আদানি
আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠনের আদেশ হাইকোর্টের
ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির ক্ষেত্রে দরকষাকষির সকল নথিপত্র (ডকুমেন্টস) আগামী এক মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে চুক্তিটির সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।
আদানির আলোচিত বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অসম দাবি করে তা বাতিল অথবা পুনঃমূল্যায়ন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম আব্দুল কাইয়ুমের করা রিটের শুনানি শেষে রুলসহ এই আদেশ দেন আদালত।
হাইকোর্ট রুলে জানতে চেয়েছেন, অসম, অন্যায্য ও দেশের স্বার্থ পরিপন্থী বলে দাবি করা এই চুক্তিটি কেন বাতিল করা হবে না।
আরও পড়ুন: আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের সব চুক্তি বাতিল চেয়ে রিট
সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ওই কমিটিকে বিদ্যুৎ চুক্তিটির সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে দেশের স্বার্থ পরিপন্থী বিষয়গুলো চিহ্নিত করে আগামী ২ মাসের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরেকটি কমিটি করতে বলেছেন হাইকোর্ট। ওই কমিটিকে চুক্তিটির সম্পাদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনুসন্ধান করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম আব্দুল কাইয়ুম। এসময় রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান, আফরোজা ফিরোজ ও কামরুন মাহমুদ।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম আব্দুল কাইয়ুম পিডিবির চেয়ারম্যান ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এ বিষয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। সে নোটিশে তিন দিনের মধ্যে চুক্তি সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয়। তা না হলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: আদানির সময়সীমা নিয়ে আমরা খুবই মর্মাহত: প্রেস সচিব
এক পর্যায়ে লিগ্যাল নোটিশের কোনো জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। সে রিটে ‘আদানি গ্রুপের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিকে অসম, অন্যায্য ও দেশের স্বার্থ পরিপন্থী উল্লেখ করে চুক্তির শর্ত সমূহ সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সংশোধন করার কথা বলা হয়। আদানি গ্রুপ তাতে রাজি না হলে চুক্তিটি বাতিল করার জন্য রিটে সরকারের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়।
আদানি গোষ্ঠী ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় এক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই বাংলাদেশে সরবরাহ করে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে সেই চুক্তি হয়। শুরু থেকেই এই বিদ্যুতের দাম নিয়ে বিতর্ক ওঠে।
আরও পড়ুন: গোপনে আদানি গ্রুপের বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন প্রতিষ্ঠানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা
১ মাস আগে
শুল্ক সমস্যা অমীমাংসিত রেখেই বাংলাদেশে আদানির বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
বাংলাদেশ প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য আদানি পাওয়ারের গোড্ডা ঝাড়খণ্ড প্ল্যান্টের বাণিজ্যিক কার্যক্রম৭ এপ্রিল শুরু হয়েছে। তবে শুল্ক সমস্যার বিরোধ নিষ্পতি করা হয়নি এখনও।
প্রাথমিকভাবে, আদানি গত ৯ মার্চ পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে বাংলাদেশে তার বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করে।
সরকারি সূত্র অনুসারে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (এনার্জি অডিট) এর নেতৃত্বে 3 সদস্যের একটি কারিগরি দল পরিদর্শনের পরে একটি বাণিজ্যিক অপারেশন তারিখ (সিওডি) অনুমোদন করেছে।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে সূত্রটির একজন ইউএনবিকে জানিয়েছেন,‘প্রযুক্তিগত দলটি মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতে গিয়েছিল এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আদানির গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টে প্রায় ১০ দিন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু ট্যারিফের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আপত্তির পরে, আদানি পাওয়ার কয়লার দাম কমানোর প্রস্তাব দেয়, তবুও এটি বাংলাদেশের অবস্থান মেনে চলছে না।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে আদানি আইসিআই-৫০০ কয়লার জ্বিএআর ব্যবহার করে, যা নিম্নমানের কয়লা, কিন্তু আইসিআই-৬৫০০ -এর জিএআর মূল্য উদ্ধৃত করতে চায়।
