হলুদ
স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য যেসব খাবার উপকারী
একাডেমিক পড়াশোনা, গবেষণাধর্মী কাজ ও কর্মজীবনের উন্নতির জন্য সৃজনশীলতার পাশাপাশি আরও একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে স্মরণশক্তি। প্রতিটি মানুষেরই স্বাভাবিক বিকাশের পরিচয় বহন করে এই শক্তি। শুধু তাই নয়, নিত্য-নৈমিত্তিক জীবনে এর তুলনামূলক উপস্থিতির ভিত্তিতে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে বিশেষত্ব সৃষ্টি হয়। চর্চা বা সাধনার পাশাপাশি এই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে কিছু পুষ্টিকর খাবার। সময়মতো সুফল পেতে এই খাবারগুলোতে শৈশব থেকেই অভ্যস্ত হওয়া জরুরি। চলুন, স্মৃতিশক্তি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সেরা খাবারগুলোর তালিকা দেখে নেওয়া যাক।
স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে উপকারী ১০টি খাবার
হলুদ
যে কোনো রান্নায় বহুল ব্যবহৃত এই উপকরণে রয়েছে পুষ্টি উপাদান কারকিউমিন। এটি মূলত এক ধরনের যৌগ, যার মধ্যে আছে উৎকৃষ্ট প্রদাহ-বিরোধী ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। কারকিউমিন মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণে কাজে লাগে। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত হয় ও স্মৃতিশক্তি হারানোর ঝুঁকি হ্রাস করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কারকিউমিন মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে যাবতীয় বাধা অতিক্রম করে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোকে সতেজ রাখে। এভাবে তরকারিতে নিয়মিত হলুদ ব্যবহারের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে। এটি আলঝেইমারের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ (স্মৃতিশক্তির পর্যায়ক্রমিক অবনতি) রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।
আরও পড়ুন: নিরাপদে স্ট্রিট ফুড খাওয়ার ১০টি উপায়
চর্বিযুক্ত মাছ
মলা, ঢ্যালা, আইলা, টুনা, সরপুটির মতো সামুদ্রিক মাছগুলো যথেষ্ট পরিমাণে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এই অপরিহার্য চর্বিগুলো মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওমেগা -৩ স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, প্রদাহ কমায় ও মস্তিষ্কের কোষগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রাখে।
এই পুষ্টি উপাদান কোষগুলোর কাঠামোগত অখণ্ডতায়ও অবদান রাখে। নিয়মিত চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া মস্তিষ্ক জনিত যাবতীয় সমস্যা রোধ করে সামগ্রিক মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। এটি মস্তিষ্কের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য-উপাদানের একটি বৃহৎ অংশের যোগান দেয়। সপ্তাহে অন্তত ২ বার ভারী খাবারে চর্বিযুক্ত মাছ রাখা উচিৎ।
পালং শাক
ঘন পাতাযুক্ত এই সবুজ শাক ভিটামিন কে, ই, ও ফোলেট সমৃদ্ধ। ভিটামিন কে স্ফিংগোলিপিড গঠনে সহায়তা করে, যেটি মূলত মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কোষ গঠন ও কোষের সঠিক কার্যক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন-ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।
আরো পড়ুন: রেস্তোরাঁ-শপিং মলে প্রবেশের আগে যে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা জরুরি
আর ফোলেট জ্ঞানীয় কার্যক্রমগুলোতে সাহায্য করে, যার কারণে বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের সাধারণ অবনতির ঝুঁকি কমে। নিয়মিত পালং শাক খাওয়া মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায় এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের বিরুদ্ধে মস্তিষ্ককে রীতিমতো দুর্গ বানিয়ে তোলে। প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তত এক বেলা পালং শাক রাখা হলে দীর্ঘ মেয়াদে কাঙ্ক্ষিত জ্ঞানীয় সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
বাদাম
আখরোট, কাজু বাদাম, এমনকি চিনাবাদাম শুধু মস্তিষ্কের জন্যই নয়; সমস্ত দেহের জন্য বেশ উপকারী। এই বাদামগুলো ভিটামিন ই, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো মস্তিষ্ক-সহায়ক উপাদানে ভরপুর। ভিটামিন-ই মস্তিষ্কের কোষের অম্লতা-জনিত ক্ষতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর চর্বি মস্তিষ্কের ভেতরে কোষের গঠনে অংশ নেয় এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতায় সাহায্য করে। বাদামে ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্কের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান রয়েছে, যা জ্ঞানীয় স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সরাসরি অংশ নেয়। বাদাম স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি দারুণ সংযোজন হতে পারে। স্ন্যাক্স হিসেবে বিভিন্ন ধরনের বাদাম নিত্যদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে যথেষ্ট। বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে এগুলোকে আরও মুখরোচক করে তোলা যায়।
