মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা সক্রিয়, মার্কিন শ্রম নীতি নিয়ে খুব উদ্বেগ নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম অন অ্যাডভান্সিং ওয়ার্কার এমপাওয়ারমেন্ট, রাইটস অ্যান্ড হাই লেবার স্ট্যান্ডার্ডস গ্লোবালি’ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
কারণ বাংলাদেশি পণ্যগুলো তার গুণমান, প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ও সময়মতো পৌঁছে দেওয়ার কারণে মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার পায়।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা খুবই স্মার্ট ও সক্রিয়। আমাদের গতিশীল বেসরকারি খাতের ওপর আমার আস্থা আছে। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির একটি প্রধান বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমাদের বেসরকারি খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি করে এবং মার্কিন বেসরকারি খাত বাংলাদেশি পণ্য কেনে।’
তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের পণ্য কেনে কারণ আমাদের পণ্যগুলো উচ্চ মানসম্পন্ন, দামে সস্তা ও সময়মতো পৌঁছে দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, এমনকি আপনি মার্কিন স্টোরগুলোতে অনেক চীনা পণ্যও পাবেন।
অন্যদিকে, ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বলেছে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম অন অ্যাডভান্সিং ওয়ার্কার এমপাওয়ারমেন্ট, রাইটস অ্যান্ড হাই লেবার স্ট্যান্ডার্ডস গ্লোবালি’ শিরোনামের স্মারকলিপি নিয়ে বাংলাদেশের ‘শঙ্কিত হওয়ার’ অনেক কারণ রয়েছে।
সম্প্রতি চালু হওয়া এই মার্কিন উদ্যোগ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে দূতাবাস এক চিঠিতে জানিয়েছে, ‘স্মারকলিপিতে শ্রম অধিকার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার পেছনে রাজনীতি রয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন উপায়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা করবে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্মারকলিপিটি ১৬ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘বর্তমান পরিস্থিতি’ নিয়ে আলোচনা করেছেন রাষ্ট্রদূত হাস ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ: মার্কিন দূতাবাস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘যারা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের, শ্রম অধিকার রক্ষাকারী ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে হুমকি দেয়, ভয় দেখায় এবং হামলা করে তাদের জবাবদিহি করা হবে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য জরিমানা ও ভিসা বিধিনিষেধের’ মতো পদক্ষেপগুলো কার্যকর করতে তারা কাজ করবে।
ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়েছে ‘স্মারকলিপিটি’ বাংলাদেশের জন্য একটি সংকেত। কারণ শ্রম সমস্যার অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতে বর্ণিত যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। ‘স্মারকলিপিটি বাংলাদেশের পোশাক খাতেও প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করা উচিত।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্র পুরো শ্রম খাতের জন্য উদ্যোগ নিলে তারা অবশ্যই স্বাগত জানাবে।
মোমেন বলেন, ‘তারা যদি একটি ভালো নীতি গ্রহণ করে তাহলে সেটা হবে একটি মহৎ উদ্যোগ। আমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র ধনী দেশ হওয়ায় জলবায়ু ও অভিবাসন বিষয়ে ভালো উদ্যোগ নেবে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি ইতিবাচক কর্মসূচি নিয়ে আসে, আমরা অবশ্যই এটাকে স্বাগত জানাব।’ বাংলাদেশ দেখতে চায় সব শ্রমিক ভালোভাবে জীবনযাপন করছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে মোমেন জানান, তিনি চিঠির বিষয়ে জানেন না।
কিছু লোকের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মোমেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ব্যাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো প্রচেষ্টা বাংলাদেশ দেখতে চায় না।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ছুটি থেকে ফেরার পর এটি রুটিন বৈঠক।
তিনি বলেন, ‘আমরা খুশি যে তিনি ফিরে এসেছেন। নতুন কিছু নয়। শুধু রুটিন মিটিং।’
রাষ্ট্রদূত হাস বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকের পর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস জানায়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি নিয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রদূত হাস এবং পররাষ্ট্র সচিব মোমেন একটি রুটিন বৈঠক করেছেন।
বেলা ১১টায় বৈঠক শুরু হয়ে ৩০ মিনিট চলে।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানও উপস্থিত ছিলেন।
