বন্যাদুর্গত
বন্যাদুর্গত ২ হাজার ৯১৪ জনকে উদ্ধার করেছে বিজিবি
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা সেবায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বৃহস্পতিবার বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ পর্যন্ত ২ হাজার ৯১৪ জনকে উদ্ধার, ৪০ হাজার ৭১৬টি পরিবারকে ত্রাণ এবং ৬ হাজার ৯৭৮ জনকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে বিজিবি।
বুধবার (২৮ আগস্ট) ৬ হাজার ৫২০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে বিজিবি। পাশাপাশি ১ হাজার ৮১২ জনকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দিয়েছে।
বন্যাদুর্গত ফেনী সদরে ১৫০টি, ফুলগাজীতে ১ হাজার ৭৭৭টি, পরশুরামে ১ হাজার ১৭৫টি, ছাগলনাইয়ায় ৮১৫টি, সোনাগাজীতে ৫০০টি ও দাগনভূঁঞায় ৮৮০টি পরিবারসহ ফেনী জেলায় মোট ৫ হাজার ২৯৭টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
অন্যদিকে, কুমিল্লার আদর্শনগরে ৬৫০টি এবং বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ায় ৫২০টিসহ কুমিল্লা জেলার ১ হাজার ১৭০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে বিজিবি।
এছাড়াও রাঙ্গামাটির বরকলে বন্যাদুর্গত ৩০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি বিজিবির মেডিকেল ক্যাম্পেইনে বন্যাদুর্গত কুমিল্লার বুড়িচংয়ের দুর্গম বাকশীমুল হাই স্কুল এলাকার ৫০০ জন; ফেনীর জিনারহাট পশ্চিম মধুগ্রাম এলাকার ৪৮৭ জন এবং নোয়াখালীর সেনবাগের চাঁদপুর আদর্শ বিদ্যালয় এলাকার ৮২৫ জনসহ মোট ১ হাজার ৮১২ জন রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পেয়েছে।
২ মাস আগে
বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কাজে ভলান্টিয়ারদের যা জানা জরুরি
গত এক সপ্তাহ ধরে চলমান বন্যার করাল গ্রাসে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল। এর মধ্যে সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করছে ফেনী, কুমিল্লা, এবং নোয়াখালীবাসীরা। সেনাবাহিনী ও নানা সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের পাশাপাশি দেশের তরুণ শিক্ষার্থীরাও ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে বিশাল পরিসরে। তবে হেলিকপ্টার ও স্পিড বোট ব্যবহারের পরেও সমন্বয়হীনতার কারণে এই সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক অসহায় মানুষ। একই সঙ্গে ভলান্টিয়ারদেরও পড়তে হচ্ছে নানাবিধ বিড়ম্বনা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে। এই প্রতিকূলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে তরুণ ভলান্টিয়ারদের কিছু ব্যাপারে দূরদৃষ্টি এবং বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন। চলুন, বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় ত্রাণ বিতরণ ও নিরাপদ উদ্ধার কাজে অপরিহার্য বিষয়গুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বন্যার্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী
তৈরি খাবার
বুক সমান পানিতে এ সময় প্রাণ বাঁচানোই দায় হয়ে পড়ে। বহু কষ্টে কোনো শুকনো জায়গায় আশ্রয় নেওয়া সম্ভব হলেও সেখানে রান্নার চুলা খোঁজা চিন্তারও অতীত। এ রকম অবস্থায় থাকা অসহায় মানুষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হচ্ছে তৈরি খাবার। তাই চাল, ডাল, তেল বা চিনির বদলে দেওয়া উচিত মুড়ি, চিড়া, খেজুর, রুটি, গুঁড় ও সিদ্ধ আলু। এছাড়া বিস্কুট, বাদাম, ওট্স বার, বা কেকের মতো মিষ্টি জাতীয় খাবার অনেকক্ষণ দেহে শক্তি সঞ্চয় করে রাখে। সম্ভব হলে খিচুড়ি ও ভাত ভর্তা নেওয়া যেতে পারে।
বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পানি-বিশোধন ট্যাবলেট
বন্যাকালে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব প্রকট আকার ধারণ করে। তাই উত্তম হচ্ছে বোতলজাত খাবার পানি নিয়ে যাওয়া। এর বিকল্প হিসেবে পানি-বিশোধন ট্যাবলেট বা ফিটকিরি নেওয়া যেতে পারে। এতে বিশেষ করে গৃহবন্দি মানুষেরা উপকৃত হবে, কেননা এর মাধ্যমে তারা নিজেরাই পানি বিশুদ্ধ করে নিতে পারবে।
শিশুর খাবার ও পরিধেয়
