এএনআই
আল্লাহ হয়তো আমাকে সাহায্য করছেন: হামলায় বেঁচে যাওয়া প্রসঙ্গে এএনআইকে শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা হত্যা করেছিল তাদের দৃষ্টি এড়াতে তিনি তার সন্তানদের নিয়ে দিল্লির পান্ডারা রোডে একটি ভিন্ন পরিচয়ে বসবাস করতেন।
এই ঘটনার প্রায় পাঁচ দশক পরে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই) দেয়া এক সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রী তার এ ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
১৯৭৫ সালে খুব অল্প সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী বর্ণনা করেন হাসিনা। যখন তিনি তার পরমাণু বিজ্ঞানী স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে জার্মানিতে যান।
১৯৭৫ সালের ৩০শে জুলাই শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে বিদায় দিতে তার পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দরে এসেছিলেন। এটা একটা সুখকর বিদায় ছিল এবং শেখ হাসিনার কোনো ধারণা ছিল না যে এটাই বাবা-মায়ের সঙ্গে তার শেষ দেখা হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায় সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশে থাকায় আমি একই বাড়িতে (আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে) থাকতাম। সেদিন সবাই সেখানে ছিল: আমার বাবা, মা, আমার তিন ভাই, দুই ভাইয়ের স্ত্রী। তারা আমাদের বিদায় দিতে বিমানবন্দরে এসেছিলেন... সেটাই ছিল শেষ দিন, আপনারা জানেন।’
পনেরো দিন পরে ১৫ আগস্ট সকালে শেখ হাসিনা এমন খবর পান, যা তার জন্য বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। তার পিতার মৃত্যুর খবরেই ভয়াবহতা থামেনি, এরপর একে একে তিনি তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মৃত্যুর কথা জানতে পারেন।
শেখ হাসিনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল। অবিশ্বাস্য যে কোনো বাঙালি এটা করতে পারে। কিন্তু তখনও আমরা জানতে পারিনি কিভাবে, আসলে কি ঘটেছে। আমরা শুধুমাত্র জানতে পারি যে একটি অভ্যুত্থান হয়েছিল এবং তারপরে আমরা শুনেছিলাম যে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানতাম না যে পরিবারের সকল সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমদিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া দেশগুলোর মধ্যে ভারত একটি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিসেস ইন্দিরা গান্ধী অবিলম্বে খবর পাঠিয়েছিলেন যে তিনি আমাদের, মানে নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতে চান। আমরা আশ্রয়ের প্রস্তাব পেয়েছি... বিশেষ করে যুগোস্লাভিয়া থেকে মার্শাল টিটো ও মিসেস গান্ধীর কাছ থেকে। আমরা সেখানে (দিল্লি) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কারণ আমরা ভেবেছিলাম যে আমরা যদি দিল্লি যাই, সেখান থেকে আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে পারব। এবং তারপরে আমরা জানতে পারব পরিবারের কতজন সদস্য এখনও বেঁচে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘এটি একটি খুব কঠিন সময় ছিল।’
তিনি আরও বলেন, জার্মানিতে নিযুক্ত তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীই প্রথম ব্যক্তি যিনি তার পরিবারের গণহত্যার বিবরণ দেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কয়েক মুহুর্তের জন্য, আমি জানতাম না আমি কোথায় আছি। কিন্তু আমি আমার বোনের কথা ভেবেছিলাম... সে আমার থেকে ১০ বছরের ছোট। তাই, আমি ভাবলাম সে এটা কিভাবে নেবে। এটা তার জন্য খুব কঠিন ছিল... দিল্লিতে, প্রথমে, তারা আমাদেরকে সমস্ত নিরাপত্তাসহ একটি বাড়িতে রেখেছিল, কারণ তারাও আমাদের নিয়ে চিন্তিত ছিল।’
তিনিও সম্ভাব্য (হত্যার) টার্গেট বলে মনে করেন কিনা জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, যারা তার বাবাকে হত্যা করেছে, তারা অন্য আত্মীয়দের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে এবং তার আত্মীয়দের কয়েকজনকে হত্যা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিহত ১৮ জন সদস্যের মধ্যে বেশিরভাগই আমার আত্মীয়, কিছু গৃহকর্মী ও তাদের সন্তান এবং কিছু অতিথি নিহত হন।
ষড়যন্ত্রকারীদের স্পষ্ট লক্ষ্য ছিল- বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কেউ যেন আর ক্ষমতায় না আসে।
তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর...তারা তাকেও রেহাই দেয়নি। আমরা যখন দিল্লিতে ফিরে আসি, তখন সম্ভবত ২৪শে আগস্ট… তখন আমি প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধীর সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাদের ডাকলেন... সেখানে আমরা জানতে পারলাম কেউ বেঁচে নেই। তিনি আমার স্বামীর জন্য একটি চাকরি এবং এই পান্ডার রোডের বাড়ির জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করেছিলেন। আমরা সেখানেই থাকলাম।