হাস ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বৈঠকস্থলের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
ছুটি কাটিয়ে সোমবার ঢাকায় ফিরেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
আরও পড়ুন: ঢাকায় নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ইইউ'র কারিগরি দল
যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে আছে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আছি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে: ফখরুল
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
একটি আঞ্চলিক দৈনিকের একটি অংশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সচিবালয়ে আলোচনা হচ্ছে, যারা সরকারের অবৈধ কাজে সহায়তা করেছে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। প্রসাশন উৎকণ্ঠা রয়েছে। বোঝা যাচ্ছে এ সরকারের পতন ঘণ্টা বেজে গেছে।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর ধোলাইখালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, চিকিৎসকরা তাকে জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নিয়ে যেতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘তাই অবিলম্বে নেত্রীকে মুক্তি দিন, অন্যথায় সব দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নয়, এদেশের মানুষ এখন নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে এই সরকারকে। এদেশের মানুষ পরিষ্কার ভাষায় একবাক্যে বলছে, এখন অনেক হয়েছে, অনেক অত্যাচার, নির্যাতন করেছে, নেতাদের কারাগারে আটক করেছে, আমরা আর সেটা হতে দেব না। এজন্য আমরা আন্দোলন করছি।’
তিনি বলেন, ‘এখনও সময় আছে, এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা ভেবে নিয়ে আপনারা পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে এই রাজনৈতিক সংকট দূর করুন। অন্যথায় সব দায়-দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে।’
আরও পড়ুন: ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালেদাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নিন: ফখরুল
তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এ সরকার সহজভাবে কথা শুনবে না, তরঙ্গের ওপর তরঙ্গ সৃষ্টি করে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের ধাক্কা দিয়ে সরাতে হবে। তাই আন্দোলনের তরঙ্গ সৃষ্টি করতে হবে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কাজ না হলে কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আপনারা যতই চেষ্টা করেন এই দেশের মানুষকে আর ঘরে ফেরাতে পারবেন না। ’
এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বাবলম্বীবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
এর আগে, সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী স্লোগানে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন।
ধোলাইখাল মোড়ে সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও তা রায় সাহেব বাজার, টিপু সুলতান রোড, লক্ষ্মীবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম।
আরও পড়ুন: ‘মেগা দুর্নীতির’ মাধ্যমে কিছু মানুষ ধনী হয়েছেন: বিএনপি নেতা নজরুল
চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে বিদেশে পাঠান: ফখরুল
মার্কিন ভিসা নীতির কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে না: আইজিপি
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে পুলিশের কোনো ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে না।’
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টন এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে এক সেমিনারে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এই ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিকেরাও অন্তর্ভুক্ত।
অবৈধ অস্ত্র রাখার বিষয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
আরও পড়ুন: চাঞ্চল্যকর মামলার তথ্য উদঘাটন করায় পিবিআই'র ভূয়সী প্রশংসা আইজিপির
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনই আমাদের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে পারছি না।’
আইজিপি বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামী সাধারণ নির্বাচনের সময় পুলিশ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবে। কারণ নির্বাচনের আগে পুলিশ অবৈধ অস্ত্র আটকের কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে।’
নির্বাচনের সময় তাদের ভূমিকা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ প্রধান বলেন, নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এবং নির্বাচনের সময় ইসি যে দায়িত্ব দেবে পুলিশ পালন করবে।