নবজাতক থেকে শুরু করে বাড়ন্ত বয়সিসহ প্রতিটি শিশুই প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে বন্যার সময়। তাই অন্যান্য খাবার ও পানির সঙ্গে শিশুদের খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এই তালিকায় থাকতে পারে গুঁড়া দুধ, সিরিয়াল, ল্যাক্টোজেন, সুজি, জুস, প্যাকেট স্যুপ ও চিপ্স। এছাড়া ভেজা বা ঠান্ডা থেকে রক্ষা এবং অপরিষ্কারজনিত স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে মুক্ত রাখতে শুকনো পোশাক ও প্যাম্পার্স নিতে হবে।
আরো পড়ুন: বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতা করার উপায়
ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জাম
পানিবাহিত রোগ, চর্মরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ঠাণ্ডা লাগা বা জ্বর, কাশি ও মাথা ব্যথার ওষুধগুলো সংগ্রহে রাখতে হবে। বিশেষ করে এ সময়ের সাধারণ ব্যাধি ডায়রিয়ার জন্য স্যালাইন সঙ্গে রাখা আবশ্যক। নানা ধরনের ক্ষত নিরাময়ের জন্য দরকার হবে ব্যান্ডেজ ও স্যাভ্লনের মতো প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম।
সাপ, মশা ও পোকামাকড় নিরোধক
প্লাবনের সময় সাপ, মশা ও পোকামাকড়ের উপদ্রব হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। সাপকে দূরে রাখার জন্য গাঁদা ফুল, কৃমি কাঠ, রসুন, লবঙ্গের তেল বা ভিনেগার নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। মশা ও পোকামাকড়ের জন্য কয়েল, স্প্রে, ত্বকে লাগানোর লোশন ও কিলার ব্যাট নিতে হবে।
এগুলো সরবরাহের সময় অবশ্যই ব্যবহারের শর্তগুলোও জানিয়ে দেওয়া জরুরি। কারণ স্প্রে নবজাতকদের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া এ সময় গ্যাস পাইপ লিক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এর মাঝে কয়েল জ্বালাতে গেলে তা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ হতে পারে।
ভেজা অবস্থা থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় পরিধেয়
একদিকে মাথার ওপর দিনভর বৃষ্টি, অন্যদিকে নিচে বুক সমান পানি। এ অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে ভেজা অবস্থায় থাকায় শরীর ব্যথা, ঠান্ডা, কাশি বা জ্বর দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় শুকনো পোশাক, ছাতা, ও রেইন কোট অনেক উপকারে আসতে পারে। এছাড়াও লাইফ জ্যাকেট এবং নারীদের জন্য স্যানিটারি প্যাড নেওয়া আবশ্যক। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং মোবাইল সংরক্ষণের জন্য ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ বা ফোল্ডার, প্লাস্টিকের জিপার কিংবা নিদেনপক্ষে পলিথিন দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই যেসব খাবার সংরক্ষণ করা জরুরি
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী
বন্যার দূষিত পানি ও আর্দ্র পরিবেশে জন্ম নেওয়া জীবাণু থেকে নানা ধরনের রোগ-ব্যাধির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দরকার হবে সাবান, ডিটারজেন্ট, ডিশ ওয়াশিং পাউডার বা ভীম বার।
ব্যাটারিসহ টর্চ লাইট
প্লাবনের আগ্রাসনে বিশাল এলাকা জুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। সন্ধ্যার নামার পরে সেসব এলাকা হয়ে ওঠে আরও বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে উপযুক্ত উপায় হচ্ছে ব্যাটারিচালিত টর্চ লাইট ব্যবহার। মোমবাতি বা দেওয়াশলাই না ব্যবহার করাই ভালো। কারণ এ সময় গ্যাস পাইপ লিকেরও ভয় থাকে।
পশুর খাদ্য
বন্যা-দুর্গতদের মধ্যে একটা বিরাট অংশের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায় গবাদি পশু। অনেকেই তাদের গৃহস্থালি গরু বা ছাগল নিয়ে পানির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এই পশুগুলোর জন্য আলাদাভাবে কিছু খাবার (যেমন ভুষি, লবণ, বা খৈল) সংগ্রহে রাখা উচিত।
এছাড়া রাস্তার কুকুর-বিড়ালও মানুষের মতোই বিপন্ন হয়ে আশ্রয় ও খাবারের সন্ধান করছে। তাই খাবার সরবরাহের সময় এদের দিকেও খেয়াল রাখা দরকার।
আরও পড়ুন: বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
২ মাস আগে
জন্মাষ্টমীর ব্যয় কমিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের
সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির কারণে এ বছর জন্মাষ্টমীর আয়োজনের ব্যয় কমিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ত্রাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় এসব কথা জানান।
সভায় কমিটির নেতারা জানান, এবার এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে জন্মাষ্টমী উদযাপিত হচ্ছে। প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে এই জনতার বিজয়কে কালিমালিপ্ত করতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তৎপর হয়ে ওঠে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। তাদের বাড়িঘর, মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নির্যাতিত হন নারীরা। অন্তত ৫২টি জেলায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। তারই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ হয় শাহবাগে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে ৭৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, সাবেক মন্ত্রী রমেশ কারাগারে
তারা বলেন, এই পরিস্থিতিতে অনেক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির রক্ষায় স্বতঃস্ফুর্তভাবে পাহারা দিয়েছেন। যারা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাদের মধ্যে আছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, সিপিবি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান নেতারা।
তারা আরও বলেন, অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ছুটে গিয়েছেন, পরে তার কার্যালয়ে পৃথক বৈঠকে তাদের সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন।
তবে নীরব চাঁদাবাজি এখন ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিযোগে করেছেন তারা। নির্ধারিত অর্থ না দিলে তাদের বাড়িঘর, জায়গাজমি থাকবে না বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দু শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এ পরিস্থিতির অবসান দাবি করেছেন তারা।
কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত ত্রাণ তহবিলের আহ্বায়ক করা হয়েছে আইনজীবী সুব্রত চৌধুরীকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে গোপাল দেবনাথ ও বিপ্লব দে কে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা।
মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল।
আর উপস্থিত ছিলেন- জয়ন্ত সেন দীপু, শ্রী কাজল দেবনাথ, মিলন কান্তি দত্ত, জে. এল. ভে․ মিক, ডি. এন. চ্যাটার্জী, মনীন্দ্র কুমার নাথ, তাপস কুমার পাল, শ্যামল কুমার রায়, কিশোর রঞ্জন মন্ডল।
আরও পড়ুন: অভিন্ন নদীর পানি ছাড়ার আগে আগাম বার্তা দেয়নি ভারত: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
যে যেভাবে পারেন বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান: জিএম কাদের
২ মাস আগে
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনীসহ বেশ কয়েকটি জেলা। বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছে সেসব এলাকার মানুষ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আগ্রহীদের প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের নিম্নোক্ত অ্যাকাউন্টে সহায়তার অর্থ পাঠাতে বলা হয়েছে-
▫️ হিসাবের নাম: 'প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল'
▫️ ব্যাংক: সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
▫️ হিসাব নম্বর: ০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩
এই তহবিলের অর্থ ত্রাণ ও কল্যাণ কাজে ব্যয় করা হয়।
এর যথাযথ হিসাব রাখা ও ব্যয় করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের পাঠানো বার্তায় জানানো হয়েছে।
২ মাস আগে
বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতা করার উপায়
