বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতি
অক্সফোর্ড কনফারেন্সে বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতির ওপর বিশেষ আলোকপাত
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইদ বিজনেস স্কুলে ‘টেকসই উন্নয়ন প্রচার’ প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে গত ৫ ও ৬ আগস্ট ‘ত্রয়োদশ রিস্ট্রাকচারিং অব দ্য গ্লোবাল ইকোনমি (আরওজিই-২০২৪)’ আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মর্যাদাপূর্ণ এই অ্যাকাডেমিক সম্মেলনে ২৫টি বেশি দেশের শীর্ষস্থানীয় অ্যাকাডেমিক, ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকসহ ১২০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
সেন্টার ফর বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ (সিবিইআর), যুক্তরাজ্য ও মিশরের ফিউচার ইউনিভার্সিটি আয়োজিত আরওজিই-২০২৪ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক পরিবেশে ধারণা বিনিময় ও নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। এছাড়া সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল- বাংলাদেশের ওপর একটি বিশেষ অধিবেশন, যেখানে টেকসই সমুদ্র অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (ভিসি) রিয়ার অ্যাডমিরাল ড. মোহাম্মদ মুসা ‘টেকসই সমুদ্র অর্থনীতি: সমুদ্র অর্থনীতির রোডম্যাপে বাংলাদেশের যাত্রা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশের উদ্ভাবনী পদ্ধতি ও এর সামুদ্রিক সম্পদগুলো দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহারের ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করাই ছিল এই অধিবেশনের উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দেবে জাতিসংঘ: লুইস
অধিবেশনে বাংলাদেশ কীভাবে সামুদ্রিক সম্পদগুলো দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করছে ও তার উদ্ভাবনী পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ অভিলাষ নিয়ে আলোচনা করেন ড. মোহাম্মদ মুসা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো একটি সামুদ্রিক জাতির জন্য এর সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে হবে। প্রায় সব দেশই টেকসই উন্নয়ন ও জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জনে মহাসাগর বিজ্ঞানকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা বাংলাদেশে রয়েছে অপরিসীম প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাংলাদেশের মানুষের জন্য জীবিকা এবং জীবনের মূল উৎস হিসেবে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। আজ যখন বিশ্ব টেকসই উন্নয়নের আবশ্যকতার সঙ্গে লড়াই করছে, তখন বাংলাদেশ তার বিশাল সামুদ্রিক সম্ভাবনাকে সমুদ্র অর্থনীতির মাধ্যমে কাজে লাগানোর দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতি মৎস্য, শিপিং, পর্যটন, নবায়নযোগ্য শক্তি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করে।’
ড. মোহাম্মদ মুসার চিন্তাশীল উপস্থাপনা সম্মেলনে উপস্থিতদের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। তারা বৈশ্বিক সামুদ্রিক শিল্পে টেকসই চর্চা একীভূত করতে তার দূরদর্শী পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
সামুদ্রিক টেকসইতায় গবেষণা ও উদ্ভাবন উন্নয়নে ড. মোহাম্মদ মুসার নেতৃত্ব ও প্রতিশ্রুতির জন্য তাকে সেন্টার ফর বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ থেকে সম্মানজনক ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- ইউনিভার্সিটি অব সিনসিনাটি থেকে প্রফেসর মেরিয়েন ডব্লিউ লুইস, যুক্তরাজ্যের সেন্টার অফ স্টাডি ফর অর্গানাইজড ক্রাইম থেকে প্রফেসর ডেভিড এম জে গ্রেভস, ইউনিভার্সিটি অব বাকিংহাম থেকে ড. ডেভিড হলিম্যান, ভারতের গুরুগ্রাম আইআইএলএম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. পদ্মাকালী ব্যানার্জী, কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রফেসর ড. গৈরিক দাস, নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে প্রফেসর পেলেগ্রিনো ম্যানফ্রা, যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে প্রফেসর লর্ডস ক্যাসানোভা, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট জর্জিয়া (ইউডব্লিউজি) থেকে বিজনেস রিজেন্টস প্রফেসর ও প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস প্রফেসর বেহেরুজ এন সেথনাসহ বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক স্কলাররা।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘে সামাজিক সুরক্ষায় বাংলাদেশের পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত
তাদের বৈচিত্র্যময় বিশেষজ্ঞতা বিশ্বব্যাপী ব্যবসা, কর্পোরেট গভর্নেন্স, সামুদ্রিক দিক ও বৈশ্বিকীকরণের হুমকি নিয়ে আলোচনা চালাবে।
কনফারেন্সের প্রেসিডেন্ট ও সেন্টার ফর বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চের (সিবিইআর) নির্বাহী চেয়ার ড. পি আর দত্ত বিশ্বব্যাপী গবেষণা এবং পেশাদারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও ক্যারিয়ার উন্নয়নের সুযোগ তৈরির বিষয়ে কনফারেন্সের ভূমিকা জোর দেন।
সম্মেলনের সভাপতি ও মিশরের ফিউচার ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এবাদা সারহান বলেন, ‘গ্লোবাল ইকোনমির পুনর্গঠন বিষয়ে ত্রয়োদশ আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বের সমালোচনামূলক চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক ও শিল্প নেতাদের একত্রিত করে ত্রয়োদশ আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যা আরও টেকসই ও সমানভাবে গ্লোবাল ইকোনমি গড়ে তোলার জন্য সুযোগ দেয়।’
সম্মেলনের চেয়ার ও মিশরের ফিউচার ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব কমার্স অ্যান্ড বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পোস্টগ্রাজুয়েট স্টাডিজ ও গবেষণার অ্যাক্টিং ভাইস প্রেসিডেন্ট, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার অধ্যাপক প্রফেসর ঘাদির বদর বলেন, ‘এখানে অনুষ্ঠিত আলোচনা কেবল অ্যাকাডেমিক চিন্তাভাবনাকেই প্রভাবিত করে না, বরং সরাসরি নীতিমালা ও অনুশীলনের উন্নয়নকে প্রভাবিত করে, যা আগামী বছরগুলিতে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে চালিত করবে।’
এই সম্মেলনটি ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করছে, যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও পেশাদাররা সমসাময়িক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে গ্লোবাল ইকোনমির পুনর্গঠন নিয়ে ধারণা বিনিময় করেন।
দুই দিনের এই অনুষ্ঠানে আলোচিত বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অংশগ্রহণকারীদের নতুন অন্তর্দৃষ্টি ও বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি হয়ে আর্থিক সমস্যা সমাধানে সম্মিলিতভাবে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে সম্মেলনের ইতি টানা হয়।
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ড কনফারেন্সে বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির উপর বিশেষ আলোকপাত
৩ মাস আগে