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীলের মৃত্যুর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমি আপনাদের (জনগণকে) আশ্বস্ত করতে চাই, কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। সে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হোক না কেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: কেউ আইনশৃঙ্খলা ব্যাহত করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: আইজিপি
নির্বাচনে বাংলাদেশ পুলিশ ইসির অধীনে কাজ করবে: আইজিপি
আইসিজেতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাম্বিয়ার সঙ্গে তথ্য বিনিময় করেছে
রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে, সে বিষয়ে গাম্বিয়াকে তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বলেছেন, আমরা নৃশংসতার দীর্ঘ ইতিহাস মোকাবিলার জন্য একটি সামগ্রিক অন্তর্বর্তীকালীন ন্যায়বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে প্রস্তুত রয়েছি। এই বিচার প্রক্রিয়া সত্য, ক্ষতিপূরণ, ন্যায়বিচারের দাবিতে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে তার জন্য ভুক্তভোগী এবং বেঁচে থাকা মানুষের দাবিকে সম্মান জানানোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
রবিবার (২৬ আগস্ট) বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক ইউএস আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া এসব কথা বলেন।
গণহত্যার কথা স্বীকার করাই একমাত্র কাজ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সহিংসতার অবসান ঘটাতে এবং নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সবাইকে একসঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ গণহত্যা শুরুর ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেয়া এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে যোগদানকারী রোহিঙ্গা প্রবাসী সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘চলমান নিপীড়নের মুখে আমি আপনাদের সহনশীলতার প্রশংসা করি।’
২০১৬-২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর নৃশংস হামলা চালায়।
আরও পড়ুন: সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করুন: বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আজরা জেয়ার বার্তা
নির্যাতন, যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাসহ পদ্ধতিগত সহিংসতা ও গণহত্যার ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হন এবং হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। তারা ৭ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। এসব আক্রমণের ভয়াবহ প্রভাব আজ ছয় বছর পরেও অব্যাহত।
বাংলাদেশ এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরও অনেকে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
জেয়া বলেন, ‘জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তারা মিয়ানমারে তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সহিংসতার বর্ণনা দেন। একই সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে গেলে আবারও নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।’
মিয়ানমার সরকার জাতিগত ও ধর্মীয় পার্থক্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ২০১৬-২০১৭ পর্যন্ত অধিকার, নাগরিকত্ব, বাড়িঘর এবং এমনকি তাদের জীবন হারানোর ঘটনায় এ বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায়। রোহিঙ্গারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই সত্যকে চাপা দেওয়া চেষ্টা করেছে দেশটির সরকার।
জেয়া বলেন, ‘আমরা দায়ীদের জবাবদিহি করা, বেঁচে থাকা ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে অটল।’
রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে একক দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রথমে।
তারা ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের এ সংক্রান্ত সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়নেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা নিরাপদে মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরতে পারবে না- তা স্বীকার করে তিনি বলেন, পুনর্বাসন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, সেখানে আমরা অবদান রেখেছি।
২০০৯ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ এই অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে।
জেয়া বলেন, ‘আমাদের কাজ শুধু মানবিক নয়, আমাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।’
আরও পড়ুন: সফর শেষ করেছেন আজরা জেয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের জন্য জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়াকেও সহায়তা করে। দেশটির একটি ম্যান্ডেট হলো ২০১১ সাল থেকে মিয়ানমারে সংঘটিত সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ সংগ্রহ, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা।
