সঞ্চয়পত্র কেনার পদ্ধতি
সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। সাধারণত সমাজে ব্যক্তির অবস্থানের ভিত্তিতে তারতম্য ঘটে বিনিয়োগের সম্ভাবনার। এর বাইরে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলে ঝুঁকি সহনশীলতা, আর্থিক লক্ষ্য এবং বাজার পরিস্থিতি। এগুলো দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তির আর্থিক স্থিতিশীলতার নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে যখন ঝুঁকি ও বাজার পরিস্থিতি যাচাইয়ের প্রসঙ্গ ওঠে, তখন প্রথমেই আসে সঞ্চয়পত্রের কথা। কেননা সুদের হার এবং নীতি নির্ধারকের বিবেচনায় এটি অন্যতম একটি দুশ্চিন্তামুক্ত বিনিয়োগের খাত। চলুন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ পদ্ধতির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সঞ্চয়পত্র কী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত এই বিনিয়োগ প্রকল্পের আরেক নাম সেভিংস ইন্সট্রুমেন্ট্স বা সেভিংস সার্টিফিকেট। এই সনদপত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে নির্ধারিত সময় পরপর আসে মুনাফা। আর নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সেই বিনিয়োগকৃত মূলধনটি পাওয়া যায়। এটি দেশের স্বল্প আয়ের জনসাধারণের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সঞ্চয়ের মাধ্যম। মূলত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বায়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, নারী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতাভুক্ত হন। এভাবে নির্ভরতা হ্রাসের পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্যও সঞ্চয়পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র
মেয়াদ এবং বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর ভিত্তি করে সরকার ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র জারি করে। এগুলো হলো:
১. পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
শিরোনামের মতই এই সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ ৫ বছর। এখানে সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে ব্যাক্তি পর্যায়ে এক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ, এবং যুগ্ম নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। প্রাতিষ্ঠানিক ঊর্দ্ধসীমা নেই।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
২. পরিবার সঞ্চয়পত্র
এখানে ৫ বছর মেয়াদে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে ব্যাক্তি পর্যায়ে শুধুমাত্র একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়।
৩. তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
এই সঞ্চয়পত্রে ৩ বছরের জন্য সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা রাখা যায়। এই মেয়াদে ব্যাক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ পরিমাণ এক নামে ৩০ লাখ টাকা এবং যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকা।
৪. পেনশনার সঞ্চয়পত্র
এখানে ৫ বছর মেয়াদে বিনিয়োগের সর্বনিম্ন পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে শুধুমাত্র এক নামে সর্বোচ্চ পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা। তবে তা অবশ্যই গ্র্যাচুইটি এবং সর্বশেষ প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে হতে হবে।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী মুদ্রা
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ
৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের কোনো উর্ধ্বসীমা নেই। অপরদিকে দুই প্রকল্পে এই বিনিয়োগের নিম্নসীমা ব্যক্তি পর্যায়ের মতই যথাক্রমে ১০ টাকা এবং ১ লাখ টাকা।
সমন্বিত সঞ্চয়পত্র
এখানে বিনিয়োগটি হয় ৩-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, এবং ৫-বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র- এই তিনটির বিপরীতে একসঙ্গে। এই বিনিয়োগের উর্ধ্বসীমা এক নামে ৫০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে ১ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুবিধা
- আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচলিত যে কোনো বিনিয়োগের মাধ্যমগুলোর তুলনায় সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি।
- সরকারি কর্তৃত্ব থাকায় এখানে ঝুঁকির পরিমাণ অন্যান্য বিনিয়োগের খাত থেকে অনেক কম। মেয়াদপূর্তীতে সুদ-আসল সহজেই পাওয়া যায়। সুদের হার বেশি হওয়ায় মোট আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি আসে।
- সঞ্চয়পত্র ইস্যুকারী অফিসগুলোর যে কোনোটিতে নিবন্ধন করার পর প্রয়োজনে সে সঞ্চয়পত্র সেই অফিসের অন্য শাখায় স্থানান্তর করা যায়।
আরও পড়ুন: সমতা স্কিম: স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম-এ রেজিস্ট্রেশন করবেন
সঞ্চয়পত্র কেনার যোগ্যতা
ব্যক্তিপর্যায়ে প্রতিটি সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হচ্ছে- একক বা যুগ্ম যে নামেই হোক না কেন, তাকে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। এছাড়া আরও যে যোগ্যতাগুলো প্রয়োজন্য তা হচ্ছে:
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
সঞ্চয়পত্র সাধারণত যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়। তবে কৃষিভিত্তিক শিল্পের আয়ের ১০ শতাংশ অর্থ এবং কমকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে এই সঞ্চয়পত্র কেনা যেতে পারে।
পরিবার সঞ্চয়পত্র
- ন্যূনতম ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের যে কোনো বাংলাদেশি নারী
- কমপক্ষে ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক
- শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই একজন প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। এখানে প্রতিবন্ধীতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সত্যায়িত হওয়া আবশ্যক।
- নাবালক বা অপ্রাপ্তবয়স্ক অথবা তার পক্ষে পক্ষে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে না।
আরও পড়ুন: স্বর্ণ বনাম হীরা: কোন বিনিয়োগটি বেশি লাভজনক?
৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
যে সকল প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে বা শুধুমাত্র প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে মুনাফার অর্থ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় হবে- এই মর্মে সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নকৃত হওয়া আবশ্যক।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র
- সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-সরকারী, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী
- সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মাননীয় বিচারপতি
- সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য
উপরোক্ত তিন ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাপ্রাপ্ত স্বামী/স্ত্রী/সন্তানগণ
সঞ্চয়পত্র কেনার পদ্ধতি
যে কোনো ধরনের সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য প্রথমে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে। অতঃপর যথাযথভাবে পূরণকৃত আবেদন ফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে সঞ্চয়পত্র ইস্যূকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। চলুন, প্রথমে জরুরি নথিপত্রের ব্যাপারে পরিপূর্ণ ধারণ নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: জাতীয় পেনশন স্কিম: প্রবাসীদের আকৃষ্ট করছে না প্রবাস স্কিম
সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ব্যক্তিপর্যায়ে বিনিয়োগের জন্য
- প্রার্থী ও নমিনি প্রত্যেকের ২ কপি করে পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি (নমিনির ছবি ক্রেতা সত্যায়িত করবেন)
- আবেদনকারী ও নমিনির প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (নমিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে তার জন্মনিবন্ধন এবং সত্যায়নকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি)
- বিনিয়োগের পরিমাণ ১ লাখ টাকার বেশি হলে প্রার্থীর (যুগ্মভাবে কেনার ক্ষেত্রে সকল প্রার্থীদের) ই-টিন সনদের কপি
- প্রার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের এমআইসিআর (ম্যাগনেটিক ইন্ক ক্যারেক্টার রিকগনিশন) চেক ও এমআইসিআর সাদা চেকের কপি (যুগ্ম নামের ক্ষেত্রে যুগ্মভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক)
- পেনশনার সঞ্চয়পত্রের জন্য নিয়োগকর্তার পূরণকৃত কর্মকর্তা/কর্মচারির প্রাপ্ত গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড সনদপত্র এবং পিপিও (পেনশন পেমেন্ট অর্ডার)/ইপিপিও (ইলেক্ট্রনিক পেনশন পেমেন্ট অর্ডার)-এর ফটোকপি অথবা নিয়োগকর্তার অনুমোদনকৃত পিএসপি-২ ফরম।
আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে নয়, সুদ কমেছে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের: অর্থ মন্ত্রণালয়
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিনিয়োগের জন্য
- প্রভিডেন্ট ফান্ড ও কৃষি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে,
- কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে ইস্যু করা স্বীকৃতপত্র কিংবা সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন
- প্রভিডেন্ট ফান্ডের নামে ই-টিন
- পরিচালনা পরিষদ সভার কার্যবিবরণী
- লেনদেন পরিচালনাকারীদের স্বাক্ষর সংক্রান্ত প্রত্যয়ন
- প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যাংক হিসাব বিবরণী এবং উক্ত হিসাবের এমআইসিআর চেক এবং এমআইসিআর সাদা চেকের কপি
- প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে
- সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা জেলা কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র
- পরিচালনা পরিষদের সভার কার্যবিবরণী
- লেনদেন পরিচালনাকারীদের স্বাক্ষর সংক্রান্ত প্রত্যয়ন
- প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বিবরণী এবং উক্ত হিসাবের এমআইসিআর চেক এবং এমআইসিআর সাদা চেকের কপি।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহের সেই শিশুকে ১৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের
সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য আবেদন
সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের জন্যই একটি নির্দিষ্ট আবেদন ফর্ম পূরণ করে স্বাক্ষর করতে হয়। ফর্মটি সঞ্চয়পত্র ইস্যুকারী যে কোনো সরকারি অফিস থেকে বিনামূল্যেই দেওয়া হয়। এছাড়া জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েব সাইট (https://nationalsavings.gov.bd/) থেকেও ডাউনলোড করা যাবে।
