শারম আল শেখ
কপ-২৭ সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ স্বীকৃতি পেয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, চলমান কপ-২৭ সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে লস এন্ড ড্যামেজে অর্থায়ন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, লস এন্ড ড্যামেজের ক্ষতি পোষাতে আমরা গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড এর মতো পৃথক ফান্ড চাই।
মিশরের শারম আল শেখ শহরে ৬ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান কপ-২৭ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ যোগ দেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ কপ-২৭ সম্মেলনের গত এক সপ্তাহের অগ্রগতি নিয়ে শনিবার ইউএনবিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষৎকারে এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন এবারের কপ-২৭ আলোচনার মূল ফোকাস: তথ্যমন্ত্রী
লস এন্ড ড্যামেজ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের লস এন্ড ড্যামেজ বেশি হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধির বড় উদাহরণ। আবার বন্যায় শুধু আমাদের অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে না, বানভাসি মানুষও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা তাদের জীবিকা ও ফসল হারাচ্ছে। তবে এবার আশার বিষয় হলো এবারের জলবায়ু সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে ডেনমার্ক ও বেলজিয়ামসহ আরও কয়েকটি দেশ লস এন্ড ড্যামেজে অর্থায়ন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে এই সম্মেলনে।
পরিবেশবিদ ও তথ্যমন্ত্রী বলেন, আরও একটি ভালো দিক হচ্ছে প্রায় ১০০টি দেশের সরকার/রাষ্ট্রপ্রধান এতে অংশ নিয়েছেন। কপ-২৭ এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত আশাপ্রদ। এটাই প্রতীয়মান হয় এই সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা অংশ নেয়া মানে জলবায়ু পরিববর্তনকে গুরুত্ব সহকারে দেখা। এই গুরুত্বটা আমি মনে করি তাপমাত্রা কমাতে ইতিবাচক হবে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
মন্ত্রী বলেন, লস এন্ড ড্যামেজ পোষাতে আমরা গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড এর মত পৃথক ফান্ড চাই। এজন্য আমরা দাবি করছি বাংলাদেশ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এটিকে আরও জোরালো করতে হবে।
ক্লাইমেট ফিনান্স বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কপ সম্মেলনে একটা বার্নিং কিছু থাকে ক্লাইমেট ফিনান্স নিয়ে। এই কপে এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, বিতর্ক হচ্ছে। এই বিতর্কটাকে উস্কে দিচ্ছে উন্নত দেশগুলো। গত বছর ৮২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে; কিভাবে তারা (উন্নত দেশগুলো) ফান্ড দিয়েছে বা কাকে দিয়েছে সে বিষয়ে একটা শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। যে সমস্ত বাইলেটারাল সহায়তা আছে, সেগুলোও এখানে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ কথা ছিল টু এডিশনাল সাহায্য দিবে। সেটা তারা করেনি।
তিনি আরও বলেন, এই ফান্ডিং এর ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা খুবই জরুরি। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বচ্ছতা আসবে না, ততক্ষণ ক্লাইমেট ফান্ড এর গতি আসবে না।
আরও পড়ুন: কপ-২৭ আলোচনায় সবুজ জলবায়ু তহবিল আদায়কে অগ্রাধিকার দেয় বাংলাদেশ: ইউএবনবিকে জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী
এবারে কপ সম্মেলনকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে যুদ্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে যে স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন চলছে, তা জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে মানুষকে। তাই পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাতে হলে আগে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধের কারণে জলবায়ু অর্থায়ন হুমকির মুখে পড়েছে। যুদ্ধ বন্ধ না হলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ পাবে কি-না সেটি এখন আমাদের সামনে বড় প্রশ্ন।
জলবায়ু সম্মেলনে বেশ কয়েকটি সাইড ইভেন্টে তথ্যমন্ত্রীর যোগদান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে দেশের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামোর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি মেটাতে বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে পৃথকভাবে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির এ বিষয়টি প্রথমে অনেকে স্বীকারই করতে চায়নি। অথচ বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অনেক দেশের জনজীবনে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। পরিবেশ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজনের জন্য বরাদ্দ থেকে অর্থায়ন নয়, এই ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ও নিরসনের জন্য আলাদা খাত তৈরি করে পৃথকভাবে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা ও পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অসময়ে বৃষ্টিপাত, খরা ও উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জল বেড়ে যাওয়া, নদীতীর ক্ষয়, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ, শহরাঞ্চল ও জলাধার সন্নিকট এলাকায় বন্যায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরেছি। বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে। স্যানিটেশনেও রয়েছে প্রায় শতভাগ সাফল্য। এক্ষেত্রে ভারত- পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের এই সাফল্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা নিরাপদ পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদেরকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগুতে হচ্ছে।
জলবায়ু সম্মেলনে কৃষি নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কৃষিখাতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর চাপের মুখেও দেশ। কিন্ত যখন কৃষিখাত থেকে মিথেন ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে বলা হয়, তখন সেটি আমাদের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কৃষিখাতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বলা হলেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখেই আমাদের কৃষিকে জলবায়ু সহিষ্ণু করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে আমরা কিছু করতে পারবো না।
আরও পড়ুন: কপ ২৭: উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা চায় বাংলাদেশ
২ বছর আগে