খায়রুলকে
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের জন্য বিচারপতি খায়রুলকে ইতিহাস ক্ষমা করবে না: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের জন্য 'অনৈতিকভাবে' (রাজনীতির) মাঠ তৈরি করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার জন্য ইতিহাস কখনই সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে ক্ষমা করবে না।
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য হাস্যকর: মির্জা ফখরুল
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সচেতন নাগরিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং তাদের অস্তিত্ব সাধারণ নির্বাচন পরিচালনায় একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘সংসদ আইন পাস করেছে (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে), কিন্তু বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এর জন্য ভিত্তি তৈরি করেছেন। এর জন্য ইতিহাস তাকে কখনো ক্ষমা করবে না। তিনি প্রথমে একটি সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন এবং পরে অবসর গ্রহণের ১৬ মাস পর বেসামরিক হিসেবে সংক্ষিপ্ত সংস্করণটি পরিবর্তন করে অনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ রায় দিয়েছিলেন।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি নিয়ে আসে এবং ১৭৩ দিন হরতাল (সাধারণ ধর্মঘট) জারি করে। সে সময় তাদের দাবি ছিল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।
পরে ফখরুল বলেন, দেশ স্বাধীনের পর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ বিকাশ না হওয়ায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিবেচনায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বিএনপি সরকার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত জনগণের ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় থাকার এবং বিরাজনীতিকরণের চক্রান্তের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ এটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) বাতিল করে দেয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে তারা শ্মশান করে দিয়েছে: চট্টগ্রামে মির্জা ফখরুল
দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ যুবক উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সুস্থ রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য তরুণদের সংগঠিত করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যারা বলপ্রয়োগ ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় থেকেছে অতীতের সব ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তানি নিয়ম এবং এইচ এম এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনকে ছাড়িয়ে গেছে আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন। ‘আওয়ামী লীগ সরকার তার দুঃশাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগ করা উচিত:
‘বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প সরকারের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে’- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, অপরিকল্পিত এই প্রকল্পের কারণে যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি দেখছি বিআরটি প্রকল্পের রাস্তার মাঝখানে দোকান এবং টিকিট কাউন্টার তৈরি করা হচ্ছে… আমি বুঝতে পারছি না তারা ঠিক কী নির্মাণ করছে। ওবায়দুল কাদের আজ (রবিবার) বলেছেন যে এটি (বিআরটি) গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা একটা নির্লজ্জ মন্তব্য। তারা নিজেরাই এই প্রকল্প নিয়েছে, তাই এই মন্তব্য করার আগে তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, সরকার গাজীপুর থেকে বিআরটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকা নগরবাসীকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সদস্যরা সরকারের অপকর্ম ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন না। ‘এই সরকার কী ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে আমরা এখন তাদের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করতে ও স্বাধীনভাবে লিখতে ভয় পাচ্ছি। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতি আমরা কখনো কল্পনাও করিনি।’
বিচার বিভাগকে রাজনীতিকরণ থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য তরুণ আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
আরও পড়ুন: পুলিশ ‘অবৈধভাবে’ বিরোধীদের তথ্য সংগ্রহ করছে: মির্জা ফখরুল
২ বছর আগে