ওপেন সোর্স তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা জোরদার করতে এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের রক্ষা করার জন্য মার্কিন সহায়তার মধ্যে ২ মিলিয়ন ডলার তহবিল দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
জেয়া বলেন, ‘আমরা জবাবদিহি চাওয়ার ক্ষেত্রে একা নই। বুধবার, আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি যৌথ বিবৃতিতে সামরিক সরকারের করা নিরবচ্ছিন্ন সহিংসতা অবসানের আহ্বান জানিয়ে আরও ১২টি দেশের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছি।’
এই বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের অর্থনীতির জেট ফুয়েল সেক্টর পরিচালনাকারী কোনো বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর তাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়গুলো আরও প্রসারিত করেছে এবং এই তালিকায় দুই ব্যক্তি ও তিনটি সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্জেন্টিনার আদালতে তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য সাহসিকতার সঙ্গে বিচার চেয়েছে রোহিঙ্গারা। তাদের সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও এনজিওগুলোর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও রযেছে।’
জেয়া বলেছেন, তারা সক্রিয়ভাবে সুশীল সমাজ এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতা এবং অন্যান্য নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত করার জন্য কাজ করছে।
জেয়া বলেন, মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন। ২০২২ সালের মার্চে দেওয়া এই স্বীকৃতি ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আটবার এধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
জেয়া বলেন, ‘শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করাসহ বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের প্রয়োজনগুলো বিবেচনায় নিতে হবে আমাদের। আমাদের অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সেনাবাহিনীর অব্যাহত দায়মুক্তির বিষয়টি মোকাবিলা করতে হবে। পাশাপাশি যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ন্যায়বিচারের জন্য অবশ্যই তাদের লড়াইকে সমর্থন করতে হবে।’
এই মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কীভাবে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক মিয়ানমার নিশ্চিত করতে পারি, তা নির্ধারণে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে। যে ব্যবস্থা সবার মানবাধিকারকে সম্মান করে।’
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার ‘দৃঢ় অঙ্গীকার’ করেছে: আজরা জেয়া
চলতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাবদাহে ১৪৭ জনের মৃত্যু
চলতি বছরের দাবদাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিএনএন এক রিপোর্টে জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এই সংখ্যা চরম আবহাওয়ার কারণে প্রাণ হারানোর প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম।
দেশটির তিনটি রাজ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এসব রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আগস্টের প্রথম দিকে অ্যারিজোনার পিমা কাউন্টিতে ৬৪ জন মারা গেছেন; অ্যারিজোনায় ম্যারিকোপা কাউন্টিতে, ৩৯ জন মারা গেছেন; নেভাদার ক্লার্ক কাউন্টিতে ২৬ জন মারা গেছেন; টেক্সাসের ওয়েব কাউন্টিতে ১১ জন মারা গেছেন এবং এবং টেক্সাসের হ্যারিস কাউন্টিতে সাত জন মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে নির্বিচারে গুলির ঘটনা ঘটেছে ৪০০টিরও বেশি
এছাড়াও দেশটির ক্যালিফোর্নিয়া, দক্ষিণ ও মধ্যপশ্চিমের কিছু অংশেও তাপজনিত মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ম্যারিকোপা কাউন্টিতে কমপক্ষে ৩৯ জনের তাপজনিত মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়াও মৃত্যুর সম্ভাব্য তাপ-সম্পর্কিত কারণ উদঘাটনে আরও ৩১২টি মৃত্যু এখনও তদন্তাধীন।
সিএনএন-এর মতে, জুনের শেষের দিকে তাপমাত্রা রেকর্ড মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং জুলাই মাস পর্যন্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের বেশিরভাগ অংশে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে উপকূলে ভেসে এসেছে কয়েক হাজার মরা মাছ
যুক্তরাষ্ট্রে হাইস্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ২, আহত ৫
ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে বিরোধীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উ. কোরিয়ার
পূর্বদিকের জলসীমা অভিমুখে ফের একটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে উত্তর কোরিয়া। বুধবার দেশটির প্রতিবেশি দক্ষিণ কোরিয়া এ তথ্য জানায়।
এর আগে গত দুদিন আগে উত্তর কোরিয়া এক হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, তার দেশের সীমান্তের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উসকানিমূলক গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের জন্য ‘চরম’ মূল্য দিতে হবে।
