অস্থিরতা
খালেদা জিয়ার ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্তে জবিতে অস্থিরতা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধিতা করছে ছাত্র সংসদের একাংশ।
শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যেকোনো ধরণের ‘ব্যক্তি পূজা’র বিরোধিতা করেছে। তারা বিশ্বাস করে যে ম্যুরালটি ব্যক্তি পূজার নামান্তর।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এটি কোনো ম্যুরাল নয়, এটি তার ছবি সম্বলিত একটি ফলক।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ফলক বা ম্যুরাল স্থাপনের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন একদল শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে তারা ঘোষণা দেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে বুধবার তারা ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করে একটি আবেদনে গণ সাক্ষর সংগ্রহ শুরু করবেন। রবিবার শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগসহ এই আবেদন জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। পাশাপাশি দাবি মানা না হলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, 'আমরা সম্প্রতি জেনেছি যে, ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ১১ ফুট লম্বা ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে আত্মপ্রচারের জন্য ম্যুরাল স্থাপনের রীতিকে জনপ্রিয় করে তোলার যে পথ হাসিনা দেখিয়েছিলেন প্রশাসন সেই পথেই হাঁটছে। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এই ধরনের ব্যক্তি পূজাকে ব্যবহার করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি বিভাগের ১৩তম ব্যাচের ফরহাদ হোসেন, লোক প্রশাসন বিভাগের ১৬তম ব্যাচের সূর্ণা আক্তার রিয়া ও ইংরেজি বিভাগের ১৭তম ব্যাচের সিফাত হাসান সাকিব।
জবাবে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজামুল হক বলেন, 'প্রশাসনিক ভবনের সামনে শুধু একটি ছোট ফলক থাকবে, তাতে ম্যুরাল থাকবে না। যার জন্য ফলকটি লাগানো হচ্ছে, তিনি যদি এই বিতর্ক সম্পর্কে জানতেন, তাহলে তিনি নিজেও কষ্ট পেতেন।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র বিষয়ক কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. রইচ উদ্দিন বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ম্যুরাল সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে, এটি কোনও ম্যুরাল হবে না, তবে কেবল একটি ছবি সম্বলিত একটি ফলক হবে।’
১ মাস আগে
আশুলিয়ায় অস্থিরতা: ৩ কারখানাতে লুটপাট, ৫০ কারখানা ছুটি ঘোষণা
আশুলিয়ায় আবারও বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। অন্যদিকে আলিফ ভিলেজ লিমিটেড গ্রুপের তিনটি তৈরি পোশাক কারখানায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। পরে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে অন্তত ৫০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় শিল্পাঞ্চলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে ১১ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
হামলা ও ভাঙচুর হওয়া তৈরি পোশাক কারখানাগুলো হলো- আশুলিয়া ইউনিয়নের টঙ্গাবাড়ি এলাকার আলিফ ভিলেজ লিমিটেডের আলিফ এমব্রয়ডারি ভিলেজ লিমিটেড, লাম মিম অ্যাপারেলন্স লিমিটেড, লাম মিম অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড।
আরও পড়ুন: আশুলিয়ায় স্বামী ও স্ত্রীসহ ৪ জনের লাশ উদ্ধার
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।
আলিফ ভিলেজ লিমিটেড গ্রুপের আশুলিয়া জোনের ম্যানেজার মো. রেফাই সিদ্দিক বলেন, সকাল থেকেই কারখানায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ শ্রমিক কাজ করছিলেন। এর কিছু সময় পর ২০০ থেকে ৩০০ মাস্ক পড়া লোকজন হঠাৎ করে তিনটি কারখানায় একসঙ্গে হামলা করে। কারখানাগুলোর মূল গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তারা।
তিনি আরও বলেন, দুর্বৃত্তরা কারখানার ডিজিটাল মেশিন, কম্পিউটার, ফায়ার কন্ট্রোল প্যানেল, বিদ্যুতের সাব স্টেশন, মেডিকেল সরঞ্জামাদি, সিসি টিভি, এয়ার কন্ডিশনার, গাছের গার্ডেনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করে। এছাড়াও কারখানা থেকে মুল্যবান পোশাক, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, মেশিন লুটপাট করে বলে জানান রেফাই সিদ্দিক।
কারখানার ডিজিটাল মেশিনগুলো ভেঙে ফেলায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ভাঙচুরে বাধা দেওয়ায় কারখানার নিরাপত্তাকর্মীসহ ২০ জনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে দুর্বৃত্তরা।
