বাইক রাইডিং
রয়্যাল এনফিল্ড ৩৫০ সিসির নতুন চারটি মোটরবাইক মডেলের আকর্ষণীয় সব ফিচার
নিত্য নতুন ফিচার এবং প্রযুক্তির সংযোজনে দেশের মোটরবাইকগুলো আরও উন্নত হচ্ছে; সেই সঙ্গে রাইডারদের অভিজ্ঞতাতেও আসছে বৈচিত্র্য। যন্ত্রকৌশলে এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন বিকশিত করছে দেশের সমগ্র অটোমোবাইল শিল্পকে। এই পরিবর্তনের প্রথম সারির অগ্রপথিক হচ্ছে নবাগত রয়্যাল এনফিল্ড। এর ৩৫০ সিসির চারটি ভিন্ন মডেলে সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার। ক্লাসিক, বুলেট, হান্টার ও মিটিওর শিরোনামের মোটরযানগুলোকে দেশের রাস্তায় দেখার জন্য রীতিমতো মুখিয়ে আছেন বাইকপ্রেমীরা। চলুন, এই আইকনিক মডেলগুলোর প্রধান ফিচারগুলো সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক।
রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০
আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে এনফিল্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার কারণেই মূলত এর জন্য ক্লাসিক নামটি বাছাই করা হয়েছে।
এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে ক্র্যাঙ্ক আর্মের ৬ হাজার ১০০ আরপিএম (রিভোলিউশ্যন পার মিনিট) ঘূর্ণন ক্ষমতা।
অপরদিকে,গতি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ২০ দশমিক ২ বিএইচপির (ব্রেক হর্সপাওয়ার)। এটি ৪ হাজার আরপিএমের প্রতি ফুট দূরত্বে সরবরাহ করবে ১৯ পাউন্ড টর্ক।
যানের বডিকে ঠান্ডা রাখার জন্য রয়েছে শীতলীকরণ প্রক্রিয়া সমৃদ্ধ একক সিলিন্ডার।
সজ্জাগত দিক থেকে সর্বাঙ্গে থাকা স্টিলের ফ্রেমটি কেবল নান্দনিকই নয়; যথেষ্ট উপকারীও বটে। কারণ এতে চালক ও যাত্রী দুজনের উচ্চতা ও বসার অবস্থানের সঙ্গে হ্যান্ডেলবার ও হ্যান্ড গ্রিপগুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখে।
সামনের সাস্পেনশনে রয়েছে ৪১ মিলিমিটার টেলিস্কোপিক ফর্ক। আর পেছন থেকে একে সাপোর্ট দেয় টুইন সাইড সুইং আর্ম। সামনে ও পেছনে উভয় দিকেই আছে হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক, যেটি এবিএস (অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম)-এর কাজ করবে।
যাবতীয় যান্ত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে শক্তিশালী ৩৪৯ সিসির ইঞ্জিন।
রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০: বাংলাদেশের প্রথম ৩৫০ সিসি মোটরবাইক
রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০
ইঞ্জিন ও ক্র্যাঙ্ক শিফটিং-এ বুলেট ক্লাসিকের মতোই। তবে পার্থক্য হচ্ছে গতি সামলানোর জন্য ক্র্যাঙ্কটি ৪ হাজার আরপিএম-এর প্রতি ফিট দূরত্বে ১৯ দশমিক ৯ পাউন্ড টর্ক পাবে।
১৩ লিটারের জ্বালানি ট্যাঙ্ক পুরোটা একবার ভরে নিলেই মাইলেজ পাওয়া যাবে ৩০০-এরও বেশি।
বুলেটের নকশার বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনফিল্ডের ঐতিহাসিক ডিজাইন শৈলী। পুরো ভিন দেশি এই নকশাই মডেলের মূল আকর্ষণ। অবশ্য ইউএসবি চার্জিং পোর্টটিও আলাদাভাবে দৃষ্টি কাড়ে।
সিট সেট-আপ ডুয়্যাল এবং মোটা-প্যাডের হওয়ায় তা ৮০৫ মিলিমিটার উচ্চতায় চালক ও যাত্রীর বসার জায়গাকে আরামদায়ক করে তোলে।
রয়্যাল এনফিল্ড হান্টার ৩৫০
