ইউক্রেন যুদ্ধ
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সিআইএ কর্মকর্তার ছেলে নিহত
গাজাযুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন করায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর জমা ক্ষোভ থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) এক উপ-পরিচালকের ছেলে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে গত বছর প্রাণও হারিয়েছেন ওই যুবক। সম্প্রতি রাশিয়ান গণমাধ্যম আইস্টোরিসের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, সিআইয়ের উপ-পরিচালক জুলিয়ান গ্যালানের ২১ বছর বয়সী ছেলে মাইকেল আলেকজান্ডার গ্লস। তিনি ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল পূর্ব-ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারান।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম থেকে কিয়েভের অন্যতম সহায়তাকারী দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নানাভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা করেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে।
সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার বসবাসরত একজন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তার সন্তান কীভাবে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলো এই কাহিনী অবাক করেছে অনেককেই।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত করেছেন ট্রাম্প
রুশ সামাজিকমাধ্যম ‘ভিকেতে’ দেওয়া এক পোস্টে গ্লস নিজেকে বহুত্ববাদী বিশ্বের সমর্থক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ঘর ছেড়ে পালিয়েছি, বিশ্ব ঘুরেছি। আমি ফ্যাসীবাদকে ঘৃণা করি। আমি আমার জন্মভূমিকে ভালোবাসি।’ তিনি তার নিউজ ফিডে ফিলিস্তিনের পতাকাও শেয়ার করতেন।
আইস্টোরিসের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গ্লস ২০২২ সালে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া এক হাজার ৫০০ বিদেশির মধ্যে একজন। তবে এ সম্পর্কিত নথি ফাঁস হলে জানা যায়, গ্লস ২০২৩ সালের সেপ্টেস্বরে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে একটি চুক্তিতে সই করেছিলেন।
এক সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যোগদানের তিনমাস পর ডিসেম্বরে তাকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সম্মুখসারিতে (অ্যাসল্ট ইউনিট) মোতায়ন করা হয়।
গ্লসের এক পরিচিত জানান, ইউক্রেনের কাছে শোলেদার নামক শহরে তাকে এয়ারবর্ন রেজিমেন্টে (যারা প্যারাস্যুট দিয়ে বিমান থেকে নেমে রণক্ষেত্রে লড়াই করেন) তাকে মোতায়ন করা হয়।
গ্লস নিহত হওয়ার পর এক শোকর্বাতায় তার পরিবার জানায়, ‘মহৎ হৃদয়ের অধিকারী গ্লস বীরের মতো লড়তে লড়তে পূর্ব ইউরোপে প্রাণ হারিয়েছেন।’ এই শোকবার্তায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো উল্লেখ ছিল না।
গ্লসের অতীত সম্পর্কে খোঁজ নিলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তিনি লিঙ্গ সমতা ও পরিবেশবাদী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। তিনি বামপন্থি পরিবেশবাদী সংগঠন ‘রেইনবো ফ্যামিলি’-তে সংযুক্ত হয়েছিলেন। এমনকি ২০২৩ সালে তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেলে তাদের সহায়তা করতে সেখানে ছুটে যান এই যুবক।
এ সময় গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা শুরু হলে এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন করলে তিনি নিজ দেশের ওপর বেশ রাগান্বিত হন।
আরও পড়ুন: 'অবিলম্বে' রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের
গ্লসের এক পরিচিত বলেন, ‘তুরস্কে থাকার সময় থেকেই রাশিয়ার যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন এই মানবদরদী যুবক। ফিলিস্তিনে মানুষগুলো মরতে দেখে যুক্তরাষ্টের ওপর ক্ষোভ বাড়তে থাকে তার। এক পর্যায়ে নিজ দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চিন্তা করতে থাকেন গ্লস।’
বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক ভিডিও দেখে প্রভাবিত হয়েই গ্লস এমন চিন্তা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন ওই পরিচিত।
আইস্টোরির বিভিন্ন ভিডিও ও ছবিতে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর নেপালি চুক্তিভিত্তিক সৈন্যদের সঙ্গে গ্লসকে প্রশিক্ষণ নিতে দেখা দেখা গেছে। তবে গ্লসের এক পরিচিত জানান, যুদ্ধে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। গ্লস ভেবেছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দিলে গ্লস রাশিয়ায় থাকার সুযোগ পাবে।
রাশিয়ার ভিসা শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই গ্লস সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন বলেই তথ্য পাওয়া যায়।তবে গ্লসের মৃত্যু রহস্য এখনো সমাধান হয়নি। তার এক বন্ধু জানান, গ্লসের পরিবারকে তার মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করে মস্কো। তবে কিভাবে তিনি মারা গেলেন, তার বিস্তারিত কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। গ্লস ইউক্রেনের সীমানার মধ্যে মারা গিয়েছেন— কেবল এতটুকুই জানানো হয় পরিবারকে।
তাছাড়া গ্লসের পরিবার সম্পর্কে কিংবা তিনি যে যুক্তরাষ্ট্রের এক উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তার সন্তান; এই বিষয়টি ক্রেমলিন সরকার জানতো কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সিআইয়ে যোগাযোগ করেছে দ্য গার্ডিয়ান, কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।
৮ দিন আগে
রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাইবার হামলা বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার অভিযান কিংবা অভিযানের পরিকল্পনা স্থগিত করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন চেষ্টার মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩ মার্চ) এক মার্কিন কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।
ওই কর্মকর্তা জানান, সিআইএ এবং সাইবার নিরাপত্তা ও অবকাঠামো সুরক্ষা সংস্থাসহ (সিআইএসএ) অন্যান্য সংস্থার সাইবার কার্যক্রম হেগসেথের এই সিদ্ধান্তের আওতায় থাকবে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সিআইএসএ তাদের কার্যক্রমে কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে নিশ্চিত করেছে। তবে এফবিআই ও অন্যান্য সংস্থাগুলোর ডিজিটাল ও সাইবার হুমকি মোকাবিলার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য পদক্ষেপও সীমিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।-খবর এপি ও সিএনএনের।
পেন্টাগনের এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে, যখন সাইবার প্রতিরক্ষা ও আক্রমণাত্মক কার্যক্রমে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন অনেক জাতীয় নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। বিশেষত চীন ও রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, নির্বাচন ও নিরাপত্তাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত করেছেন ট্রাম্প
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা এই স্থগিতাদেশকে মার্কিন প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ‘এক বড় আঘাত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি জানান, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং এখানে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন হয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত দেশটিতে মস্কোর সম্ভাব্য সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে মত দেন এই কর্মকর্তা।
মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বিকল করতে এবং স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম রুশ হ্যাকাররা। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধ ও মস্কোর সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, প্রায় এক দশক আগে রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোর সাইবার হামলা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে সাইবার কমান্ড গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র। ম্যারিল্যান্ডের ফোর্ট মিড ঘাঁটিতে অবস্থিত সাইবার কমান্ড ধীরে ধীরে মার্কিন শক্তির একটি হাতিয়ার হয়ে ওঠে। এই সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোতে বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে সাইবার অপরাধী এবং গোয়েন্দাদের হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা করার চেষ্টা করে থাকে।
সূত্র: এপি ও সিএনএন
৬১ দিন আগে
ইউরোপকে জেগে ওঠার আহ্বান গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীর
ইউরোপকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও ইউরোপীয় দেশগুলোর স্বার্থরক্ষায় সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস। এ সময় ইউরোপের নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের ওপরও গুরুত্ব দিন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই বক্তব্য দেন মিতসোতাকিস।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ) গ্রিসের থেসলানোকির একটি বাণিজ্যিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন মিতসোতাকিস।
সম্প্রতি ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে বাদ দিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়; বিতর্কিত মন্তব্যও করে যাচ্ছেন অনবরত। ইউক্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে ঝুঁকছেন রাশিয়ার দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এহেন কর্মকান্ড খোদ দেশটিরই বহুদিনের পররাষ্ট্রনীতির বড়সড় পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করছে। চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ইউরোপের নেতারাও।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-জেলেনস্কি দ্বন্দ্বে
মঙ্গলবারে সৌদি আরবে রুশ-মার্কিন বৈঠক নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা তখন ট্রাম্প ও জেলেনস্কির দ্বন্দ্ব ইউরোপের নেতাদের চিন্তা আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৈঠকে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প ‘রাশিয়ার বিভ্রান্তিকর তথ্যের ফাঁদে’ পড়েছেন। কিয়েভকে ছাড়া করা বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার কথাও সুস্পষ্ট করে জানান দেন তিনি।
তার বক্তব্যের জবাবে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে দ্রুতই আলোচনার টেবিলে বসতে জেলেনস্কিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এ সময় জেলেনস্কিকে ‘অনির্বাচিত স্বৈরশাসক’ বলেও আখ্যা দেন তিনি।
দুই নেতার এই দ্বন্দ্ব ইউরোপীয়দের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ইউরোপে যে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, দ্রুতই তা কাটিয়ে উঠতে উদ্যোগ নিতে হবে তাদের।
এ সময় মিতসোতাকিস বলেন, ইউরোপের নিজস্ব একটি সেনাবাহিনী প্রস্তুত করার দাবি বেশ পুরনো। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে; তা ইউরোপের সেনাবাহিনী গঠনের যে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নকে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
এর আগে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও ইউরোপের নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই কী ইউক্রেন জয়ের পথে রাশিয়া?