অন্যদিকে হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল বাড়ানো, বকেয়া বেতনসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন তৈরি পোশাক কারখানা ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা।
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী-পুলিশের যৌথ অভিযানে আশুলিয়ায় শতাধিক কারখানার কার্যক্রম শুরু
বেতন সমস্যা সমাধান চেষ্টার মধ্যেই শনিবার আশুলিয়ায় ৪৫টি কারখানা বন্ধ
২ মাস আগে
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনীতি জিম্মি: ব্যবসায়ী নেতারা
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
রাজধানীর নয়াপল্টনে তাদের মহাসমাবেশ বানচাল হওয়ার একদিন পর গত ২৯ অক্টোবর থেকে বিরোধী দল বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো দফায় দফায় অবরোধ ও হরতাল দেওয়া শুরু করেছে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম। প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক খাতে ২০ দিনের হরতাল ও অবরোধের (২৯ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর) আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা (প্রতিদিন ৬৫০০ কোটি টাকা)।
তিনি বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে দিনে ৬৫০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমরা বারবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক ক্ষতির কারণ এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছি।’
হরতাল-অবরোধের প্রচার-প্রচারণা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে পুরোপুরি ব্যাহত করতে ব্যর্থ হলেও, এই অস্থিরতা পরিবহন খাতকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে এবং পণ্য পরিবহনকে ব্যাহত করেছে; যার ফলে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি সরকার প্রত্যাখ্যান করায় বিরোধীরা রাস্তায় অবস্থানের আশ্রয় নিয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে বৃহত্তর সংলাপের প্রস্তাব ডিসিসিআই সভাপতির
পরিবহন মালিকেরা জানায়, এ খাতের আনুমানিক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ১৬১ কোটি টাকা। এ হিসেবে ২০ দিনের হরতাল-অবরোধে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা।
ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ইউএনবিকে বলেন, ‘হরতাল ও অবরোধের ফলে আর্থিক ক্ষতি বহুমাত্রিক এবং আপনি এটি শুধু আর্থিক পরিসংখ্যানে হিসাব করতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী দল ও বৈশ্বিক ক্রেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তারপরে তারা তাদের ক্রয় আদেশ এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলো আরও সুরক্ষিত ও স্থিতিশীল এলাকায় সরিয়ে নেয়।
থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘যখন একটি বড় বৈশ্বিক ক্রেতা একটি দেশ থেকে অর্ডার স্থানান্তর করে, তখন ছোট ক্রেতারাও তাদের অনুসরণ করে।’
ড. দেবপ্রিয়র কথার প্রতিধ্বনি করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, একটি ক্রমবর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও বৈশ্বিক ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্রতিটি সেক্টরে স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, কারণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পূর্ণরূপে আর্থিক লাভ বা ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত। ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীরা সব সময়ই আর্থিক লাভের জন্য বিনিয়োগের জায়গা সন্ধান করে। তারা নিরাপদ স্থানে বিনিয়োগ করতে জন্য পছন্দ করে।
বিক্ষোভে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে পরিবহন খাতে। দূরপাল্লার আন্তঃজেলা বাসগুলো স্টেশনে অলস বসে আছে। অগ্নিসংযোগের ভয়ে সিটি বাসগুলোকে কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। এতে অনেক পরিবহন শ্রমিক কর্ম ও বেতনহীন হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ গভীর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে: ড. দেবপ্রিয়
মহাখালী আন্তঃনগর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম ইউএনবিকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ গাড়ি ছেড়ে যায়। হরতাল-অবরোধের কারণে তা এখন দিনে ১০০-তে নেমে এসেছে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, সপ্তাহে মাত্র দুই দিন বাস চালানোর ফলে শ্রমিকদের মজুরি ও জ্বালানি খরচ মেটানোটা আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যবসার মালিকরা বাস পরিচালনার খরচ ও ব্যাংক ঋণের কিস্তিসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাস চলাচল করে। মালিক ও শ্রমিকেরা মিলে প্রতিদিন ১ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা আয় করেন, গড়ে প্রায় ৪৫০০ টাকা।