ভৌগলিক দিক থেকে নিম্নাঞ্চল ও মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে ফি বছর বন্যাপ্লাবিত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল। প্রতিবার দুর্যোগের সময় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এবং সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আগের থেকে বহুগুণে বেড়ে যায়। এ অবস্থায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, খাবার, ভিটে-বাড়ি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে বন্যাদুর্গত মানুষগুলো। এ অবস্থায় তাদের সহায়তায় প্রত্যেকেরই নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। তাই চলুন, বন্যাদুর্গতদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার কার্যকর উপায়গুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে যে কার্যকর পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে
স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নেওয়া
একদম প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে মোক্ষম ভূমিকা রাখতে পারে স্বেচ্ছাসেবকরা। এই বিপর্যস্ত সময়ে দুর্যোগের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বিভিন্ন সেবামূলক কাজের চাপ থাকে অনেক বেশি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- যাতায়াতের অযোগ্য জায়গা থেকে মানুষকে উদ্ধার কাজ, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন এবং চিকিৎসা সেবা প্রদান। এর সঙ্গে আরও রয়েছে খাদ্য, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরবরাহগুলো সুসংগঠিত এবং বিতরণ করা। এরকম চাপের মধ্যে আলোকবর্তিকা হয়ে আবির্ভূত হয় স্বেচ্ছাসেবকরা, যাদের মাধ্যমে সংস্থাগুলো অসহায় মানুষদের কাছে আরও বেশি সাহায্য পৌঁছাতে পারে।
এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবীরা অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের কাজেও সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও বন্যা থেকে বেঁচে যাওয়া লোকদের মানসিক সমর্থন এবং মনোবল বাড়াতেও স্বেচ্ছাসেবীদের যথেষ্ট করণীয় রয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
জরুরি সামগ্রী সরবরাহ
বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে অপুষ্টি ও ডিহাইড্রেশন স্বাভাবিক বিষয়। এগুলো প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে অপচনশীল খাদ্য সামগ্রী ও বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ।
কাটা-ছেঁড়া বা জখমের চিকিৎসা এবং রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করার জন্য ফার্স্ট এইড কিট, ওষুধ এবং স্বাস্থ্যবিধি পণ্যগুলো অতীব জরুরি। এই সরবরাহগুলো অবশ্যই স্কুল-কলেজ বা স্থানীয় বহুতল ভবনগুলোর মতো অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছানো উচিত। মূলত তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত এই স্থাপনাগুলোতে আশ্রিতদের প্রত্যেকের চাহিদা পূরণের জন্য সরবরাহগুলো সুসংগঠিত বিতরণ আবশ্যক।
স্থানীয় সংস্থা বা এলাকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এই কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করা উচিত। এতে করে যাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য প্রয়োজন সর্বপ্রথম তাদের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা বাড়বে।
আরও পড়ুন: বন্যার সময় খাবার পানি পরিশোধিত করার উপায়
তাৎক্ষণিক উদ্ধার অভিযান
বন্যায় আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারে যেহেতু পানি পেরিয়েই যেতে হয়, তাই এখানে সাধারণত নৌকাই বেশি ব্যবহৃত হয়। এই নৌকাগুলোর মাধ্যমে উদ্ধারকারীরা জলমগ্ন রাস্তা পেরিয়ে ভাসমান লোকদের কাছে পৌঁছাতে পারে। তবে দ্রুত পৌঁছাতে এবং কম সময়ে বেশি সংখ্যক এলাকার লোকদের উদ্ধার কাজে স্পিডবোট ব্যবহার করা উচিত। যাতায়াতের একদম অযোগ্য স্থানগুলোর ক্ষেত্রে সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে হেলিকপ্টার। এর মাধ্যমে বিপজ্জনক জায়গা থেকে অনায়াসেই অসহায় মানুষদের তুলে নেওয়া যেতে পারে।
প্রাণিসম্পদ উদ্ধার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা
গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ পরিবারেরই জীবন-জীবিকার প্রধান উপায় হচ্ছে গবাদিপশু। বন্যার সময়ে এই প্রাণীসম্পদের ক্ষতি পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা ও আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের রক্ষার্থে অর্থায়ন কিংবা প্রাণীগুলোর উদ্ধার কাজে সরাসরি যোগদান করা উচিত।
