শ্বেতপত্র
১৫ বছরে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি: শ্বেতপত্র
বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা বিষয়ক শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের (গ্যাস, কয়লা) অব্যবহৃত হয়ে পড়লে গত ১৫ বছরে মোট অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ৩৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার পর অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন শ্বেতপত্র কমিটি সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১০-১১ থেকে ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত বেসরকারি খাতে মোট সক্ষমতা/ভাড়া পরিশোধের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।
পুরো সিস্টেমের সামগ্রিক প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর (ব্যবহৃত পূর্ণ ক্ষমতার শতাংশ) গত পাঁচ বছরে ৪২ শতাংশ থেকে ৪৬ শতাংশের মধ্যে রয়েছে, যা একটি অত্যন্ত অদক্ষ সিস্টেমকেই তুলে ধরে।
এতে বলা হয়, রক্ষণাবেক্ষণ কমানো, তাৎক্ষণিক ক্ষমতা হ্রাস এবং জ্বালানির সম্পূর্ণ সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি ৬৫ শতাংশের ব্যবহৃত পূর্ণ ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব।
মোট ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি এইচএসডি-ভিত্তিক আইপিপি প্ল্যান্টকে ২০১৮ সালে ৫ বছরের জন্য চুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার রেফারেন্স ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ছিল মাসে প্রায় ২০ ডলার/কিলোওয়াট।
আরও পড়ুন: শ্বেতপত্র: দুই বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় গুরুত্বারোপ করলেন দেবপ্রিয়
কিন্তু চুক্তির পুরো সময়কালে এসব কেন্দ্রের কোনোটিই গড়ে সক্ষমতার ১০ শতাংশের বেশি সচল হয়নি। যার ফলে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই এক হাজার মেগাওয়াটের জন্য ৯০ শতাংশ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
এই প্ল্যান্টগুলো প্রাথমিকভাবে চরম পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হত যা এইচএফও প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও সমালোচনা করা হয়েছে যে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা ও গোপন লেনদেন করা হয়েছে। এর ফলে সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মতো সমঝোতার দিকে ধাবিত করেছে।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিশেষ বিধান আইনের আওতায় দেওয়া চুক্তি অনুযায়ী এইচএসডি ও এইচএফও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ যথাক্রমে ১৫ হাজার ৫৫১ কোটি ও ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা পেয়েছে।
গত পাঁচ বছরে এইচএসডি এবং এইচএফও প্ল্যান্টের গড় প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর ছিল যথাক্রমে মাত্র ৩২ শতাংশ এবং ৯ দশমিক ২২ শতাংশ। যদি ন্যূনতম ৬৫ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর অর্জন করা যেত, তবে বিশেষ বিধান আইনের আওতায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পেত।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে ধ্বংস করেছে: শ্বেতপত্র
২০১০-১১ অর্থবছরে যেসব রেন্টাল প্ল্যান্ট দেওয়া হয়। সেগুলো ১৫ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ডের বিপরীতে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা অর্জন করে, যা ১০ হাজার কোটি টাকার কম নয়।
ক্যাপাসিটি ও এবং জ্বালানি চুক্তি
জ্বালানি চুক্তিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হোক বা না হোক মূল্য পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক (পে-অ্যাজ-ইউ-ইউজ) রাখা হয়েছে। এছাড়া ক্যাপাসিটি চুক্তিগুলো কখনও কখনও মাসিক ডেটা প্যাকেজগুলোর সঙ্গে মেলানো হয়। এতে মোট ব্যবহার নির্বিশেষে, পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) আওতায় গ্যারান্টিযুক্ত অর্থ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
এ ধরনের মূল্য পরিশোধের বাধ্যবাধকতার সুযোগ নিয়ে নজিরবিহীন দুর্নীতির কারণে ক্যাপাসিটি মার্কেটে অতিরিক্ত পরিমাণে দেওয়ার মাধ্যমে ভাসানো হয়েছে।
তেল ভিত্তিক ভাড়া প্ল্যান্টগুলোর জন্য গড় বার্ষিক প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর বা সক্ষমতা ব্যবহার ৫০ শতাংশের নিচে রয়েছে।
এই প্ল্যান্টগুলো সাধারণত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বোঝানো হয়। অব্যবহৃত বেসলোড প্ল্যান্ট হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যার ফলে ব্যয়বহুল পরিচালনা এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়, যা সরকারের আর্থিক খাতে বোঝা তৈরি করে।
আরও পড়ুন: হাসিনার আমলে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে: শ্বেতপত্র
২ সপ্তাহ আগে
শ্বেতপত্র: দুই বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় গুরুত্বারোপ করলেন দেবপ্রিয়
বাংলাদেশের প্রতি বৈশ্বিক আস্থা বাড়াতে দুই বছরের মধ্যমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে 'বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা বিষয়ক শ্বেতপত্র' প্রকাশ করা হয়।
ড. দেবপ্রিয় স্বচ্ছতা এবং কার্যকর সংস্কারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আস্থা ফেরানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
