ভেন্যু
যেসব ভেন্যুতে আয়োজিত হচ্ছে ২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপ
১ জুন থেকে শুরু হয়েছে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর। সর্বমোট ৫৫টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের এই টুর্নামেন্ট চলবে আগামী ২৯ জুন পর্যন্ত। যৌথভাবে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নির্ধারিত ৯টি ভেন্যুর মধ্যে ৩টি ইউএসএর- টেক্সাস, নিউইয়র্ক, এবং ফ্লোরিডায়। আর ৬টি ক্যারিবিয়ান ভেন্যু- অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা, বার্বাডোস, গায়ানা, সেন্ট লুসিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন্স। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপভোগের পাশাপাশি শহরগুলোর দর্শনীয় স্থানগুলোও আকৃষ্ট করছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। চলুন, আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ আয়োজনকারী স্টেডিয়ামগুলোর অবস্থান ও এর আশেপাশের পর্যটন স্থানগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
যে স্টেডিয়ামগুলোতে বসছে ২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপের আসর
গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম, টেক্সাস
২০০৮ সালে চালু হওয়া এই স্টেডিয়ামটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত বেসবল খেলার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এর মাঝে ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সকার ইউনাইটেড সকার লিগ-২ এখানে তাদের ম্যাচগুলো মঞ্চস্থ করে। এরপর সংস্কারের পর ২০২৩ সালে মাঠটিতে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ। টেক্সাসের ডালাস কাউন্টির গ্র্যান্ড প্রেইরি শহরের লোন স্টার পার্কওয়েতে অবস্থিত মাঠটির বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার।
হলিউডের ওয়েস্টার্ন ছবির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পাওয়া ডালাস কাউবয়ের দেখা মিলবে ডাউনটাউন থেকে ১৩ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বের টেক্সাস হর্স পার্কে। অদ্ভূত এক ঐতিহাসিক দিগন্তের দেখা পাওয়া যাবে ডিলি প্লাজার ষষ্ঠ তলা জাদুঘর, জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি ও মিউজিয়ামে। এছাড়া রিইউনিয়ন টাওয়ার জিও-ডেকের ১৭০-মিটার-উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার থেকে সমগ্র ডালাসের দৃশ্য সত্যিই শ্বাসরুদ্ধকর!
পেরোট মিউজিয়াম অব ন্যাচার অ্যান্ড সায়েন্সের অসাধারণ রত্ন সংগ্রহ এবং ডাইনোসর একচেটিয়াভাবে আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।
নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, নিউ ইয়র্ক
৩৪ হাজার দর্শকের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সদ্যনির্মিত এই ক্রিকেট গ্রাউন্ড মূলত সর্বাঙ্গীনভাবে একটি মডুলার স্টেডিয়াম। ৩ জুন শ্রীলঙ্কা বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট লড়াইয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে এই ভেন্যুর প্রথম ম্যাচ। মডুলার অবকাঠামোর এই অতিকায় মাঠটির অবস্থান নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডের ইস্ট মেডোতে আইজেনহাওয়ার পার্কের মাঠে।
এর আশেপাশে ভ্রমণের জন্য প্রথমেই যাত্রা শুরু করতে হবে লং বিচ থেকে। এই সৈকতে পাওয়া যাবে সার্ফিংসহ বিভিন্ন রোমাঞ্চকর কার্যকলাপের সুযোগ। ক্যাপট্রি স্টেট পার্কে নৌকা ভাড়া ফায়ার আইল্যান্ড ভ্রমণের সময় মাছ ধরা যায়। তবে রোমাঞ্চের ষোল আনা পূর্ণ হবে পায়ে হেঁটে ৩০০ বছরের পুরনো বন সানকেন পেরুনোর সময়।
সামার হোয়াইট হাউস, ওয়াশিংটন স্পাই ট্রেইল এবং গোল্ড কোস্ট ম্যানশনগুলোকে অনুসরণ করার সময় পশ্চিমের পুরো অতীতটা রীতিমতো লাফ দিয়ে চোখের সামনে এসে দাঁড়াবে। বলাবাহুল্য যে, স্ট্যাচু অব লিবার্টি এবং এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং দেখে না এলে এই ভ্রমণটা পুরো বৃথাই যাবে।
সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড পার্ক এবং ব্রোওয়ার্ড কাউন্টি স্টেডিয়াম, ফ্লোরিডা