তবে, এই আয় ৩২ দশমিক ৫০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। যার ফলে হরতাল-অবরোধের কারণে রাজধানীতে বাস চলাচলের জন্য দৈনিক ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।
মাহবুবুর বলেন, সাধারণ পরিস্থিতিতে সারাদেশে প্রায় ২ লাখ দূরপাল্লার বাস ট্রিপে প্রত্যেকে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করে, যার ফলে দেশব্যাপী দৈনিক ২০০ কোটি টাকা আয় হতো।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মোট ২২৮টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা শুধু অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করে।
ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখার উপসহকারী পরিচালক শাহজাহান সিকদার বলেন, একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ঘটনাস্থল থেকে বা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থেকে তথ্য পায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সময়ে অগ্নিসংযোগের আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, তবে ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমকে সেগুলো জানানো হয়নি।
যেসব ঘটনার তথ্য জানানো হয় না, সেক্ষেত্রে স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ, পরিবহন কর্মচারীরা নিজেরাই বা যাত্রী ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখার উপ-সহকারী পরিচালক বলেন, এক্ষেত্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
শাহজাহান বলেন, গত এক মাসে ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত মোট ২১৭টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সবসময়ই অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করে: আহসান মনসুর
১১ মাস আগে
রাজনৈতিক অস্থিরতায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পর্যটন খাত
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের পর্যটন খাতের জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটাসহ দেশের বেশিরভাগ জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে দর্শনার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে।
দেশব্যাপী বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর চলমান অবরোধ ও হরতালের কারণে ৯০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং বাতিল হয়ে যায়। একসময়ের ব্যস্ত হোটেল-মোটেলগুলো নজিরবিহীন শূ্ন্য হয়ে পড়েছে।
পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টের অগ্রিম বুকিং বাতিল হওয়ায় গত কয়েক সপ্তাহে দেড় হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে।
হোটেল-মোটেল মালিকরা জানান, অক্টোবরের আগে কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের ৫০-৬০ শতাংশ কক্ষ প্রতিদিন বুকিং হতো।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে নেমে মাত্র ৫-১০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। দর্শনার্থীদের বেশিরভাগই মূলত স্থানীয়। কুয়াকাটা ও সেন্টমার্টিনেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: পর্যটন শিল্পের বিকাশে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি: সেমিনারে বক্তারা
হোটেল ও মোটেল মালিকরা তাদের কর্মচারীদের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ব্যবসায়িক মন্দার কারণে কর্মী ছাঁটাই বাধ্য করে এবং বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করে।
কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি ও কুয়াকাটার মতো পর্যটন স্পটগুলোতে এর প্রভাব নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশি।
তিনি বলেন, 'পর্যটন খাতের জন্য সংকটময় সময় এখন। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বুকিং বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, সিলেট, রাতারগুল, জাফলং-তামাবিল, রাঙ্গামাটি ও পতেঙ্গা সৈকতে এই সময় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু সেগুলো এখন ফাঁকা।
তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনে তার একটি হোটেল থাকলেও এর ৯০ শতাংশ কক্ষ এখন খালি পড়ে আছে।
তিনি বলেন, 'পর্যটন মৌসুম সাধারণত অক্টোবরে শুরু হয় এবং নভেম্বরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে এই মাসে প্রায় খালি রয়েছে হোটেল ও মোটেল। অবরোধের কারণে বুকিং বাতিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিদেশি পর্যটকদের জন্য আমাদের দেশের ভিসা পদ্ধতি সহজ করা উচিত: পর্যটন প্রতিমন্ত্রী
