অসহনীয় গরম
অতিরিক্ত দাবদাহে যেভাবে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখবেন
গ্রীষ্মকালসহ অন্যান্য উষ্ণ ঋতুগুলোতে বহুতল আবাসিক এলাকায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে একদম উপরের তলার বাসিন্দারা। রোদের প্রখর তাপ সরাসরি ঘরের ছাদে পড়ায় তাপ জমে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা অস্বস্তিকরভাবে বেড়ে যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার ধারাবাহিকতায় চলমান গরমের অবিরাম প্রতাপ থেকে ছাদকে রক্ষা করা এখন আর ঐচ্ছিক বিষয় নেই। বাইরের তাপ থেকে গা বাঁচিয়ে ঘরের ভেতর থাকার জন্য ছাদকে ঠান্ডা রাখা এখন আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চলুন, তীব্র গরম আবহাওয়াতে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
গ্রীষ্ম ও অন্যান্য উষ্ণ মৌসুমে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখার ১০টি টিপ্স
ছায়াদানকারী উঁচু দেওয়াল বা নেট স্থাপন
খুব ঘন উপাদান সম্পন্ন কংক্রিটে তৈরি হওয়ায় ছাদের স্ল্যাবগুলো খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য তাপ ধরে রাখে। এই তাপ পরিবাহিত হয় নিচের ফ্ল্যাটগুলোর প্রতিটি কক্ষে। তাই স্ল্যাব পর্যন্ত যেন সূর্যালোক পৌঁছাতে না পারে, তার জন্য উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে ছাদে ছায়ার ব্যবস্থা করা। এর ফলে নিদেনপক্ষে ছায়াযুক্ত জায়গাগুলো আশেপাশের স্ল্যাবগুলো থেকে অনেক কম গরম থাকে।
এই ছায়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে ছাদের সীমানার ধার ঘেষে উঁচু দেয়াল বা নেটের মাধ্যমে। এই নেট বা দেওয়াল বিভিন্ন নকশা দিয়ে আকর্ষণীয় করা যায়। সুতরাং ছায়াদানকারী এই স্থাপনা শুধু তাপ নিয়ন্ত্রণই করে না, সেই সঙ্গে দালানের সৌন্দর্য্যও বৃদ্ধি করে। তবে এখানে খেয়াল দেওয়াল বা নেটে হালকা রঙ দেওয়া হচ্ছে কি না সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিৎ।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
ছাদে বাগান করা
বিভিন্ন ধরনের ফুল-ফল ও শাক-সবজির গাছ দিয়ে সাজানো বাগানে তৈরি হয় সবুজ ছাদ। এই সবুজ ছাদ নিচের ফ্ল্যাটকে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে ছায়া দেয়। উদ্ভিদগুলো নিজেদের খাবার প্রক্রিয়ার কাজে সূর্যের আলো শুষে নেওয়ার কারণে ছাদের পৃষ্ঠসহ আশেপাশের বায়ুর তাপমাত্রা উভয়ই হ্রাস পায়। এতে করে ছাদের আর্দ্রতা অপসারিত হয়ে ছাদ ও নিজের ঘরের পরিবেশ সহনীয় অবস্থায় থাকে।
৬ মাস আগে
অতিরিক্ত গরমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষার উপায়
বর্তমানে গরমের তীব্রতা অসহনীয় করে তুলেছে মানুষের জীবন। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের জন্য এই প্রতিকুল অবস্থা আশঙ্কাজনক। অত্যধিক ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় তরল বেরিয়ে যাওয়ার কারণে নানা ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়। আর এই ঝুঁকির মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে এই কম বয়সী শিক্ষার্থীরাই। তাই উষ্ণ আবহাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন যথাযথ পদক্ষেপের। উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। তাই চলুন, গরমের তীব্রতা থেকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
তীব্র গরমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের সুস্থ রাখার ১০টি উপায়
দিনের তীব্র গরমের সময় সূর্যালোক এড়িয়ে চলা
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অতিবেগুনি রশ্মি সবচেয়ে বেশি তীব্র থাকে। আর দিনের এই সময়টাতেই শিক্ষার্থীরা সাধারণত ক্লাস এবং স্কুল-পরবর্তী খেলাধুলার জন্য ঘরের বাইরে থাকে। তাই এই সময়টাতে শিক্ষার্থীদের বিচরণের জায়গাগুলোতে সর্বাত্মকভাবে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ-গাছালি ঘেরা প্রাকৃতিক ছায়া শোভিত স্থান সর্বোত্তম। তবে এর পাশাপাশি ছাউনির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। খেলাধুলার সময় ছাত্রছাত্রীরা যেন উন্মুক্ত জায়গায় চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সূর্যালোকের সংস্পর্শ এড়ানোর জন্য আরেকটি উত্তম উপায় হলো ছাত্রছাত্রীদের ইনডোর গেমের প্রতি আকৃষ্ট করা। এতে করে তাদের বিনোদনও হবে, একই সঙ্গে তাদের শরীরও ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচবে। এটি ছুটির দিনে ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আরও পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