‘প্রথম ২-৩ বছর এটা মেনে নেয়া খুব কঠিন ছিল। আমার বাচ্চারা, আমার ছেলের বয়স ছিল মাত্র চার বছর। আমার মেয়ে, সে ছোট ছিল… দুজনেই কাঁদত। তারা আমার মা, আমার বাবার কাছে ফিরে যেতে চাইতো এবং তারা এখনও আমার ছোট ভাইকে সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছে’, আর যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এত কিছু হারিয়ে গেলেও, হাসিনাও বুঝতে পেরেছিলেন যে তাকে আগামীর কথা ভাবতে হবে।
এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘এই অপরাধ, তারা শুধু আমার বাবাকে হত্যা করেনি, পরো জাতিকে তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকেও দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সব কিছু, শুধু এক রাতে, সবকিছু বদলে গেল। এবং সেই খুনিরা... তারা এখনও আমাদের তাড়া করছে। আমরা কোথায় ছিলাম তারা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিল, তাই আমরা যখন পান্ডারা রোডে থাকতাম, তখন আমাদের নাম পরিবর্তন করতে হয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবং আপনি নিজের নাম, নিজের পরিচয় ব্যবহার করতে পারছেন না এটা খুবই বেদনাদায়ক ছিল।’
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমি আমার দেশে ফিরে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এত বড় দলের দায়িত্ব নেয়ার কথা আমি কখনও ভাবিনি।’
সেসময় শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন এবং এমনকি ১৯৮০ সালের ১৬ই আগস্ট লন্ডনে একটি জনসভায় দেয়া ভাষণে তিনি তার বাবার খুনিদের শাস্তির দাবি জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের বিচারের আওতায় আনা বা তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য, যাতে তারা বিচারের আওতায় আসে, কারণ তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছিল। একটি অধ্যাদেশ ছিল... খুনিরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এবং দায়মুক্তি পেয়েছে... তারা দাবি করেছিল যে হ্যাঁ, তারা এই অপরাধ করেছে এবং তারা খুব সোচ্চার ছিল। কারণ তারা ভেবেছিল তারা খুব শক্তিশালী।’
সে সময় তিনি অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করার ক্যাম্পেইন চালিয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘একদিকে আমরা সবাইকে হারিয়েছি, অন্যদিকে আমি বিচার চাইতে পারি না। ন্যায়বিচার করা হচ্ছিল না। তাই এমন অবস্থা হয়েছিল। তারপর আবার, ১৯৮০ বা ৮১’র দিকে আমি দিল্লিতে ফিরে আসি।’
শেখ হাসিনা বলেন, এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছিল। ‘আওয়ামী লীগের একটি সম্মেলন হয়েছিল, এবং সে সময় তারা আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে দলের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেছিল।’
আরও পড়ুন:নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনে অতিরিক্ত খাদ্য আমদানির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
তিনি জানান, অবশেষে তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসে আবার দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শীর্ষস্থানে পৌঁছেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, তারা আমাকে বেশ কয়েকবার হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমি বেঁচে গিয়েছি। দিবালোকে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। আমি জানি না কিভাবে বেঁচে গেলাম। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা আমাকে ঢেকে দিয়েছে, মানব ঢাল বানিয়েছে, তাই তাদের গাঁয়ে সব স্প্লিন্টার ঢুকেছে কিন্তু আমি... আমি বেঁচে গেছি... তারা আমার মিটিংয়ে একটা বিশাল বোমা রেখেছিল... কোনোরকমে এটা আবিষ্কৃত হলো... তাই, আমি আবার বেঁচে গেলাম। আমি জানি না... আল্লাহ হয়তো আমাকে সাহায্য করছেন, হয়তো আল্লাহ আমাকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন পালনের জন্য।’
আরও পড়ুন:রাজনীতিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত জয় ও দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ একটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলছে: প্রধানমন্ত্রী
২ বছর আগে
রাজনীতিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত জয় ও দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার সরকারের অনেক ডিজিটাল উদ্যোগের পিছনে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ছিলেন, তবে রাজনীতিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত তার (জয়ের) এবং দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই-এর সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছেলে সম্পর্কে এসব কথা বলেন। বর্তমানে জয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন... সে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ। এটা তার ব্যাপার, তবে সে দেশের জন্য কাজ করছে… আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ (উদ্যোগ) বাস্তবায়ন করেছি, এসব স্যাটেলাইট বা সাবমেরিন ক্যাবল বা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ-এই সবই তার আইডিয়া এবং সে আমাকে সহায়তা করছে…কিন্তু দলে বা মন্ত্রিসভায় কখনই সে কোনো পদ নেয়ার কথা ভাবেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, দলীয় একটি অনুষ্ঠানে জয়ের পদ নেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জোরালো দাবি ছিল।
তিনি বলেন, ‘এমনকি আমাদের দলীয় সম্মেলনেও তাকে একটি পদ দেয়ার জোরালো দাবি উঠেছিল। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি চাও মাইক্রোফোনে তা বলো, এবং সে তা করেছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ একটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, সেসময় জয় বলল, ‘আমি এই মুহূর্তে দলে কোনো পদ চাই না। বরং যারা এখানে কাজ করছেন, তারা যেন এই পদটি পান। আমি কেন একটি পদ দখল করে থাকবো? আমি আমার মায়ের সঙ্গে আছি, আমি দেশের জন্য কাজ করছি এবং আমি তাকে সহায়তা করছি... আমি এটি করে যাব।’
সাক্ষাৎকারে তিনি তার জাতির পররাষ্ট্রনীতি গঠনে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- যা আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে তার ভাষণে বলেছিলেন। এবং আমরা তার আদর্শ অনুসরণ করি। আমার বক্তব্য হল আমাদের জনগণের ওপর ফোকাস করা উচিত... কিভাবে তাদের একটি ভালো জীবন দেয়া যায়... আমাদের একটি শত্রু আছে। সেটা হলো দারিদ্র্য। সুতরাং, আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’
হাসিনা বলেন, তিনি সবসময় মনে করেন নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর উচিত আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ ও মতভেদ দূর করা। ‘...চীন ও ভারতের মধ্যে যদি কোনো সমস্যা হয়, আমি তাতে নাক গলাতে চাই না। আমি আমার দেশের উন্নয়ন চাই এবং ভারত যেহেতু আমাদের পাশের প্রতিবেশি, তাই আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো। আমাদের অনেক দ্বিপক্ষীয় সমস্যা ছিল, এটা সত্য, কিন্তু আমরা অনেক সমস্যার সমাধানও করেছি।’
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) এর সঙ্গে তার সাক্ষাত্কারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকার ছিল উন্নয়ন এবং তার জনগণের জন্য উন্নতি করতে পারে এমন যে কোনও দেশের সাহায্য নিতে তারা ইচ্ছুক।
আরও পড়ুন: ‘শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও সংখ্যালঘুরা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’
‘আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করা যায়, বাংলাদেশ-ভারত সেটাই করছে’: এএনআইকে প্রধানমন্ত্রী
২ বছর আগে
‘শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও সংখ্যালঘুরা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত হামলার বিষয়ে বলেছেন, তার সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ব্যাহত করার যে কোনো প্রচেষ্টা দ্রুত মোকাবিলা করা হবে।
ভারত সফরের আগে এএনআইকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘যতদিন আমরা ক্ষমতায় থাকব, এটিকে আমরা অগ্রাধিকার দিব এবং আমি সবসময় তাদের (সংখ্যালঘু সম্প্রদায়) বলি যে আপনারা আমাদের নাগরিক… এটি আপনার দেশ।’
শেখ হাসিনা বলেছেন, উগ্রবাদ শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, ভারতসহ অনেক দেশেই এটি ঘটে থাকে।
তিনি বলেন, চলমান চরমপন্থা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু ঘটনা ঘটে, তবে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই... এগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি। কিন্তু আপনি ভালো করেই জানেন, এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের সংখ্যালঘুরাও অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
তিনি বলেন, ‘আপনি জানেন বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং আমাদের এখানে অনেক ধর্ম আছে… এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি রয়েছে। সুতরাং, একটি বা দুটি ঘটন যখন ঘটে, দ্রুত... বিশেষ করে আমার দল... আমার দলের কর্মীরা এবং আমার সরকারও এটি সম্পর্কে খুব সচেতন। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লগার এবং অন্য সম্প্রদায়ের ভূমিকা সম্পর্কে হাসিনা বলেন, লোকজন একে অপরকে আঘাত করার জন্য জিনিস লিখবে তা কাম্য নয় এবং সরকার এই জাতীয় ঘটনা রোধ করার চেষ্টা করছে।
