বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা পোশাক রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে না: বিজিএমইএ
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) মঙ্গলবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ দেশে পোশাক পণ্য রপ্তানি ব্যাহত করবে না, বরং পশ্চিমের আর্থিক সংকটের কারণে হ্রাস পেতে পারে।
মঙ্গলবার বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত আপনাদের সঙ্গে সর্বশেষ শিল্প পরিসংখ্যান ভাগ করছি। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামগ্রিক পোশাক আমদানি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের একক বৃহত্তম আমদানিকারক।
ফারুক বলেন, এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক বৈশ্বিক পোশাক আমদানি মূল্যের দিক থেকে ২২ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ জুলাইয়ে আরএমজি রপ্তানি করে ৩.৯৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে: বিজিএমইএ
তিনি বলেন, অন্যদিকে পরিমাণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আমদানি ২৮ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে আমদানির পরিমাণ ২৯ শতাংশ কমেছে।
তিনি আরও বলেন, এর অর্থ, পরিমাণের দিক থেকে গত ৭ মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে।
ফারুক বলেন, এদিকে ইউরোপ থেকে বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। এছাড়া রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে আমদানি কমেছে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুটি প্রধান বাজার উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ হয়ে থাকে। আর কোনো কারণে এই দুই বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে তা আমাদের শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে আমরা সর্বদা বাজার সম্প্রসারণ এবং নতুন বাজার তৈরির দিকে মনোনিবেশ করেছি। আমরা ২০১০ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এটি করে আসছি। সম্প্রতি আমরা অস্ট্রেলিয়ায় দিনব্যাপী বাংলাদেশ অ্যাপারেল সামিটের আয়োজন করেছি। সেখানে আমরা আমাদের শিল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি তুলে ধরেছি।’
বিজিএমইএ অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানিতে নতুন গতি আশা করছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ইরাক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আশাবাদী বিজিএমইএ সভাপতি
তিনি বলেন, বিজিএমইএ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব এমনকি ইরাকের মতো আরও অনেক অপ্রচলিত বাজারের সঙ্গে কাজ করছে। নতুন বাজারে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ আরও জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ১০টি কোম্পানি ৩০০ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য নয়।
১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি বিজিএমইএ’র সদস্য, দু’টি বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্য এবং ৪টি তাদের কোনোটির সঙ্গেই সম্পৃক্ত নয়।
এতে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক রপ্তানির নামে ঢাকা ও গাজীপুরের ১০ রপ্তানিকারকের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলারের অভিযোগ উঠেছে।
দেশটির গণমাধ্যমও এ বিষয়ে খবর ছড়িয়েছে। এরপর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর প্রাথমিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
ফারুক বলেন, ‘এই তথ্য মিথ্যা ও বানোয়াট।’
পোশাক কারখানাগুলোর অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তে সরকারকে আলাদা টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানান তিনি।
বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ বলেন, পাশ্চাত্যে মুদ্রাস্ফীতির চাপের কারণে গার্মেন্টস পণ্যের খুচরা বিক্রয় কমে যাওয়ায় দেশের রপ্তানি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হওয়ায় রপ্তানি হ্রাসের দায় তারা নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম, সংগঠনের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ অন্যান্য কারখানা মালিকরা।
আরও পড়ুন: নতুন ডিসিটিএস স্কিম যুক্তরাজ্যের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব তৈরি করতে পারে: বিজিএমইএ সভাপতি
১ বছর আগে
এলডিসি উত্তোরণে বাংলাদেশকে সহায়তায় ইইউ’র প্রতি বিজিএমইএ প্রধানের আহ্বান
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান জিএসপির পরিবর্তনের মেয়াদ বর্তমান তিন বছর থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই সম্প্রসারণ বাংলাদেশকে এলডিসি বিভাগ থেকে মসৃণ গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত করতে এবং এলডিসি-পরবর্তী যুগেও প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবে।
গত ১০ মে ঢাকায় ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক সমস্যা বিষয়ক ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হেলেনা কোনিগের সঙ্গে বৈঠকে বিজিএমইএ প্রধান এ অনুরোধ জানান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন-ইইএএস এর সাউথ এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন মনিকা বাইলাইট; বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি; বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধি দলের ডেপুটি হেড ড. বার্ন্ড স্প্যানিয়ার; মিনিস্টার কাউন্সেলর এবং হেড অফ কোঅপারেশন মাউরিজিও সিয়ান; এবং কাউন্সেলর এবং টিম লিডার- শিক্ষা, মানব উন্নয়ন এবং বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের পিএফএম জুরেট স্মালস্কাইট মারভিল এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি সমীর সাত্তার।
আরও পড়ুন: ঈদের আগেই বিজিএমইএ আওতাধীন কারখানার মার্চ মাসের মজুরি পরিশোধ: বিজিএমইএ
বৈঠকে তারা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ), এলডিসি-পরবর্তী সময়ে ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান হেলেনা কোনিগকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রধান অগ্রগতি, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, পরিবেশগত টেকসইতা এবং শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণের বিষয়ে অবহিত করেন।
তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, বিশেষ করে দেশের লাখ লাখ মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, মেয়েদের স্কুলে ভর্তি বৃদ্ধি এবং বাল্যবিবাহ কমানোর ক্ষেত্রে কীভাবে আরএমজি শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণও দেন।
ফারুক হাসান এসব ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত যে অর্জনগুলো অর্জন করেছেন তা ধরে রাখতে শিল্পের অব্যাহত প্রবৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ইইউকে বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি ইইউর জিএসপি স্কিমের আওতায় শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সুনির্দিষ্ট বাণিজ্য পছন্দ সম্প্রসারণের গুরুত্ব তুলে ধরেন, যার ফলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ইইউকে ইইউ-এর সুরক্ষা টেক্সটাইল থ্রেশহোল্ড মানদণ্ড পরিত্যাগ বা ২০২৪-২০৩৪ সালের জন্য প্রস্তাবিত জিএসপি স্কিমে বাংলাদেশের জন্য প্রক্রিয়াটি পুনর্বিন্যাস করার কথা বিবেচনা করারও আহ্বান জানান, যাতে বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরে জিএসপি প্লাস থেকে উপকৃত হতে পারে।
আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে হাইকমিশনের সহায়তা চায় বিজিএমইএ
তৈরি পোশাক শিল্পে জুলাই-ডিসেম্বরে ১৬% বেড়ে রপ্তানি ২৩ বিলিয়ন ডলার: বিজিএমইএ
১ বছর আগে