দ.কোরিয়ার জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ এক বিবৃতিতে বলেছে, আজ সকাল ১০টায় সামরিক বাহিনী উত্তরের রাজধানী অঞ্চল থেকে একটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করেছে।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে মিলে দ. কোরিয়ার সামরিক বাহিনী নজরদারি বাড়িয়েছে এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা তৎপর রয়েছে।
জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা সাংবাদিকদের বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রটি অনেক উঁচু দিয়ে কোণ বরাবর জাপান সাগরে ছোঁড়া হয়েছে। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সময় প্রতিবেশী দেশগুলোকে এড়াতে উ. কোরিয়া এই কৌশল ব্যবহার করে।
হামাদা বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে কোরিয়ান উপদ্বীপের উপকূলের প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার পূর্বে সমুদ্রে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১৭ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডকে লক্ষ্য করে উ. কোরিয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে আঘাত হানতে সক্ষম পারমাণবিক অস্ত্র উদ্ভাবনের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া।
আরও পড়ুন: আবারও ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করল উত্তর কোরিয়া
বুধবারের উৎক্ষেপণের আগে, গত এপ্রিল মাসে উত্তর কোরিয়া তার সর্বশেষ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছিল।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে তাদের ব্যাপারে গুপ্তচরবৃত্তি করতে একটি মার্কিন সামরিক বিমান উড়ানোর অভিযোগে একাধিক বিবৃতি দেয় উ. কোরিয়া।
এর প্রায় একমাস পর বুধবার দুরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করে উ. কোরিয়া।
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া বরাবরই উত্তরের এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সংঘাত সৃষ্টি করে এমন কোনো কাজ বা বাগাড়ম্বর থেকে উ. কোরিয়াকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
গত সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে উ. কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছিলেন।
এসময় তিনি দাবি করেছিলেন, মার্কিন গুপ্তচর বিমানটি উত্তর কোরিয়ার পূর্বাঞ্চলে আটবার প্রদক্ষিণ করেছে।
মঙ্গলবার আরেক বিবৃতিতে কিম ইয়ো জং বলেছেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী যদি তার দেশের আকাশপথে অবৈধ গুপ্তচরবৃত্তি কার্যক্রম চালিয়ে যায়, তবে তারা ‘চরম ফল’ ভোগ করবে।
এছাড়াও উ. কোরিয়ার সামরিক বাহিনীও মার্কিন গুপ্তচর বিমানগুলোকে গুলি করে ভূপাতিত করার হুমকি দিয়েছে।
আরও পড়ুন: উত্তর কোরিয়ার দূরপাল্লার মিসাইল পরীক্ষা
করোনাভাইরাস: উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, সমালোচনায় দ. কোরিয়া
সরকার আশা করে অগণতান্ত্রিক শক্তি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করার বিভ্রান্তিকর প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে
বাংলাদেশ সরকার বলেছে, তারা আশা করে যে স্থানীয় অগণতান্ত্রিক শক্তি; যারা সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞের অবলম্বন করে, তারা সতর্ক থাকবে এবং সংবিধানের নির্দেশিত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করতে তাদের বিভ্রান্তিকর প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে।
সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দেশে উন্নয়নের সুফল টিকিয়ে রাখা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন ভিসা নীতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘সরকার প্রশংসা করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দৃঢ়ভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর টেকসই প্রতিশ্রুতির পাশে দাঁড়িয়েছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচনের সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক আচরণে আপস করার জন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সত্তার দ্বারা কোনো বেআইনি অনুশীলন বা হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ ও মোকাবিলার জন্য সরকারি যন্ত্রপাতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দ্বারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে।
ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাক্টের অধীনে তথাকথিত থ্রিসি বিধান অনুসারে ভিসা সীমাবদ্ধতা নীতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার নোট করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার জন্য সকল স্তরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তার সরকারের দ্ব্যর্থহীন প্রতিশ্রুতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এই ঘোষণা দেখতে চায়।’
