সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে কর অব্যাহতি: দেশে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাড়ানোর পরিকল্পনা
শুধু ১০টি প্রকল্প নয়, এখন আরও অনেক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এই ধরনের বেসরকারি বিনিয়োগে কর মওকুফ পুনর্বহালের জন্য এনবিআরের বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার পর এমন চিন্তাভাবনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান ১০টি প্রস্তাবিত কেন্দ্র ছাড়াও সৌর প্রকল্পের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে এটি নিশ্চিত।
এর আগে বেসরকারি খাতে ১০টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগের উপর কর অবকাশ পুনর্বহালের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চেয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
প্রস্তাবিত প্রতিটি কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হওয়ার কথা ছিল ৫০ মেগাওয়াট সেই হিসাবে মোট উৎপাদন ক্ষমতা হওয়ার কথা ছিল ৫০০ মেগাওয়াট।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'অবশেষে আমরা এ বিষয়ে এনবিআরের প্রজ্ঞাপন পেয়েছি এবং এখন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১০টির বেশি হবে।’
তবে এ ধরনের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সংখ্যা কত হবে তা এখনো চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়নি বলে তিনি ইউএনবিকে জানান।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৩০-৪০টির মধ্যে হতে পারে।
গত ২৭ অক্টোবর জারি করা এনবিআরের পরিপত্র অনুযায়ী, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের ওপর ১০ বছরের কর অব্যাহতি পাবেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেসব কোম্পানি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতির আওতায় ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে ২০৩৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করবে, তারা ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ পাবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপরিকল্পিত ও ব্যয়বহুল উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে হাসিনা সরকার: উপদেষ্টা ফাওজুল
এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘এসব কোম্পানি প্রথম ৫ বছরের জন্য শতভাগ, পরবর্তী ৩ বছরের জন্য ৫০ শতাংশ এবং বাকি ২ বছরের জন্য ২৫ শতাংশ কর অব্যাহতি পাবে।’
এতে আরও বলা হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়তা করতেই ১০ বছর মেয়াদে এই কর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, ২০২৩ সালের ২৬ জুনে জারি করা একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই ছাড়গুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, যেসব সংস্থা ১ জানুয়ারি, ২০২৩ থেকে ৩০ জুন, ২০২৪ এর মধ্যে তাদের বাণিজ্যিক অপারেশন তারিখ (সিওডি) অর্জন করবে, তারা কর ছাড় পাবে।
আগের গেজেটের শর্ত অনুযায়ী, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাদে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কর ছাড় পাওয়ার যোগ্য।
এনবিআরের আগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলো ২০৩৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শতভাগ আয়কর অব্যাহতি সুবিধা ভোগ করবে; যা বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত আয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশি কর্মীরা বাংলাদেশে আসার পর তিন বছরের জন্য আয়কর ছাড় পাবেন।
পূর্ববর্তী বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আরও ছাড়ের মধ্যে রয়েছে সিওডি থেকে শুরু করে অপারেশনের প্রথম পাঁচ বছরের জন্য ১০০ শতাংশ, পরবর্তী তিন বছরের জন্য ৫০ শতাংশ এবং পরবর্তী দুই বছরের জন্য ২৫ শতাংশ আয়কর মওকুফ।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ স্থগিত করে এবং এই আইনের অধীনে অনুমোদিত ৩৪টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে।
এসব প্রকল্প মূলত কোনো দরপত্র প্রক্রিয়া ছাড়াই এবং অযাচিতভাবে তাদের নির্বাচিত করা হয়েছিল।
এরপর বিদ্যুৎ বিভাগ ১০টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে অনেক সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী কর অব্যাহতি সুবিধা না পেয়ে দরপত্রে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) প্রকল্পগুলোর দরপত্র দিতে পারেনি। এরপরই বিদ্যুৎ বিভাগ এনবিআরকে চিঠি দিয়ে কর অব্যাহতি সুবিধা পুনর্বহালের অনুরোধ জানায়।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কর অবকাশ পুনর্বহালের পর তারা এখন আশা করছেন বেসরকারি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের নিলামে আরও বেশি বিনিয়োগকারী অংশ নেবেন।
তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, বেশ কয়েকটি প্রস্তাব রয়েছে - মোট সৌর প্রকল্পগুলো গড়ে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৪০টি পর্যন্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের সক্ষমতা থেকে শুরু করে স্থান নির্ধারণ পর্যন্ত সবকিছু এ সপ্তাহের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে।’
বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তর
বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ শতাংশ জ্বালানি চাহিদা পূরণের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, এটি অর্জনে আনুমানিক ১.৫ থেকে ১.৭১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।
