ফারুক ই আজম
সরকারি সুবিধাবঞ্চিত গেজেটের ১৩৯৯ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের এক হাজার ৩৯৯টি পরিবার গেজেটভুক্ত হওয়ার পরও পাচ্ছেন কোনো প্রকার সরকারি সুযোগ সুবিধা। তবে গেজেট প্রকাশ হওয়ার ২০ বছর পার হয়ে গেলেও এসব শহীদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আবেদন করেননি বলে দাবি কর্মকর্তাদের। তবে সরকারের পক্ষ থেকেও পরিবারগুলোর নেওয়া হয়নি কোনো খোঁজ, করা হয়নি যোগাযোগ।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ইউএনবিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ‘শহীদ, খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বিতরণ আদেশ, ২০২১’ অনুযায়ী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সুবিধা দেওয়া হয়। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিন দফায় গেজেটে ৬ হাজার ৭৫৭ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এরমধ্যে ৫ হাজার ৩৫৮ জনের পরিবার আবেদন করে ভাতা নিচ্ছেন। অবশিষ্ট ১ হাজার ৩৯৯ জন কোনো ভাতা নিচ্ছেন না।
পরিবর্তিত এ পরিস্থিতিতে এ পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ঠিকানাসহ তালিকা জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। শহীদ পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করা হলে সরকারের উদ্যোগেই তাদের সব-সুযোগ নিশ্চিত করা বলে জানান এই উপদেষ্টা।
ফারুক ই আযম বলেন, স্বাধীনতার ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর শহীদদের তালিকা হয়েছে। ‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ভাতা পেয়ে থাকেন। বেসামরিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট হয়েছে প্রথমে ২০০৩ সালের ৬ অক্টোবর। সামরিক শহীদদের গেজেট হয়েছে ২০০৪ সালের ১২ এপ্রিল। পুলিশ ও বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট হয়েছে ২০০৫ সালের ১৫ জুন। শহীদদের তালিকায় মোট নাম এসেছে ৬ হাজার ৭৫৭ জনের।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘গেজেটভুক্তদের মধ্যে ৫ হাজার ৩৫৮ জন ভাতা পাচ্ছেন। অবশিষ্ট এক হাজার ৩৯৯ জন কোনো ভাতা পাচ্ছেন না। তারা ভাতা না পাওয়ার কারণ কর্মর্তাদের কাছে যখন তিনি জানতে চেয়েছেন, তারা বলেছেন—এদের পরিবার কখনও আবেদন করেনি।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি তাদের প্রশ্ন করেছিলাম— রাষ্ট্র কী কোনোদিন জানতে চেয়েছে তারা কারা? তারাই রাষ্ট্র এনেছে। যারা রাষ্ট্র এনেছে তারা কৃষক, তারা শ্রমিক, তারা এত চালাক চতুর লোক না, এরা বোকা লোক। তারা এসব বোঝে না, তারা গেজেট বোঝে না। তালিকা বোঝে না।’
তিনি বলেন, ‘যিনি শহীদ হয়েছেন তার স্ত্রী হয়তো গৃহবধূ ছিলেন, সে তো গেজেট বোঝে না। রাষ্ট্র কেন তার কাছে গেল না?’
শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদেরকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা হারে সম্মানি ভাতা এবং বছরে ২৩ হাজার টাকা হারে ২টি উৎসব ভাতা, ২ হাজার টাকা নববর্ষ ভাতাসহ আরও কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে জানা গেছে।
ফারুক ই আজম বলেন, ‘আমি ডিসি সম্মেলনে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছি, কল্যাণ ট্রাস্টও সেখানে (পরিবারের খোঁজে) যাবে। সব ডিসিদের বলা হয়েছে, যারা ভাতা নিচ্ছেন না, এমন শহীদদের তালিকাও তাদের দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের ঘরে ঘরে যেতে হবে। গিয়ে আমাকে আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে জানাতে হবে যে এ শহীদদের খোঁজ করা হয়েছে। তাদের কেউ আছে, কী নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট নিয়েছি, তাদের আলাদা করেছি। জেলার ভিত্তিতে আলাদা করেছি এবং জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠিয়েছি।’
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের পরিবার রাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো সম্মান ও সুবিধা নেয়নি কিংবা পাচ্ছে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এত বছরে কেউ কী এটার খোঁজ নেয়নি- জিজ্ঞাসা করলে কর্মকর্তারা বলেছেন, না কেউ জিজ্ঞাসাও করেনি। যারা কল্যাণ ট্রাস্টে ছিল তাদের কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না। মন্ত্রণালয়ের তো ছিলই না। আমি কৌতুহল থেকে এ বিষয়টি দেখতে গিয়ে এটি পেয়েছি।’
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে জানা যায়, তিন ক্যাটাগরিতে (শহীদ, খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা) ১৮ হাজার ২০০ জন বা তাদের পরিবারকে ভাতা দেওয়া হয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এক হাজার ৩৯৯ জনের পরিবার ভাতা নিচ্ছেন না। তারা আবেদন করেননি। ফলে ভাতা পাননি।
আরও পড়ুন: শুধু রণাঙ্গণের যোদ্ধারাই হবেন ‘মুক্তিযোদ্ধা’, বাকিরা সহযোগী: উপদেষ্টা
অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হলে শুরু হবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তের কাজ
বিভিন্ন জেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে শত শত অভিযোগ এসেছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ হয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পুনর্গঠন করতে পারব। সেখানে আমরা একটা এডহক কমিটি করে দেব। এরপর জামুকা, এডহক কমিটি, প্রশাসন যৌথভাবে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আগে বলেছিলাম যেসব অমুক্তিযোদ্ধা স্বেচ্ছায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে চলে যাবেন, তাদের ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) দেব, তাদের শাস্তির আওতায় আনব না। সেই সুবাদে ১০ থেকে ১২ জনের মতো পেয়েছি— যারা স্বেচ্ছায় চলে যেতে আবেদন করেছেন। তারা জাতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন যে, তারা এটা অন্যায় করেছিলেন। তাদের যাতে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাদের ভাতা বন্ধ করে দিয়েছি।’
‘ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠনগুলো থেকে একটি দাবি জানানো হয়েছে, স্বেচ্ছায় চলে যেতে সরকার যাতে সময় নির্ধারণ করে দেয়। তারা বলেছেন, আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত যাতে সময় বেধে দেওয়া হয়। আমরা তাদের এ দাবি বিবেচনা করছি।’
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরিকারীদের বিচার
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এটা পুরো জাতির সঙ্গে প্রতারণা। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় যারা ছিল, তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।’
সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা
আওয়ামী লীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘হ্যাঁ, এ ব্যাপারে একটা অভিযোগ জামুকাতেও জমা পড়েছে। আগামী সভাতে আমরা এটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিচেনায় নেব, আলোচনা করব।’
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকে বিপুল অর্থ
আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৯৩ শিক্ষার্থী
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বিপুল অর্থ আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে থাকা কয়েকটি ব্যাংকে রয়েছে।
