রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি
দেশের প্রথম ‘যুদ্ধশিশু’র রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন সিরাজগঞ্জের মেরিনা
বাংলাদেশের প্রথম ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মেরিনা খাতুন।
রাষ্ট্রীয় এই স্বীকৃতি প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালকের অনুরোধ করা পত্রটি ‘যুদ্ধশিশু’ মেরিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তাড়াশের উত্তর পাড়া গ্রামের মৃত ফাজিল আকন্দের বিধবা স্ত্রী পচি বেওয়াকে (বর্তমানে মৃত) বাড়ি থেকে স্থানীয় রাজাকাররা অস্ত্রের মুখে তুলে পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে আটক রেখে হানাদার বাহিনী তার ওপর পাশবিক শারীরিক নির্যাতন চালানোর পর জন্ম হয় যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনের। অবশ্য এ কারণে ২০১৮ সালে পচি বেওয়াকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেটভুক্তও করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সন পদক অর্জন করেছেন বাংলাদেশের স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম
স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত সম্বলিত পত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মেরিনা খাতুন বলেন, স্বাধীনতার এতো বছর পর দেশের প্রথম ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় সে খুবই খুশি ও আনন্দিত। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জামুকার মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। সেইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো যুদ্ধশিশুদের আর্থিকভাবে সম্মানী ভাতা প্রদানের দাবিও জানিয়েছেন মেরিনা।
এর আগে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের বীরাঙ্গনা পচি বেওয়ার (মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত) মেয়ে মেরিনা খাতুন ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জামুকার মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী জামুকার ৮২তম সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং ৯.১৩ নম্বর আলোচ্য সূচিতে আলোচনা শেষে সর্বসম্মতভাবে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে মেরিনা খাতুনকে স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেলেন মাগুরার মেরিনা
৫০ চিন্তাবিদের তালিকায় স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম
১ বছর আগে
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে রুল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর সশস্ত্র প্রতিবাদকারীদের চিহ্নিত করে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে ও পুনর্বাসনে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর সশস্ত্র প্রতিরোধ যোদ্ধাদের চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি/কমিশন কেন গঠন করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রবিবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, সংস্কৃতি সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. বাকির উদ্দিন ভুঁইয়া। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আবু হানিফ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আরও পড়ুন: ঢাবি শিক্ষিকা সামিয়া রহমানের পদাবনতির সিদ্ধান্ত অবৈধ: হাইকোর্ট
পরে অ্যাডভোকেট বাকির উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যরা ও তার নিকটাত্মীয়দের নৃশংসভাবে হত্যার পর বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। তৎকালীন সামরিক সরকার মিছিল-মিটিং সব বন্ধ করে দেয়। তখন মানুষের মনে একটা ভীতিকর অবস্থা তৈরি হয়। ওই দিনই নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা, যশোর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ হয়।
পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে জাতীয় মুক্তি বাহিনী ও চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় মুজিব বাহিনী নামে দুটি সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী গঠিত হয়। তখন কয়েক হাজার বঙ্গবন্ধু ভক্ত ছাত্র-তরুণ-যুবক এ দুই বাহিনীতে যোগদান করেন। তারা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে লিপ্ত হন। তাদের প্রতিরোধের কারণে তৎকালীন সরকার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ওপর জুলুম নির্যাতন শুরু করে। ওই সময়ের ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার জাতীয় মুক্তি বাহিনী ও জাতীয় মুজিব বাহিনীকে নানাভাবে সহযোগিতা করত।
কিন্তু ১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় মোর্চা সরকার’ জাতীয় মুক্তি বাহিনী ও জাতীয় মুজিব বাহিনীর সদস্যদেরকে বাংলাদেশের বিডিআরের কাছে হস্তান্তর করলে তাদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্দিন, জেল, জুলুম ও নির্যাতন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৪৭ বছর পার হলেও এখনও সেই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অনেকেই চরম কষ্ট-অবহেলায় জীবন যাপন করছেন।
গত ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর সশস্ত্র প্রতিবাদকারীদের চিহ্নিত করে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। নেত্রকোণার আনিস খোন্দকার, সাইদুল কাদির, সুনামগঞ্জের ইউসুফ আলী, পরিমল সরকার ও গাজীপুরের স্বপন চন্দ হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি মামলার আসামিদের অব্যাহতি, দুদকের আইওকে হাইকোর্টে তলব
অস্ত্র মামলায় নূর হোসেনের যাবজ্জীবন
২ বছর আগে