জেসমিনের মৃত্যু
র্যাব হেফাজতে নওগাঁর জেসমিনের মৃত্যু: তদন্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয় হাইকোর্ট
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের কমিটি যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে ওই প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয় হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, প্রতিবেদনটি অস্পষ্ট। প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তাকে গ্রেপ্তারের পর আত্মীয় স্বজনকে জানানো হয়েছিল কি না— সে বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে আদালত এ প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয়।
রবিবার (১৫ অক্টোবর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। পরে এ বিষয়ে জারি করা রুল শুনানির জন্য প্রস্তুতের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রুল শুনানির জন্য আগামী ২৯ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তৌফিক সাজওয়ার পার্থ উপস্থিত ছিলেন।
পরে অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, আদালত নওগাঁর ঘটনা তদন্তে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন দেখে সন্তুষ্ট হননি। জেসমিনকে গ্রেপ্তারের পর আত্মীয় স্বজনকে জানানো হয়েছিল কিনা? থানাকে অবহিত করা হয়েছিল কিনা? এসব বিষয় স্পষ্ট করা হয়নি প্রতিবেদনে। তবে আদালত আগামী ২৯ নভেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানির জন্য ধার্য করেছেন।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির ৩০২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ৮ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি ৩০২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন। গত ২২ মে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
কমিটির প্রধান করা হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং নওগাঁর পুলিশ সুপারের মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
জানা যায়, স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৫–এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে। এনামুল হককে সঙ্গে নিয়েই র্যাব ওই অভিযান চালায়।
এনামুল হকের অভিযোগ, সুলতানা জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্ন ব্যক্তিকে। আটকের পর সুলতানা জেসমিন অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রথমে তাকে নওগাঁর হাসপাতালে ও পরে রাজশাহীতে নেওয়া হয়। ২৪ মার্চ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মারা যান তিনি।
আরও পড়ুন: র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর তদন্ত ২ মাসের মধ্যে শেষ করুন: হাইকোর্ট
পরিবারের অভিযোগ, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে। সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর পর জানা যায়, তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগ্ম সচিব এনামুল হক একটি মামলা করেছেন, যেটি রেকর্ডের সময় ২৩ মার্চ বিকেলে। এ মামলার আসামি জেসমিন ও তার কথিত সহযোগী মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট আল-আমিন।
এদিকে, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর গত ২৭ মার্চ হাইকোর্টের নজরে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ চেয়েছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। পরে আদালতের নির্দেশে ২৮ মার্চ তিনি হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট আবেদন দায়ের করেন।
রিটে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ ও র্যাবের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়। ওই দিনই রিট আবেদনের আরজি তুলে ধরে রিটকারী মনোজ কুমার আদালতে বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো বিষয়ও বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। র্যাব গঠন করা হয়েছিল দাগি চোর-ডাকাত, মাদক চোরাকারবারি ধরতে। এই নারীকে (সুলতানা জেসমিনকে) আটক করা হয় ২২ মার্চ। আর ২৪ মার্চ তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই আইনে কাউকে গ্রেপ্তারের এখতিয়ার পুলিশের থাকলেও র্যাবের নেই।
তাছাড়া, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারা অনুসারে সুলতানা জেসমিনকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়নি।'
শুনানি গ্রহণ শেষে গত ৫ এপ্রিল হইকোর্ট কোন মামলা ছাড়াই নওগাঁর সুলতানা জেসমিনকে (৪৫) র্যাবের হেফাজতে নেওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া তা আইনগতভাবে কতটুকু সঠিক ছিল এবং র্যাবের কোন এখতিয়ার ছিল কিনা তা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কমিটিতে নওগাঁর জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন এবং সেখানকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়ে। তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
তদন্তকালীন জেসমিনকে আটকের সঙ্গে র্যাবের যেসব সদস্য জড়িত ছিলেন তাদেরকে দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে, মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া ও পরবর্তী পদক্ষেগুলো কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। ওই আদেশ অনুযায়ী ২২ মে ৮ সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
আরও পড়ুন: র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু: উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ
১ বছর আগে
র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর তদন্ত ২ মাসের মধ্যে শেষ করুন: হাইকোর্ট
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে আরও দুই মাস সময় বেধে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে সময় চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৩ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে আদালত বলেছেন, এটা সেনসিটিভ বিষয়। দুই মাস ক্রস করবেন না। দুই মাস কিন্তু দুই মাসই। আর দেরি করবেন না।
আরও পড়ুন: জেসমিনের মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনে নয়: চিকিৎসক
এর আগে গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্টের উপরোক্ত বেঞ্চ আটকের পর র্যাব হেফাজতে নওগাঁর সুলতানা জেসমিন নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
কমিটিতে নওগাঁর জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন এবং সেখানকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়। তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। তদন্তকালীন সময়ে জেসমিনকে আটকের সঙ্গে র্যাবের যেসব সদস্য জড়িত ছিলেন তাদেরকে দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া ও পরবর্তী পদক্ষেগুলো কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিষয়টি কার্যতালিকায় ওঠে।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান ও তৌফিক সাজাওয়ার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের পক্ষে দুই মাস সময়ের আরজি জানিয়ে শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে (সমন্বয় ও সংস্কার) আহ্বায়ক করে গত ২২ মে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটি রাজশাহী ও নওগাঁ সরেজমিন পরিদর্শন করে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
আদালত বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়া কি সম্পূর্ণ হয়েছে? তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এভিডেন্স ও তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হয়নি।
কমিটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই মাস সময় বাড়ানোর প্রার্থনা করেছে।
আদালত বলেন, কমিটি কবে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল? জবাবে সমরেন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গত ২৯ থেকে ৩১ মে।
যেসব মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে, তা জব্দ করা হয়েছে। এগুলোর ফরেনসিক টেস্ট করা হবে। সার্বিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, গত ৫ এপ্রিল আদালত আদেশ দেন। ২২ মে কমিটি গঠন করা হয়। আদালতের আদেশের পর এক মাসের বেশি সময় লেগেছে কমিটি গঠন করতে। ধীরগতিতে করেছে। এক মাস সময় দেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু: উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ
এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, নওগাঁ ও নাটোরের র্যাবকে বিবাদী করে রিট আবেদনকারী রিট করেন। এটি সংশোধন করতে হয়েছে, যা রিট আবেদনকারী আদালতে আনেননি।
দুই মাস সময় দিলে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা যাবে।
এ সময় আদালত বলেন, বিষয়টি সেনসিটিভ। বারবার সময় নেওয়া যাবে না। দুই মাস কিন্তু দুই মাস। এর মধ্যে শেষ করবেন। পরে আদালত দুই মাস সময় দিয়ে আদেশ দেন।
স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে।
এনামুল হককে সঙ্গে নিয়েই র্যাব ওই অভিযান চালায়।
এনামুল হকের অভিযোগ, সুলতানা জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্ন ব্যক্তিকে।
আটকের পর সুলতানা জেসমিন অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রথমে তাঁকে নওগাঁর হাসপাতালে ও পরে রাজশাহীতে নেওয়া হয়। ২৪ মার্চ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।
পরিবারের অভিযোগ, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে।
সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর পর জানা যায়, তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগ্ম সচিব এনামুল হক একটি মামলা করেছেন, যেটি রেকর্ডের সময় ২৩ মার্চ বিকেলে। এ মামলার আসামি জেসমিন ও তাঁর কথিত সহযোগী মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট আল-আমিন।
এদিকে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর গত ২৭ মার্চ হাইকোর্টের নজরে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ চেয়েছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।
পরে আদালতের নির্দেশে ২৮ মার্চ তিনি হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট আবেদন দায়ের করেন। রিটে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ ও র্যাবের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: র্যাব হেফাজতে মৃত্যু: জেসমিনের ছেলে ও ভগ্নিপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ
১ বছর আগে
র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু: উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
কমিটিতে নওগাঁর জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়েছে।
তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না: মোমেন
তদন্তকালীন সময়ে জেসমিনকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে র্যাবের যেসব সদস্য জড়িত ছিলেন তাদেরকে দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া ও গ্রেপ্তার কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে র্যাব।
এরপর র্যাব হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
২৪ মার্চ সকালে রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর গত ২৭ মার্চ হাইকোর্টের নজরে নিয়ে স্বত:প্রণোদিত আদেশ চেয়েছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। পরে আদালতের নির্দেশে ২৮ মার্চ তিনি হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট আবেদন দায়ের করেন।
রিটে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ ও র্যাবের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
ওই দিনই রিট আবেদনের আরজি তুলে ধরে রিটকারী মনোজ কুমার আদালতে বলেন, এ ঘটনায় কোনো বিষয়ও বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। র্যাব গঠন করা হয়েছিল দাগি চোর-ডাকাত, মাদক চোরাকারবারিদের ধরতে।
এই নারীকে (সুলতানা জেসমিনকে) আটক করা হয় ২২ মার্চ। আর ২৪ মার্চ তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এই আইনে কাউকে গ্রেপ্তারের এখতিয়ার পুলিশের থাকলেও র্যাবের নেই।
তাছাড়া ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারা অনুসারে সুলতানা জেসমিনকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, কোনো অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতেই র্যাব এ ধরনের বেআইনি ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা আজ অসহায়। র্যাব যাকে ইচ্ছা তাকে তুলে নিয়ে উধাও করে দিচ্ছে। এটি (সুলতানা জেসমিনকে আটক, হেফাজত, জিজ্ঞাসাবাদ) সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে করা হয়েছে।
তাছাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সুলতানা জেসমিনের মাথায় আঘাত থাকার কথা বলেছেন, যা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসেছে।
আরও পড়ুন: র্যাব হেফাজতে মৃত্যু: জেসমিনের ছেলে ও ভগ্নিপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ
ফলে র্যাবের কর্মকাণ্ড ও নারীর মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। যে কারণে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
এরপর শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সুলতানা জেসমিনের উচ্চ রক্তচাপ ছিল। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তুলে ধরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘এক ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ ১১ টা ৫০ মিনিটে নওগাঁ সদরের নওজোয়ান মাঠের সামনে থেকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুসারে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়।
পরে জনসাধারণের সামনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব।
এর আগে আটক ওই নারীর মোবাইল ফোন থেকে অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য ও নথি উদ্ধার করা হয়।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, একজন নাগরিক জঘন্য অপরাধী হতে পারে। অত্যন্ত খারাপ কাজ করতে পারে। সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া (প্রসিডিউর) আছে। দিনশেষে আইনগত প্রক্রিয়া অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
যখন র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করল তখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে পুলিশ আটক করলেও একটা কথা ছিল। আইনে তাদের ক্ষমতা আছে।
এই আইনের ৩৯ ধারায় দেখতে পাচ্ছি তদন্তের ক্ষমতা পুলিশ অফিসারকে দেওয়া হয়েছে। এখানে র্যাবের বিষয়টি তো সুর্নিদিষ্টভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। কথা হচ্ছে র্যাব তাকে উঠিয়ে নিয়েছে, এর পরই তাকে পুলিশে দেবে।
কিন্তু এখানে সেটা দেখা যাচ্ছে না।
সেদিন হাইকোর্ট কোনো মামলা ছাড়াই নওগাঁর সুলতানা জেসমিন (৪৫)কে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া তা আইনগতভাবে কতটুকু সঠিক ছিল তা জানতে চান।
আদালত বলেছেন, আটকের পর সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কিনা? উঠিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া আইনগতভাবে হয়েছে কিনা? তাকে একটা অভিযোগের ভিত্তিতে তুলে নেওয়া র্যাবের জুরিসডিকশনে (এখতিয়ার) ছিল কিনা? রাষ্ট্রপক্ষকে বুধবারের মধ্যে এসব প্রশ্নের জবাব দাখিল করতে বলেন।
ওই আদেশ অনুযায়ী আজ রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শোনার পর হাইকোর্ট সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন ও তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের প্রতি নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: জেসমিনের মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনে নয়: চিকিৎসক
১ বছর আগে