে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি চাহিদার বিপরীতে ৮০০ মেগাওয়াটের কিছু বেশি বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়েছে।
ডেসকো প্রধানত রাজধানীর পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ করে। যার মধ্যে রয়েছে উত্তরা, মিরপুর, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতন ও বাড্ডা।
তবে রাজধানীর বাইরের বিদ্যুত গ্রাহকদের অভিযোগ, তাদেরও কয়েক ঘণ্টা ব্ল্যাকআউটের শিকার হতে হয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর এক কর্মকর্তা জানিয়েছে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে ‘এমনকি অনেক এলাকায় গ্রাহকদের দিনে ৫-৬ ঘন্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে।’
এদিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নয়নের উপায় খুঁজতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিপিডিবি ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে।
বৈঠকে অংশ নেয়া একজন কর্মকর্তা জানান, বৈঠক থেকে পেট্রোবাংলাকে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছিল, যাতে আরও গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র আবার চালু করতে পারে।
আরও পড়ুন: টানা বর্ষণ: কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বেড়েছে উৎপাদন
২ বছর আগে
বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংকটের কারণে দেশব্যাপী লোডশেডিং বাড়ছে
দেশব্যাপী বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়ছে। কারণ গ্যাসের বিশাল ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের অফিসিয়াল তথ্য অনুযায়ী, দেশে রবিবার ১৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। যদিও ১২৭৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বাভাস ছিল।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘স্পষ্টতই কর্তৃপক্ষকে প্রাক্কলিত পরিমাণের চেয়ে বেশি লোডশেডিং হবে।’
সরকারী তথ্য অনুযায়ী রবিবার সন্ধ্যায় দেশের সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৬১৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে ১২ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট উৎপাদিত হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ১৫০০ মেগাওয়াট ব্যবধান।
বিপিডিবি’র এই কর্মকর্তা বলেন ‘এই ব্যবধান লোডশেডিং এর মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে।’
সাধারণত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৩০০-১৪০০ মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠা-নামা করে এবং এই বছরের ১৬ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট রেকর্ড করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ৫ বছরে রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা তিনগুণ বাড়বে: প্রতিমন্ত্রী
বিপিডিবির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ৪০০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ২০০ মেগাওয়াট, খুলনায় ২২০ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ২২০ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ১৪০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ১২০ মেগাওয়াট, সিলেটে ৫০ মেগাওয়াট এবং গত রংপুরে ১৫০ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল।
অনেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিপিডিবি’র পরিসংখ্যান বিশ্বাস করেন না। বরং লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নের মাত্রা সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি বলে মনে করেন তারা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শামসুল আলম। ‘বিপিডিবি কখনই তার পাওয়ার সাপ্লাই পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করে না।’
এদিকে, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের অনেক গ্রাহকই ব্যাপক লোডশেডিং এবং ঘন ঘন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নের কথা জানিয়েছেন।
রাজধানীর উত্তরা এলাকার ভোক্তা হাবিবুর রহমান জানান, প্রতিদিন তিন থেকে চার বার লোডশেডিং হয় এবং প্রতিবারই আধা ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে।
একই ধরনের অভিজ্ঞতা রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, নাখালপাড়া, শান্তিনগর, মগবাজার, নিকেটন, গুলশান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডাসহ অন্যান্য এলাকার গ্রাহকেরাও জানিয়েছেন।
তারা বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এ ধরনের লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নের মাত্রা বাড়ছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ
বিপিডিবি কর্মকর্তারা গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাসকে দায়ী করেছেন।
তারা জানান, তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির কারণে ৩৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে সংকটের কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন: ‘গ্যাসের ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহের উন্নতি হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাধারণত স্বাভাবিক হবে।’
তিনি আরও দাবি করেন, যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও সমস্যায় ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে আমি সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত।’
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি না করার সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে দেশের গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে।
বিশ্ব বাজারে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি ৩৫ ডলারের বেশি বিক্রি হচ্ছে, যেখানে কয়েক মাস আগে তা ছিল ২৫ ডলারের নিচে। ফলস্বরূপ, স্থানীয় গ্যাস সরবরাহ নিয়মিত ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে প্রতিদিন দুই হাজার ৮২২ মিলিয়ন ঘনফুট কমে গেছে। যার ফলে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট এর ঘাটতি সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: শতভাগ বিদ্যুতায়ন একটি যুগান্তকারী অর্জন: প্রধানমন্ত্রী
২ বছর আগে