স্বল্প কার্বন নিঃসরণের বিষয়ে অগ্রগতির প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমানভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জ্বালানি দক্ষতার দিকে মনোনিবেশ করছে।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ১ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৩৫ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ থেকে ২৩০ মেগাওয়াট এবং সৌরশক্তি থেকে ১ হাজার ৮০ দশমিক ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
পাওয়ার সেলের নথি অনুযায়ী, মোট ৩ হাজার ৯৬৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াটের প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ৯৪৩.৫ মেগাওয়াট প্রকল্প নির্মাণাধীন, ৬০৯ মেগাওয়াট লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বা নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ), ২২৮ মেগাওয়াট দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং ২,১৮৩ মেগাওয়াট পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্মূল্যায়নে কমিটি গঠন
১ মাস আগে
ঝুলে আছে ১০টি গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিপিডিবির দরপত্র আহ্বান
নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও বেসরকারি খাতে গ্রিডসংযুক্ত ১০টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সিদ্ধান্তকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিলেও দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে বিদ্যুৎ বিভাগ বেসরকারি খাতে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এবং মোট ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১০টি গ্রিড-সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করতে বিপিডিবিকে নির্দেশ দেয়।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন (বিশেষ) আইন, ২০১০-এর অধীনে আর কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দরপত্রের এই পদক্ষেপ।
ফলে বেসরকারি খাতের গ্রিড-সংযুক্ত প্রস্তাবিত ৩৪টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এর আগে দরপত্রের জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) জারি করেছিল বিপিডিবি।
দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি (বিশেষ) আইন, ২০১০ এর আওতায় 'অপ্রত্যাশিত অফার' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপিডিবি এসব প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করে।
এই আইনের আওতায় সরকার টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই যে কোনো বেসরকারি সংস্থাকে প্রকল্পের চুক্তি দিতে পারে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যাবতীয় দুর্নীতি ও অনিয়মের মূল কারণ হিসেবে এই বিশেষ আইনের সমালোচনা করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
তাদের অভিযোগ, অনেক অযোগ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং খাতের বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
ফলে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয় এবং দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি আইন (বিশেষ) আইন, ২০১০ এর অধীনে আইনটি স্থগিত এবং আর কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতের সব প্রকল্প উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
এই সিদ্ধান্তটি অবশ্য বেসরকারি ক্রেতাদের বিপদে ফেলে দেয় যারা ৩৪টি সৌর প্রকল্পে যুক্ত হয়েছিল। তারা এরই মধ্যে কেন্দ্র তৈরি করতে জমি সংগ্রহ করতে এবং এলওআই পেতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ফেলেছিল।
এ অবস্থায় তারা প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব প্রকল্প পেতে এবং উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চুক্তি পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, 'আমরা প্রাথমিকভাবে স্থানভিত্তিক ৫০ মেগাওয়াট সৌর প্রকল্প স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা এরইমধ্যে জমি কিনেছেন তাদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়া প্রকল্পটি পেতে সহায়তা করবে।’
তিনি আরও বলেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রচারের অংশ হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
বেসরকারি উদ্যোক্তারা নিজস্ব খরচে কেন্দ্রগুলো স্থাপন করবে এবং বিপিডিবি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনবে।
বিদ্যুৎ সচিব বলেন,‘বিপিডিবি শিগগিরই প্রতিটি ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বেশ কয়েকটি গ্রিড-ভিত্তিক সৌর প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করবে। বেশিরভাগই সেই জায়গাগুলো বেছে নেওয়া হবে যেখানে গ্রিড সাবস্টেশনগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সুবিধা পাওয়া যাবে।’
তবে কেন্দ্রগুলো কোথায় স্থাপন করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানাননি তিনি।
বিপিডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মূলত ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) সেল-১ দরপত্র দলিল প্রণয়ন ও স্থান নির্বাচনের কাজ করছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে বারবার কল করা হলেও আইপিপি সেল-১ এর পরিচালক শামসুজ্জোহা কবির কোনো সাড়া দেননি।
২ মাস আগে
সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আরও ৩ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র
