স্মরণকাল
‘৫০ বছরে ফটিকছড়িতে এমন বন্যা দেখিনি’
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের ফটিকছড়িবাসী। বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলাটি। দুই দিন ধরে পানির নিচে শত শত বাড়িঘর, ফসলি জমি, হাটবাজার ও দোকানপাট। এছাড়া চরম দুর্ভোগে আছেন উপজেলার ২ লাখ মানুষ।
এদিকে বন্যাকবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে 'দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহায়তা সমন্বয় সেল' গঠন
জানা গেছে, টানা বর্ষণে হালদা নদী, সর্তা খাল, ধুরুং খাল, ফটিকছড়ি খাল, মন্দাকিনী খাল, গজারিয়া খাল, তেলপারি খাল, কুতুবছড়ি খাল, লেলাং খালসহ বিভিন্ন খালের বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে আছে চট্টগ্রাম-খাগগাছড়ি, গহিরা-হেঁয়াকো, নাজিরহাট-কাজিরহাট, কাটিরহাট-সমিতিরহাট-আজাদীবাজারসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক। এছাড়া তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর রোপা আমন, পুকুর, মাছের প্রজেক্ট, পোল্টি ফার্ম।
অন্যদিকে হাটবাজারে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বিবিরহাট বাজার, নারায়ণহাট বাজার, মির্জাহাট বাজার, দাঁতমারা শান্তিরহাট বাজারে পানি ওঠায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে অনেককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া হালদা, ধুরুং সর্তাসহ সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার পানি থেকে রক্ষা পেতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ গৃহছাড়া হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গেছেন। কোনো কোনো এলাকায় গ্রামীণ অবকাঠামো নষ্ট হয়েছে। তবে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে বন্যার পানি সীমিত আকারে কমতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় ১৩ জনের মৃত্যু, ১১ জেলায় ৪৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
বন্যার্তরা জানান, গত ৫০ বছরেও ফটিকছড়িবাসী যেসব এলাকায় পানি উঠতে দেখেননি, সেসব এলাকা অন্তত ৫ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে আছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও পুরোপুরি নামতে কত সময় লাগে সেটাই দেখার অপেক্ষা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানিতে উপজেলার পূর্ব সুয়াবিল, পশ্চিম সুয়াবিল, নাজিরহাট পৌরসভা, পাইন্দং, ভুজপুর, হারুয়ালছড়ি, শোভনছড়ি, সমিতির হাট, বাগানবাজার, হেঁয়াকো, নারায়ণহাট ও সুন্দরপুর এলাকার অন্তত লক্ষাধিক মানুষের বাড়িঘর ডুবে আছে।
সুয়াবিল ইউনিয়নের নাসির উদ্দিন বলেন, ‘৫০ বছরের ইতিহাসে আমরা এমন বন্যা দেখিনি। দুই দিন ধরে বাড়িঘর ৮ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে আছে। শত শত পরিবার উঁচু স্থান ও বহুতল ভবনে আশ্রয় নিয়েছে।’
নাজিরহাট পৌরসভার বাসিন্দা দুলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।’
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে ফটিকছড়ি। গত বৃহস্পতিবার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার পর থেকে উপজেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যাকবলিতদের উদ্ধার, নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। আজকের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি। পানি নেমে গেলেও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে ২ হাজার জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী
২ মাস আগে
চীনের গুয়াংডংয়ে বন্যায় ৯ জনের মৃত্যু, সতর্কতা জারি
চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশের গ্রামীণ এলাকায় বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যায় ৯ জন মারা গেছেন এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৬ জন।
বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় শুক্রবার (২১ জুন) সকালে অন্যান্য স্থানেও সতর্কতা জারি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, গুয়াংডংয়ের মেইঝৌ শহরের মেক্সিয়ান জেলায় ৪ জন নিহত ও ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। মেইঝৌ প্রদেশের জিয়াওলিং কাউন্টিতে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
সিসিটিভি জানিয়েছে, রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে দেশটিতে। এতে গাছ উপড়ে পড়াসহ ভেঙে পড়েছে বাড়িঘর। ভারী বৃষ্টিপাতের সময় মেক্সিয়ান জেলার একটি প্রধান সংযোগ সড়ক পুরোপুরি ধসে পড়েছে। মেইঝৌয়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সোংইয়ুয়ান নদীতে সবচেয়ে বড় মাত্রার বন্যা দেখা গেছে বলে টেলিভিশন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-উ. কোরিয়ার মধ্যে সই হওয়া চুক্তির জানা-অজানা তথ্য
এই বন্যার ফলে জিয়াওলিং কাউন্টিতে আনুমানিক ৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ইউয়ান (৫০২ মিলিয়ন ডলার) এবং মেক্সিয়ান জেলায় ১ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ইউয়ান (১৪৬ মিলিয়ন ডলার) সরাসরি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র(এনএমসি) দক্ষিণের বেশ কয়েকটি প্রদেশ এবং উত্তরের কয়েকটি পৃথক জায়গায় সতর্কতা জারি করেছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য অংশেও আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত এবং চরম আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হবে বলেও উল্লেখ করেছে এনএমসি।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, মধ্য চীনের হেনান ও আনহুই প্রদেশের পাশাপাশি উপকূলের জিয়াংসু প্রদেশ এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় গুইঝৌ প্রদেশে শিলাবৃষ্টি ও শক্তিশালী বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টির কারণে ২৭ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়েছে চীন
দেশটির জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, হেনান, আনহুই ও হুবেই প্রদেশে একদিনে ৫০ মিলিমিটার থেকে ৮০ মিলিমিটার (১ দশমিক ৯ থেকে ৩ দশমিক ১৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।
গত সপ্তাহে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ফুজিয়ান ও গুয়াংজি প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে ভূমিধস ও বন্যা দেখা দেয়। গুয়াংজিতে বৃষ্টিতে ভরে ওঠা নদীতে পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: চীনের পূর্বাঞ্চলে বন্যায় নিহত ২, নিখোঁজ ৫
৪ মাস আগে