এই লডারহিল ভেন্যু হলো সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ইউএস ক্রিকেট ভেন্যু, যা উন্মুক্ত করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ৯ নভেম্বর। এটি ফ্লোরিডার লডারহিলের একটি বৃহৎ কাউন্টি পার্ক এবং ইউএসএর প্রধান দুটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি। স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার।
গ্রেটার ফোর্ট লডারডেলের ৩৭ কিলোমিটার সোনালি তীরবর্তী অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করা যায় ৮টি উপকূলবর্তী শহরে। এখানকার আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ঘাসের নদী’ নামে খ্যাত জলাবদ্ধ তৃণভূমিতে কুমির দেখা, বাটারফ্লাই ওয়ার্ল্ডের বিশ্বের বৃহত্তম প্রজাপতি বাগান এবং হামিংবার্ড।
আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারেন যারা
দক্ষিণে গেলে চোখে পড়বে প্রাণবন্ত মিয়ামি শহরের আদিম সমুদ্র সৈকত। এ পথে হাজির হবে আফ্রো-অ্যামেরিকান ইতিহাস সমৃদ্ধ ওভারটাউন, সাউথ ডেডের মিকোসুকি নেটিভ-আমেরিকান সংস্কৃতি এবং লিটল হাভানার কিউবান সম্প্রদায়।
স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম, অ্যান্টিগুয়া এবং বার্বুডা
ওয়েস্ট ইন্ডিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ নাম স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের নামানুসারে নামকরণ হয়েছে এই স্টেডিয়ামটির। এর গোড়াপত্তন হয়েছিল ২০০৭ সালে তৎকালীন ৫০ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপকে উদ্দেশ্য করে। সেন্ট জর্জের নর্থ সাউন্ডে অবস্থিত স্টেডিয়ামটিতে ১০ হাজার লোকের জায়গা দিতে পারে।
এর আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে পর্যটকদের প্রথম আকর্ষণ হচ্ছে সেন্ট জর্জ প্যারিস চার্চ। এই অ্যাংলিকান চার্চটি স্থাপিত হয়েছিল ১৭৮৪ সালে। এরপরেই দেখা যেতে পারে ২০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির অর্কিডসমৃদ্ধ অর্কিড ওয়ার্ল্ড। প্রশান্তিদায়ক বাগানগুলো প্রদর্শন করতে প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যায়। পুরনো আমলে ঘরবাড়ি দেখার জন্য সেরা জায়গা হচ্ছে ফ্রান্সিয়া প্ল্যান্টেশন হাউস। এটি প্রাচীনতম মানচিত্র সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত।
কেন্সিংটন ওভাল, বার্বাডোস
১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কেন্সিংটন ওভালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৮৯৫ সালে। বার্বাডোসের ব্রিজটাউনের পশ্চিম অংশে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামে ২৮ হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ধারণক্ষমতা ওভালকে ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভেন্যুতে পরিণত করেছে।
এই দ্বীপাঞ্চলটির পশ্চিম দিকে রয়েছে কার্লাইল বে, যেটি সূর্যাস্ত দেখার জন্য জনপ্রিয় স্থান। তুষার-শুভ্র বালি ও ঢেউ খেলানো তালগাছের এই সৈকত ইউনেস্কো মনোনীত মেরিন পার্কের অংশ।
বার্বাডোসের এই অঞ্চলটাতে পাওয়া যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা সব খাবারগুলো। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশতেই রয়েছে মাছের আধিক্য। বিশেষ করে বাজান এবং গ্রিলড মাহি মাহি এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার।
বার্বাডোস মিউজিয়াম ও হিস্টোরিক্যাল সোসাইটি ভ্রমণের সময় দেখা মিলবে ৫ লক্ষেরও বেশি পুরনো স্থাপত্যের নিদর্শন।
আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ আসরের সমাপনী খেলাটি অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে।
প্রোভিডেন্স স্টেডিয়াম, গায়ানা
২০০৭ সালে বোর্ডা বা জর্জটাউন ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডটি পুনর্স্থাপন করে বানানো হয় প্রোভিডেন্স স্টেডিয়াম। এটি নির্মিত হয়েছিল তৎকালীন ক্রিকেট বিশ্বকাপের সুপার এইট ম্যাচ আয়োজনের জন্য। গায়ানার ডেমিরারা-মাহাইকা অঞ্চলের প্রোভিডেন্সে অবস্থিত এই ভেন্যুতে ২০ হাজার আসনের ব্যবস্থা রয়েছে।
গায়ানার অত্যাশ্চর্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে সেন্ট জর্জ ক্যাথেড্রাল, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কাঠের বিল্ডিংগুলোর একটি। এর গথিক-শৈলী, সূক্ষ্ম নকশার কাঁচের জানালা, অদ্ভুত বেদী এবং কাঠের খিলানযুক্ত সিলিং দর্শনার্থীদের বিস্ময়ের খোরাক জোগায়।
