কৃষি ঋণ
কৃষি ঋণে কি বেসরকারি ব্যাংক ও প্রান্তিক কৃষকের অনাগ্রহ বাড়ছে?
চলতি অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেখানে গত বছরের চেয়ে এ বছর ঋণের পরিমাণ নতুন করে ১ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে ঋণ প্রদান করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঋণ প্রদান কম ৬৭৪ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ২টি বিশেষায়িত ব্যাংক, ৪২টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৮টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৯৮.২৩ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা, বিপরীতে ঋণ প্রদান করা হয়েছে ৩৭ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা বেশি।
অন্যান্য বছরগুলোতে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঋণ প্রদান কমে আসার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ক্ষুদ্র কৃষক, প্রান্তিক চাষি এবং নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে কৃষি ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমেছে। বিশেষত আশপাশের যারা কৃষি ঋণ নিয়েছেন, তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন বাকিরা।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বেসরকারি দেশীয় ব্যাংকের মধ্যেও ঋণ প্রদানের পরিমাণ কমেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকেও ঋণ প্রদানের পরিমাণ অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক উইংয়ের সর্বশেষ মে মাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে কৃষি ঋণ প্রদানের পরিমাণ কমেছে ১১.৩৫ শতাংশ।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এই ঋণ প্রদানের পরিমাণ কমেছে ৯.৭৪ শতাংশ এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে তা কমেছে ০.৩০ শতাংশ। এই তিন ক্যাটাগরির ব্যাংকের অধীনে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ২৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের কথা থাকলেও সবচেয়ে কম ঋণ দিয়েছে এসব ব্যাংকই।
অন্যদিকে, দুই বিশেষায়িত ব্যাংকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ঋণ প্রদানের পরিমাণ বেড়েছে ১১.৬৯ শতাংশ। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের অধীনে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
এদিকে, ঋণ প্রদান কমলেও বেড়েছে ঋণ আদায়ের পরিমাণ। মে মাসের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০২৩-২৪-এর তুলনায় ঋণ আদায় বেড়েছে ৪.৬৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ঋণ আদায় বেড়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে, ৮.৭৬ শতাংশ; যাদের হাতে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার ১২১ কোটি টাকা।
অর্থাৎ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ কম দিলেও আদায়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল এবং এটিই কৃষকদের ওপর চাপ বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ মাঠ সংশ্লিষ্টদের।
ক্ষুদ্র কৃষক এবং কৃষি উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহ
কৃষি ঋণে ধীরে ধীরে অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে ক্ষুদ্র কৃষক এবং নতুন কৃষি উদ্যোক্তাদের মধ্যে। বাংলাদেশের দুই জেলা ময়মনসিংহ এবং বরিশালের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই তারা ঋণ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন।
ময়মনসিংহের কৃষি উদ্যোক্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘কৃষি ঋণ আমাদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকে কাঠখড় পুড়িয়ে ঋণ পেলেও এ ঋণের দেনা শোধ করতে বিক্রি করতে হচ্ছে জমি। স্বল্প সুদের কথা বললেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুদ বাড়ছে। অন্যদিকে, বৈরি আবহাওয়ার কারণে কৃষি ফসলে ক্ষতি হয়েছে, অনেকের মাছের ঘের ডুবে গেছে। তাদের জন্য ঋণ শোধ করা কষ্টসাধ্য।’
নিজের প্রসঙ্গে আবু বকর বলেন, ‘ঋণ নিয়ে ফসল ফলানোর পর ফসলের ক্ষতি হলে সেখানে কৃষককে কে বাঁচাবে তার কোনো পরিকল্পনা নেই। এতে করে আমিসহ আশপাশের অনেক কৃষক আছেন যারা পাঁচ-ছয় মাস ঋণের কিস্তি দিতে পারেননি। তাদের অনেকের নামে মামলার নোটিশ এসেছে।’
একই জেলার আরেক কৃষক সামসুদ্দিন বলেন, ‘কৃষককে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতি মাসে যদি সুদ বাড়িয়ে ব্যবসা করার চিন্তা করে ব্যাংক, তাহলে কৃষকদের উন্নতি কীভাবে হবে? একদিকে ফসল হয়নি, যা বিক্রি করেছি তা থেকেও মুনাফা ওঠেনি, অন্যদিকে প্রতিমাসে সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত।’
কৃষি ঋণের খোঁজ নিতে গিয়ে বরিশালে দেখা গেল একেবারেই ভিন্ন চিত্র। দক্ষিণাঞ্চলের এ জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় যেসব কৃষক কৃষি ঋণ নিয়েছেন, তারা কৃষক হলেও ঋণের অর্থ কাজে লাগিয়েছেন অন্য খাতে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক কৃষক বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে অনেকে কৃষি ঋণ নিয়েছেন। ঋণের অর্থে কেউ দিয়েছেন দোকান, কেউবা করছেন জমির ব্যবসা।’
ঋণ নেওয়া এমন আরও কয়েকজন কৃষক জানান, কৃষি ঋণ নিয়ে ফসলের মাঠে অর্থলগ্নি করলে ঋণের টাকা শোধ করা কঠিন হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ সময়ই ফসলের যে দাম অনুমান করে ঋণ নেওয়া হয় তার অর্ধেক দামও ওঠে না। তাই ফসলের চাষ করার পাশাপাশি ঋণের অর্থ দোকান বা জমি বেচা-কেনায় অর্থ লগ্নি করেন তারা।
কৃষকরা জানান, একমাত্র বিনা সুদে ঋণ দিলে কৃষকরা ঋণের সুবিধাভোগী হতে পারবে। সুদের চাপ থাকলে ঋণ নিয়ে তারা মুনাফা অর্জন করতে পারে না। যারা একবার কৃষি ঋণ নিয়ে শুধু কৃষিকাজই করেছেন তারা আর দ্বিতীয়বার ঋণ নেননি, তারপরও মেটাচ্ছেন আগের ঋণের দেনা।
বিনা সুদে ঋণ কতটা যৌক্তিক?
নির্দিষ্ট কিছু আমদানি বিকল্প ফসলে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে ঋণ দেওয়ার নির্দেশনা আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। এর বাইরে ৫-৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হয় কৃষকদের, অনেক ক্ষেত্রে এ ঋণে সুদের পরিমাণ আরও বেশি।
সুদহার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কৃষি ঋণের সুদহার ব্যাংকগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করবে, তবে সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে মানতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, এ খাতে সুদহার হবে সরল এবং নমনীয়।
কৃষকদের বিনা সুদের ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক উপাচার্য এবং কৃষি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ আবদুল বায়েস বলেন, ‘বিনা সুদে ঋণ দিলে ব্যাংক ব্যবস্থার কাঠামো বলে কিছু থাকে না। এই ঋণ অপারেশনের (পরিচালনা) ক্ষেত্রেও ব্যাংকের একটি খরচ আছে। বেসরকারি ব্যাংককে ঋণ প্রদানের আওতার মধ্যে রাখতে চাইলেও সুদের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে এই সুদ যাতে কৃষকবান্ধব হয় সেদিকে নজরদারির দায়িত্ব সরকারের।’
তিনি বলেন, ‘বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে টাকা যাবে অন্যদের পকেটে, বঞ্চিত হবে কৃষক। এ ক্ষেত্রে কৃষক যাতে ঋণের ফাঁদে না পড়ে, সেজন্য আলাদা ভর্তুকি এবং বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণের গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানোর মতো উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কোনো এলাকায় বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ঘটনা ঘটলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এসব এলাকায় ঋণ নেওয়া কৃষকদের ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়া।’
এক মৌসুমের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য মৌসুম পর্যন্ত কৃষকদের ছাড় দেয়ার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জোর দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যেন ঋণ পরিশোধে ১২ কিস্তি পর্যন্ত সুযোগ পায় এবং মামলার মতো হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে জোর দেন এই কৃষি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ।
ঋণ প্রদানে বেসরকারি ব্যাংকের অনাগ্রহ
বেশ কয়েকটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামানত নীতি থেকে শুরু করে অনেক বেসরকারি ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ে ঋণ প্রদানে যাচাই বাছাইয়ের সক্ষমতা নেই। এ ছাড়া উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বেসরকারি অনেক ব্যাংকের কোনো শাখা না থাকায় তারা কৃষকদের কাছে পৌঁছাতে পর্যন্ত পারে না। প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরাও শহরে এসে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী হয় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, শস্য জামানত নীতিতে ফসল উৎপাদনের জন্য একজন কৃষককে সর্বোচ্চ ১৫ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য ঋণ প্রদান করা যাবে। সে হিসাবে যারা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি, তাদের প্রত্যেকের জমির পরিমাণ ০.৪৯৪ একর থেকে ২.৪৭ একর। এরা প্রত্যেকেই জামানত হিসাবে শস্য-ফসল দায়বদ্ধকরণ বা ক্রপ হাইপোথিসিসের মাধ্যমে ঋণ নিতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে কৃষক ঋণ পরিশোধে সক্ষম না হলে ব্যাংক ফসল থেকে দেনা মেটাতে পারবে।
তবে এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না বেসরকারি ব্যাংকগুলো। তাদের কর্মকর্তারা জানান, কৃষককে যে পরিমাণে ঋণ দেওয়া হয়, শুধু ফসলের জামানত দিয়ে সেই ঋণের অর্থ আদায় ব্যাংকের জন্য কঠিন।
এ প্রসঙ্গে সায় দিয়ে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রিপন কুমার মণ্ডল বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকের মূল সমস্যা ঋণ প্রদানের পর তাদের ঋণ আদায়ের সক্ষমতা নেই। এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতার কারণেই তারা ঋণ দিতে চায় না। আবার অনেক বড় বড় ব্যাংক এসব ক্ষুদ্র ঋণের জন্য লোকবল নিয়োগেও আগ্রহী নয়।’
এ ছাড়া বেশিরভাগ কৃষক জানেনই না যে কোন ব্যাংকে কত সুদে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং কীভাবে ব্যাংকে গিয়ে ঋণের আবেদন করবেন। এজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে স্থানীয় এনজিও বা সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকের দ্বারস্থ হন বলে মনে করেন রিপন।
তবে কৃষি ঋণে বেসরকারি ব্যাংক আরও সম্পৃক্ত হচ্ছে জানিয়ে ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিচালক আনিসউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, ‘কৃষি ঋণ প্রদানে ব্যাংকের অনেক লোকবল দরকার, যারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে যাচাই বাছাই করে ঋণ দেবে। এত লোকবল নিয়োগের সক্ষমতা বেসরকারি ব্যাংকের নেই। তাই ক্রেডিট এবং ডেভেলপমেন্ট ফোরামের রেটিং দেখে (সিডিএফ) ভালো এনজিওর মাধ্যমে ঋণ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো।’