গরমের জন্য আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা
শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়াসহ বিভিন্ন উপলক্ষে ঘরের বাইরে থাকার সময়ে হাল্কা বুনন, হাল্কা ও এক রঙের কাপড় পড়তে হবে।
হাতাকাটা শার্ট বা গেঞ্জি এবং হাফ প্যান্ট বা শর্টস এক্ষেত্রে উপযুক্ত মনে হতে পারে। কিন্তু কাপড়ের উপাদান এবং শিক্ষার্থীদের শরীরের কতটা অংশ উন্মুক্ত থাকছে সেদিকে কড়া নজর দেওয়া আবশ্যক।
এছাড়া হাতাকাটা বা শর্টসের ক্ষেত্রে কাপড় যদি অনেক মোটা বা ভারী হয়, তাহলে তা আরও গরম করে তুলতে পারে। উপরন্তু, রোদের সংস্পর্শে উন্মুক্ত হাত-পায়ের চামড়া পুড়ে যেতে পারে। তাই শরীর যতটা ঢেকে রাখা যায় ততই ভালো। অর্থাৎ লম্বা হাতা এবং লম্বা প্যান্ট বেছে নেওয়া উত্তম। আর কাপড় ঢিলেঢালা ফিটিং ও হাল্কা রঙের হলে তা বাতাস চলাচলের জন্য উপযোগী হয়।
আরও পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
সানস্ক্রিন ব্যবহার করা
সকালে স্কুলে যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে বাচ্চাদের শরীরের উন্মুক্ত অংশে সানস্ক্রিন লাগিয়ে দিতে হবে। কিশোর বয়সীদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানকে সানস্ক্রিন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ছোট থেকে অভ্যাস করানো হলে কিশোর বয়সীরা নিজেরাই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে শিখে যাবে। এই অভ্যাস কার্যকর করার জন্য প্রতিবার ঘর্মাক্ত হওয়ার দুই ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়া স্কুলের খেলাধুলার পর বাচ্চাদের সানস্ক্রিন প্রয়োগ করতে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
একটি গল্ফ বলের মাপের সমান বা প্রায় ২৮ গ্রাম সানস্ক্রিন পুরো শরীরে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে শরীরের যে অংশগুলো সাধারণত এড়িয়ে যায় সেগুলোতে বেশি নজর দেওয়া উচিত। যেমন- কানের পিছনে, ঘাড়ে, হাত ও পায়ের উল্টো পিঠের অংশগুলো।
ছাতা ব্যবহার করা
স্কুলে যাওয়া ও আসা নিয়ে প্রতিদিনই বাচ্চাদের একটি উল্লেখযোগ্য সময় রোদের আলোয় কাটাতে হয়। এই সময়টিতে শুধুমাত্র সানস্ক্রিনের উপর নির্ভর করাটা যথেষ্ট নয়। সূর্যালোক প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরিধান ছাড়াও এ সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ছাতা ব্যবহার করা। খুব নান্দনিক এবং রঙচঙা নয়, এ ক্ষেত্রে খেয়াল দিতে হবে ছাতাটি রোদ থেকে কতটা ছায়া দিতে পারছে তার উপর। মুষলধারে বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে যেভাবে ছাতা ব্যবহার করা হয়, এক্ষেত্রেও একই কাজ করা উচিত। আর ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের এই অভ্যাস তৈরিতে আদর্শ হতে পারে পিতামাতা ও পরিবারের অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্করা।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
ঘরকে ঠান্ডা রাখা
গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে ঘরে থাকতে হলে সেই ঘরকেও রাখতে হবে তাপমুক্ত। কেননা বাইরে থেকে রোদের আলো ঘরে ঢুকে অথবা ঘরের দেয়াল রোদ শুষে নিয়ে ঘরকে উত্তপ্ত করে তোলে। এ অবস্থা থেকে শতভাগ মুক্তি না মিললেও সম্ভাব্য কার্যকর উপায়গুলো অবলম্বন করা যেতে পারে।
যেমন হলুদ এবং হ্যালোজেন বাল্বগুলো প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। তাই এগুলোর বদলে ব্যবহার করতে হবে এলইডি লাইট, যা ঘর ঠান্ডাও রাখে আবার বৈদ্যুতিক খরচের দিক থেকেও বেশ সাশ্রয়ী।
দিনের উত্তপ্ত সময়গুলোতে জানালার পর্দা টেনে দিতে হবে। জানালা বন্ধ রাখা হলে সূর্যালোকের ঘরের ভেতর ঢুকতে আরও একধাপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। ঠিক সন্ধ্যার দিকে পর্দা সরিয়ে জানালা খুলে দিলে বাইরের ঠান্ডা বাতাস ভেতরে প্রবেশ করবে। এতে করে দিনের বেলা বাইরের গরম বাতাস ভেতরে আসবে না। রাতভর ঘরের ভেতর জমা হওয়া ঠান্ডা বাতাস দিনের বেলা বাইরে যেতে পারবে না।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
৬ মাস আগে