প্রেজেন্টেশন সফ্টওয়্যার
যে ১০টি সফটওয়্যার জানা থাকলে চাকরি পেতে সুবিধা হবে
দ্রুত বেগে ধাবমান প্রযুক্তির বিশ্বে গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রযুক্তির সাথে সখ্যতা থাকা জরুরি। কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি পর্যায়ে এখন আর প্রাথমিক নয়; প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যারের অ্যাডভান্স্ড ব্যবহারিক জ্ঞান চাকরির জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে দাড়িয়েছে। এই সফ্টওয়্যারগুলো অধিকাংশই মানুষের জীবন ধারার সাথে ওতপ্রোতভাবে জাড়িয়ে গেছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিটি অনুষদে যথেষ্ট উপযোগিতা থাকায় সফ্টওয়্যারগুলোর নিয়মিত আপডেটও রাখা হচ্ছে। এজন্য কম্পিউটার বিজ্ঞান বা সফ্টওয়্যার প্রযুক্তি বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য অকারিগরি বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকেও অর্জন করতে হচ্ছে প্রযুক্তির দক্ষতা। একজন সাধারণ চাকরিপ্রার্থীর চাকরির সুবিধার্থে তেমনি প্রয়োজনীয় ১০টি সফ্টওয়্যারকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এই ফিচারে।
চাকরির জন্য যে ১০টি সফটওয়্যার জানা থাকা জরুরি
ডকুমেন্টেশন সফ্টওয়্যার
সব ধরনের ব্যাবসায়িক পত্রের জন্য মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড একটি পরিচিত নাম। আট ঘন্টা অফিস সময়ের মধ্যে এই ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশনটিতে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাতে হয় কর্মচারিদের। এই নামটি এখন এক অলিখিত দক্ষতা হয়ে গেছে, যেটা একজন চাকরিপ্রার্থীর ভেতর থাকবে তা ধরেই নেয়া হয়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে শুধু ওয়ার্ড ওপেন করে টাইপ করতে জানলেই হবে। অবশ্য এক সময় টাইপ জানার দক্ষতাকে আলাদা করে গুরুত্ব দেয়া হতো।
কিন্তু এখন দ্রুত টাইপের পাশাপাশি গুরুত্ব পায় লিখিত কন্টেন্টটি। সৃজনশীল নির্ভুল লেখার সাথে থাকতে হবে মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ডে হেডার ম্যানেজমেন্ট, টেবিল অব কন্টেন্ট তৈরি, প্যারাগ্রাফ স্টাইলিং, সাইটেশন প্রভৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান। বিগত কয়েক বছর যাবত ওয়ার্ডের জায়গা দখল করে নিয়েছে গুগল ডক। তাৎক্ষণিকভাবে শেয়ার এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করার সুযোগ থাকায় বর্তমানে ওয়ার্ড প্রসেসিং মানেই গুগল ডক।
পড়ুন: কর্ম জীবনে উন্নতির জন্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই কিভাবে প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক তৈরি করবেন
স্প্রেডশীট ম্যানেজমেন্ট সফ্টওয়্যার
যে কোন সাংখ্যিক তথ্যকে নিমেষেই দৃশ্যমান করতে পারে মাইক্রোসফ্ট এক্সেল। তাই অফিসের বড় বড় মিটিংগুলোতে বিভিন্ন ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট মানেই এক্সেলের ফাইল। মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ডের পাশাপাশি এই এক্সেলকেও আলাদা করে সিভিতে উল্লেখ করার যুগ পেরিয়ে গেছে।