তিনি বলেছেন, ‘উদাহরণস্বরূপ একটি আইসিআই-৬৫০০ -এর দাম হলো ১৭৯ দশমিক ৮৪, যেখানে আইআইসিআই-৯৫ দশমিক ৫০। এই ক্ষেত্রে, আদানি কয়লার দাম ১৭৯ দশমিক ৮৪ ডলার উদ্ধৃত করতে চাইছে যা বাংলাদেশের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশে আদানি এবং বিপিডিবির মধ্যে সাম্প্রতিক আলোচনার পরে, আদানি দাম কমাতে সম্মত হয়েছে এবং এটি পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুল্কের মধ্যে রাখতে চায়।
বিপিডিবির সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা কয়লার মূল্য নির্ধারণের একটি নির্দিষ্ট সূত্রে আটকে থাকে না যা বাংলাদেশের জন্য সমস্যাযুক্ত কারণ প্রতি মাসে বিপিডিবিকে শুল্ক ইস্যুতে আদানির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে যা বাংলাদেশের জন্য কাম্য নয়।’
এর আগে, আদানি গ্রুপের একটি উচ্চপর্যায়ের দল ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসে এবং ‘বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) কয়লা মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি’ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করে।
আরও পড়ুন: আদানি গ্রুপের সঙ্গে 'রাষ্ট্রবিরোধী' বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিলের দাবি ডা. জাফরুল্লাহর
উভয় পক্ষ একে অপরের কথা শুনেন এবং তারা ইস্যুতে নিজ নিজ পক্ষের পক্ষে তাদের পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। আদানির প্রতিনিধি তাদের জানিয়েছিলেন যে তারা পিপিএ-এর কয়লা মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতিতে বিপিডিবি’র অবস্থান তাদের শীর্ষ ব্যবস্থাপনার কাছে জানাবে এবং তারা আরও ফলো-আপ মিটিংয়ে বসবে।
বাংলাদেশ সরকার আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে ভারতের ঝাড়খন্ডের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সই করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) সংশোধন চেয়েছিল। মনে হচ্ছে প্রকল্পের জ্বালানি হিসেবে কেনা কয়লার দাম বিতর্কের প্রধান হাড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
বিপিডিবি’র একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেছেন। বিপিডিবি ঝাড়খন্ডের এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট প্ল্যান্টের জন্য জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত কয়লা আমদানির জন্য এলসি (ভারতে) খোলার বিষয়ে প্রাপ্ত একটি অনুরোধের পরে আদানি গ্রুপকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল।’
যেহেতু কার্যত ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় অবস্থিত প্ল্যান্টের উৎপাদিত সমস্ত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হবে। আদানি পাওয়ারের জন্য বিপিডিবি থেকে একটি ডিমান্ড নোট প্রয়োজন যা কয়লা আমদানির বিপরীতে এলসি খোলার আগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করতে পারে।
বন্দর থেকে প্ল্যান্ট পর্যন্ত পরিবহন সহ কয়লা আমদানির খরচ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বহন করবে, যার মূল্য পিপিএ- এর শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত।
সেই সময়ে যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে একটি বিশাল অস্থিরতা বিরাজ করছিল, তখন আদানি পাওয়ার সম্প্রতি বিপিডিবিকে চাহিদা নোট ইস্যু করার জন্য একটি অনুরোধ পাঠিয়েছে, যেখানে কয়লার দাম প্রতি মেট্রিক টন (এমটি)৪০০ মার্কিন ডলার উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই মূল্যকে বিপিডিবি কর্মকর্তারা অনেক বেশি মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় এটি দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: আদানির সঙ্গে বিদ্যুতের চুক্তি বাতিলের দাবি বিএনপির
কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে, তারা যে কয়লার মূল্য উদ্ধৃত করেছে প্রতি মেট্রিকটন ৪০০ মার্কিন ডলার তা অত্যধিক। বরং এটি প্রতি মেট্রিকটন ২৫০ মার্কিন ডলারের কম হওয়া উচিত, যা আমরা আমাদের অন্যান্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আমদানি করা কয়লার জন্য পরিশোধ করছি।’
বিপিডিবি কর্মকর্তা রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের কয়লা সংগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন যেখানে সরবরাহকারী বসুন্ধরা গ্রুপ জেটিতে পণ্য পৌঁছানোর জন্য প্রতি টন ২৩২ দশমিক ৩৩ ডলারে কয়লা সরবরাহের চুক্তি জিতেছিল। যদিও পরে কয়লার দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
একই সূত্রে আরও বলা হয়েছে যে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাইট পরিদর্শনের সময় আদানি পাওয়ারের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: আদানি প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুত সঞ্চালন শুরু
১ বছর আগে
আদানি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের
ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনও নিয়ন্ত্রক ব্যর্থতা তদন্ত করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
মার্কিন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনে আদানি কোম্পানিগুলোকে বাজারের কারসাজি এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক অনুশীলনে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে যা তদন্তের জন্য প্ররোচিত করেছে।
হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে গ্রুপের প্রধান প্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজ এবং অন্যান্য অনুমোদিত কোম্পানির শেয়ারগুলোর বাজার মূল্যে কয়েক বিলিয়ন ডলার পতন হয়েছে।
আরও পড়ুন: মার্চে আদানির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই: নসরুল
আদানি গ্রুপ যে কোনো অন্যায় কাজ অস্বীকার করেছে এবং অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণে ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি খণ্ডন দলিল প্রস্তত করেছে।
বৃহস্পতিবার একটি টুইট বার্তায়, আদালতের আদেশকে স্বাগত জানিয়েছে আদানি গ্রুপ।
এতে কোম্পানিটি বলছে, ‘এটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি চূড়ান্ত ফল আনবে। বিশ্বাস জয়ী হবে।’
বিশেষজ্ঞ কমিটি দুই মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে তাদের ফলাফল জমা দেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি পি.এস. নরসিংহ ও জেবি পারদিওয়ালা।
শীর্ষ আদালত আদানি গ্রুপের নিয়ম লঙ্ঘন বা স্টক মূল্যের হেরফের হয়েছে কিনা তা তদন্তে সরকার-চালিত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়াকেও নির্দেশ দিয়েছে।
কিছু কর্মী ও আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।
আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত ছাড়াও, বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়ন্ত্রক তদারকি এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সুরক্ষা উন্নত করার ব্যবস্থার পরামর্শ দিচ্ছে।
হিন্ডেনবার্গ তার প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি এন্টারপ্রাইজেস গত মাসে দুই দশমিক ৫ বিলিয়ন বাড়াতে একটি শেয়ার অফার বাতিল করেছে এবং এর শেয়ারের মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
কয়লা ব্যবসায়ী পুঁজিপতি গৌতম আদানির ব্যবসায়িক লেনদেনের তদন্তের দাবিতে বিরোধী আইনপ্রণেতারা গত মাসে সংসদীয় কার্যক্রম অবরুদ্ধ করেছিলেন। কথিত আছে আদানি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখেন।
আরও পড়ুন: আদানি গ্রুপের সঙ্গে ঢাকার বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নজিরবিহীন বৈষম্যমূলক: টিআইবি
কেন আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুত নেয়া হচ্ছে, প্রশ্ন এমপি চুন্নুর
১ বছর আগে
হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে ভারতের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আদানির
এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ভারতের আদানি গ্রুপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা ও শর্ট-বিক্রেতা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনকে প্রত্যাখান করেছে। তারা প্রতিবেদনটিকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ’, ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘নির্দিষ্ট কিছু ভুল তথ্য’ এ পূর্ণ বলেও অভিহিত করেছে।
হিন্ডেনবার্গ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং অন্যান্য অপকর্মের অভিযোগ এনে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর থেকে গ্রুপের শেয়ার ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
যদিও সোমবার আদানি গ্রুপ কিছু হারানো শেয়ার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এদিন গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজ ৩.২ শতাংশ লাভ করেছে এবং আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ৩.৩ শতাংশ লাভ করেছে। এছাড়া আদানির অন্যান্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
আরও পড়ুন: সাইকেলে হজযাত্রায় বেনাপোল হয়ে ভারত গেলেন থাই নাগরিক সালাম
রবিবার আদানি গ্রুপের প্রকাশিত ৪০০ পৃষ্ঠার প্রতিক্রিয়ায় তারা হিন্ডেনবার্গকে ভারত ও দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্রমণ করার এবং সিকিউরিটিজ ও বৈদেশিক মুদ্রার আইন ভঙ্গ করার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
এছাড়া হিন্ডেনবার্গকে অভিযুক্ত করে বলেছে যে এটি আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে এবং এর শেয়ার বিক্রিতে ধস নামানোর চেষ্টা করছে।