আরও পড়ুন: মোমেনের মানহানির অভিযোগে দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের নিন্দা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশ হিসেবে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে সরকার জানিয়েছে।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে এটা স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশের জনগণ অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
এর ফলে ২০০৬ সালের মাথাপিছু দারিদ্র্য ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং একই সময়ের মধ্যে চরম দারিদ্র্য ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংসে নেমে এসেছে।
এখন উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ একটি ‘আন্তর্জাতিক রোল মডেল’, ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উন্নীত হওয়ার যোগ্য হয়ে উঠেছে।
গত চৌদ্দ বছরে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হওয়ার কারণেই এসব অর্জিত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন।
এতে বলা হয়েছে, ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট হরণ করে কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকার নজির নেই।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক দলকে রেখে অন্য রাজনৈতিক দলকে ‘সমর্থন’ করে না যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
জনগণের ভোটাধিকারের অধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা বলে মনে করে এবং এই অধিকারের জন্য নিরলস সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার রয়েছে।
সরকার সব শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য সমাবেশ ও সমিতির স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশে নির্বাচনী সংস্কার প্রক্রিয়া সমস্ত সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শমূলক পদ্ধতিতে অব্যাহত রয়েছে।
প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক তালিকাভুক্ত ১০ দশমিক ২৩ মিলিয়ন জাল ভোটারের প্রতিক্রিয়ায় ছবিসংবলিত ভোটার আইডি কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল।
ভোটারদের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও এজেন্টদের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবহারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন কমিশন পূর্ণ স্বাধীনতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে তার কার্যাবলী সম্পাদন করার জন্য কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।
বর্তমান সরকার প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়।
এ আইন অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশ সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ দ্বারা বাধ্যতামূলকভাবে সম্পূর্ণ নির্বাহী প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, যাতে তারা নির্দেশিতভাবে তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা করতে পারে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করার জন্য নয়: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মোমেন
সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে উল্লেখ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ জানিয়ে দিয়েছে যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করার জন্য নয়।
‘আমরা বলেছিলাম আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছি, কিন্তু এটা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রোধ করার জন্য নয়। আওয়ামী লীগ সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে,” পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে তার বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষকে এসব কথা বলেছেন।
মোমেন বিপুল সংখ্যক সংবাদপত্র ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের চালু থাকার কথা উল্লেখ করেন যাকে তিনি ‘অতি সক্রিয়’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
প্রধান উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলের মতে, সভায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ‘গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং ভয় দেখানো’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে মোমেনের ফলপ্রসূ বৈঠক
বাংলাদেশে শ্রম খাত সংস্কারের চলমান ও সম্পন্ন কাজের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আশা প্রকাশ করেন যে, দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই প্রচেষ্টা যথাযথভাবে স্বীকৃত ও প্রশংসিত হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নতিতে চলমান ইউএস-বাংলাদেশ পরামর্শমূলক প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন।
