২৩ নাবিক
অবশেষে ফিরলেন এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক, বন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা
অবশেষে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৫ দিন পর চট্টগ্রামে ফিরলেন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক। এদিকে ৬৫ দিন পর ২৩ নাবিক দেশে ফিরে আসায় পরিবার ও স্বজনদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো।
এছাড়া নাবিকদের উৎকণ্ঠা কেটে যেতেই উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা আর পরিবারের স্বজনরা বরণ করে নেন তাদের। মুক্ত হওয়া নাবিকদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকাল পৌনে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল-১ (এনসিটি) নম্বরে এসে পৌঁছান নাবিকরা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছেছে এমভি আবদুল্লাহ
নাবিকদের বহন করা জাহাজ এমভি জাহান মনি–৩ কে ছোট ছোট তিনটি টাগবোট পাহারা দিয়ে জেটিতে নিয়ে আসে। জাহাজটি জেটিতে ভিড়লে সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুপুর ২টার দিকে কুতুবদিয়া উপকূল থেকে তাদের নিয়ে রওনা দিয়েছিল জাহাজটি। এনসিটি-১ জেটিতে আগে থেকেই জড়ো হয়েছিলেন নাবিকদের স্বজনরা।
জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাতসহ কর্মকর্তারা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা মুক্ত নাবিকদের বরণে সেখানে সমবেত হয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দর নাবিকদের নিয়ে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নাবিকদের ফেরার খবর পেয়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিকের সংবর্ধনায় হাজির হন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নাবিকদের সংবর্ধনা দেওয়া হয় বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক।
এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ছোট ভাই আবদুর নূর খান আসিফ বলেন, আমার বড় ভাই ফিরে আসায় আমরা যে কতটা খুশি, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। পরিবারের সবাই এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম।
কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজের নাবিকরা বিকাল ৪টার দিকে চট্টগ্রামে ফিরেছেন। তাদের বরণ করে নিতে পরিবারের অনেকেই বন্দরে এসেছেন। সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান শেষে নাবিকেরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাবেন। তাদের বাড়ি ফিরতে যেন কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: এমভি আব্দুল্লাহ’র নাবিকদের বরণ করে নিতে অধীর অপেক্ষায় স্বজনরা
৭ মাস আগে
২৩ নাবিকসহ জাহাজ ফেরত আনার লক্ষ্যে আমরা অবিচল: এমএইউ সচিব খুরশেদ
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিককে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই প্রথম লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মারিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।
তিনি বলেন, ‘এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ বাংলাদেশি নাবিক সুস্থ আছেন। তাদেরসহ জাহাজ ফেরত আনাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য থেকে আমরা বিচ্যুত হব না।’
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।
জলদস্যুরা মুক্তিপণ চেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে মুক্তিপণের কথা প্রকাশিত হয়ে থাকলে তা কল্পিত। আমাদের কাছে এখনো কোনো মুক্তিপণ তারা চায়নি, মুক্তিপণের ব্যাপারে কোনো যোগাযোগও করেনি।’
আরও পড়ুন: সোমালিয়ার হাবিয়ো বন্দরে নোঙর করেছে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ
খুরশেদ আলম বলেন, ‘জাহাজ চলাচলের নানা ঝুঁকির রুট থাকে। আমাদের এই জাহাজ উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রুট দিয়ে যায়নি। তারপরও জলদস্যুরা অপেক্ষায়ই ছিল বা এ নিয়ে ভিন্নমত আছে।’
তিনি বলেন, ‘জলদস্যুরা জাহাজটির দখল নিয়ে সোমালিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) ভোর নাগাদ সোমালিয়ার কাছাকাছি তারা নোঙর করেছে। জলদস্যুরা আমাদের সাথে এখনও কোনো যোগাযোগ করেনি। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা খবর রাখছি, জলদস্যুদের প্রায় ৬০ জন জাহাজে অবস্থান নিয়েছে এবং বাংলাদেশি ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন।’
সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের আগের অভিজ্ঞতা আছে। জাহান মনি নামের একটি জাহাজ ২০১০ সালে এমন ঘটনার মুখে পড়েছিল। ১০০ দিনের মাথায় সব নবিকসহ জাহাজটি আমরা ফেরত আনতে পেরেছিলাম। এছাড়া মালয়েশিয়ান জাহাজ 'আল-বেদো' যখন জলদস্যুদের কবলে পড়ে তখন সাতজন বাংলাদেশি, দুইজন ইরানি, তিনজন ভারতীয়, দুইজন পাকিস্তানি ও পাঁচজন শ্রীলঙ্কান নাবিক ছিল কিন্তু মালয়েশিয়ার মালিকপক্ষ কোনো দায়িত্ব না নেওয়ায় জাহাজটি আটকে থাকে, আড়াই বছর পর ডুবে যায়, কিছু প্রাণহানিও ঘটে।’
রিয়ার অ্যাডমিরাল বলেন, ‘আমরা পুরো সময় জুড়েই কাজ করেছি এবং প্রায় তিন বছর চার মাস পরে আমরা নেগোসিয়েশন করে কেনিয়ার সেনাবাহিনী দিয়ে বাংলাদেশি নাবিকদের অক্ষত উদ্ধার করে এনেছি।’
সরকারের তৎপরতা নিয়ে তিনি বলেন, আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টায় আছি। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাহাজের মালিকসহ সব পক্ষের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে।
সামুদ্রিক ইউনিট সচিব বলেন, “আমরা এখনও জানি না জলদস্যুদের কী দাবি-দাওয়া। আমরা যদি জানতে পারি, তখন হয়তো কৌশলগতভাবেই গণমাধ্যমকে পুরোপুরি জানাতে পারব না। তবে যেভাবে 'জাহান মনি'কে আনা হয়েছে, যেভাবে 'আল-বেদো' থেকে নাবিকদের অক্ষত আনা হয়েছে সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। 'জাহান মনি' আনতে একশ’ দিন লেগেছে, আর মালয়েশিয়ান জাহাজ থেকে সাতজন ক্রু ফেরত আনতে লেগেছে তিন বছর চার মাস। কাজেই সময় একটা ব্যাপার।’
আরও পড়ুন: দুপুরে সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছাতে পারে ‘এমভি আব্দুল্লাহ’
৯ মাস আগে