শ্রম খাত
শ্রম খাতে টেকসই সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা হচ্ছে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার শ্রম খাতসহ অন্যান্য সব খাতের সংস্কারে সব অংশীজনের অংশিদারত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এসব খাতে টেকসই সংস্কার সাধনে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
সোমবার (১৭ মার্চ) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ৩৫৩তম গভর্নিং বডি অধিবেশনে বাংলাদেশের শ্রমখাত সংস্কার নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। জেনেভার বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শ্রম খাতের অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরেন শ্রম উপদেষ্টা।
গত নভেম্বরে সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনের পর বর্তমান সরকারের আমলে দ্বিতীয়বারের মতো এক্ষেত্রে অগ্রগতির ওপর আলোচনা হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলাগুলোর অধিকাংশ বাতিল করেছে। এছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ত্রিপক্ষীয় কমিটিগুলোতে প্রকৃত শ্রমিক ও মালিকের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কাউন্সিল সভায় চলমান শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে আইনটির আওতা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা, তত্ত্বাবধান ও প্রশাসনিক পদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার সম্প্রসারণ, অনায্য শ্রম আচরণ ও ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্যের শাস্তি তিনগুণ বর্ধিত করা হয়েছে। এছাড়া শিশুশ্রমের শাস্তি পাঁচগুণ বর্ধিত করা, জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ, কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য ও সহিংসতা এবং জবরদস্তি শ্রমের শাস্তি নির্ধারণ, শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত নিষিদ্ধ ও এর শাস্তির বিধান সংযোজনে ত্রিপক্ষীয় ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দলিলাদি ও বাধ্যতামূলক সভা কমিয়ে আনা, ১০ কার্যদিবসের মধ্যে শ্রমিকের সংখ্যা প্রদানে মালিকের বাধ্যবাধকতা ও একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত ইউনিয়নের সংখ্যা তিনটি থেকে পাঁচটিতে উন্নীত করতে সবাই ঐকমত্য হয়েছে বলে তিনি অবহিত করেন।
তবে, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য ন্যূনতম কর্মীর শতকরা হার বা সংখ্যার বিষয়সহ কিছু বিষয়ে এখনো ঐকমত্য অর্জিত না হলেও ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে তা অর্জিত হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। এর মাধ্যমে অচিরেই সরকার অধ্যাদেশ জারি করে আইনটির সংশোধন সুসম্পন্ন করবে বলেও জানান উপদেষ্টা।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আরও বলেন, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলসমূহের জন্য ইপিজেড শ্রম আইন সংশোধনে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের পর বিদ্যমান ইপিজেড শ্রম আইন ও সংশোধিত বাংলাদেশ শ্রম আইনের মধ্যে ফারাক বিশ্লেষণ করে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
কারখানা ও স্থাপনা পরিদর্শনের জন্য বিদ্যমান স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা (এসওপি) অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অঘোষিত পরিদর্শন হয়ে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিদর্শকের শূন্যপদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে।
অধিবেশনে দাখিল করা প্রতিবেদন নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিরা শ্রম অধিকার উন্নয়ন ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকল্পে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ করার দাবি জানান।
চলমান মামলায় গত পাঁচ বছর ধরে শুনানি অনুষ্ঠিত হলেও এবারই প্রথম সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জোট হিসেবে প্রথমবারের মতো আরব দেশগুলোর জোট বাংলাদেশের পক্ষে জোটবদ্ধ সমর্থন ব্যক্ত করে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে চলমান দেশগুলোর ক্ষেত্রে কোনো জোটের এমন সমর্থন একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। আরব জোট ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে ১৮টি দেশ বাংলাদেশের চলমান শ্রম সংস্কারের ভূয়সী প্রশংসা করে, যা এযাবৎকালে অর্জিত সর্বোচ্চ সমর্থন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা শ্রমখাত সংস্কারে সরকারের চলমান উদ্যোগ স্বাগত জানান। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারা। চলতি অধিবেশনে গভর্নিং বডির কোনো সদস্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের দাবি জানায়নি।
