স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের ফটিকছড়িবাসী। বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলাটি। দুই দিন ধরে পানির নিচে শত শত বাড়িঘর, ফসলি জমি, হাটবাজার ও দোকানপাট। এছাড়া চরম দুর্ভোগে আছেন উপজেলার ২ লাখ মানুষ।
এদিকে বন্যাকবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে 'দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহায়তা সমন্বয় সেল' গঠন
জানা গেছে, টানা বর্ষণে হালদা নদী, সর্তা খাল, ধুরুং খাল, ফটিকছড়ি খাল, মন্দাকিনী খাল, গজারিয়া খাল, তেলপারি খাল, কুতুবছড়ি খাল, লেলাং খালসহ বিভিন্ন খালের বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে আছে চট্টগ্রাম-খাগগাছড়ি, গহিরা-হেঁয়াকো, নাজিরহাট-কাজিরহাট, কাটিরহাট-সমিতিরহাট-আজাদীবাজারসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক। এছাড়া তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর রোপা আমন, পুকুর, মাছের প্রজেক্ট, পোল্টি ফার্ম।
অন্যদিকে হাটবাজারে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বিবিরহাট বাজার, নারায়ণহাট বাজার, মির্জাহাট বাজার, দাঁতমারা শান্তিরহাট বাজারে পানি ওঠায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে অনেককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া হালদা, ধুরুং সর্তাসহ সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার পানি থেকে রক্ষা পেতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ গৃহছাড়া হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গেছেন। কোনো কোনো এলাকায় গ্রামীণ অবকাঠামো নষ্ট হয়েছে। তবে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে বন্যার পানি সীমিত আকারে কমতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় ১৩ জনের মৃত্যু, ১১ জেলায় ৪৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
বন্যার্তরা জানান, গত ৫০ বছরেও ফটিকছড়িবাসী যেসব এলাকায় পানি উঠতে দেখেননি, সেসব এলাকা অন্তত ৫ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে আছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও পুরোপুরি নামতে কত সময় লাগে সেটাই দেখার অপেক্ষা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানিতে উপজেলার পূর্ব সুয়াবিল, পশ্চিম সুয়াবিল, নাজিরহাট পৌরসভা, পাইন্দং, ভুজপুর, হারুয়ালছড়ি, শোভনছড়ি, সমিতির হাট, বাগানবাজার, হেঁয়াকো, নারায়ণহাট ও সুন্দরপুর এলাকার অন্তত লক্ষাধিক মানুষের বাড়িঘর ডুবে আছে।
সুয়াবিল ইউনিয়নের নাসির উদ্দিন বলেন, ‘৫০ বছরের ইতিহাসে আমরা এমন বন্যা দেখিনি। দুই দিন ধরে বাড়িঘর ৮ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে আছে। শত শত পরিবার উঁচু স্থান ও বহুতল ভবনে আশ্রয় নিয়েছে।’
নাজিরহাট পৌরসভার বাসিন্দা দুলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।’
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে ফটিকছড়ি। গত বৃহস্পতিবার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার পর থেকে উপজেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যাকবলিতদের উদ্ধার, নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। আজকের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি। পানি নেমে গেলেও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে ২ হাজার জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী