রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তিতে সই করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এখনো প্রস্তুত নন বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন প্রশাসনের প্রস্তাব নিয়ে মতপার্থক্য কমানোর লক্ষ্যে স্থানীয় সময় শনিবার (৬ ডিসেম্বর) মার্কিন ও ইউক্রেনীয় আলোচকরা তিন দিনের বৈঠক শেষ করার পর জেলেনস্কির সমালোচনা করেন ট্রাম্প। পরের দিন রবিবার রাতে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আলোচনা এগিয়ে নিতে বাধা দিচ্ছেন।
কেনেডি সেন্টারে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আগে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কিছুটা হতাশ যে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এখনো প্রস্তাবটি পড়েননি। অন্তত কয়েক ঘণ্টা আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি এমনই ছিল। তার প্রতিনিধিরা এটি পছন্দ করেছে, কিন্তু তিনি পড়েননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি রাশিয়া এতে সম্মত আছে, কিন্তু জেলেনস্কির সম্মতি আছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নই। তার প্রতিনিধিরা এটি পছন্দ করেছে, কিন্তু তিনি এখনো প্রস্তুত নন।’
অন্যদিকে, ট্রাম্প বললেও হোয়াইট হাউসের পরিকল্পনায় এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে অনুমোদন দেননি পুতিন। যদিও মূল খসড়াটি ব্যাপকভাবে মস্কোর পক্ষে ছিল, তবে গত সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন যে ট্রাম্পের প্রস্তাবের কিছু দিক গ্রহণযোগ্য নয়।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে জেলেনস্কির সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেকটা অম্লমধুর। তবে, ট্রাম্প জোর দিয়ে বলে আসছেন যে এই যুদ্ধ মার্কিন করদাতাদের অর্থের অপচয়। প্রায় চার বছর ধরে চলা এই সংঘাত শেষ করতে তিনি বারবার ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূমি ছেড়ে দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, স্থানীয় সময় শনিবার জেলেনস্কি বলেন, ফ্লোরিডায় বৈঠকে থাকা আমেরিকান কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ফলপ্রসূ ফোনালাপ হয়েছে। বৈঠকে থাকা মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা তাকে ফোনে পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য জানিয়েছেন।
এরপর সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘প্রকৃত শান্তি অর্জনের লক্ষ্যে ইউক্রেন আমেরিকার সঙ্গে সদিচ্ছার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।’
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, নতুন কৌশলগত চুক্তিটি মস্কোর পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলেন, এই চুক্তিতে সংঘাতের বিরুদ্ধে এবং সংলাপ ও ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার পক্ষে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে এটি ইউক্রেনের সঙ্গে সমঝোতায় ওয়াশিংটনের আরও গঠনমূলক সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গত শুক্রবার হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত নথিতে বলা হয়েছিল, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ শেষ করা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মূল বিষয়, যাতে রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়।
গত শনিবার রিগ্যান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোরামে কথা বলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন-বিষয়ক বিদায়ী দূত কিথ কেলগ বলেন, যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টা আর ‘১০ মিটার দূরে’। তিনি বলেন, চুক্তি এখন দুটি প্রধান অমীমাংসিত বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে— ‘ভূখণ্ড, মূলত ডনবাস’ এবং জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
রাশিয়া বর্তমানে ডনবাসের (দোনেৎস্ক ও পাশের লুহানস্ক অঞ্চল) অধিকাংশ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। তিন বছর আগে ইউক্রেনের দক্ষিণের আরও দুটি অঞ্চলের সঙ্গে এই এলাকাগুলো দখল করেছিল রাশিয়া। এ ছাড়া জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইউক্রেনে আগ্রাসনের শুরু থেকেই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবশ্য বর্তমানে এটি চালু নেই।
এদিকে, আজ (সোমবার) লন্ডনে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতাদের জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।