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ জানান, লাগাতার অবরোধের কারণে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল এখন খালি পড়ে আছে।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান বলেন, দীর্ঘ অবরোধের কারণে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে।
পর্যটন খাতকে বাঁচাতে পর্যটকবাহী যানবাহন হরতাল ও অবরোধের আওতার বাইরে রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
একই সুরে কথা বলেন কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণে যেতে চায় না। নিরাপত্তাজনিত কারণে বিপুলসংখ্যক বুকিং বাতিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পর্যটন পরিকল্পনার বড় অংশ হচ্ছে চাঁদপুর আধুনিক নৌবন্দর: দীপু মনি
১১ মাস আগে
ইথিওপিয়ার আমহারা অঞ্চলে জুলাই থেকে অস্থিরতায় নিহত ১৮৩: জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, ইথিওপিয়ার আমহারা অঞ্চলে গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে অন্তত ১৮৩ জন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ দপ্তর আরও জানিয়েছে, ইথিওপিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে এবং অস্থিরতার কারণে চলতি মাসের শুরুতে জরুরি অবস্থা জারি করার পর এক হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।
আমহারা মিলিশিয়ার নাম উল্লেখ করে তারা বলেছে, ‘আটকদের মধ্যে অনেকেই আমহারা বংশোদ্ভূত যুবক বলে জানা গেছে, যাদের ফানোর সমর্থক বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আগস্টের শুরু থেকে বাড়ি বাড়ি ব্যাপক তল্লাশি চলছে এবং আমহারা অঞ্চলের পরিস্থিতি কভার করার জন্য কমপক্ষে ৩ জন ইথিওপিয়ান সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।’
আরও পড়ুন: কঙ্গোতে ভূমি অধিকার ও কর নিয়ে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ১০
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই বন্দিদের ইমপ্রোভাইজড ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। এতে নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি এবং কর্তৃপক্ষকে 'গণগ্রেপ্তার' বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
আমহারা যোদ্ধাদের দখলে থাকা শহরগুলো সামরিক বাহিনী পুনরুদ্ধার করেছে এবং মিলিশিয়া সদস্যরা গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে যাচ্ছে বলে মানবাধিকার অফিস লড়াই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশটির এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, ফিনোট সেলাম সম্প্রদায়ের একটি জনবহুল শহরের স্কোয়ারে বিমান হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন। ফেডারেল সরকার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
আরও পড়ুন: লিবিয়ায় আধা সামরিক দুই বাহিনীর সংঘর্ষে ২৭ জন নিহত
ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় টাইগ্রে অঞ্চলে ২ বছর ধরে চলা সংঘর্ষে আমহারা যোদ্ধারা সেনাবাহিনীর পাশাপাশি লড়াই করেছিল, যা নভেম্বরে একটি শান্তি চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। সংঘাতটি আমহারা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে যখন টাইগ্রে বাহিনী এক পর্যায়ে রাজধানী আদ্দিস আবাবার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে।
ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের সরকার জাতিগত ভিত্তিতে প্রায়শই বিভিন্ন সংঘাত দমনের জন্য বছরের পর বছর ধরে লড়াই করে আসছে। আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশটিকে দীর্ঘদিন ধরে হর্ন অব আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সরকার সংঘাতের অপব্যবহারের সংখ্যা বোঝার জন্য জাতিসংঘের তদন্তকারীদের দ্বারা বহিরাগত প্রচেষ্টার সমালোচনা করেছে বা সীমিত করেছে।
আরও পড়ুন: মাদাগাস্কারে ইন্ডিয়ান ওশান আইল্যান্ড গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্টেডিয়াম বিধ্বস্ত, নিহত ১২
১ বছর আগে
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু
হঠাৎ করেই দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দামে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় অবশেষে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়েছে।
দীর্ঘ ১০ মাস পর সোমবার (২৬ জুন) দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কয়েকটি কাঁচা মরিচবোঝাই ভারতীয় ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুন: হিলি ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু
এরপর বেলা সাড়ে তিনটার মধ্যে তিনটি ট্রাকে করে মোট ২১ মেট্রিক টন ৬২০ কেজি ভারতীয় কাঁচা মরিচ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সততা বাণিজ্যালয়, বিকে ট্রেডা, প্রমি এন্টারপ্রাইজ এবং রয়েল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কাচামরিচ আমদানির জন্য অনুমতিপত্র (আইপি) পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ১৯’শ মেট্রিকটন কাঁচা মরিচ আমদানি করবেন।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সততা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বাবলুর রহমান জানান, দেশে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভারত থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর ফলে গতকাল রবিবার (২৫ জুন) আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে (খামারবাড়ী) আমদানি করার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে কাঁচা মরিচ আমদানির জন্য অনুমতি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু, কেজিতে কমল ২০ টাকা
সোমবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি করা হচ্ছে। এতে বাজারে দাম অনেক কমে আসবে।
বন্দরের হিলি বাজারে কাঁচামালের খুচরা ব্যবসায়ী সাকিল জানান, প্রতিদিনই কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে সোমবার সকালে বিক্রি হয়েছে ১৬০-২০০ টাকা কেজিতে।
১ বছর আগে
অস্থিরতার মধ্যে ইরাকে জঙ্গি গোষ্ঠীর ওপর ইরানের হামলা
ইরানের শক্তিশালী রক্ষীবাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) শনিবার প্রতিবেশী ইরাকের উত্তরে অবস্থিত একটি কুর্দি জঙ্গি গোষ্ঠীর ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা (আইআরএনএ) জানিয়েছে, ঘটনাটি পুলিশ হেফাজতে এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ পর ঘটল।
ইরানের নৈতিকতা পুলিশ হেফাজতে মাহসা আমিনির (২২) মৃত্যু হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানের প্রদেশগুলোতে ও রাজধানী তেহরান জুড়ে অস্থিরতা শুরু হয়। আমিনির পরিবার ইরানের কুর্দি অঞ্চল থেকে এসেছে।
আইআরএনএ জানিয়েছে, আইআরজিসির স্থল বাহিনী ইরানের পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের মধ্য থেকে আর্টিলারির মাধ্যমে গোলা ছুড়েছে। হামলার বিষয়ে ইরাকের সীমান্ত জুড়ে অবস্থিত একটি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে প্রতিবেদনে বিস্তারিত বলা হয়নি।
আইআরএনএ আরও বলেছে যে ইরানের তথাকথিত ‘কোমলেহ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কিছু সদস্যকে গোয়েন্দা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। তবে বিশদ বিবরণ দেয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: হিজাব ইস্যু: ইরানিদের ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ
আধা-সরকারি তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইরানের সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা আইআরজিসি এর বিবৃতি উদ্ধৃত করে বলেছে যে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তাসনিম উল্লেখ করেছে, আক্রমণটি ইরাকের উত্তরে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে এবং স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার দিকে করা হয় এবং এতে মারাত্মক ক্ষতি সংঘটিত হয়।
আরও পড়ুন: ইরানে পুলিশি হেফাজতে নারীর মৃত্যু: বিক্ষোভে নিহত বেড়ে ৯
বিক্ষোভে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে: ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি
২ বছর আগে
চাকরির ইন্টারভিউয়ে নিজেকে শান্ত রাখার উপায়
ইন্টারভিউ ভীতি খুবই সাধারণ একটা বিষয়, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদের জন্য সর্বাধিক যোগ্য প্রার্থীরাও এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকেন। যিনি প্রথমবার এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন তিনিও জানেন যে চাকরির চাকরির ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণের পূর্বে এবং ইন্টারভিউ চলাকালীন নিজেকে শান্ত রাখা জরুরি। কিন্তু যখন নিয়োগকর্তাদের সামনে নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করার সময় আসে, তখন নিজের অবচেতনেই সবাই স্নায়ুবিক চাপ অনুভব করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে হঠাৎ করে হাত ঘামতে শুরু করে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় এবং মুখ শুকিয়ে যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক চাকরির ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণের পূর্বে এবং ইন্টারভিউ চলাকালীন সময় কিভাবে শান্ত থাকা যায়।
চাকরির ইন্টারভিউয়ে অস্থিরতার কারণ
