ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)
রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে ওআইসি কন্টাক্ট গ্রুপের সভা অনুষ্ঠিত
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাকে (ওআইসি) পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে ওআইসি কন্টাক্ট গ্রুপের সভায় প্রদত্ত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এ আহ্বান জানান।
মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর ৬ বছর ধরে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, জনসংখ্যা এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রত্যাবাসনকে ঘিরে অনিশ্চয়তার কারণে রোহিঙ্গা জনগণ হতাশায় ভুগছে এবং ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: এসডিজি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদার করুন: এসডিজি শীর্ষ সম্মেলনে মোমেন
তিনি আরও বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান করা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সমর্থন কমে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের জন্য রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ৩০ শতাংশ পাওয়া গেছে, ফলে তাদের জন্য খাদ্য রেশন কমে গেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসি সদস্য দেশগুলোর মানবিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: ক্ষতি নয়, বরং পরিবেশ রক্ষা করে সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে: ড. হোসেন জিল্লুর রহমান
ড. মোমেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের জবাবদিহির জন্য গাম্বিয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করেন, যেখানে মামলার বিষয়ে মিয়ানমারের আপত্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশগুলোও এই মামলায় অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সভায় গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের দুর্দশা লাঘবে ওআইসিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এবং স্থায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভা পরিচালনা করেন ওআইসি’র মহাসচিব হিসেইন ব্রাহিম তাহা। সভায় তুরস্ক, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, গাম্বিয়া, জিবুতি, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রুনেই ও সেনেগাল আলোচনায় অংশ নেয়।
আরও পড়ুন: মোমেনের সঙ্গে ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ
১ বছর আগে
আইসিজেতে রোহিঙ্গা মামলায় অপর্যাপ্ত তহবিল নিয়ে ওআইসি মহাসচিবের উদ্বেগ
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহা রোহিঙ্গা মামলায় তাদের অপর্যাপ্ত তহবিল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রোহিঙ্গা মামলায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থনের প্রশংসা করে তিনি আশ্বস্ত করেন যে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার দায়ের করা রোহিঙ্গা মামলার জন্য তহবিল প্রদানে ওআইসি তাদের উৎসাহিত করবে।
সোমবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনকালে ওআইসি মহাসচিব রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সংস্থাটির নিরলস সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুকে ওআইসির একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে উল্লেখ করে সংস্থাটির মহাসচিব আইসিজেতে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গাম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন উদ্যোগকে ওআইসি’র দৃঢ় সমর্থনের কথা তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুসারে, তিনি (মহাসচিব) বলেন যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ওআইসি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা মামলা: সদস্য দেশগুলোর সমর্থন চেয়েছেন ওআইসি মহাসচিব
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার প্রতি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের অপরিসীম উদারতার কথা স্বীকার করে ওআইসি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘদিনের এই সংকট সমাধানে বোঝা ভাগাভাগি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সব রোহিঙ্গার নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান রইলো।
ওআইসি মহাসচিব ও তার সফরসঙ্গীরা কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে তাকে স্বাগত জানান।
রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনকালে ওআইসি মহাসচিব রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা নিরাপদে তাদের পৈতৃক ভিটে-মাটিতে ফিরে যাওয়ার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষার কথা তাকে অবহিত করেন।
ওআইসি মহাসচিব তাদের উদ্বেগের কথার নোট নেন এবং এই মানবিক সংকট নিরসনে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যেতে ওআইসির সহায়তার আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন: ওআইসি মহাসচিবের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন
১ বছর আগে