ডব্লিউএমও
তাপ, দাবানল ও বন্যা গ্রীষ্মকে ‘তীব্র গরম’ করে তুলেছে
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বলেছে, তাপ, দাবানল ও বন্যা ২০২৩ সালের গ্রীষ্মকে ‘তীব্র গরম’ করে তুলেছে, যার ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
শুক্রবার ডব্লিউএমও'র মুখপাত্র ক্লেয়ার নুলিস জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তীব্র গরম ও বিধ্বংসী বৃষ্টিপাতসহ বিপজ্জনক আবহাওয়া বিশ্বের বড় অংশকে প্রভাবিত করেছে।
তিনি বলেন, জুলাই মাসে বিশ্বজুড়ে অনেক স্থানে তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে গেছে এবং আগস্টের শুরুতে দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশে শীতকালীন তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে।
নুলিস জানায়, চলতি সপ্তাহের শুরুতে ফ্রান্স, গ্রিস, ইতালি, স্পেন, আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়ার মতো অনেক দেশেই দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও রাতারাতি সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়েছে। এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় অংশও ব্যাপক তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে।
ডব্লিউএমও'র তাপবিষয়ক উপদেষ্টা জন নায়ারন বলেন, 'আমাদের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার বাইরেও মনোযোগ বাড়াতে হবে, কারণ স্বাস্থ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর জন্য ন্যূনতম তাপমাত্রা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন: ৫০ বছরে চরম আবহাওয়ায় ২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ও ৪ ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি: ডব্লিউএমও
জন নায়ারন আরও উল্লেখ করেছেন, তাপপ্রবাহ সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপদগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে প্রতি বছর তাপজনিত কারণে হাজার হাজার লোক মারা যায়, তাপপ্রবাহের সম্পূর্ণ প্রভাব বেশিরভাগ সপ্তাহ বা মাস পরেও জানা যায় না।
ডব্লিউএমও'র মতে, আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে ভূমধ্যসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি হতে পারে, কিছু অংশে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের একটি বড় অংশে গড়ের চেয়ে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হবে।
জন নায়ারন আরও বলেন, সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অভিবাসন ও বিলুপ্তি, আক্রমণাত্মক প্রজাতির আগমন যা মৎস্য ও জলজ প্রাণীর উপর প্রভাব ফেলবে।
সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএমও'র মুখপাত্র আরও বলেন, কানাডায় দাবানলের সবচেয়ে ভয়াবহ মৌসুম চলছে।
কানাডায় রেকর্ড ভাঙা দাবানলে বড় বড় বনাঞ্চল পুড়ে যাচ্ছে। ২৪ জুলাই পর্যন্ত ৬৫০টিরও বেশি দাবানল নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ডব্লিউএমও জানায়, দাবানলের কারণে গ্রিসের রোডস, এভিয়া ও করফু দ্বীপের কয়েকশ বাসিন্দা ও পর্যটকদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এই দাবানলের নির্গমন রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে।
ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যায় বিশ্বের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেছে।
ডব্লিউএমও'র হাইড্রোলজি, ওয়াটার অ্যান্ড ক্রায়োস্ফিয়ারের পরিচালক স্টেফান উলেনব্রুক বলেন, ‘যেহেতু গ্রহটি উষ্ণ দিন দিন উষ্ণ হচ্ছে তাই আমরা আরও তীব্র, আরও ঘন ঘন, আরও বেশি বৃষ্টিপাত দেখতে পাব, যার ফলে আরও মারাত্মক বন্যা হবে।’
ডব্লিউএমও'র সেক্রেটারি জেনারেল পেটেরি তালাস বলেন, ‘ভয়াবহ আবহাওয়া- বিশেষ করে উষ্ণ জলবায়ুর কারণে ক্রমবর্ধমান অঘটন ঘটছে, এতে মানব স্বাস্থ্য, বাস্তুতন্ত্র, অর্থনীতি, কৃষি, শক্তি ও জল সরবরাহের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলছে।’
তালাস বলেন, ‘যত দ্রুত ও কঠোরভাবে সম্ভব গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।’
আরও পড়ুন: সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতে টিলা ধসে একই পরিবারের নিহত ৪
১ বছর আগে
