পাভলিদিস
নাটকীয় বেনফিকা-বার্সা ম্যাচে হলো যেসব রেকর্ড
ফুটবলপাড়ায় গতরাতের পাগলাটে ম্যাচের রেশ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। বার্সেলোনা সমর্থকদের অনেকে এখনও স্বপ্নের মধ্যে ডুবে আছেন। এর মাঝে চলুন দেখে নেই, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ওই ম্যাচটি কতগুলো রেকর্ডে নাম তুলল।
বেনফিকাকে ৫-৪ গোলে হারানোর রাতে জোড়া গোল করেন রাফিনিয়া। এর মাধ্যমে চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার গোলসংখ্যা বেড়ে হলো ৮টি। এর ফলে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে বসেছেন তিনি। ৯ গোল করে তালিকার শীর্ষে তারই সতীর্থ রবের্ট লেভানডোভস্কি। তিনিও ম্যাচটিতে পেয়েছেন জোড়া গোলের দেখা।
গোল করায় দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও গোলে অবদান রাখার তালিকায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড। আট গোলের পাশাপাশি তিনটি অ্যাসিস্টের কল্যাণে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি আসরে মোট ১১ গোলে অবদান রেখেছেন তিনি।
রাফিনিয়ার প্রথম গোলটি ছিল ডি-বক্সের বাইরে থেকে হেডারে করা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় গোল। সেটিও দেখা গেল এক যুগ পর। সবশেষ ২০০৩ সালে আয়াক্সের বিপক্ষে বক্সের বাইরে থেকে হেডারে লক্ষ্যভেদ করেন ক্লাব ব্রুজের নরওয়ে স্ট্রাইকার রুনে লাঙ্গে।
আরও পড়ুন: ভাগ্যের পালাবদলের রাতে ৯ গোলের থ্রিলারে শেষ হাসি বার্সেলোনার
গতরাতে পেনাল্টি থেকে জোড়া গোল আদায় করে নতুন উচ্চতায় উঠেছেন রবের্ট লেভানডোভস্কি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে পেনাল্টি থেকে গোল করায় লিওনেল মেসিকে (১৮) ছাড়িয়ে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর রেকর্ড স্পর্শ করেছেন এই পোলিশ। স্পট কিক থেকে গোল করার রেকর্ডে ১৯ গোল নিয়ে রোনালদোর সঙ্গে এখন যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছেন লেভা। সামনের ম্যাচগুলোতে পেনাল্টি গোলে রূপান্তর করতে পারলেই সবাইকে ছাড়িয়ে যাবেন তিনি।
ইউরোপীয় এই প্রতিযোগিতার নাম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ করার পর থেকে মাত্র পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়েও ম্যাচ হেরেছেন ভাঙ্গেলিস পাভলিদিস।
২০০৩ সালে সর্বপ্রথম এমন দুর্ভাগ্যজনক কীর্তি গড়েন ব্রাজিল কিংকদন্তি রোনালদো নাজারিও। সে বছর ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে হ্যাটট্রিক করেও রিয়াল মাদ্রিদকে ম্যাচ জেতাতে ব্যর্থ হন তিনি; ৪-৩ গোলে ম্যাচটিতে জয় পায় ইউনাইটেড। এরপর ২০১০ সালে সান সিরোতে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেও টটেনহ্যামকে জেতাতে পারেননি গ্যারেথ বেল; ওই ম্যচটিও ৪-৩ গোলে শেষ হয়। ২০২০ সালে তুরস্কের মিডফিল্ডার ইরফান কাভেচি ইস্তানবুল বাসাকসেহিরের জার্সিতে হ্যাটট্রিক করেন, তবুও লাইপসিগের কাছে ৪-৩ গোলে হারে তার দল। পরের বছর কপাল পোড়ে ক্রিস্তোফার এনকুঙ্কুর। ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ক্লাব ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম হ্যাটট্রিক পেলেও লাইপসিগ ম্যাচটি হারে ৬-৩ ব্যবধানে। এ মৌসুমে সেইসব অভাগাদের দলে নাম লেখালেন পাভলিদিস।
ম্যাচ হারলেও গতরাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসের তৃতীয় দ্রুততম হ্যাটট্রিক (৩০ মিনিট) করেছেন এই গ্রিক ফরোয়ার্ড। এই তালিকায়ও শীর্ষে রয়েছেন লেভানডোভস্কি। ২০২২ সালে রেডবুল জালৎসবুর্গের বিপক্ষে ৭-১ গোলে বায়ার্নের জয়ের ম্যাচে মাত্র ২৩ মিনিটে হ্যাটট্রিক করেন এই স্ট্রাইকার। এছাড়া ১৯৯৬ সালে এসি মিলানের হয়ে ২৪ মিনিটে নরওয়ের ক্লাব রোজেনবর্গের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ইতালিয়ান স্ট্রাইকার মার্কো সিমোনে।
আরও পড়ুন: ধ্রুপদী ফুটবলের রাতে গৌরবময় সময়ে ফেরার ইঙ্গিত বার্সেলোনার
