রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সবসময়ই অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করে: আহসান মনসুর
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বা অনিশ্চয়তা সবসময় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান মনসুর।
ইউএনবিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখন যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে তা গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে দেখা যায়নি। তাই রাজনৈতিকভাবে এই গুরুতর পরিস্থিতি মোকাবিলা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ড. মনসুর বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতির জন্য একটি দ্বৈত আঘাত। তাই বর্তমান অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্য যেকোনো নির্বাচনের সময়ের চেয়ে আলাদা।
তিনি বলেন, 'জাতীয় নির্বাচন যদি আন্তর্জাতিকভাবে এবং দেশের জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হয়, তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বেশিভার গন্তব্য পশ্চিমা দেশগুলো থেকে কী পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়া আসবে তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়বে।’
আরও পড়ুন: অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার
এরই মধ্যে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে শ্রমের সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ, শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিরাপত্তা এবং কাঙ্ক্ষিত মজুরি নিয়ে বিদেশিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) আওতায় চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারিতে রয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমাধান ও শ্রম অধিকার সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় প্রসঙ্গে আইএমএফের সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. মনসুর বলেন, ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই। যেহেতু ঋণপ্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত সব শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: খোলা বাজারে ১৫ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে দুই অঙ্কের মুদ্রাস্ফীতি বিরাজ করছে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। এক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির হার ৪-৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশকে আরও বেশি কিছু করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেডা) নিয়ন্ত্রিত না হয়ে বিনিময় হারকে টেকসই করার জন্য বাজারভিত্তিক বৈদেশিক বিনিময় হারের উপর জোর দেন তিনি।
ড. মনসুর টেকসই অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের জন্য মানি লন্ডারিং বা মূলধন উত্তোলন বন্ধে নীতি সংস্কার ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন। যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো পক্ষপাত বা প্রভাবমুক্ত হয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারে।
আরও পড়ুন: আইপিওর যাচাই-বাছাইয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের আরও ভূমিকা থাকা উচিত: এটিএম তারিকুজ্জামান
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘বিপুল জনবল ও ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, নীতিগত সংস্কারের অভাব এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কারণে বাংলাদেশ বড় অঙ্কের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করতে পারছে না। রাজনৈতিক অস্থিরতা এফডিআইয়ের জন্য আরেকটি বাধা হিসেবে কাজ করবে।’
রাজনৈতিক সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই এবং যারা শক্তিশালী অবস্থানে বা ক্ষমতায় আছেন তাদের জন্য বিরোধী দলের সহনশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ড. মনসুর বলেন, সামগ্রিক বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আসন্ন নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য সর্বোত্তম উপায় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সংলাপ ও নির্বাচনে সমান সুযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি মনে করেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। যেহেতু এখানে যা ঘটছে, তা সারাবিশ্ব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাই কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই যৌক্তিকভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: শেয়ারবাজারে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেনের জন্য নতুন ডাটা সেন্টার চালু ডিএসইর
১ বছর আগে