বাংলাদেশ সরকার বলেছে, তারা আশা করে যে স্থানীয় অগণতান্ত্রিক শক্তি; যারা সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞের অবলম্বন করে, তারা সতর্ক থাকবে এবং সংবিধানের নির্দেশিত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করতে তাদের বিভ্রান্তিকর প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে।
সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দেশে উন্নয়নের সুফল টিকিয়ে রাখা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন ভিসা নীতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘সরকার প্রশংসা করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দৃঢ়ভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর টেকসই প্রতিশ্রুতির পাশে দাঁড়িয়েছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচনের সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক আচরণে আপস করার জন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সত্তার দ্বারা কোনো বেআইনি অনুশীলন বা হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ ও মোকাবিলার জন্য সরকারি যন্ত্রপাতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দ্বারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে।
ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাক্টের অধীনে তথাকথিত থ্রিসি বিধান অনুসারে ভিসা সীমাবদ্ধতা নীতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার নোট করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার জন্য সকল স্তরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তার সরকারের দ্ব্যর্থহীন প্রতিশ্রুতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এই ঘোষণা দেখতে চায়।’
আরও পড়ুন: মোমেনের মানহানির অভিযোগে দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের নিন্দা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশ হিসেবে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে সরকার জানিয়েছে।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে এটা স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশের জনগণ অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
এর ফলে ২০০৬ সালের মাথাপিছু দারিদ্র্য ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং একই সময়ের মধ্যে চরম দারিদ্র্য ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংসে নেমে এসেছে।
এখন উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ একটি ‘আন্তর্জাতিক রোল মডেল’, ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উন্নীত হওয়ার যোগ্য হয়ে উঠেছে।
গত চৌদ্দ বছরে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হওয়ার কারণেই এসব অর্জিত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন।
এতে বলা হয়েছে, ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট হরণ করে কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকার নজির নেই।
জনগণের ভোটাধিকারের অধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা বলে মনে করে এবং এই অধিকারের জন্য নিরলস সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার রয়েছে।
সরকার সব শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য সমাবেশ ও সমিতির স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশে নির্বাচনী সংস্কার প্রক্রিয়া সমস্ত সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শমূলক পদ্ধতিতে অব্যাহত রয়েছে।
প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক তালিকাভুক্ত ১০ দশমিক ২৩ মিলিয়ন জাল ভোটারের প্রতিক্রিয়ায় ছবিসংবলিত ভোটার আইডি কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল।
ভোটারদের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও এজেন্টদের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবহারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন কমিশন পূর্ণ স্বাধীনতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে তার কার্যাবলী সম্পাদন করার জন্য কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।
বর্তমান সরকার প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়।
এ আইন অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশ সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ দ্বারা বাধ্যতামূলকভাবে সম্পূর্ণ নির্বাহী প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, যাতে তারা নির্দেশিতভাবে তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা করতে পারে।