বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর সশস্ত্র প্রতিবাদকারীদের চিহ্নিত করে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে ও পুনর্বাসনে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর সশস্ত্র প্রতিরোধ যোদ্ধাদের চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি/কমিশন কেন গঠন করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রবিবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, সংস্কৃতি সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. বাকির উদ্দিন ভুঁইয়া। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আবু হানিফ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আরও পড়ুন: ঢাবি শিক্ষিকা সামিয়া রহমানের পদাবনতির সিদ্ধান্ত অবৈধ: হাইকোর্ট
পরে অ্যাডভোকেট বাকির উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যরা ও তার নিকটাত্মীয়দের নৃশংসভাবে হত্যার পর বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। তৎকালীন সামরিক সরকার মিছিল-মিটিং সব বন্ধ করে দেয়। তখন মানুষের মনে একটা ভীতিকর অবস্থা তৈরি হয়। ওই দিনই নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা, যশোর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ হয়।
পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে জাতীয় মুক্তি বাহিনী ও চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় মুজিব বাহিনী নামে দুটি সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী গঠিত হয়। তখন কয়েক হাজার বঙ্গবন্ধু ভক্ত ছাত্র-তরুণ-যুবক এ দুই বাহিনীতে যোগদান করেন। তারা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে লিপ্ত হন। তাদের প্রতিরোধের কারণে তৎকালীন সরকার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ওপর জুলুম নির্যাতন শুরু করে। ওই সময়ের ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার জাতীয় মুক্তি বাহিনী ও জাতীয় মুজিব বাহিনীকে নানাভাবে সহযোগিতা করত।
কিন্তু ১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় মোর্চা সরকার’ জাতীয় মুক্তি বাহিনী ও জাতীয় মুজিব বাহিনীর সদস্যদেরকে বাংলাদেশের বিডিআরের কাছে হস্তান্তর করলে তাদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্দিন, জেল, জুলুম ও নির্যাতন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৪৭ বছর পার হলেও এখনও সেই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অনেকেই চরম কষ্ট-অবহেলায় জীবন যাপন করছেন।
গত ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর সশস্ত্র প্রতিবাদকারীদের চিহ্নিত করে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। নেত্রকোণার আনিস খোন্দকার, সাইদুল কাদির, সুনামগঞ্জের ইউসুফ আলী, পরিমল সরকার ও গাজীপুরের স্বপন চন্দ হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি মামলার আসামিদের অব্যাহতি, দুদকের আইওকে হাইকোর্টে তলব