আরও পড়ুন: মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম কেন এত দামি
গাজর
বিটা-ক্যারোটিনের এই চমৎকার উৎসটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। বিটা-ক্যারোটিন মস্তিষ্কের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এই স্ট্রেসের কারণে জ্ঞানীয় কার্যক্রমগুলোর ধীরে ধীরে অবনতি হয়। বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার স্মৃতিশক্তি এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগ সমুন্নত রাখে।
গাজরে থাকা ভিটামিন সি ফ্রি-র্যাডিক্যালের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি প্রতিরোধ করে মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে। বার্ধক্য-জনিত স্মৃতিশক্তি হ্রাস থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত গাজর খাওয়া যেতে পারে। সালাদ, জুস, এমনকি রান্না করা খাবারের মাধ্যমেও গাজর অন্তর্ভুক্ত করা যায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়।
মুরগির ডিম
এই বহুমুখী ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারটি কোলিন ও ভিটামিন বি-১২ সহ একটি সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। কোলিন হলো অ্যাসিটাইলকোলিনের প্রধান উপাদান, যেটি স্মৃতি ধরে রাখা ও কোনো কিছু শিখতে সাহায্য করে। যে কোনো বয়সেই জ্ঞানীয় কার্যকারিতা অক্ষুন্ন রাখতে ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস রোধ করার জন্য পর্যাপ্ত কোলিন গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
আরো পড়ুন: গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
ভিটামিন বি-১২ স্নায়বিক অংশগুলোর অখণ্ডতা বজায় রেখে মস্তিষ্ককে অটুট রাখে। এটি স্নায়ু তন্তুর সুরক্ষা এবং কোষগুলোর মাঝে পারস্পরিক যোগাযোগ নিশ্চিত করে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন মুরগির ডিম খাওয়া আবশ্যক। শুধু সকালের নাস্তাতেই নয়, অন্যান্য তরকারির সঙ্গে ডিমের অতিরিক্ত সংযোজন খাবারটিকে বেশ উপাদেয় করে তোলে। এছাড়া শুধু সিদ্ধ ডিমও প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগান দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
কুমড়োর বীজ
পুষ্টির পাশাপাশি সুস্বাদু সবজিগুলোর মধ্যে চালকুমড়ো অন্যতম। এর বীজে আছে ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপে অংশ নিয়ে কোনো কিছু শেখা এবং স্মৃতি ধারণ প্রক্রিয়া চালু রাখে। এটি নিউরোট্রান্সমিটার সিগন্যালিং নিয়ন্ত্রণ তথা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যকার পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন করতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। জিঙ্ক নিউরোপ্রোটেকশনে অবদান রাখে, যা যে কোনো পরিস্থিতিতে মস্তিষ্কের প্রক্রিয়া চালু রাখার জন্য জরুরি।
কুমড়োর বীজের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে দূরে রাখে। তাই স্মৃতিভ্রষ্ট থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত এই বীজ খাওয়া আবশ্যক। অন্যান্য খাবারের সঙ্গে জুড়ে নিমেষেই এটি উপাদেয় মিশ্রণ তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন: ওমেগা-৩ ডিম কি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি?
মসুর ডাল
ফোলেট, আয়রন ও ফাইবারে ভরপুর এই সহজলভ্য খাবারটি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। সেরোটোনিন, ডোপামিন ও নোরপাইনফ্রিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষণের কাজ করে ফোলেট। এর মাধ্যমে মেজাজ, স্মৃতিশক্তি ও যাবতীয় জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে।
পর্যাপ্ত ফোলেট গ্রহণ স্মৃতিভ্রষ্ট সম্পর্কিত নানা ধরণের রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। অন্যদিকে আয়রনের কাজ হলো মস্তিষ্কে অক্সিজেন পরিবহন করে জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া চালু রাখা।
মস্তিষ্কের সঠিক কার্যাবলির জন্য মস্তিষ্কের পাশাপাশি দেহের অন্যান্য অংশও ঠিক থাকা জরুরি। বিশেষ করে অন্ত্র সুস্থ থাকলে মস্তিষ্ক তার প্রয়োজনীয় রসদ থেকে বঞ্চিত হয় না। আর এই বিষয়টি নিশ্চিত করে ফাইবার।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
ফুলকপি
ভিটামিন কে ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি উৎকৃষ্ট উৎস হচ্ছে ফুলকপি। ভিটামিন কে-এর কাজ মস্তিষ্কের কোষ গঠনে দরকারি উপাদান সরবরাহ করা। সালফোরাফেনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্ককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। ফুলকপিতে থাকা যৌগগুলো জ্ঞানীয় কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্মরণশক্তি উন্নয়নে সহায়ক। বার্ধক্যে স্মরণশক্তির অবনতি থেকে বাঁচতে কম বয়স থেকেই ফুলকপির খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। রান্না ছাড়াও সালাদে বা সাইড ডিশ হিসেবে ফুলকপি একটি উযুক্ত খাবার।
