যকৃত
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে মস্তিষ্ক। শারীর-বৃত্তীয়ভাবে শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোর উপর আধিপত্য থাকে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের। পেশী কার্যকলাপের ধারা বজায় রাখা এবং হরমোন নিঃসরণের মতো কার্যকলাপ নির্ভর করে এর সক্রিয়তার উপর। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এর কার্যকারিতার অসামঞ্জস্যতা বিরূপ প্রভাব ফেলে সারা শরীরের ওপর। এমনি একটি স্বাস্থ্য জটিলতা মস্তিষ্কে রক্তপাত, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে মৃত্যু ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগের নিরসণকল্পেই আজকের স্বাস্থ্য বিষয়ক নিবন্ধ। চলুন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণ ও লক্ষণসহ এর প্রতিরোধের উপায়গুলো জেনে নেই।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ কী
ট্রমা বা বাহ্যিক ভয়াবহ কোন আঘাতের কারণে রক্ত প্যারেনকাইমা বা মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোকে উদ্দীপিত করে। এতে করে টিস্যুগুলো ফুলে যায়। এই অবস্থার নাম সেরিব্রাল এডিমা। এ সময় রক্ত জমাট বেধে হেমাটোমার সৃষ্টি করে। ফলে কাছাকাছি অন্যান্য টিস্যুতে চাপ ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় রক্ত প্রবাহ হ্রাস করে। এতে করে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
মাথার খুলির মধ্যে সংঘটিত এই ঘটনাকে সামগ্রিক ভাবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসা শাস্ত্রে এটি ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ (আইসিএইচ), হেমোরেজিক স্ট্রোক বা ব্রেন হেমোরেজ নামে পরিচিত।
এই রক্তপাত মাথার খুলির ভেতরে বিভিন্ন স্থানে ঘটতে পারে। যেমন- মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে, মস্তিষ্ক ও একে ঘিরে আচ্ছাদিত ঝিল্লির মধ্যে অথবা ঝিল্লির স্তরগুলোর মধ্যে।
আরও পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
মস্তিষ্কে রক্তপাত কাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ
সেরিব্রাল রক্তপাত বিশেষ করে পুরুষ এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি ঘটে। আক্রান্তদের প্রায় ৪৪ শতাংশই এক মাসের মধ্যে মারা যায়। ৮৫ বা তদূর্ধ্ব বয়স্কদের আইসিএইচ হওয়ার সম্ভাবনা মধ্যবয়স্কদের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ গুণ বেশি। এছাড়া নিয়মিত ধূমপায়ীদেরও মস্তিষ্কেও এমন রক্তপাতের জন্য সহায়ক পরিবেশ বিরাজ করে।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণ
মাথায় ভয়াবহ আঘাত
৫০ বছরের কম বয়সীদের মস্তিষ্কে রক্তপাতের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল বাহ্যিক আঘাত। সাধারণত সড়ক দুর্ঘটনা, কোথাও পড়ে যাওয়া, খেলাধুলা সংক্রান্ত আঘাত, বা সহিংসতা বা হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ
সেরিব্রাল হেমোরেজের ক্ষেত্রে আরও একটি শ্রেণী অনেক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। আর সেটি হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ সম্পন্ন ব্যক্তিদের শ্রেণী। অনেক সময় নিয়ে এই অবস্থার উদ্ভব হলেও এটি রক্তনালীর দেয়ালকে ভয়ঙ্কর ভাবে দুর্বল করে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
রক্ত জমাট বাধা
মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাধলে রক্তনালী ভেঙ্গে ভেতরটা রক্তে ভরে গিয়ে ধমনী ব্লক করে দেয়। ফলে রক্ত মস্তিষ্কের বাইরে বেরতে না পেরে রক্তের কোষগুলো ভেঙে মস্তিষ্কের টিস্যুতে ছড়িয়ে পরে। ফলে পর্যাপ্ত অস্কিজেন না পাওয়ায় মস্তিষ্কের টিস্যুগুলো ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
অ্যানিউরিজম
এটি মূলত রক্তনালীর প্রাচীরের একটি সমস্যা, যেটি হলে প্রাচীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে যায়। এই ফোলা অংশ ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তপাত ঘটতে পারে, যেটি সরাসরি স্ট্রোকের দিকে নিয়ে যায়।
আর্টেরিওভেনাস ম্যালফর্মেশন্স
রক্তনালীর এই অবস্থাটি মূলত ধমনী এবং শিরাগুলোর মধ্যকার সংযোগস্থলগুলোতে চিড় ধরাকে বোঝায়। রক্তনালী যতই দুর্বল হতে থাকে মস্তিষ্কের মধ্যে ও তার চারপাশে ততই এই সমস্যাটি বাড়তে থাকে।
অ্যামাইলয়েড অ্যাঞ্জিওপ্যাথি
এটি মস্তিষ্কের রক্তনালীর দেওয়ালগুলোতে অ্যামাইলয়েড-বিটা প্রোটিন জমা হওয়াকে নির্দেশ করে। এই অস্বাভাবিকতা কখনও কখনও বার্ধক্য এবং উচ্চ রক্তচাপের ফলস্বরূপ ঘটে থাকে। এটি চূড়ান্ত অবস্থায় যাওয়ার আগে অনেক ছোট ছোট হেমোরেজের কারণ হতে পারে, যেগুলোর অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির অলক্ষ্যেই থেকে যায়।
আরও পড়ুন: জিমে অনুশীলনের সময় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায়
রক্ত-সংক্রান্ত ব্যাধি
হিমোফিলিয়া এবং সিকেল সেল অ্যানিমিয়া রোগের কারণে রক্তের প্লেটলেট এবং জমাট বাঁধার মাত্রা হ্রাস পায়। রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়াটাও আইসিএইচ-এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
যকৃতের রোগ
যখন যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন বিষক্রিয়া রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষগুলোতে থাকে অ্যামোনিয়া এবং ম্যাঙ্গানিজ, যেগুলো স্নায়ু কোষের ক্ষতি করতে পারে।
ব্রেন টিউমার
এটি একটি ক্যান্সার যা কতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে নির্দেশ করে। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু থাকে সুপ্ত, যেগুলোকে ম্যালিগন্যান্ট বলা হয়ে থাকে। টিউমার মস্তিষ্কে শুরু হতে পারে, আবার শরীরের অন্য কোথাও শুরু হয়ে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
৭ মাস আগে