৫০ বছরে চরম আবহাওয়ায় ২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ও ৪ ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি: ডব্লিউএমও
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) জানিয়েছে, মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে গত ৫০ বছরে ১১ হাজার ৭৭৮টি দুর্যোগ ঘটেছে। এতে ২ মিলিয়ন বা ২০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এবং ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
চরম আবহাওয়া, জলবায়ু ও নিরাপদ পানি সংক্রান্ত ঘটনার কারণে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে এশিয়ায়। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই প্রায় ১০ লাখ, অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ডব্লিউএমও বলেছে, জলবায়ু বিপর্যয় এবং চরম আবহাওয়ার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার ১০ জনের মধ্যে ৯টি মৃত্যু এবং ৬০ শতাংশ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এর জন্য।
ডব্লিউএমও এর প্রতিবেদনে জানা যায়, আবহাওয়া, জলবায়ু ও নিরাপদ পানি সম্পর্কিত সমস্যার কারণে ১৯৭০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার দুর্যোগ ঘটেছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলো তাদের অর্থনীতির আকারের তুলনায় ‘অনুপাতিকভাবে’ উচ্চ ব্যয়ের শিকার হয়েছে।
ডব্লিউএমও-এর মহাসচিব পেটেরি তালাস বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মানুষগুলো আবহাওয়া, জলবায়ু ও নিরাপদ পানি সম্পর্কিত বিপর্যয়ের প্রভাব সহ্য করছে।’
ডব্লিউএমও বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে গত অর্ধ শতাব্দীতে বেশ কয়েকটি বিপর্যয়ের কারণে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটিতে দুর্যোগের প্রভাব ছিল জিডিপির ‘৫ শতাংশের বেশি’, কিছু বিপর্যয় দেশগুলোর পুরো জিডিপিকেই শেষ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ইতালির প্রাণঘাতী বন্যা জলবায়ু বিপর্যয়ের সর্বশেষ চরমতম উদাহরণ
তারা আরও জানায়, আফ্রিকায় জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে মৃত্যু হওয়া ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৮৫ জনের মধ্যে ৯৫ শতাংশ খরা’র কারণে মারা গেছে।
তালাস জোর দিয়ে বলেছেন, বর্তমানে উন্নত প্রাথমিক সতর্কতা এবং সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দুর্যোগের মারাত্মক প্রভাব প্রশমিত করতে সাহায্য করছে। ‘প্রাথমিক সতর্কতা জীবন বাঁচায়।’
জাতিসংঘের সংস্থাটি আরও উল্লেখ করেছে যে ২০২০ ও ২০২১ সালে রেকর্ডকৃত মৃত্যু আগের দশকের গড় থেকে কম ছিল।
গত সপ্তাহে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টিকারী প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার উদাহরণ দিয়ে তালাস বলেন, অতীতে এই ধরনের দুর্যোগে উভয় দেশেই ‘মৃত্যুর সংখ্যা দশ হাজার থেকে কয়েক লাখ হয়েছিল।’
সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দুর্যোগের কথা মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে পাওয়া গেলে, দুর্যোগপরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি ৩০ শতাংশ কম হতে পারে।
সকলের জন্য জাতিসংঘের প্রাথমিক সতর্কতা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডব্লিউএমও তার চতুর্বার্ষিক ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল কংগ্রেসের জন্য আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়ের মানবিক ও অর্থনৈতিক ব্যয়ের ওপর তার নতুন অনুসন্ধানের ফলাফল উপস্থাপন করেছে, যা সোমবার জেনেভায় শুরু হয়েছে।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ পৃথিবীর সকলের কাছে দুর্যোগের আগাম সতর্কতা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করা।
গত বছরের নভেম্বরে শারম আল-শেখ-এ কপ২৭ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এটি শুরু করেছিলেন।
বর্তমানে, পৃথিবীর মাত্র অর্ধেকই দুর্যোগ পূর্ববর্তী পূর্বাভাস ব্যবস্থার আওতায় রয়েছে, এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখায় সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ১৪৫: মিয়ানমার
আফগানিস্তানে ভয়াবহ পঙ্গপালের বিষয়ে সতর্কতা জারি জাতিসংঘের
১ বছর আগে