সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ
সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে নগদায়ন বা পুনরায় চালু করার উপায়
দীর্ঘমেয়াদি উপযুক্ত লাভসহ আর্থিক সঞ্চয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উপায় হলো সঞ্চয়পত্র। বিভিন্ন কিস্তিতে এর মুনাফা লাভের পাশাপাশি, মেয়াদ পূর্ণ হলে ফিরতি মূলধন নানা আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক হয়। অপরদিকে, অনেকেই সঞ্চয়পত্র নবায়নের মাধ্যমে সঞ্চয় বৃদ্ধি এবং মুনাফাপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। উভয় ক্ষেত্রেই পদ্ধতিগত বিষয়গুলো মূলত ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ তথা সরকার এবং সঞ্চয়পত্রটি যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে। চলুন, মেয়াদ শেষে সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন বা নবায়নেরর পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।
সঞ্চয়পত্র নগদায়নের উপায়
প্রদানকারী ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে মেয়াদ শেষে সঞ্চয়পত্রের নগদায়নে সাধারণত ২ থেকে ৩ কার্যদিবস সময় লাগে। কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া কিছুটা বেশি সময় নিতে পারে।
নগদায়নের জন্য প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব ফরম রয়েছে। টাকা উত্তোলনের জন্য প্রথমে ওই ফরমটি পূরণ করতে হবে। এরপর, ফরমে স্বহস্তে সই করে সেটি সঞ্চয়পত্র কেনা ব্যাংকের শাখায় জমা দিতে হবে।
আরো পড়ুন: পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় যে কারণে দাম কেটে রাখা হয়
যদি ক্রেতা সশরীরে ব্যাংকে উপস্থিত হতে বা সই করতে অপারগ হন, তবে তার নমিনি নগদায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। তবে এই ক্ষেত্রে, ক্রেতার শারীরিক অবস্থার প্রমাণ হিসেবে চিকিৎসকের সনদ দেখাতে হবে।
এছাড়া, নমিনির বাইরে বিনিয়োগকারীর মনোনীত ব্যক্তি শুধু মুনাফার অর্থই নগদে উত্তোলন করতে পারবেন। তবে এজন্য সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা বা মালিকের পক্ষ থেকে লিখিত অনুমতিপত্র এবং মুনাফা কুপনের ছাড়পত্র দিতে হবে। সঞ্চয়পত্রের আসল অর্থ কোনোভাবেই অনুমতিপত্র বা অথরাইজেশন লেটারের মাধ্যমে উত্তোলন করা যায় না।
তবে, অনলাইন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াগুলোর প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থেকে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূলধন মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার দিনই গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এমনকি মুনাফাগুলোও কিস্তি অনুযায়ী সঠিক সময়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে। এই সমস্ত লেনদেনের জন্য ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) সিস্টেম ব্যবহৃত হবে। এর ফলে, বিনিয়োগকারী বা তার মনোনীত ব্যক্তিকে মুনাফা বা মূলধন উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে যেতে হবে না।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
সঞ্চয়পত্র পুনরায় চালু করার পদ্ধতি
নতুন পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়করণ ব্যবস্থা থাকায় নথিপত্র সংক্রান্ত জটিলতাগুলো দূর হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে সঞ্চয়পত্র রিনিউ পদ্ধতির পরিবর্তনগুলো নিম্নরূপ:
* পরিবার সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে শুধু বিনিয়োগকৃত আসল অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় বিনিয়োগ হবে।* ৫ বছর মেয়াদি এবং ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মুনাফাসহ আসল অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় বিনিয়োগ হবে।* এই নবায়নের ক্ষেত্রে পুনঃবিনিয়োগের তারিখ থেকে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা অনুসরণ করা হবে।* পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ত্রৈমাসিকের বদলে প্রতি মাসে প্রদান করা হবে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
শেষাংশ
সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে নগদীকরণ অথবা নবায়নের সাম্প্রতিক অগ্রগতিগুলো বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, সেভিংস স্কিমের অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পুরোদমে সক্রিয় হয়ে উঠলে মূলধনের টাকা পাওয়া নিয়ে যাবতীয় হয়রানির অবসান ঘটবে। মেয়াদপূর্তির দিনই টাকা সরাসরি অ্যাকাউন্টে ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) হলে আলাদা করে আর ব্যাংকে যাওয়া লাগবে না। বিষয়টি স্বয়ংক্রিয় নবায়নের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই নথিবিহীন পদ্ধতি প্রশাসনিক বিলম্বসহ সামগ্রিক জটিলতা দূর করবে, যা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাংক পরিবর্তন করে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের উপায়
১ মাস আগে