মুখোমুখি প্রশ্নোত্তরের সময় নিয়োগকারীদের কয়েক জোড়া দৃষ্টির সামনে যে কোন চাকরি প্রার্থীই যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন তা হচ্ছে- কোথাও কোন ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো! একদিকে মনে-প্রাণে যখন তিনি ভাবছেন পুরো পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে তখন তিনি অনুভব করতে শুরু করেন, তার কন্ঠনালীর আশেপাশের পেশী টানটান হয়ে যাচ্ছে।
এ সময় তার কথা বলার সময় কণ্ঠস্বরে কম্পন সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে হাত-পা সহ সর্বাঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ে। মস্তিষ্কে জমা করে নিয়ে আসা তথ্যগুলো তখন একে অপরের সাথে রীতিমত দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু করে, চূড়ান্ত মুহুর্তে যেটি যে কোন একটি তথ্যের উপর মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয়। এ সময় বুকের ভেতর বাড়তে থাকা হৃদস্পন্দনের শব্দ নিজের কান-অব্দি পৌছে যায়।
পড়ুন: বাংলায় শিক্ষাদানকারী অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম: পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির অনন্য মাধ্যম
এই উদ্বেগ মূলত একটি সহজাত প্রবৃত্তি। ব্যথা বা যন্ত্রণার মত যে কোন শারীরিক সমস্যা অথবা স্নায়বিক চাপের মত যে কোন মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হলে মস্তিষ্ক এরকম প্রতিক্রিয়া দেখায়। শারীরিক বা মানসিক হুমকিগুলো মস্তিষ্কে প্রবেশের সাথে সাথেই স্নায়ুতন্ত্র বিপুল পরিমাণে অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যেগুলো স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত।
অ্যাড্রেনালিন রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন বাড়ানোর পেছনে মুল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। আর প্রাথমিক স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল রক্ত প্রবাহে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। এ সময় মস্তিষ্ক বেশি পরিমাণে গ্লুকোজ ব্যবহার করে এবং সেই সাথে টিস্যু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থের যোগান বৃদ্ধি পায়। আর শারীরিকভাবে এর প্রকাশভঙ্গি স্বরূপ উদ্বেগ সৃষ্টি হয়, যাকে স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া নামে পরিচিত।
দীর্ঘস্থায়ী চাপের সময় শরীর অত্যধিক পরিমাণে কর্টিসল তৈরি করে, যা অত্যন্ত ক্লান্ত এবং নির্দিষ্ট কাজে মনযোগ দিতে অক্ষম করে তোলে। উচ্চ কর্টিসলের মাত্রা কোন কিছু শেখার এবং স্মৃতিশক্তির সাথে যুক্ত মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশকে অবনতির দিকে নিয়ে যায়। এর সাথে অ্যাড্রেনালিনের অবিরাম নিঃসরণ যে কোন পরিস্থিতির উপর স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ হারাতে সহায়তা করে, যা একটি ইন্টারভিউয়ের জন্য খুবই দরকারি ব্যাপার।
পড়ুন: গুগলে কীভাবে চাকরি পেতে পারেন
চাকরির ইন্টারভিউয়ে নিজেকে শান্ত রাখার কৌশল
ইন্টারভিউয়ের দিনটির জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা
যে কোন কাজের জন্যই শারীরিক ও মানসিক ভাবে উপযুক্ত থাকার কোন বিকল্প নেই। ইন্টারভিউয়ের আগের রাতে ভালো ঘুম না হলে শত প্রস্তুতি থাকলেও পরের দিন সকালে কাঙ্ক্ষিত পার্ফর্মেন্স আসবে না। এছাড়া সকালের নাস্তা সঠিক সময়ে খেয়ে বের হওয়া বেশ জরুরি। হালকা খাবার বা ফল দিয়ে স্বাস্থ্যকর নাস্তা উদ্যমী দিনের সূচনা করাতে পারে। তবে ভরপেট খেয়ে ইন্টারভিউতে যাওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজেকে ভাল ভাবে হাইড্রেটেড রাখার দিকে খেয়াল দিতে হবে।
যাদের ইতোমধ্যে শরীরচর্চার অভ্যেস আছে তাদের জন্য সুখবর। নিদেনপক্ষে শারীরিক দিক থেকে কোন বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে না। আর যাদের এরকম অভ্যাস নেই তারা সম্ভব হলে ইন্টারভিউয়ের দিন ভোর বেলা কোন খোলা পার্কে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে নিতে পারেন।
সাধারণ করপোরেট সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে সুন্দর পোশাক পরিধান করা
সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছেদ মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। যে কোনও পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসী হতে চাইলে, সেই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিজের পছন্দের সেরা পোশাকটি বেছে নেওয়া উচিত। অতঃপর সেটা ভালো ভাবে পরিধান করে গেলে পোষাকের অসংলগ্নতা নিয়ে কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। চাকরিপ্রার্থী তখন নির্দ্বিধায় তার ইন্টারভিউয়ের প্রতি পূর্ণ মনযোগ দিতে পারবেন।
পড়ুন: কর্মজীবনে সাফল্যের জন্য কিভাবে নিজেকে গ্রুমিং করবেন?