মূলত, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর উপরই নির্ভরশীল ইউরোপের দেশগুলো। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রমাগত ইউরোপকে প্রতিরক্ষায় বেশি বিনিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন ট্রাম্প ।
শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইউরোপকে অবশ্যই আরও বেশি সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলোর নতুন করে নিজেদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বৈশ্বিক কূটনৈতিকবৃন্দ।
৭৩ দিন আগে
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-জেলেনস্কি দ্বন্দ্বে
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে দ্রুতই আলোচনার টেবিলে বসতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জেলেনস্কিকে ‘অনির্বাচিত স্বৈরশাসক’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘শান্তি নিশ্চিত করতে হয় তাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে অথবা তার দেশকে হারানোর ঝুঁকি নিতে হবে।’
দুই নেতার এই দ্বন্দ্ব ইউরোপীয়দের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবর বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করার জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যাতে হাজার হাজার ইউক্রেনীয়কে জীবন দিতে হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘ভোটারদের মধ্যে তার (জেলেনস্কির) জনপ্রিয়তা তলানিতে চলে গেছে।’ আর বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার ছড়ানোর ভুল তথ্যের জগতেই বাস করছেন ট্রাম্প।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই কী ইউক্রেন জয়ের পথে রাশিয়া?
যদিও যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার নিজস্ব বয়ানের বাইরেও এসব এসব তথ্য ছড়িয়েছে বলে দাবি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি তিন বছর ধরে এই যুদ্ধের মধ্যে আছেন, আপনার এটা বন্ধ করা উচিত...আপনার এটা শুরু করা উচিত হয়নি, আপনার উচিত ছিল একটি চুক্তিতে পৌঁছানো।’
পশ্চিম ইউক্রেনে রুশভাষীদের রক্ষায় ও ইউক্রেন যাতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে না পারে, সে জন্য ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
জেলেনস্কিকে নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন মার্কিন ডেমোক্র্যাটদলীয় আইনপ্রণেতারা। কয়েকজন রিপাবলিকানকেও তাতে যোগ দিতে দেখা গেছে। কংগ্রেসে দ্বিদলীয় সমর্থনেই এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্প ‘রাশিয়ার বিভ্রান্তিকর তথ্যের ফাঁদে’ পড়েছেন বলে অভিযোগ করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘এসব অপতথ্য দেখেছি, আমরা জানি এগুলো রাশিয়া থেকে এসেছে।’ এ সময়ে প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে এভাবে সমালোচনার বিপদ সম্পর্কেও সতর্ক করে দিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইলকে তিনি বলেন, ‘জেলেনস্কি ট্রাম্পের যে সমালোচনা করছেন, তা এই ঘটনায় সহায়ক হবে না। সংবাদমাধ্যমে বাজে ভাষা ব্যবহার করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন গলানোর চেষ্টা করছেন জেলেনস্কি। সবাই জানেন যে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই প্রশাসনকে মোকাবিলার জন্য এটা একটি জঘন্য উপায়।’
এদিকে যেসব শর্তে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেগুলো রাশিয়ার জন্য অনেক বেশি অনুকূলে বলে দাবি করেছে কিয়েভ। কিন্তু সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে ট্রাম্প বলেন, ‘একটু ভেবে দেখুন তো, একজন মাঝারি সফল কৌতুকাভিনেতা, ভলোদিমির জেলেনস্কি, এমন একটি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াতে বলছেন, সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে বলছেন, যেটাতে জয়ী হওয়া যাবে না, কখনোই এই যুদ্ধ শুরু করা উচিত হয়নি, যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পকে ছাড়া এই যুদ্ধের অবসানও করতে পারবে না।’
এছাড়া এই যুদ্ধঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যে সহায়তা দিয়েছে, জেলেনস্কি সেগুলোর অপব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প। এরইমধ্যে যুদ্ধ বন্ধে মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তারা। এতে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের ডাকা হয়নি।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় নেই ইউক্রেন
ট্রাম্প বলেন, ‘জেলেনস্কের উচিত ছিল আগেই একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করা। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়াই তার জন্য ভালো, নতুবা তিনি তার দেশকে হারাতে যাচ্ছেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে আমরা সফলভাবে আলোচনা করছি। সবাই এটা স্বীকার করবেন যে ট্রাম্প ও ট্রাম্প প্রশাসনই এটা পারে। ইউরোপ শান্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে, জেলেনস্কি সম্ভবত এই অপচেষ্টা অব্যাহত রাখতে চাচ্ছেন।’
৭৩ দিন আগে
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একমত ট্রাম্প-পুতিন, বসবেন সৌদিতে