আদানির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি নিছক কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির ওপর কোনো অযৌক্তিক আক্রমণ নয়, বরং ভারতের ওপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ। কেননা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও গুণমান হলো ভারতের প্রবৃদ্ধির ঐতিহ্য ও ভবিষ্যত উন্নয়নের প্রত্যাশা।’
জবাবে হিন্ডেনবার্গ ফার্ম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে আদানির প্রতিক্রিয়া মূলত তার ত্রুটিগুলোকে নিশ্চিত করেছে এবং তারা তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
হিন্ডেনবার্গ আরও বলেছে, আদানি গ্রুপ তার উন্নয়নকে ভারতের সাফল্যের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করছে।
হিন্ডেনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি ভারত একটি প্রতিনিধিত্বকারী গণতন্ত্র এবং একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত সমৃদ্ধ একটি উদীয়মান পরাশক্তি। আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে ভারতের ভবিষ্যত আদানি গোষ্ঠীর মাধ্যমে আটকে রাখা হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে জালিয়াতি মানে জালিয়াতি। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি তা করলেও, তা জালিয়াতিই থাকে।’
আরও পড়ুন: দুই ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, ১ পাইলট নিহত
কয়লা খনির মাধ্যমে গৌতম আদানি এবং তার পরিবার ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও তাদের রয়েছে অবকাঠামো, বন্দর, ডেটা ট্রান্সমিশন, মিডিয়া, নবায়নযোগ্য শক্তি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন এবং কৃষিসহ বিভিন্ন শিল্পের ব্যবসা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদানির নিজস্ব সম্পদের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার শতাংশ বেড়েছে।
ব্লুমবার্গের বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স অনুসারে, গত বছরের শেষের দিকে প্রায় ১২৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে আদানি অ্যামাজনের প্রধান জেফ বেজোসকে ছাড়িয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তির খেতাব পেয়েছেন।
গত সপ্তাহের লোকসানের পর, ব্লুমবার্গের সূচকে তিনি ৯২.৭ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে বিশ্বের সপ্তম ধনীর স্থানে রয়েছেন।
হিন্ডেনবার্গ তার প্রতিবেদনে বলেছে দুই বছরের তদন্তের ভিত্তিতে তারা ‘আদানি গ্রুপ: কিভাবে বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি কর্পোরেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলকাঠি নাড়ছে’-শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
হিন্ডেনবার্গ তার প্রতিবেদনে ৮৮টি প্রশ্ন তালিকাভুক্ত করেছে এবং তারা এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আদানিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এরমধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগই গ্রুপের ঋণের মাত্রা, এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কার্যকলাপ, অফশোর শেল কোম্পানির ব্যবহার এবং জালিয়াতির অতীত তদন্ত বিষয়ে।
বিনিয়োগকারীরা বুধবার আদানি-সংযুক্ত শেয়ারগুলো ডাম্প করা শুরু করে এবং আদানি গ্রুপ প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার বাজার মূল্য হারায়।
প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ বলেছে যে হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনের ৮৮টি প্রশ্নের একটিও ‘স্বাধীন বা সাংবাদিকতাগত তথ্য অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি।’ এগুলোর অধিকাংশই ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর বা পক্ষপাতদুষ্ট।
সোমবার সিএনবিসি টিভি ১৮-এর সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে আদানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জুগেশিন্দর সিং বলেছেন, গ্রুপের মোট ঋণ ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৯ বিলিয়ন ডলার ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলোর থেকে নেয়া।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ভারতের ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত
হিন্ডেনবার্গ বলেছিল যে আদানি তাদের উত্থাপিত ৮৮টি প্রশ্নের মধ্যে ৬২টির উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আদানির প্রতিক্রিয়ার মাত্র ৩০ পৃষ্ঠা প্রাসঙ্গিক; বাকি পৃষ্ঠাগুলোয় আদালতের রেকর্ড, সাধারণ তথ্য, কোম্পানির আর্থিক ও ‘অপ্রাসঙ্গিক কর্পোরেট উদ্যোগ’ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আদানি গ্রুপের আইনি বিভাগের প্রধান যতীন জলন্ধওয়ালা বলেছিলেন যে গ্রুপটি হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে।
হিন্ডেনবার্গ বলেছে যে তারা তাদের প্রতিবেদনে অটল এবং তারা আদানি গ্রুপের আইনি পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে।
১ বছর আগে