তাই সাক্ষাৎকারের আগে কোম্পানির ড্রেস কোডটি ভালো করে চেক করে নেয়া জরুরি। অতঃপর নিজের ব্যক্তিত্ব এবং করপোরেট সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে এমন একটি পোশাক বেছে নিতে হবে। সুস্থ শরীর ও প্রফুল্ল মনের সংমিশ্রণে ইন্টারভিউয়ে ‘আগে দর্শনধারী’ ক্ষেত্রটিতে অনায়াসেই কৃতকার্য হওয়া যাবে। এরপরে সম্পূর্ণ মনযোগ দিয়ে ‘পরে গুণ বিচারী’ ক্ষেত্রটিতে কৃতকার্য হওয়া পালা।
ইন্টারভিয়ের জন্য সর্বতভাবে প্রস্তুত থাকা
প্রথমেই সঠিক সময়ে উপস্তিতিটা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাফিক জ্যামের কথা মাথায় রেখে অনেকটা সময় হাতে নিয়ে আগে ভাগেই ঘর থেকে ইন্টারভিউয়ের জন্য বের হয়ে যেতে হবে। এখানে ভুল করা মানেই ইন্টারভিউয়ের পুরোটা সময় ধরে নিজের অস্থিরতার সাথে যুদ্ধ করা।
টার্গেটকৃত কোম্পানী সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষণা ও নিজের কাজের অভিজ্ঞতা সহ ইন্টারভিউয়ের সাধারণ প্রশ্নোত্তরগুলোর উপর নিজের দখল রাখতে হবে। একটা ফাইলে করে জীবনবৃত্তান্ত, কভার লেটার, সার্টিফিকেট, কলম এবং নোটপ্যাড নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
পড়ুন: চাকরির সিভি ও পোর্টফোলিও তৈরির প্রয়োজনীয় কিছু ওয়েবসাইট
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে কম্পিউটার, হেডফোন, স্পিকার এবং কনফারেন্সের অ্যাপ সঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা তা আগে থেকে চেক করে রাখতে হবে। সর্বসাকূল্যে, ইন্টারভিউয়ের সময় কোন কিছুর ঘাটতির কারণে সৃষ্টি বিড়ম্বনা অস্থিরতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে সদাপ্রস্তুত চাকরি প্রার্থীর নিজের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস থাকে এবং তাকে ইন্টারভিউ করে নিয়োগকর্তারাও অভিভূত হন।
ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা
প্রায়ই ক্ষেত্রে দেখা যায়, চাকরিপ্রার্থীরা ইন্টারভিউতে যাওয়ার সময় সেই চাকরিকেই জীবনের একমাত্র অবলম্বন ভেবে থাকেন। এটি না হলে সব-ই শেষ। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। এটা চিরন্তন সত্য যে, এমন চাকরি আরো আছে এবং সেখানে আবেদনের মাধ্যমে চাকরি পাওয়ার অজস্র সম্ভাবনা আছে।
প্রতিটি মতবাদেরই একটা উৎকৃষ্ট বিকল্প আছে। কতটুকু কোম্পানির প্রিয়পাত্র হওয়া যাবে তার পরিবর্তে চিন্তা করতে হবে কোম্পানিটি একটি নির্ভরযোগ্য চাকরির জন্য কতটা উপযুক্ত। সুতরাং, নিয়োগকর্তারা ঠিক যেভাবে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রার্থীকে যাচাই করছেন, একইভাবে প্রার্থীরও পূর্ণ অধিকার আছে কোম্পানীকে যাচাই করা।
পড়ুন: অনলাইনে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে প্রয়োজনীয় পাঁচ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম
যে কোন প্রত্যাখ্যান স্বাভাবিক ভাবেই মনোক্ষুন্ন অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। প্রকৃতপক্ষে মস্তিষ্কে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণের জন্যও এই প্রত্যাখ্যাত হওয়া অভিজ্ঞতার ভূমিকা আছে। তাই মস্তিষ্ককে বুঝতে দিতে হবে যে, এই চাকরিটিই জীবন ধারনের শেষ অবলম্বন নয়। এখানে চাকরিটা হয়ে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। তাই আরো উত্তম সুযোগ অপেক্ষা করছে বিধায় এই প্রত্যাখ্যানের ঘটনাটি ঘটেছে।
ইন্টারভিউয়ের নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছানো
যে কোন পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে এটি একটি সাধারণ উপায়। সাধারণ লেনদেনের ক্ষেত্রেও ঠিক আগমুহূর্তে পৌঁছা ঠিক নয়। এতে বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই এক্ষেত্রেও অস্থিরতাকে পাশ কাটানোর জন্য যথেষ্ট সময় নিয়ে বাসা থেকে ইন্টারভিউয়ের উদ্দেশ্যে বের হতে হবে। এতে দৌড়ে ইন্টারভিউ রুমে প্রবেশ করার অবস্থার সৃষ্টি হবে না। এ অবস্থায় শুধু যে নিয়োগকর্তারাই বিরক্ত হন তা নয়, চাকরিপ্রার্থীর নিজেরও স্বাভাবিক হতে বেশ বেগ পেতে হয়।
আর ইন্টারভিউয়ের ওয়েটিং রুমে আগে যেয়ে বসে থাকার অনেক সুবিধা আছে। এ সময় বাইরের যানজট পেরিয়ে আসার অস্থিরতা কমানো এবং ওয়াশ রুমে যেয়ে বাইরের ধুলো-বালি ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে নেয়া যায়। কাপড়ের কোথাও কোন অসংলগ্নতা থাকলেও তাও ঠিক করে নেয়া যায়। ফলে একদম ফ্রেশ অবস্থায় হাজির হওয়া যায় নিয়োগকর্তাদের সামনে।
পড়ুন: যে ১০টি সফটওয়্যার জানা থাকলে চাকরি পেতে সুবিধা হবে
এছাড়া পুরো ইন্টারভিউটা নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনাগুলো আরো একবার ঝালিয়ে নেয়ার জন্য এই নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছানোর কোন বিকল্প নেই। আর কোম্পানির অফিসের এলাকাটি যদি আগে থেকে পরিচিত না থাকে তাহলে তো এ বিষয়টি একদম বাধ্যতামূলক হয়ে দাড়ায়।
পরিশিষ্ট
চাকরির ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণের পূর্বে এবং ইন্টারভিউ চলাকালীন নিজের মন ও মস্তিস্ক শান্ত রাখার উপায়গুলোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে এগুলোর অনুশীলন করা প্রয়োজন। এটি আসলে রাতারাতি সম্ভব নয়। যারা প্রথম ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন তারাও বিষয়টি রপ্ত করতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার দিনগুলো থেকেই। ধৈর্য্য ধরে একটি কাজের পুনরাবৃত্তি করাও একটি দক্ষতা, যা সেই কাজে ধৈয্যধারীকে আরো নিখুঁত করে তোলে।
এই অনুশীলনের পাশাপাশি প্রয়োজন হবে নেতিবাচক চিন্তাকে পরিহার করা। কেননা নেতিবাচক চিন্তা চূড়ান্ত অবস্থায় যে কোন চেষ্টাকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই উদ্দেশ্য হাসিলে নিজেকে অনুপ্রাণিত করা শিখতে হবে। একজন মানুষের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা সে নিজেই। একজন চাকরিপ্রার্থী যখন নিজেকে অনুপ্রাণিত করে পুরো ইন্টারভিউটির পূর্বপরিকল্পনা করতে পারেন, তখন চাকরি পাওয়ার প্রচেষ্টা অর্ধেক সম্পন্ন হয়ে যায়। বাকিটা নির্ভর করে সেই পরিকল্পনাটা বাস্তবায়নের উপর।
পড়ুন: কীভাবে চাকরির ইন্টারভিউতে সফল হবেন: গুরুত্বপূর্ণ ১০টি টিপস
২ বছর আগে