আগামী জাতীয় বাজেট প্রণয়নকে সামনে রেখে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি সতর্ক করে বলেন, 'আগামী ছয় মাস গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন: দুর্নীতি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে ধ্বংস করেছে: শ্বেতপত্র
দেবপ্রিয় বলেন, 'উদ্দেশ্যকে বাস্তব অগ্রগতিতে রূপান্তরিত করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।’
ডাটা কমিশন গঠন
ড. দেবপ্রিয় দেশের পরিসংখ্যানগত তথ্য পদ্ধতিগতভাবে মূল্যায়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ডাটা কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন। এ ধরনের একটি কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান তথ্যের ওপর নির্ভর করার পরামর্শ দেন তিনি। এটি ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের সমস্ত মানদণ্ড পূরণ করে।
এলডিসি গ্রুপে বাংলাদেশের থাকার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ করতে ব্যর্থ হই, তাহলে তা জাতির অগ্রগতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। সমালোচকরা যুক্তি দেখাতে পারেন যে, একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি না হওয়ায় দুই বছরের মধ্যে দেশ ব্যর্থ হবে।’
সুপারিশগুলো ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব দিলেও দেবপ্রিয় সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ‘সরকার আমাদের পরামর্শগুলো গ্রহণ করবে কিনা তা কেবল সময়ই বলে দেবে।’ একই সঙ্গে প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলোর অনিশ্চিত গতিপথ তুলে ধরে মন্তব্যও করেন তিনি।
সংস্কার পরামর্শ
ব্যাপক গবেষণা এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে শ্বেতপত্রটি সমালোচনা এবং রোডম্যাপ উভয়ই হিসাবে কাজ করে। এটি বাংলাদেশের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার মতো পদ্ধতিগত বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে।
দেবপ্রিয় বলেন, ‘নথিটি শুধু সমালোচনামূলক নয়, বরং পথপ্রদর্শকও। এটি নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এখন সময় এসেছে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট সংস্কারগুলো করার।’
আরও পড়ুন: হাসিনার আমলে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে: শ্বেতপত্র
২ সপ্তাহ আগে
দুর্নীতি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে ধ্বংস করেছে: শ্বেতপত্র
বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। এসব দুর্নীতির কারণে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করেছে এবং বার্ষিক অবৈধ অর্থ ব্যয় হয়েছে গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক সাহায্য ও বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণের দ্বিগুণেরও বেশি।
রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন কমিটি শ্বেতপত্র উপস্থাপন করে। এই তদন্ত প্রতিবেদনে বিভিন্ন খাতে পদ্ধতিগত জালিয়াতি, অব্যবস্থাপনা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
খাতভিত্তিক দুর্নীতি
১. ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত
ব্যাংকিং খাতকে সবেচেয়ে দুর্নীতিবিধ্বস্ত খাত হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ঋণ কেলেঙ্কারি, অবৈধ অধিগ্রহণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঋণদানে জর্জরিত এ খাত।
প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে ১৪টি ঢাকা মেট্রো সিস্টেম বা ২৪টি পদ্মা সেতুর মতো একাধিক বড় আকারের অবকাঠামো নির্মাণের ব্যয়ের সমান সম্পদ নষ্ট হয়েছে।
রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ঋণ এবং হাইপ্রোফাইল খেলাপি আস্থা কমিয়ে দিয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ তহবিলগুলোকে উৎপাদনশীল বিনিয়োগ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
২. ভৌত অবকাঠামো
সরকারি পরিকাঠামো প্রকল্পগুলো অতিরিক্ত ব্যয়, তহবিলের অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতিমূলক নিয়োগে জর্জরিত।
প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়, সরকারি প্রকল্পগুলোতে গড়ে ৭০ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে দুর্নীতির কারণে। পাঁচ বছরেরও বেশি দেরি করেছে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে। গত ১৫ বছরে ঘুষ ও সম্প্রসারিত বাজেটের মাধ্যমে ১৪ বিলিয়ন থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। এর ফলে অবকাঠামোগত বিনিয়োগের রূপান্তরমূলক সম্ভাবনা কমে গেছে।
৩. জ্বালানি ও বিদ্যুৎ
রাজনৈতিক ও আর্থিক লাভের জন্য জ্বালানি চুক্তি ও বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে কারসাজি করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিযোগিতাহীন দরপত্র প্রক্রিয়া এবং প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো, সম্পদ পাচার এবং পদ্ধতিগত অদক্ষতা সৃষ্টি জ্বালানি সরবরাহে বাধা দেয়।
৪. শ্রম অভিবাসন
গত এক দশকে অনিয়ন্ত্রিত নিয়োগ ও অবৈধ হুন্ডি লেনদেনের মাধ্যমে অভিবাসী শ্রমিকদের ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। এটি ঢাকা এমআরটি-৬ প্রকল্প নির্মাণের ব্যয়ের চেয়ে চারগুণ বেশি। এ কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সম্ভ হয়নি।
৫. সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী
প্রতিবেদনে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে পদ্ধতিগত অদক্ষতার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এ খাতে ৭৩ শতাংশ সুবিধাভোগীকে দরিদ্র নয় বলে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এভাবে আর্থিকভাবে দুর্বল লাখ লাখ ব্যক্তিকে সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
