জোসেপ বোরেল ফন্টেলেস
ইইউ সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এবং সহিংসতা এড়াতে উৎসাহিত করে: শীর্ষ কূটনীতিক
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার এবং যেকোনো মূল্যে সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসির হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেল ফন্টেলেস বলেছেন, ‘ইইউ বাংলাদেশের সকল দল এবং সকল নাগরিককে তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করতে এবং সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে।’
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে স্লোভাকিয়ার প্রতিনিধি ইভান স্টেফানেককে সম্বোধন করা একটি চিঠিতে জোসেপ বোরেল বলেছেন, এই প্রক্রিয়াগুলোতে সহিংসতার কোনও স্থান নেই এবং ‘যেকোন মূল্যে তা (সহিংসতা) এড়ানো উচিত।’
তিনি বলেন, ইইউ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার ও সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত থাকবে।
বোরেল বলেন, তিনি প্রধান দলগুলোর মধ্যে সংলাপের কথাও বলেছেন এবং সুশীল সমাজের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকা উচিত।
ইভান স্টেফানেকসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য জোসেপ বোরেলকে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়ে ১২ জুন একটি চিঠি লেখেন।
বোরেল বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইইউ সদস্যদের আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
তিনি এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন এবং জানান যে প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন, সুবিধাগুলো পরীক্ষা এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিচালনার সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের জন্য একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতির প্রধান বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমাবেশের স্বাধীনতাসহ মূল স্বাধীনতা রক্ষা করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ছয় সদস্যের একটি নির্বাচনী অনুসন্ধানী মিশন (এক্সএম) আগামী ৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশটির আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে বাংলাদেশ সফর করবে।
বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি উইংয়ের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ রফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এই মিশনের কাজ হবে মূল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের পরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, সরবরাহ ও নিরাপত্তা মূল্যায়ন করা।
ঢাকায় ইইউ প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, তদন্ত মিশনের বাংলাদেশে অবস্থানকালে তারা সরকারি প্রতিনিধি, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছুক।
নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে এই সফর হবে এবং এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তেমন কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।
ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন (ইওএম) পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ঢাকায় ইইউ মিশন অনুসারে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের (ইওএম) ‘পরামর্শযোগ্যতা, উপযোগিতা এবং সম্ভাব্যতা’- মূল্যায়ন করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি গত কয়েক মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন।
মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে তারা আগামী নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন মোতায়েনের প্রস্তাবিত আলোচনা করেন।
মোমেন নির্বাচনের সময় ইইউ এবং অন্যান্য দেশের পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে সরকার ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য’ সাধারণ নির্বাচন চায়।
তিনি ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়নের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের কথা রাষ্ট্রদূতকে জানান।
এদিকে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর বাংলাদেশ সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
অবস্থানকালে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।
সাম্প্রতিক ব্রাসেলস সফরের সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মে মাসের প্রথম সপ্তাহে গিলমোরের সঙ্গে বৈঠকসহ একাধিক বৈঠক করেন।
শাহরিয়ার গিলমোরকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
১ বছর আগে
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্যের চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মতামত প্রকাশিত হয়েছে, ইউএনবিকে রাষ্ট্রদূত
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য (এমইপি) ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ/ভাইস-প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেল ফন্টেলেসকে সম্ভববত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই এমইপিরা হলেন- ইভান শটেফানেক (ইপিপি, স্লোভাক প্রজাতন্ত্র), মাইকেলা সোজড্রোভা (ইপিপি, চেক প্রজাতন্ত্র), আন্দ্রে কোভাতচেভ (ইপিপি, বুলগেরিয়া), কারেন মেলচিওর (রিনিউ, ডেনমার্ক), জাভিয়ের নার্ট (রিনিউ, স্পেন) এবং হেইডি হাউটালা (গ্রিন/ইএফএ, ফিনল্যান্ড)।
ইইউ হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের কাছে এক চিঠিতে ছয়জন এমইপিও ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং চলমান সংকটের একটি টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধান খুঁজে বের করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সম্পৃক্ততার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস অবশ্য এই চিঠিকে এতে স্বাক্ষরকারী ছয় এমইপির মতামত হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আরও পড়ুন: বৃহত্তর বৈশ্বিক স্বার্থে বহুপাক্ষিকতাকে সমুন্নত রাখুন: জি২০ সভায় মোমেন
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি ইউএনবিকে বলেছেন, ‘আমি শুধু বলব যে এই চিঠিটিতে এতে স্বাক্ষরকারী ৬ জন এমইপির মতামত প্রকাশ করা হয়েছে।’
স্বাক্ষরকারী এমইপিরা জানান, বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতায় দীর্ঘ সময়ের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জোরালো কারণ রয়েছে ইই’র।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এভাবে ইইউকে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মানবাধিকার প্রসঙ্গে শুধুমাত্র বারবার সংলাপে সীমাবদ্ধ থেকে নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপও নিতে হবে।’
তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ও জড়িতদের জন্য ইইএ জোনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার মতো সম্ভাব্য পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছেন, বা এটা জিএসপিপ্লাস প্রণোদনার নিয়মিত শর্তগুলোর কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া, যেখানে অংশগ্রাহক হিসেবে বাংলাদেশকে মূল্যায়ন করা হতে পারে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এ বিষয়ে আমরা ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশন এবং সুশাসন ও মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ মিলে এই বিষয়ে (এবং সম্ভবত অন্যান্য আরও কিছুক্ষেত্রে) নেওয়া উদ্যোগের ফলাফল সম্পর্কে আরও জানতে পারলে খুশি হব।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শক্তিশালী সমর্থন চায় বাংলাদেশ
কোনো দেশ বা সংস্থার কাছ থেকে সংবিধানের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের প্রস্তাব পাইনি: শাহরিয়ার
১ বছর আগে