এরই ধারাবাহিকতায় পশুর খাদ্য, পশুচিকিৎসা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবার প্রসঙ্গও আছে। কেননা এর ওপর বন্যা পরবর্তীতে তাদের সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি নির্ভর করছে। এমনকি অল্প কিছু আর্থিক অনুদানও পরিবারগুলোর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্যে আসতে পারে।
আরও পড়ুন: বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই যেসব খাবার সংরক্ষণ করা জরুরি
প্রসিদ্ধ এনজিওগুলোতে অর্থ দান
দেশব্যাপী বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন দুর্যোগে ব্যাপক পরিসরে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তারা দীর্ঘ সময় ধরে অভিজ্ঞতার সঙ্গে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবার মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করে আসছে। এমনকি তারা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ও স্যানিটেশন অবকাঠামোও স্থাপন করে থাকে।
এই কার্যক্রমগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ ছাড়া শুধুমাত্র অর্থদানও করা যেতে পারে। এই অর্থ সংস্থাগুলোর জরুরি দ্রব্য, ওষুধ ক্রয় ও পরিবহন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধন এবং জরুরি সহায়তা দানকারী দল গঠনে সাহায্য করতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পৌঁছানো, তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের প্রয়োজন মেটানো নিশ্চিত করতে এই সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্ষতিকারক পোকামাকড় এবং সাপ নির্মূল অভিযান
প্লাবনকালে বেড়ে যায় মশা ও অন্যান্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের উপদ্রব। আর এর রেশ ধরে পরবর্তীতে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু জ্বর এবং ম্যালেরিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি। এমতাবস্থায় মশার ফাঁদ, মশা তাড়ানোর উপকরণ এবং রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে দরকারি শিক্ষা উপকরণ স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
আরও পড়ুন: স্পঞ্জ সিটি: ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বন্যা-জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান
এছাড়াও, বিষধর সাপের উপস্থিতি বন্যাগ্রস্ত অসহায় মানুষদের আরও একটি হুমকি। বিশেষ করে বাস্তুচ্যুত ও ভাসমান জনগোষ্ঠীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকে। তাই এমন একটি নিবেদিত দল থাকা প্রয়োজন যাদের উদ্দেশ্যই হবে সাপ খুঁজে বের করে তা নিধন করা। একই সঙ্গে এরা জনসাধারণকে সাপবিরোধী বাধা স্থাপন এবং সাপে কাটার প্রাথমিক চিকিৎসাও শেখাবে।
গণসচেতনতা সৃষ্টি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এলাকাভিত্তিক মাইকিংয়ের মতো অফলাইন পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে বৃহৎ পরিসরে বন্যাকালীন জরুরী প্রয়োজনগুলো প্রচার করা যায়। এখানে বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির অভাব, চিকিৎসা সরবরাহ, বা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র-এর বিষয়গুলোর উপর গুরুত্বারোপ করা উচিত। এর ফলে বিভিন্ন সংস্থানগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায় থেকেও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অবস্থা সৃষ্টি হবে।
সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানগুলো অনুদান এবং স্বেচ্ছাসেবী কাজকেও উৎসাহিত করতে পারে। সেই সাথে বিশ্বব্যাপী সংহতি বোধের অনুকূলে সরকার ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে। এই গণসচেতনতার পরিপ্রেক্ষিতে নিকট ভবিষ্যতে দুর্যোগের বিষয়ে এমনকি উপযোগী নীতি নির্ধারণের দিকে ধাবিত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
আরো পড়ুন: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পশু-পাখির সুরক্ষা: বন্যা, খরা ও শৈত্য প্রবাহে করণীয়
২ মাস আগে