জর্জটাউন বোটানিক্যাল গার্ডেনে স্বাগত জানাবে বিচিত্র ধরনের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদ। শাপলা পুকুর, পাম এবং অর্কিড দেখতে দেখতে হেঁটে যাওয়ার সময় চমকে দিতে পারে নাম না জানা পাখিরা।
গায়ানার স্থানীয় সঙ্গীতের সুধা নিতে যেতে হবে রয় গেডেস স্টিল প্যান মিউজিয়ামে। এখানকার স্টিলের প্যানের সংগ্রহে মিশে রয়েছে গায়ানার বিবর্তনের ইতিহাস।
ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, সেন্ট লুসিয়া
এই মাঠটির সঙ্গে মিশে রয়েছে ২০১২ এবং ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরপর ২ বার আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাস। প্রথমে ২০০২ সালে উদ্বোধনের সময় পার্শ্ববর্তী পাহাড়গুলোর নামানুসারে এর নাম রাখা হয়েছিল বিউসজোর ক্রিকেট গ্রাউন্ড। কিন্তু পরবর্তীতে সেই দুটি বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক অলরাউন্ডার ড্যারেন স্যামির সম্মানে ২০১৬ সালে মাঠটির নাম পরিবর্তন করা হয়।
আরও পড়ুন: ঝড়ে ক্ষতবিক্ষত টি-২০ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের স্টেডিয়াম
সেন্ট লুসিয়ার গ্রস আইলেটের কাছে অবস্থিত এই মাঠটির ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার। স্টেডিয়ামটি রডনি বে-এর পর্যটন রিসোর্টের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। বিলাসবহুল ইয়ট এবং পালতোলা জাহাজে সব সময়ই ব্যস্ত থাকে রডনি বে মেরিনা। এখানে রয়েছে স্থানীয় রন্ধনশিল্পের দর্শনধারী বাহারি সব রেস্তোরাঁ।
পিজিয়ন আইল্যান্ড ন্যাশনাল পার্কে ঢোকার পর থেকে সামনে পড়বে ফোর্ট রডনিসহ ঐতিহাসিক সব সামরিক ধ্বংসাবশেষ। এর সঙ্গে উপকূলের নজরকাড়া দৃশ্যে চোখ রেখে নৈসর্গিক ট্রেইল ধরে চলে যাওয়া যাবে সিগন্যাল পিক পর্যন্ত।
ব্রায়ান লারা ক্রিকেট একাডেমি, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো
২০১৭ সালে চালু হওয়া এই স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন অধিনায়ক ব্রায়ান লারার নামে। লারা ২০০৮ সালের ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকালের শীর্ষস্থানীয় রান সংগ্রহকারী ছিলেন। দক্ষিণ ত্রিনিদাদের সান ফার্নান্দোর উপকণ্ঠের তারৌবাতে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামে আসন রয়েছে মোট ১৫ হাজার।
ত্রিনিদাদের নান্দনিক সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে ওয়েস্টার্ন মেইন রোড ধরে গেলে। এখানে রাস্তার পাশের খাবারের দোকানসহ রয়েছে রঙিন বাজার। স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি এই দোকানগুলো স্যুভেনির কেনার জন্যও বেশ উপযুক্ত।
কুইন্স পার্ক সাভানার চারপাশ জুড়ে গাছ-গাছালি এবং নানা ঐতিহাসিক নিদর্শনের বেষ্টনী। এছাড়াও রয়েছে ঔপনিবেশিক যুগের প্রাসাদ এবং রাজকীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন।
আর্নোস ভ্যালে স্টেডিয়াম, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন্স
১৯৮১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ডের একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয় স্টেডিয়ামটি। সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনের কাছেই অবস্থিত আর্নোস ভ্যালের ধারণক্ষমতা ১৮ হাজার।
এখানকার কাছাকাছি পর্যটন স্থানের মধ্যে রয়েছে কিংসটাউন বোটানিক্যাল গার্ডেন। বেশ পুরনো আমলের হলেও এখানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছপালা এবং ফুলগুলো সুবিন্যস্ত করে সাজানো। এগুলোর মাঝে শোভা পায় বিখ্যাত ব্রেডফ্রুট গাছ।
১৮ শতকের একটি সুসংরক্ষিত ঐতিহাসিক দুর্গ কিংসটাউনের ফোর্ট শার্লট। অদূরে উপকূলরেখার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য হাতছানি দিয়ে ডাকে। অন্যদিকে প্রাচীর এবং কামানগুলো মনে করিয়ে দেয় দ্বীপের ঔপনিবেশিক অতীতের কথা। সেই আবহ হৃদয়ে ধারণ করেই প্রবেশ করা যেতে পারে সামরিক যাদুঘরে।
শেষাংশ