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করতে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে এই বৈঠক হতে পারে বলেও তিনি আভাস দিয়েছেন।
এরমধ্য দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গেল তিন বছর ধরে চলা মার্কিন নীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছেন তিনি। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, ‘এই যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা করতে পুতিন ও আমি একমত।’-খবর এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি)।
একঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। এরপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কের সঙ্গেও কথা হবে বলে জানান ট্রাম্প। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেনও সমানভাবে অংশীদার হবে কিনা; সে বিষয়ে তার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা শান্তি অর্জনের পথে রয়েছি। আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও শান্তি চান। আমিও শান্তি চাই। আমি কেবল দেখতে চাই, লোকজনের প্রাণহানি হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ইউরোপীয়দের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক চলতি সপ্তাহে
পুতিনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘পুতিনের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জনগণ সত্যিকার অর্থে জানেন না। কিন্তু আমি মনে করি, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, তিনিও এই যুদ্ধের অবসান দেখতে চান। কাজেই সেটা ভালো এবং আমরা এই যুদ্ধ বন্ধের দিকে যাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব।’
এ সময়ে শিগগিরই পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প, যা সৌদি আরবে হতে পারে।
ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার মাধ্যমে এই আভাসই দেওয়া হচ্ছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ওয়াশিংটন ও মস্কো একটি চুক্তি পৌঁছাতে একমত হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কিয়েভও যে পরিপূর্ণ একটি অংশীদার হবে বলে মনে করতো জো বাইডেন প্রশাসন, সেখান থেকে সরে এসেছে ওয়াশিংটন।
ইউক্রেনও কী এই যুদ্ধের সমান অংশীদার হতে যাচ্ছে, জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘খুবই চমৎকার প্রশ্ন, আমি মনে করি, তারাও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান।’
এছাড়া ইউক্রেন যে পশ্চিমাদের সঙ্গে আরও ঘেঁষতে চাচ্ছে, সেই প্রত্যাশায় আরেকটি আঘাত করলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেট হেগসেথ। ব্রাসেলসে ন্যাটোর প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের জন্য ন্যাটোর সদস্য হওয়া বাস্তবসম্মত না।’
পরবর্তীতে ট্রাম্পও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, হেগসেথ যে কথা বলেছেন, সেটিই সত্য বলে আমি মনে করি।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অঙ্গীকার করেন, ইউক্রেনের জন্য এই পশ্চিমা সামরিক জোটের সদস্য হওয়া অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: দালালের খপ্পরে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়াচ্ছেন বাংলাদেশিরা: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
৮০ দিন আগে
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ইউরোপীয়দের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক চলতি সপ্তাহে
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চলতি সপ্তাহে ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) একটি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ওয়াল্টজ বলেন, ‘রুশ অর্থনীতি ভালো যাচ্ছে না। এরপর পুতিনকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে রুশ পণ্যে শুল্কারোপ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।’
ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা পুনর্বহাল করতে আলোচনায় চলতি সপ্তাহ ব্যয় করবে ট্রাম্প প্রশাসন বলেও জানান তিনি। এই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউক্রেনকে সামনে এগিয়ে নিতে ইউরোপীয় মিত্রদের বড় ভূমিকা রাখা দরকার।’
আরও পড়ুন: রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে: ট্রাম্প
‘আমাদের এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া দরকার এবং সেটা হতে পারে ইউক্রেনীয়দের অংশীদারত্বে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, গ্যাস ও তেলের ক্ষেত্রে ও আমাদের সম্পদ তাদের কাছে বিক্রি করার মাধ্যমে। চলতি সপ্তাহে এই আলাপ হতে যাচ্ছে,’ যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘এখানে একটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে, ইউরোপীয়রা যদি যুদ্ধ এগিয়ে নিতে চায়, তাহলে সেটা তাদের নিজস্ব নীতির ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট এই যুদ্ধের ইতি টানতে যাচ্ছেন। নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে ইউরোপীয়দেরও সমান অংশীদারত্বে এগিয়ে আসতে হবে।‘
