জনপদ
ঘন কুয়াশায় ঢেকেছে কুড়িগ্রামের জনপদ, তাপমাত্রা ১৫. ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা আরও কমায় বাড়ছে শীতের তীব্রতা। শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশায় জবুথবু হয়ে পড়েছে পথঘাট ও প্রকৃতি। গত এক সপ্তাহ ধরে ১৭ ডিগ্রি থেকে ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে তাপমাত্রা।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৭টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনের বেলা তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও মধ্যে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঠান্ডা অনুভূত হতে থাকে। এ সময় ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে পুরো এলাকা।
শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলো হেড-লাইট জ্বালিয়ে বিলম্বে যাতায়াত করছে।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
আরও পড়ুন: তাপমাত্রা কমেছে, শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা
অন্যদিকে, কুয়াশা ও শীতের কারণে ক্ষেতমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো বিপাকে পড়েছেন। তারা সময় মতো কাজে যেতে পারছেন না। অপর দিকে, শীতের কবলে পড়েছে নদ-নদী তীরবর্তী ৪০৫টি চর ও দ্বীপ চরের হত দরিদ্র মানুষগুলো।
কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহের রুহুল আমিন (৪০)বলেন, ৫ থেকে ৬ দিন ধরে শীত ও ঠান্ডা অনেক বাড়ছে। রাতে বৃষ্টির মতো পড়তে থাকে কুয়াশা। ঠান্ডা ও শীতের কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। তার পরেও সকালে কাজের জন্য বের হয়েছি। কাজ না করলে তো আর সংসার চলবে না।
ওই এলাকার দিনমজুর আবু বক্কর (৫২)বলেন, আজ খুব কুয়াশা পড়ছে। মানুষ ঘুম থেকে না উঠতেই আমরা কাজের জন্য বের হয়েছি। যতই শীত বা ঠান্ডা হোক না কেন, কাজ ছাড়া কোনো উপায় নাই আমাদের।
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, চলতি মাসের শেষে অথবা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হিমেল বাতাস বইতে পারে। তখন ঠান্ডার তীব্রতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে কমছে তাপমাত্রা, বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতের তীব্রতা
৪ সপ্তাহ আগে
‘কুশিয়ারার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে একের পর এক জনপদ’
সিলেটের বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা নদী গিলে খাচ্ছে মাইলের পর মাইল জনপদ। ইতোমধ্যে নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে রাস্তা, বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা আর কবরস্তান। নদী তীর রক্ষা বাঁধও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী তীরবর্তী অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, কুশিয়ারায় ভাঙন দেখা দিলেও তা রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
ভাঙন কবলিত উপজেলার আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাঙনস্থলে কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে।আরও পড়ুন: কুশিয়ারা নদীতে ধরা পড়ল ১৬০ কেজি ওজনের বাগাড়
কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার রাজু আলম বলেন, আমরা এই এলাকায় নদী ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চাই। নদীতে ব্লক কিংবা জিও ব্যাগ ফেললে আশা করি নদী তীর রক্ষা বাঁধটি বাঁচবে। কুশিয়ারার ভাঙন ঠেকাতে নদী তীর রক্ষা বাঁধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট জেলার পূর্ব-উত্তর দিকে ঐতিহ্যবাহী বিয়ানীবাজার উপজেলা। বিয়ানীবাজার উপজেলার উত্তরে জকিগঞ্জ ও দক্ষিণে বড়লেখা উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য এবং পশ্চিমে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। সিলেট সদর থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৫২ কিলোমিটার। প্রাচীনকালে বিভিন্ন জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল বাংলার নানা অঞ্চল। সিলেট ছিল হরিকেল জনপদের অন্তর্ভুক্ত এবং বিয়ানীবাজারের পূর্ব নাম ছিল পঞ্চখণ্ড। সিলেটের প্রথম রায় বাহাদুর হরেকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর ছেলে কৃষ্ণ কিশোর পাল চৌধুরী এই অঞ্চলে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য নদী বয়ে চলেছে। তার মধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে সুরমা, কুশিয়ারা ও সুনাই নদী। কুশিয়ারা নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক নদীতে। জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, রাজনগর, মৌলভীবাজার, নবীগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কুশিয়ারা নদী।
প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা হিসেবে সিলেটে পরিচিত বিয়ানীবাজার। এ উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে ভারতের বরাক নদী থেকে নেমে আসা কুশিয়ারা নদী। খরস্রোতা এ নদী যেদিকেই গেছে, তীর ভেঙে হারিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ। নদী তীর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন প্রকল্প নিলেও সর্বগ্রাসী এ নদীর ভাঙন ঠেকাতে পারেনি।
আরও পড়ুন: সিলেটে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়ন হয়ে ভাটির দিকে বয়ে গেছে কুশিয়ারা নদী। আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে ভাঙছে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর। ইতোমধ্যে ভাঙনে নতীগর্ভে চলে গেছে রাস্তা, বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা আর গোরস্তান। আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর থেকে ভাটির দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুড়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের বেশি নদী তীর রক্ষা বাঁধের কয়েক স্থানে ভেঙে যাওয়া জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দফায় দফায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নদী তীর রক্ষা বাঁধ সংস্কারের দাবি জানানো হলেও তা কাজে আসেনি।
স্থানীয়রা জানান, নদী তীর রক্ষা বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ব্লক কিংবা জিও ব্যাগ ফেললে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
আঙ্গুরা মোহাম্মদপুরের মিজান আহমদ বলেন, দেখতে দেখতে কুশিয়ারা নদী আমাদের এলাকার কতকিছু গিলে খেল। আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর থেকে ভাটির দিকে আমুড়া ইউনিয়ন পর্যন্ত তিন সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা নদীগর্ভে চলে গেছে। অনেকের বাড়িঘরও নদীতে হারিয়ে গেছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা অন্যত্র বাড়ি করলেও নদী তীরে দাঁড়ালে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়।
আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর গ্রামের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাহার উদ্দিন বলেন, গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে নদীর গতিপথ অনেক পাল্টে গেছে। যেখানে জনবসতি ছিল সেখানে আজ নদী আর যেখানে নদী ছিল সেখানে ভরাট হয়ে গেছে। আমাদের চলাচলের রাস্তা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় যাতায়াতে খুব অসুবিধা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শরফ উদ্দিন বলেন, অব্যাহত নদী ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে ঝুঁকিতে থাকা বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা আর গোরস্তান নদী গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা যেমন কষ্ট করছে, তেমনি দিনে কিংবা রাতে রোগী নিয়ে যাতায়াতও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
গোবিন্দশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন বলেন, নদী তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বর্ষাকালে ছাত্রছাত্রীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। শুকনো মৌসুমেও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে।
আরও পড়ুন: বিপৎসীমার ওপরে মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি
১ মাস আগে