সরকারের অনুমোদন পেতে বেসরকারি খাতে আরও তিনটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সরকারি সূত্র মতে, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১০০ মেগাওয়াট, জামালপুরের ইসলামপুরে ৩০০ মেগাওয়াট এবং রাজবাড়ীর সদর উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।
বাঁশখালীতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে যে হংকংয়ের হুইহেং উইন্ড পাওয়ার লিমিটেড ও জুপিটার এনার্জি লিমিটেড বাংলাদেশ। ইসলামপুরের ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে এসএএল-জিটেক কনসোর্টিয়াম এবং রাজবাড়ীর ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে কনসোর্টিয়াম অব সানগ্রো রিনিউয়েবল এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট পিটিই এবং থিয়ে পাওয়ার (সিঙ্গাপুর)।
আরও পড়ুন: বাণিজ্য-যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত ঢাকা-থিম্পু
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগ ইতোমধ্যে তিনটি কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তিনটি পৃথক প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘সিসিজিপি প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করলে বিদ্যুৎ বিভাগ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) তাদের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করতে বলবে।’
তবে এসব কেন্দ্র থেকে সৌরবিদ্যুতের শুল্কের বিস্তারিত প্রকাশ না করলেও প্রায় ১০ মার্কিন সেন্টের শুল্কে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় বিপিডিবি এসব কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনবে বলে জানান তিনি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে সৌর বিদ্যুতের অংশ বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। এর আওতায় ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যমান ৩ শতাংশের নিচে থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি জরুরি: নসরুল হামিদ
তিনি ২০ মার্চ বার্লিন এনার্জি ট্রানজিশন ডায়ালগ ২০২৪-এ 'জ্বালানি খাতে কপ২৮ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন - সুযোগ, সীমাবদ্ধতা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ: দ্য ওয়ে হেড' শীর্ষক মন্ত্রী পর্যায়ের মাল্টি-স্টেকহোল্ডার গোলটেবিল বৈঠকে দেশের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্ব্যক্ত করেন।
বর্তমানে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ৯৮৯ দশমিক ৬১ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৭১ দশমিক ৪৮ মেগাওয়াট অগ্রিড এবং অবশিষ্ট ৬১৮ দশমিক ১৩টি অন-গ্রিড।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি এবং অফ-গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগের দাপ্তরিক নথিপত্রে দেখা যায়, গত তিন বছরে সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ৬০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রায় ১৩টি সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
নথিগুলোর উল্লেখ করে এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এই নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য লেটার অফ ইনটেন্ট (এলওআই) এবং মনোনয়নের বিজ্ঞপ্তি (এলওআই) জারি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে দুটি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প (৩০+৭০) ১০০ মেগাওয়াট এবং বাকি ১১টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাড়ছে লোডশেডিং-তাপপ্রবাহ
৮ মাস আগে
কুড়িগ্রামে ১৪০ একর জমিতে হচ্ছে কৃষিবান্ধব বাণিজ্যিক সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুড়িগ্রামে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ উদ্যোগে ১৪০ একর জমিতে তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম কৃষিবান্ধব বাণিজ্যিক সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে উৎপাদন হবে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যা কৃষিখাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৌশলী তারেক রহমান।
ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ভূমি লিজ নেওয়ার কাজ শেষের পথে। আর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এমএগ্রিন এনার্জি লিমিটেড।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর তীরবর্তী সোনাইকাজী ও যতীন্দ্র নারায়নের চরে এক ফসলি জমিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি। ২০২২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০৪৭ সাল পর্যন্ত। আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে প্রকল্পের মূল কাজ শেষ হলে দেশের জাতীয় গ্রীডে যোগ হবে উৎপাদিত ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ২৫ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ জমি। বিনিময়ে প্রথম দুই বছর জমির ভাড়া হিসেবে একর প্রতি কৃষকদের দেওয়া হবে ৭ হাজার করে টাকা। পরবর্তী তৃতীয় বছর থেকে কৃষকরা একর প্রতি পাবেন ৩০ হাজার টাকা, সঙ্গে জমিতে ফসল ফলানোর সুযোগ পাচ্ছেন কৃষকরা। তবে অধিকাংশ কৃষক খুশি হয়ে তাদের জমি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য হস্তান্তর করলেও এখনও কিছু কৃষক রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে।
আরও পড়ুন: দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন
১ বছর আগে