ড. আতিউর
নির্বাচনের আগে অবরোধ ও হরতালের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে: ড. আতিউর
বর্তমান অবরোধ ও যানবাহন পোড়ানো কীভাবে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে তা ব্যাখ্যা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসবের ব্যাখ্যা দেন। একই সঙ্গে সমাধানে পৌঁছানোর উপায় ও পরামর্শও দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, যানবাহনে আগুন দেওয়ার আশঙ্কা বাস্তব।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপি, জামায়াত ও কয়েকটি ছোট জোট এসব বিক্ষোভ করছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে বিরোধীরা। সরকার এই দাবিকে অসাংবিধানিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আরও পড়ুন: রপ্তানি বাড়াতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য দূর করতে হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
অর্থনীতিবিদ বলেন, বিক্ষোভের কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি- উভয়ের জন্য পণ্য পরিবহনের ব্যয় বেড়েছে।
এছাড়া সড়কে যানবাহন চলাচল না করায় অধিকাংশ পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন। এগুলো মূলত অস্থায়ী কর্ম এবং এই ধারাবাহিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হাজার হাজার মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, চলমান অস্থিরতা কেবল অভ্যন্তরীণ সরবরাহ শৃঙ্খলকে বিঘ্নিত করছে না, আন্তঃজেলা ট্রাক ও কনটেইনার যানবাহন রাস্তায় চলাচল করতে না পারায় আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলকেও প্রভাবিত করছে।
পরিবহন ব্যাহত হওয়ার কারণে কৃষি উৎপাদকরা তাদের পণ্যের দাম পাচ্ছেন না, এদিকে শহুরে ভোক্তারা বেশি দাম দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
যানবাহন ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও হামলার হুমকিসহ অস্থিরতা ইতোমধ্যে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে ব্যবসায়িক আস্থা ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে। এটি বিনিয়োগের মাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন ড. আতিউর।
ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ায় ব্যাংকগুলো তাদের ঋণখেলাপির সম্ভাবনা নিয়েও উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যান যথার্থই উল্লেখ করেছেন যে, আমদানি মন্দার পাশাপাশি এই রাজনৈতিক অস্থিরতা রাজস্ব আদায়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
এটি আবার বাজেট ঘাটতি ও উচ্চতর সরকারি ঋণের প্রয়োজনীয়তার উপর প্রভাব ফেলে। এমন জটিল পরিস্থিতিতে মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। দেশ ২০১৪ সালে একই ধরনের সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের পক্ষে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা বেশ কঠিন হয়েছিল।
আরও পড়ুন: আইপিওর যাচাই-বাছাইয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের আরও ভূমিকা থাকা উচিত: এটিএম তারিকুজ্জামান
ড. আতিউর বলেন, 'আমরা এই পোড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি... পরবর্তীকালে দেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে এঘিয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিন পর সম্পদ পুড়িয়ে ফেলার নেতিবাচক সংস্কৃতির মুখে পড়েছে দেশ। আমি আশা করি, আরেক দফা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা এড়ানোর জন্য সব অংশীজনদের মধ্যে সদিচ্ছা বিরাজ করবে, যার ফলে অর্থনীতির অপ্রত্যাশিত ক্ষতি এড়ানো যাবে।’
এভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার বাতিলের কারণে আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও, এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সমস্ত পেমেন্টের ভারসাম্যের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় প্রভাব রয়েছে, যা ইতোমধ্যে মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে।’
প্রথম সর্বোত্তম সমাধানটি হবে যেকোনো মূল্যে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী ট্রেনে তোলা। প্রয়োজনে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আরও বেশি দলকে আকৃষ্ট করতে তফসিল আরও নমনীয় করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন: শেয়ারবাজারে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেনের জন্য নতুন ডাটা সেন্টার চালু ডিএসইর
এমনকি যদি কিছু দল এই ধরনের সমন্বয়ের পরেও নির্বাচনী ট্রেন এড়িয়ে যায় তবে এটি প্রতিদ্বন্দ্বী দল এবং স্বতন্ত্র হিসেবে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সামনে এগিয়ে যেতে দিন।
এরই মধ্যে, ‘আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিনিময় হার ও সুদের হার উভয়কেই নমনীয় করার জন্য আমাদের অবশ্যই বাজার-নির্ধারিত সমাধানের দিকে আরও এগিয়ে যেতে হবে।’
একই সঙ্গে রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে(বাংলাদেশ ব্যাংক) এ অঞ্চলের বন্ধুপ্রতীম কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আরও মধ্যমেয়াদি বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ বা আমানতে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা উচিত।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে আরও রেমিট্যান্স আকৃষ্ট করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ক্ষুদ্র রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের জন্য আরও কিছু প্রণোদনা দিতে হবে। বড় রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের জন্য আধিপত্যপূর্ণ এনআরবি বন্ড ঠিক করতে উচ্চতর মুনাফা প্রদানেরও পরামর্শ দেন ড. আতিউর রহমান।
আরও পড়ুন: অবৈধ লেনদেনের দায়ে ওয়ালেটমিক্সের লাইসেন্স বাতিল
১১ মাস আগে