কমলা
নানা ধরনের সতেজ ফলের মধ্যে স্মরণশক্তির জন্য সহায়ক ফল হলো কমলা। বাদাম ও গাজরের মতো এটিও মস্তিষ্ককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে পারে, কেননা এতে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি সেরোটোনিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদনে সহায়তা করে, যা সঠিক মানসিক অবস্থার জন্য দরকার।
এছাড়া কোলাজেন সংশ্লেষণেও এটি একটি আবশ্যিক উপাদান, কারণ এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কোষ ও রক্তনালীগুলোর গঠন বজায় থাকে। প্রতিদিন অন্তত একটি পুরো কমলা খাওয়া দীর্ঘমেয়াদে জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতাকে উন্নত রাখার সহায়ক হতে পারে।
আরো পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
তাছাড়া বয়সের সঙ্গে জ্ঞানীয় অবনতির ঝুঁকি কমাতেও এই অনুশীলন আবশ্যক। সরাসরি ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি কমলার তাজা জুস একটি জনপ্রিয় কোমল পানীয়।
পরিশিষ্ট
এই ১০টি পুষ্টিকর খাবার সর্বাঙ্গীনভাবে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারে। হলুদের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে কমলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পর্যন্ত প্রতিটি খাবারেই রয়েছে অনন্য পুষ্টিগুণ। পুরো সপ্তাহের খাদ্যাভাসে এই খাবারগুলোকে যুক্ত করার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে যে কোনো কাজের জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে উত্তরোত্তর অনুশীলনও চালিয়ে যেতে হবে যুগপৎভাবে। এরই দৌলতে ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন পর্যন্ত যে কোনো প্রতিযোগিতায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: চিনির কিছু স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক বিকল্প
৪ মাস আগে
প্রকৃতিতে লাল, হলুদ আর বেগুনি রঙের ছড়াছড়ি
ফুল প্রকৃতির সুন্দরতম সৃষ্টি। ঋতুরাজ বসন্তকে ফুলের ঋতু বললেও বেশি বলা হবেনা। তবে এবার বসন্তকে অবাক করে কৃষ্ণচূড়ার টকটকে লাল, সোনালু ফুলের মনমাতানো হলুদ আর জারুল ফুলের আকর্ষণীয় বেগুনী রঙে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি।
বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটের পথ-ঘাট, অলি-গলি এবং পার্ক ও সড়কের দুই পাশে বসেছে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুলের পসরা।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল চাষ
প্রকৃতিতে এখন গরমের উষ্ণতা। কাঠফাটা রোদে তপ্ত বাতাস। এ গরমই যেন চায় কৃষ্ণচূড়া! নইলে কি আর পথে-প্রান্তরে অমন লাল আভা ছড়িয়ে দেয়। প্রকৃতি মেলে ধরেছে তার আপন রঙ।
তাই তো আমাদের মনে পড়ে কাজী নজরুল ইসলামের গান ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জরি কর্ণে/আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’।
এদিকে কখনো কখনো মেঘে ঢাকা আকাশ আবার হঠাৎ প্রচণ্ড তাপমাত্রায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এ এলাকার মানুষ। তাদের উষ্ণতা নিবারণে কিছুটা প্রশান্তির ছাঁয়া দিচ্ছে সৌন্দর্যের প্রতীক এসব ফুল।
এসব ফুলের নয়নাবিরাম সৌন্দর্য রাঙিয়ে তুলেছে লালমনিরহাটের গ্রামগুলোর সবুজ প্রান্তর, আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ও বাড়ির আঙ্গিণা।
প্রকৃতি ও পুষ্প প্রেমিকেরা মনের খোরাক জোগাতে এসব ফুল তুলে নিয়ে যান বাসাবাড়িতে।
আরও পড়ুন: ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ৩ দিনের বৈসাবি উৎসব শুরু
লালমনিরহাট শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড়, স্টেশন, ঈদগাহ মোড়সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার দুই ধারে রয়েছে অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া, জারুল ও সোনালু ফুলের গাছ।
এসব ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শহরে ছুটে আসছেন অনেকেই। কেউ ফুল মাথায় লাগিয়ে সেলফি তুলছেন, কেউ গাছ তলায় বসে প্রশান্তি নিচ্ছেন, কেউবা আবার চা আড্ডায় বসছেন।
লালমনিরহাট সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ আলম বলেন, কৃষ্ণচূড়া, গাঢ়বর্ণের লাল, হলুদ, সোনালী বিচিত্র ফুলের সম্ভার, জারুল ১২-১৫ মিটার লম্বাকৃতির এবং বেগুনি রঙের ফুল।
এছাড়া এ গাছের কাঠ নৌকা তৈরিতে কাজে লাগানো হয়। সোনালু গাছে হলুদ রংয়ের ফুল ফুটে। এ গাছের ছাল রং ও ঔষধ তৈরির কাজে লাগে। এসব শোভা বর্ধনকারী গাছ।
এসব গাছ বেশি বেশি করে রোপণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
লালমনিরহাট বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, শহরের পথে-প্রান্তরে যেসব শোভাবর্ধক গাছ বয়সের ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেগুলোকে রিপ্লেস করে নতুন সাজে এ শহরকে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাদকের আখড়া এখন ফুলের রাজ্য
১ বছর আগে