চার মডেলের মধ্যে প্রযুক্তিগত দিক থেকে সব থেকে এগিয়ে হান্টার। অন্য দুটোর মধ্যে এখানেও একক সিলিন্ডার আর ইঞ্জিন ৩৪৯ সিসির। গতির ক্ষেত্রে ৬ হাজার ১০০ আরপিএমের সঙ্গে ব্রেকিং ক্ষমতা ১৪ দশমিক ৮৭ কিলোওয়াট বা ১৯.৯ এইচপি (১ কিলোওয়াট = ১ দশমিক ৩ হর্সপাওয়ার)। হর্সপাওয়ারের হিসেবে এটি ক্লাসিক ও বুলেট থেকে কিছুটা কম। অবশ্য ৪ হাজার আরপিএমে সরবরাহ করা টর্ক ২৭ এনএম (নিউটন-মিটার)। প্রতি ফুট দূরত্বে পাউন্ডের হিসেবে এটি প্রায় ১৯.৯ পাউন্ড (১ পাউন্ড টর্ক = ১ দশমিক ৪ এনএম) অর্থাৎ বুলেটের টর্কের সমান।
অন্যগুলোর মতো এর বডিতেও স্টিলের ফ্রেম এবং সামনের সাস্পেনশনে টেলিস্কোপিক ফর্ক ও পেছনেরটিতে টুইন সাইড সুইং আর্ম। একই সঙ্গে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে সামনে ও পেছনের এবিস সমৃদ্ধ হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক।
হান্টারের ওজন সর্বোচ্চ ১৮১ কেজি এবং বসার জায়গাটির উচ্চতা ৭৯০ মিলিমিটার। অ্যালুমিনিয়ামের চাকাগুলোতে লাগানো টায়ারগুলো টিউবলেস। এ সবকিছুর মধ্যে ডিজিটাল পাওয়ার আউটলেটটি আলাদাভাবে নজর কাড়ে।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানোর ১০টি উপায়
রয়্যাল এনফিল্ড মিটিওর ৩৫০
ওজন, সিলিন্ডার ও ক্র্যাঙ্ক ঘূর্ণনের গতির ক্ষেত্রে মিটিওর অনুসরণ করেছে ক্লাসিক মডেলকে। আর গতি নিয়ন্ত্রণের টর্কের সাদৃশ্য রয়েছে হান্টারের সঙ্গে।
তবে যে বিষয়টি অন্যান্যগুলো থেকে একে আলাদা করেছে, তা হচ্ছে এর আরামদায়ক রাইডিং অভিজ্ঞতা। ইঞ্জিন ও গিয়ারের বোঝাপোড়াটা এতোটাই সঙ্গতিপূর্ণ যে,গতি ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেলেও চালক কম্পন অনুভব করবে না।
গ্রাউন্ড থেকে বসার অবস্থানের ডুয়্যাল সিট পর্যন্ত উচ্চতা ৭৬৪ দশমিক ৫ মিলিমিটার। বাকি বডি থেকে শুরু করে সাস্পেনশন ও হুইল আর্মার এবং ডিজিটাল যন্ত্রাংশ সব অন্য ৩ মডেলের মতোই।
মোটর বাইক রাইডারদের নিরাপত্তার জন্য সেফটি গিয়ার
শেষাংশ
বিভিন্ন ধরনের বাইক রাইডারদের পছন্দগুলোর এক অভাবনীয় সন্নিবেশ ঘটেছে রয়্যাল এনফিল্ড ৩৫০ সিসির চারটি মডেলে। তন্মধ্যে ‘ক্লাসিক’ শক্তিশালী যান্ত্রিক সজ্জার সঙ্গে দিচ্ছে পুরোনো ধাঁচের বৈশিষ্ট্য ফিরে পাওয়ার নস্টালজিয়া। ‘বুলেট’ তার অভূতপূর্ব ডিজাইন দিয়ে ইতোমধ্যেই দৃষ্টি কেড়েছে স্টাইল সচেতন ব্যক্তিদের। ঢাকার মতো জনাকীর্ণ শহরের জন্য একচেটিয়া অবস্থানে রয়েছে হাল্কা ওজনের প্রযুক্তি-বান্ধব ‘হান্টার’। ‘মিটিওর’-এর আরামদায়ক ও নিরাপদ দীর্ঘ ভ্রমণের ফিচারগুলো অনায়াসেই যেকোনো বাইকপ্রেমীর মন জয় করে নিতে সক্ষম।
উপরন্তু, ক্লাসিক, বুলেট, হান্টার বা মিটিওর; পছন্দ যেটাই হোক না কেন, তা দেশের রাস্তায় বাইক রাইডিং অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করবে।
সেকেন্ডহ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি
১ মাস আগে
মোটর বাইক রাইডারদের নিরাপত্তার জন্য সেফটি গিয়ার
নিরাপত্তা কোনো অভিজ্ঞতা বা যানবাহনের ধরনের উপর নির্ভর করে না। বিশেষ করে মোটর বাইক ক্রয়ের পর নিরাপত্তার জন্য অবধারিত বিষয় রাইডিং সেফটি গিয়ারে বিনিয়োগ করাটা অতিরঞ্জিত কোন ব্যাপার বা বিলাসিতা নয়। ব্যয়বহুল হওয়ার জন্য অনেকেই এতে বিনিয়োগ করতে গড়িমসি করেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে, একজন মানুষের জীবনের চেয়ে সেফটি গিয়ারের মূল্য বেশি নয়। তাই মোটর বাইক রাইডারদের উদ্দেশ্য করে আজকের ফিচার সেফটি গিয়ার নিয়ে।