উপদেষ্টা ফারুক ই আযম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বড় ফান্ড আছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সব টাকা নিয়ে রেখেছে বেসরকারি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে। যে ব্যাংকে ১০ কোটি ফেরত দিতে পারে না। সেখানে কল্যাণ ট্রাস্ট ১৬৭ কোটি টাকা জমা রেখেছে। এ টাকা কবে ফেরত পাবে আল্লাহই জানেন।
তিনি বলেন, ‘কেউ না কেউ তো এ ধরনের ব্যাংকে টাকা রেখে সুবিধা নিয়েছেন। এ বিষয়গুলো আমরা দেখছি।’
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রায় ৯০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী
উপদেষ্টা জানান, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রায় ৯০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।,‘আমরা সেখানে যাচাই-বাছাই করব। কারো কোনো আপত্তি থাকলে— তা আমাদের জানাতে পারবেন। আমরা সেটা দেখব।’
মুক্তিযোদ্ধাদের মামলা নিষ্পত্তিতে আলাদা বেঞ্চ চাওয়া হবে
আরও পড়ুন: রবিবার সিলেটে মুক্তিযোদ্ধা হারিছ চৌধুরীকে দাফন করা হবে: মেয়ে সামিরা
উপদেষ্টা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন বিষয়ে ২ হাজার ৭০০টির মতো মামলা রয়েছে। ‘এ মামলাগুলো একটা ডেডিকেটেড বেঞ্চে শেষ করার জন্য প্রধান বিচারপতির সাক্ষাৎ চেয়েছি। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে একটা আলাদা বেঞ্চ চাইব, যাতে সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের মামলা অগ্রধিকার ভিত্তিতে আমরা শেষ করতে পারি।
২৩ দিন আগে
এবার বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজের বদলে বিজয় মেলা হবে
এবার বিজয় দিবসকে উৎসব মুখর করতে সারা দেশে বিজয় মেলার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
ইউএনবিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ইউএনবিকে বলেন, ‘বিজয় দিবস আমাদের জাতির জন্য অনন্য দিন। ৯ মাস যুদ্ধ করে জাতি এই বিজয় অর্জন করেছে। সারা দেশের মানুষ যুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিল।একসময় গ্রামে ও সারা দেশেই এই বিজয় উৎসব হতো। ধীরে এই উৎসব নিস্ক্রিয় ছিল। এবার সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিজয় মেলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে চারু, কারু মেলার সঙ্গে কৃষি পণ্যের মেলা হবে। তার সঙ্গে দেশীয় পণ্য পরিবেশন করা হবে। মেলায়, শিশু, নারী, পুরুষ সবার অংশগ্রহণ থাকবে। এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সবাই আনন্দ উপভোগ করবে। পাশাপাশি স্কুলগুলোতে অনুষ্ঠান হবে।’
আরও পড়ুন: উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের সঙ্গে জাতিসংঘের গোয়েন লুইসের সাক্ষাৎ
উপদেষ্টা বলেন, আগে যে প্রচলিত কুচকাওয়াজ হতো, এতে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকত না, সেখানে স্কাউট ও সেচ্ছাসেবকরা থাকত। তার সঙ্গে অন্যান্য বাহীনি থাকত। এতে সরাসরি জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না।এবার শিশু, নারী, পুরুষ সব শ্রেণির জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে এবার কুচকাওয়াজ হচ্চে না। কারণ সেনাবাহিনী এখন সারাদেশে ব্যস্ত। এটার জন্য একটা প্রস্তুতির বিষয় আছে। তাই এবার প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ হচ্ছে না। এটার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি প্রয়োজন।’
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় স্টেডিয়ামে আগে প্রধানমন্ত্রী পোগ্রামে যেতেন। এবার প্রধান উপদেষ্টা যাবেন কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, না উপদেষ্টা যাবেন না। এরকম প্রোগ্রাম হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় প্রোগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তেমনি ঢাকায় এখানকার জেলা প্রশাসন করবে।
উপদেষ্টা বলেন, আগে প্রশাসন করত কুচকাওয়াজ, এখন প্রশাসন মেলার আয়োজন করবে। সেখানে স্ব স্ব এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় সব পর্যায়ের জনগণ অংশ নেবেন।
তিনি আরও বলেন, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
তিনি বলেন, ১৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতি জাতীয় বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে যাবেন। সেখানে অনুষ্ঠান আছে। তারপর রায়ের বাজার যাবেন এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
আরও পড়ুন: দারিদ্র্যকে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনায় কাজ করছে সরকার: ফারুক ই আজম
১০২ দিন আগে
দারিদ্র্যকে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনায় কাজ করছে সরকার: ফারুক ই আজম