২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজনকারী এই স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে সর্বাধিক প্রাচীন কেন্সিংটন ওভাল। আশির দশকে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের তীর্থস্থান হিসেবে স্থানীয় সংস্কৃতিকে বহন করে চলেছে আর্নোস ভ্যালে। সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামির ধূলোতে লেগে রয়েছে বিংশ শতকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঐতিহাসিক অর্জনের পরশ। ২০০৭ সাল স্মরণীয় হয়ে আছে একই সঙ্গে সাথে প্রোভিডেন্স, স্যার ভিভ রিচার্ডস, এবং সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড পার্কের উদ্বোধনের বর্ষ হিসেবে। আর পরের বছরেই চালু হওয়া গ্র্যান্ড প্রেইরি সবচেয়ে দর্শনীয় জায়গাগুলোর সান্নিধ্যে রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর আমেরিকান দেশটির ল্যান্ডমার্কে পরিণত হয়েছে ব্রায়ান লারা ক্রিকেট একাডেমি। অতঃপর আদ্যোপান্ত মডুলার স্টেডিয়াম হিসেবে সর্বপ্রথম ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বিশ্ব রেকর্ড অর্জন করল নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালের আইসিসি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
৫ মাস আগে
আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩ ভেন্যু: ভারতের যে স্টেডিয়ামগুলোতে খেলা হবে
শুরু হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ১৩তম আসর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) আয়োজিত এক দিনের আন্তর্জাতিক (ওডিআই) ক্রিকেট টুর্নামেন্টটির পর্দা উঠতে যাচ্ছে চলতে বছরের ৫ অক্টোবর, চলবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। গতবারের মতো এবারও ক্রিকেট যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চলেছে ১০টি দেশ। এবার প্রথমবারের মতো এককভাবে পুরো বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে ভারত। দেশটির ১০টি ভিন্ন শহরের ১০টি স্টেডিয়ামে সব মিলিয়ে মোট ৪৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, ধর্মশালা, হায়দ্রাবাদ, কলকাতা, লাখনৌ, মুম্বাই এবং পুনের স্টেডিয়ামগুলো এখন প্রস্তুতির চূড়ান্ত মূহুর্তে। চলুন আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ আসরের ভেন্যুগুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
ভারতের ১০ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ আইসিসি বিশ্বকাপ
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম, আহমেদাবাদ
ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি পূর্বে পরিচিত ছিলো মোটেরা স্টেডিয়াম নামে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম স্টেডিয়াম, যেখানে ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শকের বসার ক্ষমতা রয়েছে। স্টেডিয়ামটি গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মালিকানাধীন। ২০২১-এর ২৪ ফেব্রুয়ারি এর নাম পরিবর্তন করে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামানুসারে নামকরণ করা হয়।
স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়েছিলো ১৯৮৩ সালে। প্রথম সংস্কার হয় ২০০৬ সালে। নতুন ডিজাইনে স্টেডিয়ামটির জায়গা ৬৩ একর। এখানে প্রবেশপথ রয়েছে তিনটি। যেগুলোর একটির সাথে একটি মেট্রো লাইন সংযুক্ত। স্টেডিয়ামের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো ক্রিকেট মাঠে সাধারণ ফ্লাডলাইটের পরিবর্তে ছাদে এলইডি লাইট। ছাদটির ডিজাইন করা হয়েছে বিশেষভাবে হালকা এবং বসার সারি থেকে আলাদা করে। যাতে এটি মোটামুটি ভূমিকম্প-প্রতিরোধী হয়। কাঠামোতে কোন স্তম্ভ না থাকায় স্টেডিয়ামের যেকোনো স্থান থেকে দর্শকদের পুরো মাঠ দেখতে কোন সমস্যা হয় না।
আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩ আসরের ফাইনাল ম্যাচসহ মোট ৫টি খেলা এখানে অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: Crickex.in লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ ২০২৩: গ্যালে টাইটানসের সঙ্গে স্পনসরশিপ চুক্তি সই
এম. এ. চিদাম্বারাম স্টেডিয়াম, চেন্নাই
মুথিয়া আন্নামালাই বা এম. এ. চিদাম্বারাম স্টেডিয়াম ভারতের চেন্নাইয়ের তামিলনাড়ুতে অবস্থিত। যার আরেক নাম চেপাউক স্টেডিয়াম। বঙ্গোপসাগরের ধারে মেরিনা বিচ থেকে কয়েকশ মিটার দূরে চেপাউকে এর অবস্থান। স্টেডিয়ামের উত্তরের গা ঘেষে চলে গেছে ব্যাকিংহাম খাল।
