পরজীবী
বাকৃবির গবেষণায় মানুষের অন্ত্রে ক্ষতিকর পরজীবী শনাক্ত
মানুষের অন্ত্রে ক্ষতিকর কয়েকটি পরজীবী জীবাণুর সংক্রমণের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের একদল গবেষক। বিশেষ করে বস্তির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষের মধ্যে এই জীবাণুর সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। এমনকি সেখানকার প্রাণীদের শরীরেও এর উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে গবেষক দলটি।
ময়মনসিংহ শহরের রেলওয়ে কলোনি-সংলগ্ন একটি বস্তি এলাকার মানুষ ও প্রাণীর ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে যা রোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন গবেষকরা।
বাকৃবির প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে গবেষক দলে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী বেনী আমীন ও স্নাতক শিক্ষার্থী মো. আশিকুজ্জামান।
অধ্যাপক ড. সহিদুজ্জামান ইউএনবিকে বলেন, “আমাদের এই গবেষণাটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয়, মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশ—এই তিনটিকে আলাদা করে না দেখে ‘ওয়ান হেলথ’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একসঙ্গে বিবেচনা করা জরুরি।”
গবেষণাটির পদ্ধতি সম্পর্কে বেনী আমীন বলেন, ‘রেলওয়ে কলোনি-সংলগ্ন বস্তি এলাকার হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, কবুতরসহ শিশু ও বয়স্কদের মল, পানির নমুনা ও মাটির ১০২টি নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। পশুপাখি থেকে কিছু কিছু জীবাণু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে। আমরা এই জীবাণুগুলোই শনাক্ত করার চেষ্টা করেছি।’
আশিকুজ্জামান বলেন, “সংগৃহীত নমুনাগুলো ল্যাবরেটরিতে এনে প্রথমে ডিএনএ নিষ্কাশন করা হয়। পরে ‘পিসিআর ও সিকোয়েন্সিং’ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষতিকর জীবাণুগুলো শনাক্ত করা হয়েছে।’
গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে অধ্যাপক সহিদুজ্জামান বলেন, ‘গবেষণায় মানবদেহে ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে সক্ষম—এমন তিনটি অন্ত্রে বসবাসকারী পরজীবী, যথা: ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম, ব্লাস্টোসিস্টিস ও জিয়ারডিয়ার প্রজাতি ও উপপ্রজাতি (সাব টাইপ) শনাক্ত হয়। এসব জীবাণুর জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাই, কিছু কিছু উপপ্রজাতি পশুপাখি থেকে মানুষে, আবার মানুষ থেকে পশুপাখিতে সংক্রমিত হতে পারে।’
আরও পড়ুন: সনদ পেলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ নেপালি শিক্ষার্থী
এ ছাড়া, পয়নিষ্কাশনের পানি, দূষিত মাটি ও মল থেকে জীবাণু পুকুর, ডোবা বা নালায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। ওই পানিতে গোসল করা, কাপড় পরিষ্কার করা বা বাসনপত্র ধোয়ার সময় মানুষ সংক্রমিত হতে পারে বলে জানান তিনি।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, পরিত্যক্ত আবর্জনা থেকে গরু-ছাগলসহ অন্যান্য প্রাণী এসব পরজীবীতে আক্রান্ত হচ্ছে। পরে সেগুলোর সংস্পর্শে এসে মানুষেরও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
ওই জীবাণুগুলোর সংক্রমণের কারণ নিয়ে অধ্যাপক সহিদুজ্জামান বলেন, ‘বস্তি এলাকার অপরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন, যত্রতত্র পশুপাখির বিচরণ ও ময়লা-আবর্জনার কারণে সৃষ্ট অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এসব পরজীবীর সংক্রমণের অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করছে। এসব দূষিত পানি ও মাটির সংস্পর্শে এসে মানুষ ও প্রাণী উভয়েই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে।’
তিনি জানান, গবেষণায় ব্লাস্টোসিস্টিসের সর্বাধিক উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এটি ২৪টি নমুনায় শনাক্ত হয়েছে। মানব শরীরে এর উপস্থিতি তুলনামূলক কম হলেও ছাগল, গরু ও হাঁস-মুরগির মধ্যে এটির ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। ছাগলের মধ্যে এই পরজীবীর উপস্থিতি ছিল শতভাগ, যা গবেষকদের বিস্মিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘গবেষণায় ব্লাস্টোসিস্টিসের সাতটি ভিন্ন সাব টাইপ চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে এসটি২ ও এসটি৩ শুধু মানুষের দেহে পাওয়া গেছে, আর এসটি২৩ ও এসটি২৪ প্রাণী ও পাখির দেহে পাওয়া গেছে। একই বাড়ির মধ্যে থাকা ছাগল ও মুরগির শরীরে একই রকম উপপ্রজাতি পাওয়া গেছে।’