এক্সেলের পেশাগত দক্ষতা বলতে বুঝায় এক্সেলের কাস্টম ফাংশন তৈরি করতে পারা, পিভট টেবিল সাজাতে পারা, সেল রেফারেন্স, ফিল্টার ও ডাটা ভ্যালিডেশনের কাজ। এক্সেলের বরাবর গুগলের সেবাটির নাম হচ্ছে গুগল শীট। এটি এক্সেলের জটিলতা কমিয়ে আনার মাধ্যমে দিন দিন জনপ্রিয় সফ্টওয়্যারে পরিণত হচ্ছে। অনেকে ডকের কাজও এখন গুগল শীটে করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
প্রেজেন্টেশন সফ্টওয়্যার
করপোরেট জগতের অবিচ্ছেদ্য ক্রিয়াকলাপ হচ্ছে প্রেজেন্টেশন। ওয়ার্ড বা ডকে যা লেখা হচ্ছে, এক্সেল বা শীটে যা হিসাব করা হচ্ছে তারই সারবস্তু আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয় প্রেজেন্টেশনে। এই কাজে সবচেয়ে জনপ্রিয় সফ্টওয়্যারটি হচ্ছে মাইক্রোসফ্ট পাওয়ারপয়েন্ট। এর সমতূল্য হচ্ছে গুগল স্লাইড।
পড়ুন: চাকরি প্রার্থীদের সফল সিভি তৈরির কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
প্রেজেন্টেশনকে প্রতিনিয়ত সৌন্দর্য্যমন্ডিত করার তাগিদে এখন আরো কিছু সফ্টওয়্যার অফিসগুলোর পিসি বা ল্যাপটপে শোভা পাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে প্রেজি ও ভিসমি বহুল ব্যবহৃত। কেউ কেউ প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে ক্যানভাও ব্যবহার করে থাকেন।
ফাইল শেয়ারিং সফ্টওয়্যার
কন্ফারেন্স বা সেমিনারের মত বড় বড় ইভেন্টে যাবার আগে পেনড্রাইভে করে ফাইলপত্র নিয়ে যাবার দিন শেষ। এখন আগামী দিন সিভি নিয়ে যাওয়ার কথা বলারও ইয়ত্তা নেই। ছবি তোলার সাথে সাথে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের শেয়ারইট অ্যাপের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবেই ফটো স্থানান্তর করে সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করা যায়। সবধরনের ডিভাইসের জন্য আছে গুগল ড্রাইভ ও ড্রপবক্সের মত ওয়েব অ্যাপগুলো।
পৃথিবীর যে কোন স্থানে যে কেউ কোন ফাইল চাইলে সাথে সাথেই ইন্টারনেটের সহায়তায় দেখানো এবং শেয়ার দুটোই করা যেতে পারে এই টুলগুলোর মাধ্যমে। কম্পিউটারের ড্রাইভগুলোর মতই খুব সহজে ম্যানেজ করা যায় এগুলো। সম্প্রতি গুগল ড্রাইভে কপি-পেস্ট করারও কী-বোর্ড শর্টকাট সংযোজন করা হয়েছে।
পড়ুন: অনলাইনে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে প্রয়োজনীয় পাঁচ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম
ইমেইল ম্যানেজমেন্ট টুল্স
একজন চাকরিপ্রার্থীর সিভির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ধরে রাখে এই টুল ব্যবহারটি। মুল ব্যাপার হচ্ছে আসলে ইমেইল ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা। এর পরিস্ফুটন ঘটে এই টুলগুলোর মাধ্যমে। ইন্টারনেট জুড়ে অনেক টুল থাকলেও সহজলভ্যতার জন্য অদ্বিতীয়ভাবে নিজের স্থানটি ধরে রেখেছেন জিমেইল।