১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টেডিয়ামটি সর্বপ্রথম পরিচিত ছিলো মাদ্রাজ ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ড নামে। পরবর্তীতে এটি মুথিয়া আন্নামালাই চিদাম্বারাম চেত্তিয়ার নামে নামকরণ করা হয়। তিনি ছিলেন বিসিসিআই-এর প্রাক্তন সভাপতি এবং তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (টিএনসিএ)-এর প্রধান । এই স্টেডিয়াম তামিলনাড়ু ক্রিকেট দল এবং আইপিএল দল চেন্নাই সুপার কিংসের হোম গ্রাউন্ড।
এর ব্যাপক সংস্কার ঘটে ২০১১ সালে। প্রথমে এর স্তম্ভ সহ পুরোনো ছাদ পুরোনো স্টেডিয়ামের দৃশ্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। সংস্কারের পর তা তারের দ্বারা একত্রে রাখা হালকা চতুর্ভুজ শঙ্কুযুক্ত ছাদ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। ফলে পুরো স্টেডিয়াম দেখতে এখন আর কোনো বাধা নেই।
স্টেডিয়ামে বর্তমানে ৫০ হাজার দর্শক বসতে পারে। এই ভেন্যুতে এবারের বিশ্বকাপের মোট ৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণের উপায়
ইডেন গার্ডেন, কলকাতা
‘ক্রিকেটের কলোসিয়াম’ ‘ভারতীয় ক্রিকেটের আতুর ঘর’, অথবা ‘ভারতীয় ক্রিকেটের মক্কা’। এ সবগুলো বিশেষণেই ব্যাপকভাবে স্বীকৃত পশ্চিমবঙ্গের এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি। ভারতের প্রাচীনতম এই ক্রিকেট ভেন্যুটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৪ সালে। গোটা ভারতে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সারা বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামটির বর্তমান ধারণক্ষমতা ৬৬ হাজার দর্শক।
ইডেন গার্ডেন ওডিআই বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং এশিয়া কাপ সহ বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ম্যাচ আয়োজন করেছে। এছাড়াও স্টেডিয়ামটি বেঙ্গল ক্রিকেট দল এবং কলকাতা নাইট রাইডার্স ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ(আইপিএল)-এর ফ্র্যাঞ্চাইজি হোস্ট করে।
ইডেন গার্ডেন তার বিশাল এবং উৎসুক দর্শকদের ভিড়ের জন্য বিখ্যাত। ১৯৯৬-এর বিশ্বকাপে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা সেমিফাইনালে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬৪ জন দর্শকের ভিড়ের রেকর্ড গড়ে। ২০১৬ সাল থেকে খেলার শুরুতে স্টেডিয়ামে একটি ঘন্টা বাজানোর প্রথা চালু হয়।
এবারের টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল সহ মোট ৫টি ম্যাচের জন্য নির্ধারিত হয়েছে ইডেন গার্ডেন।
আরও পড়ুন: তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ নারী দলের জয়
অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম, দিল্লি
কলকাতার ইডেন গার্ডেনের পর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ক্রিকেট ভেন্যু দিল্লির এই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। দিল্লি ও জেলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ডিডিসিএ)-এর মালিকানায় পরিচালিত এই স্টেডিয়ামটির অবস্থান নয়া দিল্লির বাহাদুর শাহ জাফর মার্গ-এ। ১৮৮৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়াম নামে, যার নামকরণ হয়েছিলো নিকটবর্তী দুর্গ কোটলার নামে। ২০১৯-এর ১২ সেপ্টেম্বর প্রাক্তন ডিডিসিএ সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির নামানুসারে স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয়। বর্তমানে স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৪১ হাজার ৮৪২।
২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দল এই মাঠে টেস্ট ম্যাচে ২৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে এবং ওয়ানডে ম্যাচে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অপরাজিত ছিল। তবে ২০০৯-এর ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি ওডিআই ম্যাচটি বাতিল হয়েছিলো পিচের প্রতিকূল অবস্থার কারণে। এছাড়া ২০১৭-১৮ সালে ভারতে শ্রীলঙ্কার তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের ম্যাচটি বাতিল হওয়ার পিছনে কারণ ছিলো এলাকার বৈরী পরিবেশ। সে সময় ধোঁয়াশার ফলে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের খেলা বন্ধ করে দূষণ বিরোধী মুখোশ পরতে হয়েছিলো। ক্রিকেট ইতিহাসে এই বিরল দৃষ্টান্তের ফলে ভেন্যুটির নামের সঙ্গে কুখ্যাতি জড়িয়ে পড়ে।