মোমেন শ্রমের মানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন এবং ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স
কর্পোরেশনের (ডিএফসি) অধীনে অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশকে বিবেচনা করার জন্য মার্কিন পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
ডিএফসি হলো আমেরিকার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন। এটি আজ উন্নয়নশীল বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সমাধানে অর্থায়নের জন্য বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক দল অপর রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করছে না: মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট
উ.কোরিয়া ফের সমুদ্রের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে: দ. কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে শনিবার ফের সমুদ্রের দিকে একটি সন্দেহভাজন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। দ.কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়ার একদিন পরেই উ.কোরিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
সিউলের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জানিয়েছেন, এদিন বিকাল ৫টা ২২ মিনিটে পিয়ংইয়ং এর সুনান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে অস্ত্রটি কোথায় পড়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে বলা হয়নি।
উ.কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে দ.কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে একাধিক পরিকল্পিত সামরিক মহড়া ঘোষণা করে।
এরপর উ.কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ‘অভূতপূর্ব’ শক্তিশালী পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে।
উ.কোরিয়া চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম একটি স্বল্প-পাল্লার অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এবছর উত্তর কোরিয়া ৭০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে অস্ত্র প্রদর্শনে রেকর্ড করেছে। যার মধ্যে মার্কিন মূল ভূখণ্ডে পৌঁছানোর সম্ভাব্য সক্ষমতাসহ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে।
উ.কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাগুলো মূলত দ.কোরিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলার হুমকি।
আরও পড়ুন: আবারও ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করল উত্তর কোরিয়া
উ.কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ২০২৩ সালে তার পরমাণু কর্মকাণ্ড দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি দেশটির পারমাণবিক ওয়ারহেডগুলো ‘উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি’ ও ‘শত্রু’ দ.কোরিয়াকে লক্ষ্য করে যুদ্ধক্ষেত্রের কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপক উৎপাদন এবং আরও উন্নত আইসিবিএমগুলো বিকাশের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি গত সপ্তাহে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের সময় এক ডজনেরও বেশি আইসিবিএম প্রদর্শন করেন।
সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কিম তার দেশের সামরিক সক্ষমতা সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতার ওপর জোর দিয়ে আসছেন।
অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় অচলাবস্থা বজায় রয়েছে।
শুক্রবার উ.কোরিয়া এক বিবৃতিতে এই বছর ওয়াশিংটন ও সিউলকে ২০ রাউন্ডের বেশি সামরিক মহড়ার পরিকল্পনা করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। যার মধ্যে বড় আকারের মহড়াও রয়েছে এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাহত করছে’ বলে বর্ণনা করেছে।
দ.কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনপ্রণেতা কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে সিউল ও ওয়াশিংটন মার্চের মাঝামাঝি সময়ে একটি বার্ষিক কম্পিউটার-সিমুলেটেড সম্মিলিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে।
দ.কোরিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির উপমন্ত্রী হিও তাই-কেউনের মতে, ১১ দিনের প্রশিক্ষণ উ. কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকির পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন অনির্দিষ্ট লক্ষ্য প্রতিফলিত করবে।
হিও বলেন, দুই দেশ মার্চের মাঝামাঝি সময়ে যৌথ মহড়াও পরিচালনা করবে, যা বিগত কয়েক বছরে অনুষ্ঠিত হওয়া মহড়ার তুলনায় বড় হবে।
আরও পড়ুন: উত্তর কোরিয়ার দূরপাল্লার মিসাইল পরীক্ষা
শিগগিরই নতুন ‘কৌশলগত অস্ত্র’ প্রদর্শন করবে উত্তর কোরিয়া: কিম
