ছররা গুলি
ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলি কেড়ে নিয়েছে ৫ শতাধিক মানুষের চোখের আলো
১৯ বছর বয়সি তরুণ মো. বাপ্পী হোসেন। গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকায় ছররা গুলি এসে বিদ্ধ হয় তার চোখ ও সারা শরীরে। দুই চোখে বিঁধে যায় ৫টি গুলি যার মধ্যে বাম চোখে ৩টি আর ডান চোখে ২টি। সারা শরীরে এখনও রয়ে গেছে ১৯টি গুলি। চিকিৎসা চলছে রাজধানীর শ্যামলীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের স্পেশালাইজড ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিটে। তবে বেশ কয়েকবার অপারেশন করে দুই চোখ থেকে গুলি বের করা হলেও দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি বাপ্পীর।
মা মরিয়ম বেগম জানান, বাপ্পী আর কোনোদিন দেখতে পাবে না বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। অথচ বাপ্পীর মনে এখনও আশা একদিন আগেরমতোই দেখতে পাবে সে।
বরিশাল বিএম কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ২৬ বছর বয়সি রহমতউল্লাহ সরকার সাবির। মাস্টার্স শেষ করে পড়ছিলেন বরিশালের একটি ল কলেজে। তার ভাই নজরুল ইসলাম ইউএনবিকে জানালেন, ৪ আগস্ট বিকালে বিএম কলেজের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সেসময় সাবিরের বাম চোখে ৩টা ছররা বুলেট আর ডান চোখে ১টা রাবার বুলেট লাগে। বাম চোখে এখনও ১টা বুলেট রয়ে গেছে যেটা বের করতে হলে চোখই ফেলে দিতে হবে। ডান চোখে তেমন সমস্যা না থাকলেও এখন বাম চোখে কিছুই দেখে না সাবির।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এমনই সম্পূর্ণ বা আংশিক অন্ধত্বকে বরণ করতে হয়েছে অর্ধসহস্রাধিক মানুষকে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা যায়, ১৭ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৬১১ জন চোখে বুলেট নিয়ে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত ২৮ জনের, যারা পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গেছেন। এক চোখ আহত অবস্থায় এসেছেন ৫১০ জন। এর মধ্যে ১৭৭ জনের দুইবার সার্জারি করতে হয়েছে। বর্তমানে স্পেশালাইজড ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিটে ভর্তি আছেন ৪৬ জন। যারা সবাই ছররা বুলেট দিয়ে আহত।
ইন্সটিটিউটের আবাসিক সার্জন সঞ্জয় কুমার জানান, ‘রাবার বুলেট দিয়ে আহত কাউকে আমরা এখনও পাইনি। যারা এসেছেন তাদের চোখে বিদ্ধ সব গুলিই মেটালিক প্লেটের। এই পিলেটগুলোকে ছররা গুলি বলা হচ্ছে। এগুলো যখন ছোড়া হয় তখন বুলেটের মধ্যে একটা হিট জেনারেশন হয়। এটি চোখে ঢুকলে রেটিনা তো ছিঁড়ে যায়ই, অন্যান্য স্ট্রাকচারগুলোও ডিসঅর্গানাইজড হয়ে যায়। এখান থেকে ব্যাক করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে বেরিয়ে আসে জুলাই গণহত্যার সত্য
তিনি আরও বলেন, ‘যাদের রেটিনা ছিঁড়ে গেছে, নার্ভে কোনো ক্ষতি হয়েছে, অথবা ভেতরে কোনো হেমারেজ আছে তাদের দ্বিতীয়বারের মতো অপারেশন করতে হয়েছে। যদি অনেক বেশি ড্যামারেজ না হয়ে থাকে তাহলে আস্তে আস্তে ভালো হতেও পারে। আর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভালো হয় না।’
এক চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটির প্রভাব অন্য চোখেও পড়ে কি না জানতে চাইলে সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘এটা হতে পারে। আমাদের এখানে একজন রোগী আছে যার এক চোখে পিলেটের আঘাতের কারণে অন্য চোখেও ইফেক্ট পড়েছে। এটা যদিও খুব রেয়ার।’
১ মাস আগে