চার গোল হজম করেও ইউরোপের এই এলিট লিগের ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় দল হিসেবে গতরাতে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়েছে বার্সেলোনা। এর আগে ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে টটেনহ্যামকে একই স্কোরলাইনে হারিয়ে রেকর্ড গড়ে আর্সেনাল।
তবে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই প্রথম কোনো ম্যাচ জিতল বার্সেলোনা।
এছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রে (অন্তত ১০ ম্যাচ) এখন সবার উপরে হান্সি ফ্লিক। বায়ার্ন মিউনিখ ও বার্সেলোনা মিলিয়ে ২৪ ম্যাচ খেলেছে তার দল, যার ২১টিই জিতেছেন তিনি; এছাড়া ড্র করেছেন একটি ও হেরেছেন মাত্র দুটি ম্যাচ। সব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এখন পর্যন্ত ৮৮ শতাংশ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড এই জার্মান কোচের।
৫৮ দিন আগে
ভাগ্যের পালাবদলের রাতে ৯ গোলের থ্রিলারে শেষ হাসি বার্সেলোনার
খ্যাতিমান কোনো নাট্যকার বা সিনেমার গল্পলেখককেও যেন হারিয়ে দিল বেনফিকা-বার্সেলোনা ম্যাচ। একের পর এক দৃশ্যপট পরিবর্তন, বারবার ভাগ্যদেবীর রসিকতা, ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর জানুয়ারির শীতে বৃষ্টির হানা, ব্যবধান কমিয়ে ফের ২ গোলে পিছিয়ে পড়া এবং একেবারে শেষ মুহূর্তে হারতে গিয়েও অকল্পনীয়ভাবে জিতে যাওয়া— বিশ্বের দুর্দান্ত সব থ্রিলার গল্পের চেয়ে কোনো অংশেই কম কিছু ছিল না। এসবের জেরে পুরোটা সময় আনন্দে টইটম্বুর থেকে ম্যাচশেষে গোমড়া মুখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বেনফিকার সমর্থকদের। ‘অবিচার করা হয়েছে’ ভেবে রাতের ঘুম তাদের হবে কি না, বলা মুশকিল।
পর্তুগালের দা লুস স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সপ্তম রাউন্ডের ম্যাচে স্বাগতিকদের ৫-৪ গোলে হারিয়েছে বার্সেলোনা।
এর ফলে সাত ম্যাচে ৬ জয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই টেবিলের চূড়ায় থাকা লিভারপুলের সঙ্গে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।
ভানগেলিস পাভলিদিসের প্রথমার্ধের হ্যাটট্রিকের পর দ্বিতীয়ার্ধে রোনালদ আরাউহোর আত্মঘাতী গোল, সব মিলিয়ে চার গোল করে বেনফিকা। অপরদিকে, দুই অর্ধে পেনাল্টি থেকে দুই গোল করেন রবের্ট লেভানডোভস্কি এবং এরিক গার্সিয়ার একটি ও রাফিনিয়ার জোড়া গোলে জয় নিশ্চিত করে বার্সেলোনা।
এদিন খেলা শুরুর পরপরই বেনফিকার দুর্দান্ত একটি আক্রমণে গোল খেয়ে বসে বার্সেলোনা। দ্বিতীয় মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে সতীর্থের কাছ থেকে আসা উড়ন্ত পাস ধরে বাঁ পাশ দিয়ে এগিয়ে গিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে ক্রস দেন আলভারো কারেরাস। অসাধারণ ভলিতে প্রথম স্পর্শেই তা থেকে সমর্থকদের উল্লাসের উপলক্ষ এনে দেন পাভলিদিস।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয়ার্ধের চরম নাটকীয়তা শেষে ডর্টমুন্ড বধ বার্সেলোনার
গোল খাওয়ার পর আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা শুরু করে বার্সেলোনা, অপরদিকে বেনফিকাও সফরকারীদের ছেড়ে কথা বলার মনোভাব দেখায় না। ফলে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে উত্তেজনার পারদ চড়ে খেলায়।
এরই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের ত্রয়োদশ মিনিটে পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলে সমতায় ফেরে কাতালান জায়ান্টরা। বেনফিকার বক্সের মধ্যে বল নিয়ে ঢোকার পর আলেহান্দ্রো বালদের শট প্রতিহত করতে গিয়ে তার পায়ে পাড়া দিয়ে বসেন দলটির পর্তুগিজ ডিফেন্ডার তমাস আরাউহো।
শুরুতে বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা আবেদন করেনি, রেফারিও গুরুত্ব দেনটি বিষয়টিতে। তবে কিছুক্ষণ পর ভিএআর বক্স থেকে রেফারিকে রিভিউ দেখার কথা জানানো হয়। এরপর টাচলাইন মনিটর থেকে রিভিউ দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি, আর নিখুঁত স্পট কিকে দলকে সমতায় ফেরান লেভানডোভস্কি।
৫৯ দিন আগে