দেশের আকাশসীমায় ১০টিরও বেশি মার্কিন বেলুন উড়েছে: চীন
চীন বলেছে, গত এক বছরে ১০টিরও বেশি মার্কিন হাই-অ্যালটিটিউড বেলুন বিনা অনুমতিতে তাদের দেশের আকাশসীমায় উড়েছে। বেইজিং বিশ্বজুড়ে নজরদারি বেলুনগুলোর একটি বহর পরিচালনা করছে বলে ওয়াশিংটনের এমন অভিযোগের পরই চীন এ দাবি করলো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুলি করে একটি সন্দেহভাজন চীনা গুপ্তচর বেলুন ধ্বংস করার পরে চীনের পক্ষ থেকে এ দাবি করা হলো।
সন্দেহভাজন চীনা গুপ্তচর বেলুনটি আলাস্কা থেকে দক্ষিণ ক্যারোলিনা অতিক্রম করেছিল। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে এই দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।
সোমবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন অভিযুক্ত মার্কিন বেলুনগুলো সম্পর্কে জানালেও, এগুলো সম্পর্কে কোনও বিশদ বিবরণ দেননি। এমনকি কীভাবে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল বা এগুলোর সঙ্গে মার্কিন সরকারের বা সামরিক বাহিনীর কোনও সম্পর্ক ছিল কিনা তাও জানানো হয়নি।
আরও পড়ুন: বেলুন ইস্যুতে ব্লিঙ্কেনের চীন সফর বাতিল
ওয়াং তার প্রাত্যাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মার্কিন বেলুনগুলো অন্য দেশের আকাশসীমায় অবৈধভাবে প্রবেশ করা সাধারণ ব্যাপার।’
তিনি বলেন, গত বছর থেকে, মার্কিন গোয়েন্দা বেলুনগুলো চীনের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ১০ বারের বেশি অবৈধভাবে চীনের আকাশসীমার ওপর দিয়ে উড়েছে।’
ওয়াং বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ‘প্রথমে নিজের কর্মকাণ্ডের বিচার করা এবং সংঘাত সৃষ্টি না করে মনোভাব পরিবর্তন করা।’
চীন বলেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংস করা বেলুনটি ছিল আবহাওয়া গবেষণার জন্য তৈরি একটি মনুষ্যবিহীন বিমান।
তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এটিকে গুলি করে অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখানোর অভিযোগ করেছে এবং এই প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিয়েছে।
ঘটনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার বেইজিং সফর বাতিল করেছেন।
এ ঘটনার আগে অনেকেই আশা করেছিলেন যে তাইওয়ান, বাণিজ্য, মানবাধিকার এবং বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা পদক্ষেপের হুমকির বিষয়ে সম্পর্কের তীব্র অবনতি এবার কিছুটা কমবে।
এছাড়াও, সোমবার ফিলিপাইন একটি চীনা উপকূলরক্ষী জাহাজকে একটি সামরিক-গ্রেড লেজার দিয়ে ফিলিপাইনের উপকূলরক্ষী জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করা এবং দক্ষিণ চীন সাগরে কয়েকজন ফিলিপিনো ক্রুকে সাময়িকভাবে অন্ধ করে দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
ফিলিপাইন এটিকে ম্যানিলার সার্বভৌম অধিকারের ‘স্পষ্ট’ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
ওয়াং বলেন, ফিলিপাইনের একটি উপকূলরক্ষী জাহাজ ৬ ফেব্রুয়ারি অনুমতি ছাড়াই চীনা জলসীমায় অনুপ্রবেশ করেছিল এবং চীনা উপকূলরক্ষী জাহাজগুলো ‘পেশাদারভাবে ও সংযমের সঙ্গে’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
চীন মৌখিকভাবে তার আশেপাশের সমস্ত কৌশলগত জলপথের মালিকানা দাবি করছে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তার সামুদ্রিক বাহিনী ও দ্বীপ ফাঁড়ি গড়ে তুলছে।
ওয়াং বলেছেন, ‘চীন ও ফিলিপাইন এই বিষয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখছে।’
তবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ ঘটনা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
অন্যদিকে, উত্তেজনা আরও বাড়াতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে রবিবার একটি মার্কিন যুদ্ধবিমান লেক হুরনের ওপর একটি ‘অজ্ঞাত বস্তু’কে লক্ষ্য করে গুলি করে।’
গত বৃহস্পতিবার বাইডেন প্রশাসন আমেরিকান ইউ-২ গুপ্তচর বিমানের ছবির কথা উদ্ধৃত করে বলে, তাদের ধ্বংস করা চীনা বেলুনটি ৪০টিরও বেশি দেশকে লক্ষ্যবস্তু করে গোয়েন্দা সংকেত শনাক্ত এবং তথ্য সংগ্রহ করছিল।
বেলুনকাণ্ডের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি চীনা সংস্থার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসও সর্বসম্মতভাবে চীনকে মার্কিন সার্বভৌমত্ব ‘লঙ্ঘন’ এবং ‘গোয়েন্দা অভিযান সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রতারিত করার চেষ্টা করা’র জন্য অভিযুক্ত করেছে।
চীনের মুখপাত্র ওয়াং এই অভিযোগকে ফের প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘বস্তুগুলোকে গুলি করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘন ঘন উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো।’
আরও পড়ুন: চীনের বেলুন গোয়েন্দা সংকেত সংগ্রহ করতে সক্ষম: যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্রের উপর চীনা বেলুন ধ্বংস করল, ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