ইমেইল এটিকেটে নিজের পারদর্শিতা দেখাতে হলে জিমেইলে অ্যাডভান্স্ড দখল নিতে হবে চাকরিপ্রার্থীকে। প্রাপক, বিষয়বস্তু, সিগনেচারের সাথে মুল বার্তাটি কম্পোজ করে পাঠিয়ে দেয়াটাই সবকিছু নয়। জানতে হবে ইমেইল সিসি(কার্বন-কপি) ও বিসিসি(ব্লাইন্ড-কার্বন-কপি)-এর ব্যবহার। কিভাবে ইমেইল ফিল্টার করতে হয়, লেবেল দিতে হয়, ক্যাটাগরি ভিত্তিক ইমেইল টেমপ্লেট বানাতে হয় সে ব্যাপারে বিশদ জ্ঞান থাকতে হবে।
ভিডিও কন্ফারেন্স টুল্স
পূর্বে এই টুলগুলোর ব্যবহার থাকলেও করোনা মহামারির পর ফুলে ফেঁপে উঠেছে এগুলোর মার্কেট। সাধারণ আড্ডা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মিটিংগুলোতে সরবে বিরাজ করেছে এই সফ্টওয়্যারগুলো। এখন মহামারির ধাক্কা হ্রাস পেলেও রেশ রয়ে গেছে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর সুবিধার। নিত্যদিন ছোট ছোট ফিচার সংযোজনের মাধ্যমে এখনো জীবনকে সহজ করে যাচ্ছে সফ্টওয়্যারগুলো।
পড়ুন: অনলাইনে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে প্রয়োজনীয় পাঁচ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম
স্কাইপের ব্যবহারটা আগে থেকেই ছিলো। কিন্তু অংশগ্রহনকারিদের সংখ্যা এবং মিটিং-এর সময় সীমার উপর বিপ্লব ঘটিয়েছে জুম, মাইক্রোসফ্ট টিম এবং গুগল হ্যাঙআউটের মত ওয়েব অ্যাপগুলো। তাই চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে চাওয়া না হলেও এগুলোর ব্যাপারে ব্যবহারিক জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।
ডিজিটাল শিডিউল প্ল্যানার
প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি সহ এর কাজগুলো সুষ্ঠভাবে পরিচালনার নিমিত্তে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট টিম পরিকল্পনা প্রস্তুত করে দেন। সে পরিকল্পনা মতে প্রত্যেক অনুষদের কর্মচারিদের জন্য নির্ধারিত হয় সুনির্দিষ্ট কাজ। এই কাজগুলো তদারক করার মাধ্যমে যাচাই করা হয় কর্মচারির কাজের অবস্থা। একই সাথে পরিমাপ করা হয় প্রতিষ্ঠানের সফলতা। স্বয়ংক্রিয় না হলেও অনেক আগে থেকেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এই কাজের জন্য মাইক্রোসফ্ট আউটলুক ব্যবহার করে আসছেন।
ইমেইলের সাথে টাস্ক ম্যানেজমেন্টের সংযোজন হওয়াতে অনুষদের প্রধান আউটলুকের মাধ্যমে তার অধীনস্থ কর্মচারিদের কাজ দেখাশোনা করতে পারেন। বর্তমানে এই পরিচালনাকে আরো সহজতর করেছে গুগল ক্যালেন্ডার। গুগল হ্যাঙআউট বা মীট, মিটিং মিনিটের সংযোজনের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে পেপার-ওয়ার্ক প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে বললেই চলে।
পড়ুন: চাকরির সিভি ও পোর্টফোলিও তৈরির প্রয়োজনীয় কিছু ওয়েবসাইট
সোশ্যাল মিডিয়া
আপাত দৃষ্টে ফেসবুক, টুইটার, পিন্টারেস্ট-এর ব্যবহারে শেখার কিছু নেই মনে হলেও বর্তমান পরিস্থিতির চাকরিগুলো সেই জ্ঞানের দাবি রাখে। বিশেষ করে লিঙ্ক্ডইন প্রোফাইলকে এখন পোর্টফোলিওর জায়গায় বিবেচনা করা হয়। অনেক ইন্টারভিউতে চাকরিপ্রার্থীকে যাচাইয়ের জন্য তার ফেসবুক প্রোফাইল চেক করা হয়।
এছাড়াও শুধু টাইমলাইন সাজানো পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই, এর গুরুত্ব ছাড়িয়ে গেছে বিজনেস পেজ তৈরি থেকে শুরু করে গ্রুপ তৈরি করে তা ম্যানেজ করা পর্যন্ত। যারা ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার ফিচারগুলো বেশ আয়ত্ত্ব করে নিয়েছে তাদের জন্য অফিসের এই কাজগুলো প্রায় প্রতিদিনকার জীবন যাপনের মত।
