এইচএমপিভি সংক্রমণের কারণ
এইচএমপিভি ভাইরাস: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
চীনের সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) অনুসারে, গত ১৬ থেকে ২২ ডিসেম্বর দেশটিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এইচএমপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস)-এর সংক্রমণ। শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অসুস্থতার কারণে বেড়েছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার, যা কোভিড-১৯, রাইনোভাইরাস বা অ্যাডিনোভাইরাসের চেয়েও বেশি। সাধারণত ১৪ বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। সংক্রমণটি একদম নতুন না হলেও, এই ভাইরাসের বিষয়ে প্রাথমিক সচেতনতায় প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই লক্ষ্যে চলুন, এইচএমপিভির প্রকৃতি, কারণ, লক্ষণ এবং এর প্রভাব কমানোর জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও চিকিৎসার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
এইচএমপিভি কি
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা সংক্ষেপে এইচএমপিভি এমন একটি বায়ুবাহিত ভাইরাস, যা মানুষের শ্বাসনালি (শ্বসনতন্ত্র) ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি সর্বপ্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে। পরিবেশে থাকা এইচএমপিভি আক্রান্ত যেকোনো জৈব বা এমনকি জড় উপাদানের সংস্পর্শ থেকে ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করে। অতঃপর অন্যান্য শ্বাসনালি ব্যবস্থার ভাইরাসের মতো মুখ নিঃসৃত তরল যেমন হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে এটি ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাথমিকভাবে উপসর্গগুলো সাধারণ ঠান্ডা, জ্বর, কাশির মতো হওয়ার কারণে অনেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমণের ব্যাপারে উদাসীন থাকেন। এর সংক্রমণটি সাধারণত শীতের শেষের দিকে এবং বসন্তের শুরুর দিকে ঘটে। বয়স, লিঙ্গ নির্বিশেষে সব ধরনের মানুষের মাঝে ছড়ালেও সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু এবং বয়স্করা। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত একটি ভয়াবহ সংক্রামকের নাম এইচএমপিভি। বিশেষত সাম্প্রতিক চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এটি উত্তর এশিয়ায় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরো পড়ুন: মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়
এইচএমপিভি সংক্রমণের কারণ
বায়ুবাহিত এইচএমপিভির মূল গন্তব্য থাকে মানুষের শ্বাসনালি। এই গন্তব্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে পোষক দেহে প্রবেশের জন্য ভাইরাসটি বিভিন্ন ধরণের পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে উপজীবিত করে নেয়। নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলো সংক্রমণের জন্য সহায়ক অবস্থা সৃষ্টি করে।
শ্বাস-প্রশ্বাস ও সংস্পর্শ
দূষিত জৈব বস্তু বা জড়পৃষ্ঠের সংস্পর্শ: এইচএমপিভির মাধ্যমে দূষিত কোনো জীব বা জড়বস্তুর পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করলে সংক্রমণ হতে পারে। ভাইরাসটি নির্দিষ্ট কিছু জড় উপাদানের পৃষ্ঠে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। দরজার হাতল, টেবিল এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মতো মানুষের ধরা-ছোয়ার মধ্যে থাকা জিনিসগুলো এই জীবাণুতে বেশি দূষিত হয়।
মুখ নিঃসৃত তরল: একবার কোনো ব্যক্তি এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হলে তিনি অন্য ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে সেই ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, বা এমনকি কথা বলার সময় মুখ থেকে বের হওয়া অল্প তরলও সংক্রমণের কারণ হতে পারে। এগুলো অন্য সুস্থ ব্যক্তির গায়ে লেগে বা শ্বাসের মাধ্যমে সরাসরি শ্বাসনালি পর্যন্ত ঢুকে যাওয়ার শতভাগ আশঙ্কা থাকে।
আরো পড়ুন: থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে
শিশু এবং বয়স্ক: রোগ প্রতিরোধ প্রণালী প্রাথমিক অবস্থায় থাকা বা দুর্বল হওয়ার কারণে শিশু এবং বয়স্করা সর্বাধিক সংবেদনশীল থাকে এই সংক্রমণের প্রতি। এছাড়াও পরনির্ভরশীলতার কারণে এরা প্রায়ই অন্যের সংস্পর্শে থাকতে হয়। তাই একটি বাড়ন্ত স্বাস্থ্যবান শিশুও সংক্রমিত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
স্বাস্থ্যগত জটিলতা: প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যাদের ক্যান্সার, হৃদরোগ বা শ্বাসনালি সংক্রান্ত দুরারোগ্য ব্যাধি রয়েছে, তাদের এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অবস্থা দুর্বল থাকায় কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই নবাগত ভাইরাস গোটা শরীরকে গ্রাস করে নিতে পারে।
এইচএমপিভি সংক্রমণের লক্ষণ
ব্যক্তির বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে সংক্রমণের উপসর্গগুলো ভিন্ন রকম হতে পারে। এগুলো প্রধানত দুটি পর্যায়ে দেখা যায়, সেগুলো হলোঃ
· হালকা লক্ষণ
· সর্দি বা নাক বন্ধ
· কাশি এবং গলা ব্যথা
· হালকা জ্বর
· প্রচণ্ড ক্লান্তি
আরো পড়ুন: সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
গুরুতর লক্ষণ
শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা
গুরুতর ক্ষেত্রে, বিশেষত শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো বেশি পরিলক্ষিত হয়ঃ
· শ্বাসকষ্টের তীব্রতা
· বুক ব্যথা
· অবিরাম কাশি
সেকেন্ডারি ইনফেকশন
ভাইরাসের সংক্রমণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্রঙ্কিওলাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
২ দিন আগে