এরআগে পুতিনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা; জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এটা করেছি, ধরা যাক, আমি এটা করেছি..এবং আরও অনেক আলোচনা হবে বলে আমি মনে করছি। এই যুদ্ধ আমাদের বন্ধ করতে হবে।’
তবে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এই ফোনালাপের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
বিভিন্ন সময়ে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার করেছিলেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে আলোচনা করতে পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক হবে বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু এর বাইরে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। রবিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একটা উপযুক্ত সময়ে পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক হবে।
৮৩ দিন আগে
গাজায় সাহায্য ও ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানের আহ্বান জি২০ সম্মেলনে
দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মোকাবিলার জন্য বৈশ্বিক চুক্তি, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজা অঞ্চলে আরও সহায়তা দান এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের ২০টি প্রধান অর্থনীতির দেশের নেতারা।
সোমবার এ বিষয়ে একটি যৌথ ঘোষণা জারি করেন তারা। তবে, এই ঘোষণাকে সাধারণ দিক-নির্দেশনা বলা যায়, এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট কৌশল বা বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়নি এতে।
যৌথ বিবৃতিতে জোট সদস্যরা সমর্থন করলেও সম্পূর্ণ ঐকমত্য অর্জন করা যায়নি। এতে ভবিষ্যতে বিলিওনিয়ারদের ওপর একটি বৈশ্বিক কর আরোপ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের বাইরেও সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিন দিনের এ বৈঠকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা সমবেত নেতাদের নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবেন কি না-তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করেন।
প্রাথমিক খসড়ায় কিছু ভাষার বিষয়ে চ্যালেঞ্জ জানায় আর্জেন্টিনা এবং এটিই একমাত্র দেশ যা সম্পূর্ণ ঘোষণায় সমর্থন করেনি।
স্বাধীন রাজনৈতিক পরামর্শক ও ব্রাজিলের সাবেক মন্ত্রী টমাস ট্রমা বলেন, 'যদিও এটি সাধারণ, তবে ব্রাজিলের জন্য এটি ইতিবাচক চমক। এমন সময়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এ মুহূর্তে কোনো ঘোষণা দেওয়া হবে বলেই আশঙ্কা ছিল। এত সতর্কতা সত্ত্বেও এটা লুলার জন্য ইতিবাচক।’
যুদ্ধের নিন্দা, শান্তির ডাক, কোনো দোষারোপ নয়
ইসরায়েলে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার এক বছরের বেশি সময় পরে এ ঘোষণাপত্রে ‘গাজার বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি এবং লেবাননে উত্তেজনা বৃদ্ধির’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মানবিক সহায়তা সম্প্রসারণ এবং বেসামরিক নাগরিকদের আরও ভালোভাবে রক্ষা করার জরুরি প্রয়োজনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, 'ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি আমরা সমর্থন দিচ্ছি। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার অবিচল। অর্থাৎ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করবে।’
এতে ইসরাইলের দুর্ভোগ বা হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ১০০ জনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। ইসরায়েল জি-২০ এর সদস্য নয়। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযানের পর যুদ্ধে গাজায় এ পর্যন্ত ৪৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং লেবাননে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের দুর্দশার উল্লেখ যে বাদ পড়েছে, তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি ধারাবাহিক সমর্থনের বিপরীতে চলে বলে মনে হয়েছিল। এটি এমন একটি বিষয় যা বাইডেন সর্বদা প্রকাশ্যে উল্লেখ করেন, এমনকি যখন তিনি ফিলিস্তিনিদের ওপর অবহেলার বিষয়েও কথা বলেন। জি২০ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে, ঘোষণা চূড়ান্ত করার আগে, বাইডেন বলেন হামাসই এই যুদ্ধের একমাত্র দায়ী এবং তিনি অন্যান্য নেতাদের কাছে হামাসের ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানান; যেন তারা একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি মেনে নেয়।
ইউক্রেনকে আরও গভীরভাবে রাশিয়ার ভেতরে আঘাত হানতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিষয়ে বাইডেনের সিদ্ধান্তও এই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সম্মেলনে বাইডেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন করে। আমার মতে, এই টেবিলের চারপাশে বসা সবারই এভাবে সমর্থন করা উচিত।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৈঠকে উপস্থিত হননি। তার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সেরগেই লাভরভকে পাঠিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাকে গ্রেপ্তার করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে বাধ্য করার পর থেকে পুতিন এসব সম্মেলন এড়িয়ে চলছেন।