জামানত নীতি বদল নয়, বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের হার ৯৫ শতাংশ, যা সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জামানত নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে সক্ষমতা বাড়ালে একদিকে প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরা লাভবান হবেন, অন্যদিকে দেশের কৃষিখাতেও প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’
১০৮ দিন আগে
৩৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নতুন কৃষি ঋণ ঘোষণা বাংলাদেশ ব্যাংকের
দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রবিবার (৬ আগস্ট) ৩৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নতুন কৃষি ঋণ বিতরণ নীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় এই ব্যাংক এবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকার চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে।
ঘোষণা অনুযায়ী, যাদের ছাদে বাগান রয়েছে তারাও খামার ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মতিঝিলে প্রধান কার্যালয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খান। এ সময় কৃষিঋণ অধিদপ্তরের (এসিডি) পরিচালক কানিজ ফাতেমাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি ও গ্রামীণ ঋণের চাহিদা বিবেচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোকে ১২ হাজার ৩০ কোটি টাকা, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশে বিদেশি ব্যাংকগুলোর শাখাগুলোকে ১ হাজার ৪৭ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ব্যাংক পরিচালক হতে পারবেন এক পরিবারের সর্বোচ্চ ৩ জন: বাংলাদেশ ব্যাংক
২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা কৃষি ও গ্রামীণ ঋণ বিতরণ করেছে। যা আর্থিক বছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরে মোট ৩৬ দশমিক ১৮ লাখ কৃষক কৃষি ও গ্রামীণ ঋণ পেয়েছেন। যার মধ্যে ১৮ দশমিক ৮১ লাখ নারী প্রায় ১২ হাজার ৭৫২ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা ব্যাংক এবং মাইক্রো ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট (এমএফআই) বা এনজিও থেকে ঋণ পেয়েছেন।
বৈশ্বিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে কৃষি ঋণ নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াও, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডকে (বিআরডিবি) কৃষি ও গ্রামীণ ঋণ হিসাবে যথাক্রমে ২৬ কোটি টাকা এবং ১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল।
ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, সিন্ডিকেটকৃত ঋণ বিতরণ) এবং ব্যাংক-এমএফআই সংযোগগুলো ক্রেডিট বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যবহার করবে।
এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার অন্তত ৫০ শতাংশ হতে হবে। আগে তা ছিল ৩০ শতাংশ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণ ৯৫ হাজার টাকা: বাংলাদেশ ব্যাংক
ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মুদ্রাস্ফীতি ও ডলার সংকট স্বাভাবিক করতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক
৮৫১ দিন আগে
লক্ষ্য পূরণের জন্য চলছে কৃষি ঋণ বিতরণ
লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কৃষি ঋণ বিতরণ চলছে। চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ দশমিক ১৫ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ঋণের হালনাগাদ তথ্যে জানা যায়, ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ২১ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা কৃষি খাতে বিতরণ করা হয়েছে।
হালনাগাদ তথ্যে জানা যায়, ১২টি ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার ১০০ শতাংশ অর্জন করেছে।
তবে পিছিয়ে রয়েছে ১৪টি ব্যাংক। ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও বিতরণ করতে পারেনি এসব ব্যাংক।
যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ১০০ শতাংশের বেশি বিতরণ করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক আল-ফালাহ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলন, হাবিব ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এনএ, এইচএসবিসি ও উরি ব্যাংক।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে পতিত জমিতে সবজি চাষে সাফল্য
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৮ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা এবং বিদেশি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট কৃষি ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে, ফলে ঋণ আদায়ের হার প্রায় ৪১ শতাংশ।
খেলাপি হয়েছে ৩ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, যা ঋণের ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কৃষি উৎপাদনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং তা সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সার ও বীজের দাম বাড়বে না: কৃষিমন্ত্রী
বরগুনায় বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা
৯৮৫ দিন আগে