হাসিনা বলেন, ‘দেখুন, চরমপন্থা সর্বত্র রয়েছে... এমনকি ভারত ও অন্যান্য দেশেও... সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে এটা আজকাল... খুব খারাপ হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশকে শক্তিশালী করার জন্য বঙ্গবন্ধু সবকিছু করেছিলেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
হাসিনা এএনআইকে বলেন, কিছু ঘটনা ঘটেছে, বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য রয়েছে, যেখানে সমস্ত ধর্মের মানুষ সমস্ত উদযাপনে অংশ নেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা একসঙ্গে উদযাপন করি..., দুর্গাপূজার সময় লোকজন একসঙ্গে উদযাপন করে। সুতরাং, ধর্মীয় সম্প্রীতি আছে তবে এখন এখানে এবং সেখানে কিছু ঘটনা ঘটছে... আমাদের সরকার দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।’
ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু চোরাচালানের ব্যাপকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং সমস্যার তীব্রতাও অনেক কমে গেছে।
আরও পড়ুন:‘আলোচনার মাধ্যমে মতপ্রার্থক্য দূর করা যায়, বাংলাদেশ-ভারত সেটাই করছে’: এএনআইকে প্রধানমন্ত্রী
‘সেপা বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য লাভজনক’
২ বছর আগে
‘আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করা যায়, বাংলাদেশ-ভারত সেটাই করছে’: এএনআইকে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো সমাধান করা উচিত, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং ভারত ঠিক সেটাই করছে।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশকে ‘পরীক্ষিত বন্ধু’ হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভারত প্রয়োজনের সময়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল, প্রথমে ১৯৭১ সালে এবং তারপরে পরবর্তী সময়েও।
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান আমরা সবসময় স্মরণ করি। ১৯৭৫ সালে যখন আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছিলাম, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আমাদের ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন... আমরা প্রতিবেশী, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং আমি সবসময় আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বকে অগ্রাধিকার দেই।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ঢাকা-দিল্লির বহুমাত্রিক সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রত্যাশা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় পূর্ব ইউরোপে আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগের প্রশংসা করেন হাসিনা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এএনআইকে দেয়া সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’ এর অধীনে প্রতিবেশী দেশগুলোতে কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের মোদি সরকারের প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে (মোদি) ধন্যবাদ জানাতে চাই… রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে এই যুদ্ধের সময় আমাদের অনেক ছাত্র আটকা পড়েছিল এবং তারা আশ্রয়ের জন্য পোল্যান্ডে গিয়েছিল। যখন তারা ভারতীয় ছাত্রদের সরিয়ে নিয়েছিল, তখন তারা আমাদের ছাত্রদেরও দেশে ফিরিয়ে আনে... আপনি স্পষ্টভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। এই উদ্যোগের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
আরও পড়ুন: তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি ভারতের ওপর নির্ভর করছে: প্রধানমন্ত্রী
হাসিনা তার দেশের টিকাদান কর্মসূচি সম্পর্কেও বিস্তারিত জানান। বাংলাদেশ তার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমাদের দেশের লোকেরা, বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে, এমনকি কিছু শহরেও, আমি অনেক লোককে ভ্যাকসিন নিতে খুব অনিচ্ছুক দেখেছি। তারা নিতে চায় না... আপনি জানেন... সুচের ছিদ্র, তাই... আমাদের বুঝাতে দিতে হবে। আমরা তাদের বলেছিলাম যে এটি কিছুই নয়, এটি আপনার জীবন বাঁচাবে… এই ভ্যাকসিন মৈত্রী... খুব ভালো উদ্যোগ।’
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তাদের নাগরিকদের উন্নতির জন্য হওয়া উচিত।
হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ এর সময়কালেও ভারতীয় নেতৃত্ব তাদের ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিল। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উভয়েই স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় বাংলাদেশ সফর করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং আপনার রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে তারা দুজনই বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে বেশ কিছু চুক্তির সম্ভাবনা
২ বছর আগে