বাইক রাইডিং-এর সময় সেফটি গিয়ারের প্রয়োজনীয়তা
শরীরের বিভিন্ন অংশের সুরক্ষা
প্রতিটি সেফটি গিয়ার শরীরের নির্দিষ্ট অংশ রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র একটি হেলমেট শরীরের হাড়ভাঙা বা অন্যান্য আঘাত থেকে নিস্তারের নিশ্চয়তা দিতে পারে না।
হেলমেট ছাড়াও সেফটি গিয়ারের মধ্যে আছে হাঁটু এবং কনুই গার্ড, চেস্ট আর্মার, রিফ্লেক্টর, জ্যাকেট, বুট এবং গ্লাভ্স।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ড ডে ট্যুর: একদিনে ঘুরে আসুন চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মহামায়া লেক
দীর্ঘমেয়াদে অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ বাঁচাতে
মোটর বাইকের দুর্ঘটনা অন্য যে কোন যানবাহনের দুর্ঘটনা থেকে অত্যধিক গুরুতর হয়ে থাকে। তাছাড়া কখনো ছোট্ট একটি আঘাতও বড় কোন বিপদের কারণ হয়ে দাড়ায়। আর সেই বিপদ সামাল দিতে পাহাড়সম খরচের সম্মুখীন হতে হয়। অনেকেই মোটর বাইক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালের খরচ চালাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সঠিক সেফটি গিয়ারে বিনিয়োগ এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা ও খরচ থেকে বাঁচাতে পারে।
কিভাবে সেফটি গিয়ার মোটর বাইক রাইডারের দেহকে রক্ষা করে
মাথা বাঁচাতে হেলমেট
হেলমেট পরা কখনই একজন রাইডারের জন্য ঐচ্ছিক বিষয় নয়। হেলমেট ছাড়া মাথা সমূহ বিপদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায় বিধায় গুরুতর আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। মানবদেহে মাথা সবচেয়ে সংবেদনশীল আর এ কারণেই বিচারব্যবস্থায় হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো বে-আইনি।
আরও পড়ুন: সাজেক ভ্রমণ: ঘুরে আসুন মেঘে ঢাকা স্বর্গে
দুই পায়ের নিরাপত্তায় বুট
যে কোন দুর্ঘটনায় পা সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থানে থাকে। মোটর বাইক ভালোভাবে চালানোর সময় ভারসাম্যের জন্য দুই পায়ের ভূমিকা অপরিসীম। পাশাপাশি আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষার নিমিত্তে পূর্ব সতর্কতায়ও পায়ের ব্যবহার করেন মোটর বাইক রাইডাররা। তাই পা থাকতে হবে যথাসম্ভব সুরক্ষিত বন্ধনীতে। আর এর জন্য আছে বিশেষভাবে ডিজাইন করা বুট। এগুলো পড়ে যাওয়া বা অন্য রাইডারের সাথে সংঘর্ষের সময় পা-এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
হাড়ভাঙা ও ক্ষত-বিক্ষত হওয়া থেকে বাঁচাতে পোষাক
মোটরসাইকেল-এর দুর্ঘটনাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে আরোহীর হাড় ভাঙ্গা ও শরীর ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার দিকে ধাবিত করে। মোটর বাইক রাইডারদের জন্য বিশেষ ভাবে বানানো জ্যাকেট, চেস্ট গার্ড, প্যান্ট এই দুর্ঘটনার গুরুতর প্রভাব থেকে রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন: শীতের মৌসুমে বাইক রাইড করার প্রয়োজনীয় টিপস
২ বছর আগে