ফটো ইডিটিং টুল্স
নানা ব্যাবসায়িক নথি তৈরির সময় তথ্যাদির প্রমাণ ও যৌক্তিকতা বাড়াতে প্রয়োজন হয় কন্টেন্ট বৈচিত্র্যের। আর এখানে আসে ছবি সম্পাদনার বিষয়টি। এর জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনে খুব পটু হতে হবে তা নয়। গুগল ডক বা শীটে তথ্যগুলো তৈরি জন্য দরকারি চাহিদা পূরণ করলেই হবে।
পড়ুন: এসআই পদে নিয়োগ: বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিকের মাসব্যাপী পরীক্ষা শুরু ৯ মে
এক্ষেত্রে জনপ্রিয় ডিজাইনল টুল্স এডবি ইলাস্ট্রেটর ও ফটোশপ জানাটা ভালো। অন্তত বিভিন্ন উৎস থেকে নেয়া একটি ফটোকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য যথাযথ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। আজকাল অনেকে ক্যানভা ব্যবহার করছেন মুলধারার ডিজাইন সফ্টওয়্যারের বিকল্প হিসেবে।
ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট
একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অফিস যেমন প্রয়োজনীয় তেমনি বর্তমানে তার ডিজিটাল উপস্থিতির জন্য একটি ওয়েবসাইট থাকাটাও জরুরি। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো শুধু অনলাইন স্টোরের মাধ্যমেই তাদের কর্মচারি ও ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। ফলশ্রুতিতে চাহিদা তৈরি হয়েছে সেই ওয়েবসাইটের জন্য উপযুক্ত ম্যানেজারের।
প্রতিটি ওয়েবসাইটকে পরিচালনার জন্য এর পেছনে থাকে একটি সিএমএস(কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)। এর মাধ্যমেই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন তথ্যগুলো দেখা যায়। এই সিএমএস চালানোর জন্য কোন প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। সিএমএসের ফাংশনগুলো ওয়েব ডেভেলপাররা সব আগে থেকেই ঠিক করে রাখবেন। আর ওয়েবসাইট ম্যানেজাররা সে অনুযায়ী শুধু তথ্য ইনপুট দিবেন। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সিএমএসের মধ্যে আছে ওয়ার্ডপ্রেস।
পড়ুন: ব্যাংকে চাকরি: সাউথইস্ট ব্যাংকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি , লাগবে না অভিজ্ঞতা, বেতন ৩৬,০০০
শেষাংশ
এই ১০টি সফ্টওয়্যার জানা থাকলে চাকরির প্রতিযোগিতায় অনেকটা এগিয়ে থাকা যাবে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, কর্মজীবনে প্রতিক্ষেত্রে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়। সেজন্য প্রয়োজন হালনাগাদকৃত অথবা নতুন নতুন জ্ঞান। যারা প্রযুক্তির সর্বশেষ উন্নয়নের সাথে নিজেদেরও আপডেট করে রাখতে পারেন তাদের অবস্থান স্বভাবতই অন্যদের থেকে অনেকটা এগিয়ে যায়। তাছাড়া সহজে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণে প্রযুক্তিময় পরিবেশের প্রতি অনেকেরই বিশেষ করে বায়োজ্যেষ্ঠ কর্মচারিদের বেশ ভয় থাকে। তাই যুবকদের বিশেষ করে টেক স্যাভিদের উপর রীতিমত অন্ধভাবে নির্ভর করতে শুরু করে গোটা প্রতিষ্ঠান।
২ বছর আগে