জি২০ ঘোষণাপত্রে ইউক্রেনে মানবিক বিপর্যয়ের উল্লেখ করা হয়েছে এবং শান্তির আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে সেখানে রাশিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
রিও ডি জেনেইরোর স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পাওলো ভেলাসকো বলেন, ‘ঘোষণাটি দোষীদের প্রতি আঙুল তোলার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ, এতে ইসরায়েল বা রাশিয়ার সমালোচনামূলক কোনো উল্লেখ নেই। তবে উভয় ক্ষেত্রেই মানবিক সংকটের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’
পুরো ঘোষণাপত্রটি স্পষ্টতার অভাবে ভুগছে বলেও মন্তব্য করেন ভেলাসকো।
তিনি বলেন, ‘এটি অনেকটাই ব্রাজিলের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু যদি আমরা এটি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখতে পাব এটি মূলত ইচ্ছাপ্রকাশের একটি ঘোষণা। এটি বিভিন্ন বিষয়ে সদিচ্ছার প্রকাশ, তবে এতে খুব কমই সুনির্দিষ্ট, বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ রয়েছে।’
বৈশ্বিক বিলিওনিয়ারদের ওপর কর আরোপের উদ্যোগ
ঘোষণায় বৈশ্বিক বিলিওনিয়ারদের ওপর সম্ভাব্য কর আরোপের কথা বলা হয়েছে, যা লুলা সমর্থন করেন। এই ধরনের কর বিশ্বের প্রায় ৩,০০০ ধনী ব্যক্তিকে প্রভাবিত করবে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ জন লাতিন আমেরিকায় রয়েছেন।
আর্জেন্টিনার বিরোধিতা সত্ত্বেও এই ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তেমনিভাবে, একটি ধারা লিঙ্গ সমতার প্রসারেও উৎসর্গ করা হয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাজিল এবং অন্য দেশের কর্মকর্তারা।
আর্জেন্টিনার আপত্তি সত্ত্বেও জি২০ ঘোষণায় স্বাক্ষর
আর্জেন্টিনা জি২০ ঘোষণায় স্বাক্ষর করলেও জাতিসংঘের ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার উল্লেখ নিয়ে আপত্তি জানায়। দেশটির ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই এই এজেন্ডাকে ‘সমাজতান্ত্রিক প্রকৃতির একটি অতিরাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম’ বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়া, সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণাত্মক বক্তব্য নিয়ন্ত্রণের আহ্বান এবং ক্ষুধা মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। তিনি এটিকে জাতীয় সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন।
মিলেই প্রায়ই বহুপাক্ষিক আলোচনায়, বিশেষ করে তার প্রকাশ্য সমালোচক লুলার নেতৃত্বাধীন বৈঠকে ট্রাম্পের মতো বাধা সৃষ্টিকারীর ভূমিকা পালন করেন।
বৈশ্বিক ক্ষুধা মোকাবিলায় নির্দিষ্ট উদ্যোগ
ঘোষণাপত্রের বড় একটি অংশই ক্ষুধা নির্মূলের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এটি লুলার অগ্রাধিকার।
ব্রাজিল সরকার বলেছে, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক জোট’ চালু করা জি২০ ঘোষণার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রাজিলের মতে, এরই মধ্যে ৮২টি দেশ এই পরিকল্পনায় সই করেছে। এই উদ্যোগ রকফেলার ফাউন্ডেশন এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মতো সংগঠনগুলোর সমর্থন পেয়েছে।
রবিবার রিওর কোপাকাবানা সৈকতে একটি প্রতীকী প্রদর্শনীতে ৭৩৩টি খালি থালা সাজানো হয়েছিল। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে ক্ষুধার্ত ৭৩৩ মিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে এই প্রদর্শনী।
ব্রাজিলের জি২০ সম্মেলনে সভাপতিত্বের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন দারিদ্র্যবিরোধী অলাভজনক সংস্থা অক্সফামের একজন পরিচালক ভিভিয়ানা সান্তিয়াগো। চরম বৈষম্য, ক্ষুধা ও জলবায়ু বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের দাবির প্রতি সাড়া দিতে এবং বিশেষত ধনীদের উপর কর আরোপের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তিনি।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ব্রাজিল আরও ন্যায়সঙ্গত এবং স্থিতিশীল বিশ্বের পথে আলো দেখিয়েছে। এই সংকটময় মুহূর্তে অন্যদেরও তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চ্যালেঞ্জ আহ্বান জানিয়েছে’
বহু প্রতীক্ষিত জাতিসংঘ সংস্কার
নেতারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের "রূপান্তরমূলক সংস্কার" নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। ‘২১ শতকের বাস্তবতা ও চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আরও প্রতিনিধিত্বমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, দক্ষ, কার্যকর, গণতান্ত্রিক ও দায়বদ্ধ’ হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন তারা।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘আমরা এমন নিরাপত্তা পরিষদের সম্প্রসারিত কাঠামোর আহ্বান জানাই, যা আফ্রিকা, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের মতো কম প্রতিনিধিত্বশীল এবং অপ্রতিনিধিত্বশীল অঞ্চল ও গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিত্ব উন্নত করবে।’
সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, তারা আফ্রিকার দুটি দেশের জন্য নতুন স্থায়ী আসনের সমর্থন করছে, তবে ভেটো ক্ষমতা ছাড়া। পাশাপাশি, প্রথমবারের মতো একটি ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল দেশের জন্য অস্থায়ী আসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তবে গ্রুপ অব ফোর (ব্রাজিল, জার্মানি, ভারত ও জাপান) একে অপরের স্থায়ী আসনের দাবির পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান, ইতালি, তুরস্ক ও মেক্সিকোসহ এক ডজন দেশের বৃহত্তর ইউনাইটিং ফর কনসেনসাস গ্রুপ দীর্ঘ মেয়াদের অতিরিক্ত অস্থায়ী আসন চায়।
১৬৬ দিন আগে
আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান করুন: রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী
আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আরও পড়ুন: খাদ্য, জ্বালানি ও রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের সঙ্গে আলোচনা করবে ঢাকা
ল্যাভরভ দু’দিনের সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় এসেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর এটি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী মস্কোর উপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞার পর পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে এই সফরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসাবে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে ল্যাভরভ ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে যান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সম্মেলনে যোগ দেবেন।
আরও পড়ুন: রাশিয়া থেকে এলএনজি, গম, সার সরবরাহের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে: ল্যাভরভ
৬০৪ দিন আগে
ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাপ্তির আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাপ্তির জন্য পদক্ষেপে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং এটি বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।
শুক্রবার (২১ জুলাই) খাদ্য, জ্বালানি ও অর্থবিষয়ক গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের (জিসিআরজি) সভায় বক্তৃতাকালে এ আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতাদের পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘আমি আবারও জোর দিচ্ছি ইউক্রেন যুদ্ধের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাপ্তির উপর। দীর্ঘায়িত যুদ্ধ ও আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে চলেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে প্রতি দিনই ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের সঙ্গে অনেক জীবন ধ্বংস হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের চলমান সংঘাতে মানবতার উপর বিধ্বংসী প্রভাব পড়ছে। ‘প্রকৃতপক্ষে, যুদ্ধের নতুন নতুন ও অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলো চালু করা হচ্ছে; যা সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে আরও ধ্বংস ডেকে আনছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য ও বৈষম্য তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দরিদ্র দেশগুলোর ঋণের বোঝা বাড়ছে। ‘এসব ধাক্কা বিশ্বজুড়ে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়িয়েছে, যার ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতিতে বিলম্ব হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার এই সময়ে, ভবিষ্যতে যেসব প্রতিবন্ধকতা আসবে সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্বলদের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জরুরিভাবে সংস্কার করা আন্তর্জাতিক আর্থিক তহবিল প্রয়োজন যাতে স্বল্পোন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কম খরচ ও স্বল্প সুদের হারে তহবিল পাওয়ার সুযোগ দেবে।
তিনি বলেন, সংকট ও দুর্যোগের সময় এবং জরুরি অবস্থার সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোরও আইএমএফের এসডিআর তহবিলের সহজ প্রাপ্তি থাকতে হবে। এ ছাড়াও, আইএফআই ও এমডিবি থেকে কম হারের তহবিল প্রাপ্তি সংকট কাটিয়ে ওঠা পর্যন্ত স্থগিত করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি বিধিনিষেধ, মজুদ ও সরবরাহ চেইন ব্যাহত হওয়া খাদ্যের মূল্য ও প্রাপ্তিকে প্রভাবিত করে।
আরও পড়ুন: তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ইতালি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
‘এ বিষয়ে, আমরা বাজারগুলোকে উন্মুক্ত রাখতে, রপ্তানি বিধিনিষেধ অপসারণ এবং খাদ্য সরবরাহের উন্নতির জন্য খাদ্য মজুদ বন্ধ করতে মহাসচিবের আহ্বানকে পুরোপুরি সমর্থন করি। আমরা মহাসচিবকে তার ব্ল্যাক সি ইনিশিয়েটিভের জন্য অভিনন্দন জানাই যা মানুষকে খাওয়ানো এবং জীবন বাঁচাতে আরও বাড়ানো দরকার,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিচক্ষণতার সঙ্গে জ্বালানি খাত পরিচালনা করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার নীতি সহায়তা প্রদান করে এবং জ্বালানি খাতে দেশীয় সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে এবং সবুজ শক্তির রূপান্তরকে সহায়তা করে।’