৬. আইসিটি খাত
আইসিটি খাতের প্রযুক্তিগত নতুনত্ব এটিকে অপারেশনাল অদক্ষতা এবং দুর্নীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। জোটবদ্ধ হয়ে দুর্নীতি এবং অতিরিক্ত ক্রয় খরচের ঘটনা এই খাতের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
কমিটি চমকপ্রদ পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে:
অবৈধ আর্থিক বহিঃপ্রবাহ: ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বার্ষিক গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বৈদেশিক সাহায্য ও এফডিআইয়ের পরিমাণের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
সরকারি বিনিয়োগ: উন্নয়ন প্রকল্পের ৩০ শতাংশ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। যার ফলে ক্ষতি হয়েছে ১.৬১-২.৮ লাখ কোটি টাকা।
বিকৃত সরবরাহ শৃঙ্খল: উৎপাদন ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে কারসাজির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারগুলো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। সেখানে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী লাভবান হচ্ছে, অথচ ভোক্তারা এর ভার বহন করতে বাধ্য হচ্ছে।
দুর্নীতির বহিঃপ্রকাশ
এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
ব্যাংকিং ঋণ কেলেঙ্কারি: অপব্যবহার ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত খেলাপি।
বর্ধিত ও অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যয়: তহবিল পাচার করতে পদ্ধতিগত খরচ বাড়ানো।
জমির অপব্যবহার: রাজনৈতিকভাবে দুর্বল জমির মালিকদের লক্ষ্য করে জোরপূর্বক অধিগ্রহণ চর্চা।
ঘুষ ও স্বজনপ্রীতি: প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও জনসেবায় বিস্তৃত।
জরুরি সংস্কার প্রয়োজন
শ্বেতপত্রে সুশাসন ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা পুনরুদ্ধারের জন্য পদ্ধতিগত সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি মোকাবিলার জন্য জবাবদিহি ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী আইনি কাঠামো প্রয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
রবিবার প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনৈতিক স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে চিহ্নিত দুর্নীতির মাত্রা নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২ সপ্তাহ আগে
হাসিনার আমলে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে: শ্বেতপত্র
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়নে গঠিত কমিটির তিন মাসের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করে কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
কমিটি জানায়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও ভয়ঙ্কর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো।
যুগান্তকারী এই কাজের জন্য কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত।’
‘এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর যে অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর দশায় আমরা পেয়েছি, তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। জাতি এই নথি থেকে উপকৃত হবে।’
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘অর্থনীতির শ্বেতপত্র’ কমিটির প্রতিবেদন জমা
তিনি বলেন, ‘আমাদের গরীব মানুষের রক্ত পানি করা টাকা যেভাবে তারা লুণ্ঠন করেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। দুঃখের বিষয় হলো, তারা প্রকাশ্যে এই লুটপাট চালিয়েছে। আমাদের বেশিরভাগ অংশই এর মোকাবিলা করার সাহস করতে পারেনি। পতিত স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ের রাজত্ব এতটাই ছিল যে বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোও এই লুণ্ঠনের ঘটনায় অনেকাংশে নীরব ছিল।’
এ সময় অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটি আমরা যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়েও গভীর। এই ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে- কীভাবে ক্রোনি পুঁজিবাদ (চামচা পুঁজিবাদ) অলিগার্কদের (রাজনৈতিক প্রভাবশালী) জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে।’
কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন ডলার বা ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
পরীক্ষা করা সাতটি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে, জমির দাম বেশি দেখিয়ে ও কেনার ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধিত করে পরে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
আরও পড়ুন: শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি দুর্নীতির বিষয়গুলো তুলে ধরবে, অপরাধীদের ধরবে না: ড. দেবপ্রিয়
তিনি বলেন, ‘ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।’
অর্থ পাচারে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে বিচারকাজ শুরুর পরামর্শও দেন তিনি।
কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে এবং এর ৪০ শতাংশ অর্থ আমলারা লুটপাট করেছে।’
কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবু ইউসুফ জানান, বিগত শাসনামলে কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ ও স্বাস্থ্য বাজেট তিনগুণ করা যেতে পারত।