এবারের বিশ্বকাপের মোট ৫টি খেলার জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে এই মাঠটি।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরের ১০ জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান
এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, ব্যাঙ্গালুরু
কর্ণাটক সরকারের উদার পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৬৯ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় মঙ্গলম বা এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের। এটি আইপিএল-এর ফ্র্যাঞ্চাইজি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হোম গ্রাউন্ড। পাঁচ দশকেরও বেশি পুরোনো এই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটির অবস্থান ভারতের কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে। মনোরম কাবন পার্ক, কুইন্স রোড, কুবন এবং আপটাউন এমজি রোডকে পাশে নিয়ে শহরের একদম কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ক্রিকেট ভেন্যুটি। এটির দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার। ওডিআই, আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টির পাশাপাশি এখানে নিয়মিত আয়োজন চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও।
পূর্বে স্টেডিয়ামটি কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম নামে পরিচিত ছিল। পরে মঙ্গলম চিন্নাস্বামী মুদালিয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এর নতুন নামকরণ করা হয়। মান্ডিয়ার মানুষ চিন্নাস্বামী পেশায় ছিলেন একজন আইনজীবী। এছাড়া তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বিসিসিআই-এর সভাপতি ছিলেন।
চিন্নাস্বামী বিশ্বের প্রথম ক্রিকেট স্টেডিয়াম, যেখানে সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হয়। প্যানেলগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিলো কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (কেএসসিএ)-এর ‘গো গ্রীণ’উদ্যোগের মাধ্যমে।
আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩-এর মোট ৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লার ১০ দর্শনীয় স্থান
এইচপিসিএ স্টেডিয়াম, ধর্মশালা
হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম, সংক্ষেপে এইচপিসিএ স্টেডিয়ামের অবস্থান ভারতের হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার ধর্মশালা শহরে। এইপিসিএর মালিকানায় স্টেডিয়ামটির প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৩ সালে। ধর্মশালা শহরটি আন্তর্জাতিকভাবে তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার বাড়ি হিসেবে সুপরিচিত। তাই এই মনোরম ক্রিকেট ভেন্যুটি পর্যটকদের জন্যও পছন্দের জায়গা।
বিশ্বের অন্যতম সুন্দর এই ক্রিকেট মাঠটির দর্শক ধারণ ক্ষমতা ২৩ হাজার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৪৫৭ মিটার উচ্চতায় ডিম্বাকৃতির জায়গাটিকে ঘিরে আছে তুষারাবৃত হিমালয় পর্বত।
ভেন্যুটি বিশেষত আইপিএল ম্যাচের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। উচ্চতার কারণে ব্যাট্সম্যানদের বড় বড় ছক্কা মারার জন্য এর বেশ সুখ্যাতিও আছে। তবে পার্বত্য অঞ্চল এবং কনকনে শীত খেলার জন্য প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বৃষ্টি এবং তুষারপাতের সময়গুলোতে প্রায়ই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
এবারের বিশ্বকাপে এই ভেন্যুটি মোট ৫টি ম্যাচের জন্য নির্ধারিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, হায়দ্রাবাদ
ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দ্রাবাদের এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। উৎপলের পূর্ব উপশহরে ১৫ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত এই স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার জন দর্শক বসতে পারে। এটি হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন(এইচসিএ) এবং আইপিএল দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হোম গ্রাউন্ড। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয় ভারতের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নামে।
২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ এই ভেন্যুতে তাদের প্রথম টেস্ট খেলে। সমতল ট্র্যাকের উইকেটের এই মাঠ ব্যাটসম্যান-বান্ধব এবং উচ্চ-স্কোরিং পিচ হিসাবে বিখ্যাত। এর প্যাভিলিয়ন প্রান্ত এবং উত্তর প্রান্ত নামে দু’টি প্রধান সীমানা রয়েছে। কিংবদন্তির তারকা ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষ্মণের অবসরের পর, এইচসিএ তার নামে উত্তর প্রান্তের নামকরণ করে। আর প্যাভিলিয়ন প্রান্তের নামকরণ করা হয়েছে শিব লাল যাদব-এর নামানুসারে।
এবারই প্রথম এই মাঠটি আইসিসি বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজন করবে। মোট ৩টি ম্যাচ নির্দিষ্ট করা হয়েছে এই মাঠে খেলার জন্য।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ওয়াংখেড় স্টেডিয়াম, মুম্বাই
মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মালিকানায় পরিচালিত এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি আইপিএল-এর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হোম গ্রাউন্ড। মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ছাড়াও এখানে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) এবং আইপিএল-এর সদর দপ্তর রয়েছে। চার্চগেট পাড়ার মেরিন ড্রাইভের কাছে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো শচীন টেন্ডুলকারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি।
পুরো মাঠটি স্থানীয় লাল মাটিতে পরিপূর্ণ, যার ফলে এর বাউন্সিং পিচ হিসেবে খ্যাতি আছে। অতিরিক্ত বাউন্স ব্যাটিং-এর জন্য বেশ সুবিধাজনক হওয়ায়, বছরের পর বছর ধরে পিচটি বোলারদের চেয়ে ব্যাটসম্যানদের কাছে বেশি পছন্দের। অবশ্য স্টেডিয়াম বরাবর সামুদ্রিক হাওয়া প্রবাহের কারণে পেস বোলাররা এখানে কিছুটা সুবিধা পান।
স্টেডিয়ামের অন্যতম আকর্ষণ হলো সামনের দিকে প্রসারিত ছায়াদানকারি দীর্ঘ ছাদ। টেফলন ফ্যাব্রিকের ছাদ ওজনে তুলনামুলক হালকা এবং তাপ প্রতিরোধী। ছাদের জন্য কোন বীম সাপোর্ট নেই। ফলে দর্শকদের খেলা দেখায় কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না। এছাড়া রয়েছে এক্সস্ট ফ্যানের ব্যবস্থা, যেগুলো গরম বাতাস শুষে নেয় এবং পশ্চিমের বাতাসকে ভেতরে আসতে দেয়।
স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৩২,০০০। এবারের টুর্নামেন্টে এখানে সেমিফাইনাল সহ মোট ৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: আপনি কি মার্কিন ডলার না কিনে বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন?
বিআরএসএবিভি ইকানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, লাখনৌ
বিআরএসএবিভি বা ভারতরত্ন শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ইকানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম সাধারণত ইকানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম নামেই সর্বাধিক পরিচিত। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের তত্ত্বাবধানে ২০১২-২০১৭ বছর রাজ্য সরকারের মেয়াদে ইকানা স্পোর্টজ সিটি এবং লাখনৌ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্ব হয়। এই চুক্তির অধীনেই নির্মিত হয় লাখনৌ-এর স্টেডিয়ামটি। প্রথমে ‘ইকানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম’ নামটাই ঠিক করা হয়েছিল। পরে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নামে এর নামকরণ করা হয়।
২০১৭ সালে খেলার জন্য উন্মুক্ত করা হলেও প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। সে বছর ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ। এর মাধ্যমে স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজন করা ৫২তম ভারতীয় স্টেডিয়াম হওয়ার মর্যাদা লাভ করে।
ভারতের এই পঞ্চম বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটিতে ৫০ হাজার দর্শকের বসার ক্ষমতা রয়েছে। ভারতের অন্যান্য স্টেডিয়ামগুলোর তুলনায় এই স্টেডিয়ামটির সবচেয়ে দীর্ঘ সীমানা। ভেন্যুটি উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট দল এবং আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি লাখনৌ সুপার জায়ান্টসের হোম ভেন্যু।
এবারের বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামটি মোট ৫টি ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম, পুনে
মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ)-এর মালিকানায় পরিচালিত এই স্টেডিয়ামটি ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনেতে অবস্থিত। শহরের সীমানার উপকণ্ঠে গাহুঞ্জে গ্রামে পুনে-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ের ঠিক পাশেই স্টেডিয়ামটির অবস্থান। ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিক উন্মোচনের পর প্রথম টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলা হয়েছিলো ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ভারত এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে।
স্টেডিয়ামটি নকশা করেছেন ব্রিটিশ স্থপতি স্যার মাইকেল হপকিন্স। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মাউন্ট স্ট্যান্ড এবং এজেস বোল স্টেডিয়ামের নকশার জন্য তার জগত জোড়া খ্যাতি রয়েছে।
এই স্টেডিয়ামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এর বালি-ভিত্তিক আউটফিল্ড উন্নত প্রযুক্তির কারণে অতি ভারী বর্ষণেও, আউটফিল্ডের পানি দ্রুত বেরিয়ে যায়। ফলে মাঠ কয়েক মিনিটের মধ্যে আবার খেলার জন্য উপযোগী হয়ে যায়।
এই মাঠের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৩৭ হাজার ৪০৬ জন। এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের মোট ৫টি খেলার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে এই স্টেডিয়ামটি।
শেষাংশ
আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ভেন্যুগুলো আপগ্রেড করার জন্য ইতোমধ্যেই তহবিল দেয়া হয়েছে আয়োজক সংস্থাগুলোকে। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম এবং লাখনৌয়ের ইকানা স্টেডিয়ামের মতো নতুন সংযোজনগুলো দর্শকদের বেশ নজর কাড়বে। তবে পিছিয়ে থাকবে না দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম ও কলকাতার ইডেন গার্ডেনের মতো পুরোনোগুলোও। প্রস্তুতি ম্যাচগুলোর ভেন্যু ঠিক করা হয়েছে হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, গোয়াহাটির আসাম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম এবং তিরুবানান্তপুরামের গ্রিনফিল্ড আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ বিলাসবহুল গাড়ি
১ বছর আগে
২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ: ভেন্যু ও প্রাইজ মানি
সময় ঘনিয়ে এসেছে আইসিসি ২০ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের। নয়নাভিরাম দ্বীপদেশ অস্ট্রেলিয়ায় বসতে যাচ্ছে বিশ্বনন্দিত এই স্পোর্টস ইভেন্টের অষ্টম আসর। ২০২১ এর ১৫ নভেম্বর আইসিসি থেকে ২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ ভেন্যু নিশ্চিত করা হয়। আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ান অস্ট্রেলিয়াই এবার আয়োজন করবে পুরো ইভেন্টটি। ১৬ অক্টোবর, ২০২২ থেকে শুরু হয়ে ১৩ নভেম্বর, ২০২২ পর্যন্ত চলবে এই ক্রিকেট উৎসব। আজকের নিবন্ধটিতে এই ভেন্যুগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জানার সাথে সাথে আইসিসি পুরুষ টি-২০ ২০২২ বিশ্বকাপের প্রাইজ মানি সম্বন্ধেও আলোচনা করা হবে।
২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপের ৭টি ভেন্যু
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, মেলবোর্ন
ধারণ ক্ষমতা: ১,০০,০২৪
১৮৫৩ সালে নির্মিত এমসিজি বা মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড দক্ষিণ গোলার্ধের বৃহত্তম এবং গোটা বিশ্বে ১০তম বৃহত্তম স্টেডিয়াম। এটি একটি ইতিহাস সমৃদ্ধ স্টেডিয়াম, যা অস্ট্রেলিয়ান খেলাধুলার সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর সাক্ষী হয়ে আছে। এমসিজি-তে প্রথম ক্রিকেট ম্যাচটি খেলা হয় ১৮৫৪ সালের সেপ্টেম্বরে। ১৮৫৬ সালের মার্চ মাসে প্রথম আন্তঃ-ঔপনিবেশিক ম্যাচে মুখোমুখি হয় ভিক্টোরিয়া ও এনএসডব্লিউ (নিউ সাউথ ওয়েলস)।
এমসিজি টেস্ট ক্রিকেট (১৮৭৭) এবং একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের (১৯৭১) জন্মস্থান। এছাড়া এএফএল গ্র্যান্ড ফাইনালের জন্য সব সময় এই ভেন্যুটি নির্ধারিত থাকে। ১৯৫৬ সালের অলিম্পিক গেমস এবং ২০০৬ এর কমনওয়েলথ গেমস সহ বিভিন্ন বড় আন্তর্জাতিক স্পোর্ট্স ইভেন্ট ও কনসার্টের আয়োজন করেছে এমসিজি।
আরও পড়ুন: আইসিসি ওয়ানডে বর্ষসেরা দলে ৩ বাংলাদেশি ক্রিকেটার
২ বছর আগে