বাংলাদেশের দাখিল করা প্রতিবেদন ও অধিবেশনে অনুঠিত আলোচনার ভিত্তিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা ২০২৫ সালের নভেম্বরের পরিবর্তে আগামী বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে আন্তর্জাতিক মহলের অব্যাহত সহযোগিতার প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের শুভেচ্ছা সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া শ্রম উপদেষ্টা শ্রম খাতের উন্নয়নে সরকারের চলমান সংস্কার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ত্রিপক্ষীয় দলসহ যেকোনো প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান। সমাপনী বক্তব্যে তিনি চলমান মামলাটি শিগগির নিষ্পত্তি করতে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন কামনা করেন।
৪৭ দিন আগে
শ্রম খাতে অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে রবিবার ঢাকায় আসছে ইইউ দল
দেশের শ্রম খাত নিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধিদল আগামীকাল রবিবার (১২ নভেম্বর) ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
এই সফর সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন, ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
তারা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াও সরকারের শ্রম, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি ইউএনবিকে বলেছেন, শ্রম খাতের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘সামগ্রিক মূল্যায়নের’ লক্ষ্যে এই সফর।
রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি, প্রতিনিধি দলের কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে ব্রাসেলস থেকে ঢাকায় আসবেন।
বাংলাদেশ শ্রম খাতে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০২১-২০২৬) গ্রহণ করেছে এবং বাংলাদেশ সরকার আইএলও গভর্নিং বডিতে জমা দেওয়া রোডম্যাপের সঙ্গে পরিকল্পনাটি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
এই রোডম্যাপের লক্ষ্য হলো সংগঠনের স্বাধীনতা ও সম্মিলিত দর কষাকষির অধিকারসহ দেশের শ্রম অধিকারের মান উন্নত করা।
গত মাসে রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি বলেছিলেন, বাংলাদেশের জিএসপি+ আবেদন বিবেচনা করার ক্ষেত্রে শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার বিষয়টি ইউরোপীয় সংসদ ও কমিশনের জন্য একটি ‘বিবেচ্য উপাদান’।
ঢাকায় এক সেমিনারে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কাছে জিএসপি+ এ যোগদান করার বিকল্প রয়েছে, যা এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ)-এরপর পরবর্তী সবচেয়ে উদার জিএসপি প্রোগ্রাম।’
আরও পড়ুন: শ্রম খাতের অগ্রগতি পর্যালোচনা: আগামী সপ্তাহে আসছে পাওলা পাম্পালোনির নেতৃত্বে ইইউ প্রতিনিধি দল
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল কয়েক মাস আগে ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসে (ইইএএস) পাওলা পাম্পালোনির সঙ্গে দেখা করে।
তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করা, এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ), শ্রমিক কল্যাণ ও অধিকার এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রতিনিধি দল পাওলা পাম্পালোনিকে অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্তাকর্ষক অর্জন এবং প্রধান আর্থ-সামাজিক খাতসমূহের ব্যাপক অগ্রগতির বিষয়ে জানাবেন। যেখানে শিল্প খাত; বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশ শ্রম আইনের চলমান সংশোধনীগুলো ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ্য করছি। আমরা আশা করি ত্রিপক্ষীয় অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং আইএলওর প্রযুক্তিগত সহায়তায় সংশোধনীগুলো সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে কার্যকর হবে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতি, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতির একটি দুর্দান্ত গল্প রয়েছে।
তিনি বলেন, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়া ঐতিহাসিক মাইলফলক, যা নতুন সুযোগ নিয়ে সৃষ্টি করেছে এবং ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানায়।
আরও পড়ুন: বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করায় উদ্বিগ্ন ইইউ
ঢাকায় প্রাণহানি-সহিংসতায় ইইউ ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর শোক প্রকাশ
৫৪০ দিন আগে