তরল জ্বালানি
সব তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হবে: নসরুল হামিদ
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে সব তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি আগামী দুই বছরের মধ্যে সব তরল জ্বালানিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারব’।
আরও পড়ুন: নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতির আশা নসরুল হামিদের
শনিবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে ‘এনার্জি ট্রানজিশন: গ্লোবাল কনটেক্সট’ শীর্ষক সেমিনারে
এমন সময় প্রতিমন্ত্রী এ ধরনের মন্তব্য করেছেন, যখন বিদ্যুত ও জ্বালানি সংকট এবং প্রাথমিক জ্বালানির অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে ডিজেলচালিত প্ল্যান্টের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম তামিম ও ডা. বদরুল ইমাম, সিনিয়র জ্বালানি সচিব মাহবুব হোসেন, বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান। এবং পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন।
এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এর নির্বাহী পরিচালক রিশান নাসরুল্লাহ।
নসরুল বলেন, প্রাথমিকভাবে এক বছরের মধ্যে এক হাজার মেগাওয়াট ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জ্বালানির সংকট মোকাবিলায় তিনটি বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে।
এগুলো হলো প্রযুক্তিগত উন্নতি, সাশ্রয়ী মূল্যে এবং দ্রুততম সময়ে জ্বালানি সরবরাহ করে।
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার জ্বালানি ব্যবসায় বেসরকারি খাতের আরও সম্পৃক্ততা চায়।
এ কারণে সব ধরনের জ্বালানি পণ্য আমদানি এখন বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘বেসরকারি খাত এলপিজির পাশাপাশি সব ধরনের তরল জ্বালানি এবং এলএনজি আমদানি করতে পারে। তারা তাদের নিজস্ব স্থাপনা স্থাপন করতে পারে এবং পেট্রোল পাম্পে বিক্রির জন্য ডিলারদের সরবরাহ করতে পারে’।
তিনি বিদ্যমান ডিজেলচালিত বাস এবং অন্যান্য পরিবহনের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) ব্যবহার করার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারি খাতের বাস এবং ট্রেনগুলোকে ইভি ব্যবহারে এগিয়ে আসা উচিত কারণ এর জ্বালানি সক্ষমতা ৮০ শতাংশ এবং ডিজেল চালিত যানবাহনের সক্ষমতা মাত্র ২০ শতাংশ’।
‘এনার্জি ট্রানজিশন: গ্লোবাল কনটেক্সট’-শীর্ষক উপস্থাপনায় ড. তামিম বলেন, বর্তমান সংকটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাংলাদেশের তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।
তিনি আরও বলেন, ৫ থেকে ১০ বছরের সময়ের ফ্রেমে সেক্টরভিত্তিক গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণের ভিত্তিতে চাহিদার পূর্বাভাস নেয়া উচিত।
তিনি ভবিষ্যতের জ্বালানি ক্রয় চুক্তি এবং ঝুঁকি কমানোতে ভূমিকা রাখতে বিশ্বমানের জ্বালানি ব্যবসায়ীদেরকে যুক্ত করার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: বাল্ক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি খুচরা গ্রাহকদের এই মুহূর্তে প্রভাবিত করবে না: নসরুল হামিদ
তিনি আরও বলেন, ‘দলের একটি বিস্তৃত বিশ্ব সম্পদ প্রবাহ এবং বহিঃপ্রবাহ বিশ্লেষণ করা উচিত।’
আইআরইএনএ -এর সুপারিশের কথা উল্লেখ করে ড. তামিম বলেন, সিও২ নির্গমন কমাতে বাংলাদেশের সর্বোত্তম পথ হলো দক্ষতার উন্নতি, কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ (বিইসিসিএস) এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিগুলোর সঙ্গে জৈবশক্তির ওপর জোর দেয়া।
তিনি বলেন যে স্থানীয় সরবরাহের সঙ্গে (গ্যাস এবং কয়লা উভয়ই) আমাদের অবশ্যই কয়লা, গ্যাস, সীমান্ত বিদ্যুৎ ও পারমাণবিক জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে প্রাথমিক জ্বালানির স্থিতিশীল ও টেকসই উৎস নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও দক্ষতার উন্নতির প্রতিটি দিককে জোরদারভাবে উৎসাহিত করা, অর্থায়ন করা এবং নীতিগতভাবে সমর্থিত করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন যে সৌর ছাদ, সেচ, সরকারি অধিগ্রহণকৃত জমিতে অব্যবহৃত পার্কগুলো থেকে সহজেই ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে পারি।
তিনি উল্লেখ করেন যে ‘জ্বালানি ও দক্ষতা প্রযুক্তি অভিযোজনের ওপর একটি পৃথক গবেষণা করা উচিত। এবং গ্রিড আপগ্রেডেশন এবং উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাধীন সিস্টেম অপারেটর তৈরিতে অবিলম্বে বিনিয়োগ প্রয়োজন।’
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় এখনও স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানের বিশাল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
সরকারের উচিত জ্বালানি সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে এই ধরনের সম্ভাব্য সুযোগগুলো ব্যবহার করা।
জ্বালানি সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানানোর আগে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহে সরকার সারাদেশে টুডি ও থ্রিডি অনুসন্ধান চালানোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, চলমান কর্মসূচির আওতায় ২০২৬ সালের মধ্যে প্রায় ৬০০এমএমসিএফডি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, সরকার প্রায় দুই হাজারটি ডিজেল চালিত সেচ পাম্পকে সোলার সিস্টেমে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের একটি বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে সংসদে তোপের মুখে নসরুল হামিদ
১ বছর আগে