কমিটির আরেক সদস্য এম. তামিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর ১০ শতাংশও যদি অবৈধ লেনদেন ধরা হয়, তাহলে তার পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন সাথী, সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: ই-মেইল-ফেসবুক-লিংকডইনের মাধ্যমে পরামর্শ ও সুপারিশ আহ্বান শ্বেতপত্র কমিটির
২ সপ্তাহ আগে
দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াদের শ্বেতপত্রের দাবি ফারুকের
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তাদের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক।
তিনি আরও বলেন, 'যারা দেশ ছেড়ে গেছে বিশেষ করে শত মায়ের বুক খালি করে কীভাবে ভারতে পালিয়ে যেতে পেরেছে সেই ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি হঠাৎ করে ভারত থেকে দেশে ফেরার ইচ্ছা জানিয়েছে সে কথা তুলে ধরেন ফারুক।
আরও পড়ুন: হিন্দুদের নিপীড়নের ঘটনাগুলোর বিচারের প্রতিশ্রুতি বিএনপির
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেভাবে ভারতে পালিয়ে গেছেন সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ঢোকা আপনার জন্য এত সহজ হবে না। সীমান্ত বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের অধীনে বিজিবি কঠোরভাবে সুরক্ষিত করে রেখেছে, আওয়ামী লীগ নয়।
সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ফারুক আরও অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার সহায়তায় ভারত বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বছরের পর বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করে ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং রাতে আর ভোট হবে না। এই আন্দোলন বৃথা যাবে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি এক মানববন্ধনের আয়োজন করে।
এই মানববন্ধনে ফারুক বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছিল সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনার জন্য, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের অধীনে নয়।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় যেখানে দেশের জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন দেশের মানুষের চাওয়া ড. ইউনূসের সরকার যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।
বিগত সরকারের আমলে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৪০ লাখ মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘জনগণ এখন প্রশ্ন করছে, রাষ্ট্রপতির নির্দেশ অনুযায়ী কেন এই ৪০ লাখ মামলা এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি।’
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের রোডম্যাপ ও নতুন ইসি চায় বিএনপি
২ মাস আগে
অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়নে ১০ সদস্যের প্যানেল অনুমোদন প্রধান উপদেষ্টার
বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি প্যানেল গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্যানেলের নির্দিষ্ট সদস্যদের নাম প্রকাশ না করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সচিবালয়ের একটি সূত্র।
এসডিজি বিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন এই প্যানেলকে ৯০ দিনের মধ্যে শ্বেতপত্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: চীনের সঙ্গে সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে: উপদেষ্টা
এই নথিটিতে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন এবং স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের সময় বাংলাদেশ যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে তা মোকাবিলার লক্ষ্যে কৌশলগত সুপারিশগুলোর রূপরেখা তুলে ধরা হবে।
শ্বেতপত্রটি বেশ কয়েকটি মূল ক্ষেত্রগুলোতে গুরুত্ব দেবে
সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা: অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ, বিনিয়োগ এবং ভর্তুকিসহ সরকারি ব্যয় এবং বাজেট ঘাটতি অর্থায়ন পরীক্ষা করা।
মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা: উৎপাদন, সরকারি সংগ্রহ এবং খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়া মূল্যায়ন।
বাহ্যিক ভারসাম্য: রপ্তানি ও আমদানি গতিশীলতা, রেমিট্যান্স প্রবাহ, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বৈদেশিক ঋণের মতো বিষয়গুলোর মূল্যায়ন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি: জ্বালানি খাতে চাহিদা, সরবরাহ, মূল্য, ব্যয় এবং ক্রয় চুক্তি বিশ্লেষণ।
বেসরকারি খাত: ঋণ, বিদ্যুৎ, সংযোগ এবং সরবরাহের সুযোগ পর্যালোচনা করা।
কর্মসংস্থান: আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মজুরি কাঠামো এবং যুব কর্মসংস্থান সমস্যাসহ দেশীয় এবং বিদেশে উভয় কর্মসংস্থানের শর্তগুলোর বিষয়ে তদন্ত করা।
কমিটি সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের সাচিবিক সহায়তা নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন থেকে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করবে।
আরও পড়ুন: বানভাসিদের সহায়তার আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখরা এগিয়ে এসেছেন: ধর্ম উপদেষ্টা
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনকে যে কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
৩ মাস আগে
দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে শ্বেতপত্র প্রণয়নের সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত প্রায় দেড় দশক বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক যেসব চ্যালেঞ্জে নিপতিত হয়েছে তা তুলে ধরা হবে এই শ্বেতপত্রে।
বিগত সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থ-পাচার এবং অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশি- বিদেশি ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি কার্যক্রমের কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে।
অর্থ বিভাগের সূত্রে পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, পতনকালে শেখ হাসিনা সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত যে স্থিতি ছিল, তা বাংলাদেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান। অন্যদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর আদায়ের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা না করে দেশি ও বিদেশি দুই ধরনের ঋণের প্রতি বিগত সরকার ঝুঁকেছিল।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির তুলনায় কর সংগ্রহকে ১৪ শতাংশে নামিয়ে লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গত ছয় বছরে এ অনুপাত ১১ শতাংশ থেকে উল্টো ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার এটি একটি দিক মাত্র। সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি, অর্থ-পাচারের অবাধ সুযোগ বাজার সিন্ডিকেট ইত্যাদির ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি, তা ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বলা যেতে পারে যে, বিগত সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মুখ থুবরে পড়ে।
দ্বিতীয়ত বিগত সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট বাংলাদেশের অর্থনীতির নজিরবিহীন নাজুক পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে সুসংহতকরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার মধ্যে প্রধানতম হলো-
অর্থনীতি পুনরায় সচল করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিরসনে কাঠামোগত সংস্কার সাধন:
ক. নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি;
খ. দুর্নীতি দূরীকরণ
গ. ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা
ঘ. কর ও শুল্ক নীতির সংস্কার
ঙ. বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ইত্যাদি।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রারম্ভেই সরকারের হাতে থাকা প্রয়োজন।
এ লক্ষে ‘প্রিপারেশন অব এ হোয়াইট পেপার অন দ্য স্টেট অব দ্য ইকোনোমি’ শিরোনামে একটি ধারণাপত্র (সিমোয়েপ্ট নোয়াস) নমিতে সংরক্ষিত রয়েছে। ধারণাপত্রে বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্য-চিত্র সমৃদ্ধ একটি 'শ্বেপত্র' প্রস্তুতের ধারণা দেওয়া হয়েছে।
ধারণাপত্রে বলা হয়েছ, প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলপত পদক্ষেপ গ্রহণ, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং এলডিসি হতে উত্তরণে করণীয় বিষয়ে প্রতিফলন থাকবে। শ্বেতপত্রটি প্রণয়নের সময় বিভিন্ন অংশীজনের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও মতবিনিময় করা হবে মর্মে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে প্রধানত নিম্নোক্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোকপাত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
১. পাবলিক ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্ট ডোমেস্টিক রিসোর্স- সরকারি ব্যয় (পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট, এডিআইপি সাবসিডিস অ্যান্ড ডেবিট), ফাইন্যান্সিং অব বুলগেট ডিফিসিট।
২। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন- মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন।
৩। ফরেন ফাইন্যান্স ফ্লো অ্যান্ড ডেবিট - এক্সটার্নাল ব্যালেন্স এক্সপোর্ট, ইমপোর্ট, রেমিট্যান্স, এফডিআই, ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ।
৪। জ্বালানি ও বিদ্যুতের চাহিদা- সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণ, খরচ ও ক্রয় চুক্তি।
৫। বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ- ঋণ, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও লজিস্টিকস।
৬। যুব কর্মসংস্থান- দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মজুরি।
প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রটি প্রস্তুতের জন্য দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শক্রমে তিনি কমিটির প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন। কমিটির কাঠামো নিম্নরূপ হতে পারে।
ক) কমিটির সদস্যগণ অবৈতনিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
খ) পরিকল্পনা কমিশন কমপ্লেক্সের যথোপযুক্ত কোন ভবনকে কমিটির দপ্তর হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
গ) পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করতে পারে,
ঘ) সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর বা সংস্থা প্রস্তাবিত কমিটির চাহিদানুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সকল ধরণের সহযোগিতা দেবে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি' নামে প্রস্তাবিত কমিটি আগামী ২০ (বিশ) দিনের মধ্যে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিকট হস্তান্তর করবেন।
সূত্র: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
৩ মাস আগে