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেছেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। সচেতনতা ও জ্ঞানের অভাবে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত মানবসৃষ্ট দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের চেয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা হলো আমাদের দারিদ্র্যতা। বাংলাদেশের প্রায় ৭৫টি উপজেলার শতকরা ৫০ থেকে ৮০ ভাগ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। দারিদ্র্যজনিত অপুষ্টি একটি দুর্বল জাতি সৃষ্টি করবে যার পরিমাণ হবে ভয়াবহ। তাই আমি দারিদ্র্যকে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ঢাকায় বিয়াম ফাউন্ডেশনের মাল্টিপারপাস হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘নগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: সমস্যা ও প্রতিকার’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব কথা বলেন ফারুক ই আজম।
আরও পড়ুন: দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের সরঞ্জাম সহায়তা
উপদেষ্টা মনে করেন, জীবন রক্ষার জন্য শক্তিশালী প্রারম্ভিক সতর্কতা ব্যবস্থা, উন্নত বিল্ডিং কোড এবং আরও ভালো নগর পরিকল্পনা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, মানুষ সচেতন হলেই ঝুঁকি হ্রাস পাবে। সবাইকে সচেতন করার কাজটি অত্যন্ত কঠিন। এই সচেতনতা আমাদের প্রত্যেকের ঘর থেকেই আরম্ভ করতে হবে এবং অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। এছাড়া সরকারের ওপর নির্ভর না করে সর্বতোভাবে ভলান্টিয়ার সৃষ্টি করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায় ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী অন্য দেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আদলে কার্যকর মডেল সৃষ্টি এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবাইকে প্রস্তুত রাখা একটি সময়ের দাবি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সব সংস্থার সক্ষমতা বাড়াতে নিজস্ব উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য যথেষ্ট গবেষণার প্রয়োজন। আমি আশা করি তরুণ প্রজন্ম এসব ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী।
কর্মশালায় আরও ছিলেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান, যুগ্ম সচিব মো. আহমেদুল হক। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের ৭০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।
আরও পড়ুন: দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলের মানুষের দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন
১৩৭ দিন আগে
ভারত ফারাক্কা খুলে দিলেও নতুন কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি: উপদেষ্টা
ফারাক্কার গেট খুলে দিলেও নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
আরও পড়ুন: আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে ঢামেকে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান
বাংলাদেশে চলমান ভয়াবহ বন্যার মধ্যেই ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৯টি গেট খুলে দেওয়ায় নতুন কোনো এলাকা প্লাবিত হয়েছে কি না জানতে চাইলে ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নতুন কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি।’
সরকার সবার সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণের কাজ করছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘যে স্থান থেকে পানি নেমে যাচ্ছে সেখানে যে সমস্ত জায়গায় ত্রাণ পরিবহন করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সব উপজেলায় ত্রাণ পৌঁছানো গেছে এবং ত্রাণ মজুত করা গেছে।’
এছাড়া চিকিৎসা সেবাও নিশ্চিত করা গেছে এবং ক্রমান্বয়ে এগুলো ধারাবাহিকভাবে হচ্ছে বলেও জানান ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
ত্রাণ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘দুর্গম এলাকা এখন আর নেই। সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছাতে পেরেছি। অধিকাংশ এলাকায় পানি নেমে যাচ্ছে। যেসব এলাকায় নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে সেগুলো প্রবাহিত পানি, দ্রুত নেমে যাবে বলে আশা করছি। ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারব।’
এছাড়া জনগণের স্বেচ্ছাসেবা আমাদের শক্তি যোগাচ্ছে বলেও জানান উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মান্টিটস্কির সাক্ষাৎ
পাহাড়ে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে: পার্বত্য উপদেষ্টা
২০৬ দিন আগে