‘বিভিন্ন পশু ও পাখির দেহে একই ধরনের ব্লাস্টোসিস্টিসের সাবটাইপের উপস্থিতি এসব পশু-পাখির মধ্যে সংক্রমণের বিষয়টিকে প্রমাণ করে।’
ওই গবেষক আরও জানান, ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম ধরা পড়েছে ৮টি নমুনায়, যার মধ্যে একটি ছিল মানুষের নমুনা। ওই রোগীর শরীরে ‘ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম পারভাম’ এর একটি বিশেষ সাব টাইপ শনাক্ত হয়েছে, যা সাধারণত প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হয়। এ ছাড়াও তিনটি ছাগল ও তিনটি মুরগির শরীরেও এই পরজীবীটি পাওয়া গেছে। মাটির একটি নমুনায় ‘ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম মেলিয়াগ্রেডিস’ পাওয়া গেছে, যা এক ধরনের পাখিজনিত পরজীবী।
তবে ‘জিয়ারডিয়া ইন্টেসটাইনালিস’ পাওয়া গেছে শুধুমাত্র একটি মাটির নমুনায়, যা সেখানকার প্রাণী বা মানুষের মল থেকে এসেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক সহিদুজ্জামান।
মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিকার নিয়ে এই গবেষক বলেন, বস্তির মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর এলাকায় অন্ত্রপরজীবী জীবাণুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। বিশেষ করে পশুপাখির মল নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ, সুপরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে এসব জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে অধ্যাপক ড. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘এই গবেষণা একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। অর্থাৎ এটি ছিল ছোট পরিসরে প্রাথমিক অনুসন্ধান। তবে এতে যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, তা ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর ও বিস্তৃত গবেষণার জন্য ভিত্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
যদি দেশের অন্যান্য বস্তি অঞ্চল, গ্রামীণ এলাকা ও শহরের ঘিঞ্জি এলাকাগুলোতেও এ ধরনের গবেষণা চালানো যায়, তবে পরজীবী সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র স্পষ্টভাবে উঠে আসবে বলে ধারণা তার।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা আরও বিস্তৃত ও গভীর গবেষণায় এগিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান এই গবেষক।
২০১ দিন আগে
অস্ট্রেলিয়ায় নারীর মস্তিষ্ক থেকে বের হলো জীবন্ত কৃমি
বিশ্বে প্রথম অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসকরা এক নারীর মস্তিষ্কে জীবন্ত পরজীবী কৃমি খুঁজে পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায়, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এএনইউ) এবং ক্যানবেরা হাসপাতালের গবেষকরা পরজীবী রাউন্ডওয়ার্মের আবিষ্কারের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন।
আট সেন্টিমিটার ওফিডাসকারিস রবার্টসি রাউন্ডওয়ার্ম, যা সাধারণত অজগরের শরীরে পাওয়া যায়।
রোগী একজন ৬৪ বছর বয়সী নারী। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পরে এখনও তিনি জীবিত এবং সুস্থ হয়ে উঠছেন।
এএনইউ ও ক্যানবেরা হাসপাতালের একজন শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় সেনানায়েকে একটি মিডিয়া রিলিজে বলেছেন, মস্তিস্কে পরজীবী পাওয়ার ঘটনা বিশ্বে প্রথম।
আরও পড়ুন: ব্লাড ক্যান্সার প্রতিরোধে যুগান্তকারী আবিস্কার অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের
সমীক্ষা অনুসারে, রোগীকে ২০২১ সালে দক্ষিণ-পূর্ব নিউ সাউথ ওয়েলসের (এনএসডব্লিউ) একটি স্থানীয় হাসপাতালে তিন সপ্তাহ পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়ার নিয়ে ভর্তি করা হয়েছিলেন।
২০২২ সালে তিনি ভুলে যাওয়া ও বিষণ্ণতা অনুভব করা শুরু করার জেরে ক্যানবেরা হাসপাতালের একজন নিউরোসার্জন একটি এমআরআই স্ক্যান করে। রিপোর্টে মস্তিষ্কের ডান ফ্রন্টাল লোবে একটি অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করেছিলেন ডাক্তার। পরে অস্ত্রোপচার করে একটি রাউন্ডওয়ার্ম বের করেছিল।
গবেষণাটিতে অনুমান করা হয়েছে, রোগী সম্ভবত স্থানীয় ঘাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন বা খেয়েছিলেন। যার মাধ্যমে তার শরীরে একটি কার্পেট পাইথন পরজীবীর সংক্রমণ ঘটেছিল।
তিনি সংক্রামক রোগ এবং মস্তিষ্ক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: আইনি লড়াই হেরে অস্ট্রেলিয়া ছাড়লেন জকোভিচ
৮২৯ দিন আগে