পিয়ংইয়ং
ড্রোন নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই ফের ৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ উ. কোরিয়ার
উ.কোরিয়া তার সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনে শনিবার ফের তার পূর্ব জলসীমার দিকে তিনটি স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দ. কোরিয়া উত্তরের দিকে নজরদারি বাড়ানোর অংশ হিসেবে একটি রকেট নিক্ষেপ করার একদিন পরেই উ. কোরিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো।
প্রতিদ্বন্দ্বী দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা এই সপ্তাহের শুরুতে বেড়েছে। কেননা চলতি সপ্তাহে দ. কোরিয়া পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো উ. কোরিয়ার বিরুদ্ধে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত জুড়ে পাঁচটি ড্রোন উড়ানোর অভিযোগ করে এবং উত্তরের দিকে নিজস্ব ড্রোন পাঠিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা শনিবার সকালে উ. কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের দক্ষিণে একটি অন্তর্দেশীয় এলাকা থেকে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করেছে।
এতে বলা হয়েছে, তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র কোরীয় উপদ্বীপ ও জাপানের মধ্যবর্তী জলসীমায় অবতরণ করার আগে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার (২২০ মাইল) ভ্রমণ করেছে। আনুমানিক পরিসীমা দেখে বোঝা যায় যে দক্ষিণ কোরিয়াকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: উ. কোরিয়ার ড্রোন সীমান্ত অতিক্রমের পর দ. কোরিয়ার সতর্কীকরণ গুলি
জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ এই উৎক্ষেপণকে ‘গুরুতর উস্কানি’ বলে অভিহিত করেছেন, যা আন্তর্জাতিক শান্তিকে ক্ষুণ্ন করে।
এতে বলা হয়েছে, দ. কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে উ. কোরিয়ার গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং উ. কোরিয়ার যেকোনো উসকানিকে ‘অপ্রতিরোধ্যভাবে’ প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড বলেছে, এইসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার মধ্য দিয়ে বেআইনিভাবে উ. কোরিয়ার অস্ত্র কর্মসূচির ‘অস্থিতিশীল প্রভাব’ ফুটে উঠেছে এবং এতে দ. কোরিয়া ও জাপানের নিরাপত্তা রক্ষায় মার্কিন প্রতিশ্রুতি ‘আরও দৃঢ় করেছে।’
এর আগে শনিবার জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও উ. কোরিয়ার সন্দেহভাজন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা জানিয়েছে।
দ.কোরিয়া কর্তৃপক্ষ উ. কোরিয়ার ড্রোনগুলো শনাক্ত করারর পাঁচদিন পরেই এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করা হয়।
সোমবার দ.কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বেশ কিছু যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার পাঠায়, তবে তারা উ. কোরিয়ার কোনও ড্রোনকে গুলি করতে ব্যর্থ হয়।
এসময় উ. কোরিয়ার একটি ড্রোন উত্তর সিউল পর্যন্ত চলে আসে। এতে দ. কোরিয়ার জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল, যেজন্য মঙ্গলবার সামরিক বাহিনী জনসাধারণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল।
উ.কোরিয়ার উস্কানির বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দিতে দ.কোরিয়া সোমবার সীমান্তজুড়ে তিনটি নজরদারি ড্রোন উড়িয়েছে।
এছাড়া দ. কোরিয়া বৃহস্পতিবার ড্রোন ভূপাতিত করার অনুকরণে বড় আকারের সামরিক মহড়া করেছে।
দ. কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল তার দেশের বিমান প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এবং উ. কোরিয়ার উস্কানিকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করার অঙ্গীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দ. কোরিয়া মহড়ার পর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ উ. কোরিয়ার
মে মাসে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ইউনের সরকার উ. কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক হুমকির মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিয়মিত সামরিক মহড়া বৃদ্ধি করেছে।
উ.কোরিয়া তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে এই ধরনের মহড়াকে আক্রমণের মহড়া বলে অভিহিত করেছে এবং যুক্তি দিয়েছে যে তার সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কর্মকাণ্ডের পাল্টা প্রতিক্রিয়া।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, উ.কোরিয়া ব্যবহার করছে দ.কোরিয়া-ইউএস প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রাগারের আধুনিকীকরণকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। উ.কোরিয়া মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভবিষ্যতের লেনদেনে এর পরিসর বাড়াতে চাইছে।
শনিবারের ঘটনার আগে চলতি বছর উ. কোরিয়া ইতোমধ্যে ৭০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। তাদের মধ্যে অনেকগুলি ছিল পরমাণু-সক্ষম অস্ত্র, যা মার্কিন মূল ভূখণ্ড এবং তার মিত্র দ. কোরিয়া ও জাপানকে আক্রমণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়া একটি সলিড-ফুয়েলড রকেট উৎক্ষেপণ করেছে। এটি আগামীতে দ. কোরিয়ার প্রথম গুপ্তচর উপগ্রহটিকে কক্ষপথে স্থাপনে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০২২ সালের মার্চ মাসে দ.কোরিয়া একটি সলিড-ফুয়েলড রকেটের প্রথম সফল উৎক্ষেপণ করে এবং দেশটির প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে শুক্রবারের উৎক্ষেপণটি আগের উৎক্ষেপণের ফলোআপ পরীক্ষা ছিল।
দ. কোরিয়ার বর্তমানে নিজস্ব কোনো সামরিক পর্যবেক্ষক উপগ্রহ নেই এবং তারা উ. কোরিয়ার কৌশলগত অবস্থান পর্যবেক্ষণের জন্য মার্কিন গুপ্তচর উপগ্রহের ওপর নির্ভর করে।
উ. কোরিয়াও তার প্রথম সামরিক নজরদারি উপগ্রহ অর্জনের জন্য জোর দিচ্ছে।
এই মাসের শুরুর দিকে উ. কোরিয়া বলেছিল যে এটি একটি ক্যামেরা এবং একটি গুপ্তচর উপগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সিস্টেমগুলো পরীক্ষা করার জন্য মহাকাশ উৎক্ষেপণের যান হিসেবে দুটি পুরানো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে এবং পরে দ. কোরিয়ার শহরগুলো দেখানো কম-রেজোলিউশন স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: সিউলে হ্যালোইন উৎসবে পদদলিত হয়ে নিহত অন্তত ১৫১
১ বছর আগে