তিনি বলেন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন একসঙ্গে সম্পর্কিত। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো জলবায়ু পরিবর্তনকে চালিত করে যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রসারিত করে এবং তীব্রতা বাড়ায়। এটি আবার কৃষি, খাদ্য উৎপাদন এবং মানুষের বাস্তচ্যুত করতে প্রভাবিত করে।
‘অতএব, টেকসই শক্তি, খাদ্য উৎপাদন, এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধ অপরিহার্য,’ তিনি যোগ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন জিসিআরজির তিনটি পলিসি ব্রিফ ও "এ ওয়ার্ল্ড অব ডেট" প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো চমৎকার। এগুলো প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিশ্বব্যাপী ঐকমত্যকে সহজতর করবে।
"আমাদের সবাইকে অবশ্যই আমাদের আগ্রহের বিষয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে হবে," তিনি বলেন।
এই খারাপ সময়ে বাংলাদেশ কিছু কঠিন আর্থিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার মূল্যস্ফীতি কমাতে কঠোর পরিশ্রম করে; জনগণকে অনাবাদি জমি না রেখে খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করেছে।
"গুরুত্বপূর্ণভাবে, আমরা নিশ্চিত করেছি কোনো ব্যক্তি অনাহারে থাকবে না," তিনি বলেন।
চলতি বছরকে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের বছর উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ‘ক্ষয়ক্ষতি তহবিল’ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি দেখতে চাই এবং জলবায়ু তহবিল সহজলভ্য করতে চাই। এ ছাড়াও, শিপিং সেক্টরে প্রস্তাবিত কার্বন শুল্ক দ্বারা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রভাবিত করা উচিত নয়। আমরা জলবায়ু ঝুঁকির বিরুদ্ধে গ্লোবাল শিল্ডের অধীনে চালু করা প্রকল্পগুলো দেখার প্রত্যাশা করি।"
আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াত ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করলে ছাড় দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী
৬৫৩ দিন আগে
ইউক্রেনে যুদ্ধ ও দুর্যোগে ২০২২ সালে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৭১ মিলিয়ন: প্রতিবেদন
ইউক্রেনের যুদ্ধ গত বছর সংঘাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়া বিশ্বব্যাপী মোট মানুষের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ ৭১দশমিক ১ মিলিয়নে নিয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২০২২ সালের শেষ নাগাদ রুশ আগ্রাসনের কারণে ৫দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষ ইউক্রেনের অভ্যন্তরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। সংঘাত এবং সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত বিশ্বব্যাপী মোট মানুষের সংখ্যা ৬২ মিলিয়নেরও বেশি হয়েছিল, যা ২০২১ সালের তুলনায় ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের পর সংঘাতের কারণে ৬৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বন্যা ও দুর্ভিক্ষের মতো দুর্যোগের কারণে বছরের শেষে তাদের দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৮দশমিক ৭ মিলিয়নে পৌঁছেছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত রপ্তানি সুযোগ কাজে লাগান: প্রধানমন্ত্রী
২০২১ সালের তুলনায় বিশ্বব্যাপী অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা মোট ৭১দশমিক ১ মিলিয়ন হয়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি বলতে এমন মানুষদের বোঝায় যারা তাদের নিজস্ব সীমানার অভ্যন্তরে চলে যেতে বাধ্য হয় এবং অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
ইউক্রেন, সিরিয়া, ইথিওপিয়া এবং অন্যান্য জায়গায় সংঘাতের এক বছর পরেও ২০২৩ সালে কোনও স্বস্তি নেই। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা এ সপ্তাহে জানিয়েছে, সুদানে সেনাবাহিনী ও প্রতিদ্বন্দ্বী আধা-সামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতের কারণে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সাত লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার লা নিনা আবহাওয়ার ঘটনাকে উল্লেখ করেছে, যা দুর্যোগ বাস্তুচ্যুতির একটি প্রধান কারণ হিসেবে ২০২২ সালে টানা তৃতীয় বছর অব্যাহত ছিল। এটি পাকিস্তান, নাইজেরিয়া ও ব্রাজিলে রেকর্ড মাত্রার বন্যায় বাস্তুচ্যুতি এবং সোমালিয়া, কেনিয়া ও ইথিওপিয়ায় রেকর্ডের সবচেয়ে খারাপ খরায় অবদান রাখে।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল জ্যান এগেলান্ড বলেন, ২০২২ সালে সংঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি 'নিখুঁত ঝড়' হয়েছিল, যার ফলে এমন মাত্রায় বাস্তুচ্যুতি হয়েছিল, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধের সমালোচনা করায় শিক্ষার্থীর ৮ বছরের কারাদণ্ড
৭২৪ দিন আগে