যে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সঞ্চয়পত্রের আবেদন ফর্ম প্রদান, জমা, এবং সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হয়, সেগুলো হলো:
- জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনস্থ সকল সঞ্চয় ব্যুরো কার্যালয়
- সদরঘাট ও ময়মনসিংহ অফিস ব্যতীত বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কার্যালয়
- ডাকঘর
- শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ব্যতীত সকল তফসিলি ব্যাংক
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ সংক্রান্ত সঞ্চয়পত্র কেবল জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনস্থ সঞ্চয় ব্যুরোগুলোতে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: প্রবাস স্কিম: প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে রেজিস্ট্রেশন করবেন
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সময় যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ
বিনিয়োগের উদ্দেশ্য
প্রতিটি সঞ্চয়পত্র ১ বছর পূর্তির পূর্বে নগদায়ন করা হলে তথা ভেঙ্গে ফেললে কোনো মুনাফা পাওয়া যায় না। শুধু বিনিয়োগকৃত মূল টাকাটি ফেরত দেওয়া হয়।
শুধুমাত্র ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে পুনঃবিনিয়োগের জন্য পরবর্তীতে অতিরিক্ত ১ মেয়াদ নেওয়া যায়।
বিনিয়োগের পূর্বেই এই দুটি বিষয় ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে যারা জরুরি নগদ অর্থের প্রয়োজন অনুভব করে থাকেন, তাদের সঞ্চয়পত্র কেনার ব্যাপারে একটু সুক্ষভাবে চিন্তা করা উচিৎ।
অপরদিকে বিনিয়োগ উৎসাহীদের যথাযথ হিসেব করে নিতে হবে যে, ঠিক কত সময় পরে কাঙ্ক্ষিত রিটার্নটি তিনি আশা করছেন।
আয়করের উপর প্রভাব
সকল প্রকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে তারপর প্রদান করা হয়। এর সুবাদেই আয়কর জমা দানের সময় মোট আয় থেকে কর রেয়াত পাওয়া যায়।
কিন্তু গত ২০২৩ সাল থেকে এই কর রেয়াত তুলে নেওয়া হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়ার সময় সেই ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হবে। সেই সঙ্গে আয়কর দেওয়ার সময় অন্যান্য আয়ের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা যোগ করে মোট আয়ের উপর কর আরোপ হবে। ফলশ্রুতিতে কর রেয়াত তো থাকছেই না, বরং গুণতে হবে বাড়তি কর। এমন পরিস্থিতি সঞ্চয়পত্রের সুবিধাগুলোর ব্যাপারে নতুন করে ভাবার প্রয়াস যোগায়।
আরও পড়ুন: সুরক্ষা স্কিম: স্ব-নিযুক্ত বা অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে রেজিস্ট্রেশন করবেন
মূল্যস্ফীতি
বাজারের সব থেকে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। এর পরিণতিতে ব্যাংকিং অবস্থায় ভারসাম্যহীনতার মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতি অস্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যায়।
২০২০ সাল থেকে ব্যাংকঋণের সুদ ছিলো সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। কিন্তু ২০২২ সালে একদিকে শুরু হয় ডলার-সংকট, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি উঠে যায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে ব্যাংকগুলোতে সুদের হারে শুরু হয় ভারসাম্যহীনতা। এ রকম অসঙ্গতিতে সঞ্চয়পত্রের উপযুক্ততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
শেষাংশ
বাজারে উপলব্ধ আর্থিক নিরাপত্তামুলক পণ্যগুলোর মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ তুলনামুলক ভাবে ঝুঁকিহীন উপায়। মূল্যস্ফীতির বিচারে সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই খাত অধিকাংশ সময় নিজের ইতিবাচক অবস্থান ধরে রাখে। তবে বাজারের আকস্মিক অযাচিত পরিবর্তন ভিন্ন মেয়াদ ও সরকারি বিধিমালা নির্বিশেষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সঞ্চয়পত্রের উপর।
যেখানে বিলুপ্তি ঘটতে পারে এর ঐতিহ্যবাহী সুবিধাগুলোর। এমতাবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে মূখ্য বিষয় হয়ে ওঠে বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে গবেষণা করা। কারণ দিন শেষে বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল চাবিকাঠি ব্যক্তির হাতে।
আরও পড়ুন: প্রগতি স্কিম: বেসরকারি চাকরীজীবীরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম-এ রেজিস্ট্রেশন করবেন
৬ মাস আগে