রুশ-মার্কিন বৈঠক
যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই কী ইউক্রেন জয়ের পথে রাশিয়া?
হয়ত এই মুহূর্তটির জন্যই অপেক্ষা করছিল রাশিয়া! ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় বসতে রাজি তিনি।’ যার সূত্র ধরে দুই প্রেসিডেন্টের দীর্ঘ ফোনালাপ এবং অবশেষে সৌদি আরবের রিয়াদে উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।
২০২২ সালে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রায় হাজারখানেক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও টলানো যায়নি যে পুতিনকে, সেই তিনি কেন হঠাৎ সমাধান চাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে?
এই প্রশ্নের সহজ উত্তর মিলবে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার চিত্র থেকে।
ইউক্রেন আক্রমণের পর এই প্রথম রাশিয়ার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা। যে ইউক্রেনকে ঘিরে এতকিছু তাকেই রাখা হয়েছে আলোচনার টেবিলের বাইরে। আর যেখানে ইউরোপের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা সেই ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি ট্রাম্প প্রশাসন।
আরও পড়ুন: রুশ-মার্কিন বৈঠক: যুদ্ধ বন্ধ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্ব
যুদ্ধ চলছে ইউরোপে, বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত কিয়েভ- কিন্তু আলোচনার টেবিলে মুখ্য বিষয় ছিল রাশিয়াকে সর্বোচ্চ লাভ নিশ্চিত করে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং চলমান সব নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে রুশ-আমেরিকান বাণিজ্যকে আবারও বিস্তৃত করা।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ (এপি) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভের নেতৃত্বে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। ট্রাম্প-পুতিনের দীর্ঘ ফোনালাপের পর যত দ্রুত সম্ভব এবার দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মুখোমুখি বৈঠকের ব্যবস্থার ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে দুই পক্ষ থেকেই।
চার ঘণ্টার আলোচনা শেষে মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, শুধু রাজনৈতিক না, রাশিয়ার সঙ্গে সমাধান করা হবে সব ধরনের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন। অন্যদিকে সেরগেই লাভরভ বেশ খোশ মেজাজে বলেছেন, এতদিন পর রাশিয়ার দিকটাও বুঝতে পারছে যুক্তরাষ্ট্র।
দুপক্ষের বার্তা থেকে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিজয়ের প্রথম স্বীকৃতি হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই আসতে চলেছে।’
বাইডেন আমলে রাশিয়ার ওপর যুদ্ধাপরাধের দায় চাপানো, পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি; সব ছাপিয়ে ট্রাম্প চাচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে নিরঙ্কুশ সুসম্পর্ক। এতদিন মার্কিনিরা ইউক্রেনকে দেদারসে অস্ত্র দিয়ে আসলেও এবার অন্য নীতি নিবে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় বড় আমেরিকান কোম্পানি রাশিয়া ছাড়ায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট খাতে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে মরিয়া ট্রাম্প প্রশাসন।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ বন্ধে ‘কার্যকর আলোচনায়’ থাকবে ইউক্রেন ও ইউরোপীয়রা
এদিকে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উদ্ভ্রান্ত দশা। রিয়াদের আলোচনায় রুশদের সঙ্গে এক টেবিলে বসতে না পারায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন তিনি। তিনি জানান, নিজেরা নিজেরা আলোচনা করে ইউক্রেনের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
যুদ্ধ বন্ধে তিন ধাপে কাজ করবে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রথমটিই হচ্ছে মস্কো এবং ওয়াশিংটনের সম্পর্ক উন্নয়ন। মার্কো রুবিও জানান, মস্কোর ওপর সব ধরনের অযাচিত চাপ প্রত্যাহার করা হবে। বিনিময়ে ওয়াশিংটনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবে পুতিন সরকার।
রুবিও বলেন, যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেন-ইউরোপের সঙ্গে আলোচনা হবে। তবে রাশিয়া এগিয়ে না এলে কোনোদিনও এ যুদ্ধ বন্ধ সম্ভব না। তাই রাশিয়ার দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়াকেই যথোপযুক্ত মনে করছে ট্রাম্প সরকার।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে যা কিছু করা দরকার; সবকিছুই করা হবে বলে জানান এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ব্যবসায়িক সুসম্পর্কের ব্যাপারে বৈঠক শেষে রুশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিরিল দিমিত্রিভ বলেন, ‘কোনো কাটখোট্টা আলোচনা হয়নি। দুপক্ষই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন সময় ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক এবং বিশ্বাসের পুনঃনির্মাণের।'
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জেলেনস্কির পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে বেশ মজার ছলে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলেনস্কি ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন- এত এত সংগ্রামের পর শেষমেশ আমেরিকার বলির পাঁঠা হতে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষত এতদিনের বড় ভরসা যুক্তরাষ্ট্রই এবার পিঠ দেখাচ্ছে ইউক্রেনকে।
এর বাইরে ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার খায়েসে ইউরোপের বাগড়া দেওয়া এবং ন্যাটো নিয়ে ঝামেলার ঝাল পুরোটাই তুলল যুক্তরাষ্ট্র। সৌদিকে কেন্দ্রে রেখে ইউরোপকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ায় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এক রকমের হতবাকই হয়েছে।
৩৮ দিন আগে
রুশ-মার্কিন বৈঠক: যুদ্ধ বন্ধ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্ব
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ও রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেছেন দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে এই বৈঠক। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সৌদির দিরিয়াহ প্রাসাদে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
দ্বিপাক্ষিক এই বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ বাদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে দেশদুটিতে; সেখানে আসতে পারে পরিবর্তন। তাছাড়া এই আলোচনা ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সাক্ষাতের পথও সুগম করবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
রিয়াদে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটির আয়োজন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব। তবে মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই বৈঠকে ইউক্রেন বা ইউরোপের কোনো দেশের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ইউরোপীয় নেতাদের কপালে।
বৈঠকের পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘এই আলোচনাকে তারা রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সূচনা হিসেবে দেখছেন।’ আলোচনার অগ্রগতি হলে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক আয়োজিত হবে বলে জানান তিনি।
ওয়াশিংটনের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, মঙ্গলবারে বৈঠক সমঝোতা আলোচনা শুরু করার জন্য নয়; বরং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে রাশিয়া ‘আন্তরিক’ কি না, সেটা বোঝার জন্য আয়োজন করা হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন ও মস্কোতে দূতাবাসকর্মীদের ফিরিয়ে সেগুলো সচল করার বিষয়ে একমত হয়েছে দেশ দুটি। পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো দুই পক্ষ খতিয়ে দেখবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় নেই ইউক্রেন
অন্যদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব দেশ দুটিতে অবস্থিত নিজেদের দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেবেন তারা। দূতাবাসগুলোতে ব্যাংক লেনদেন বাধা অপসারণসহ কূটনৈতিক মিশনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে।
এর আগে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সৌদি বৈঠকে কিয়েভকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের এই আলোচনায় খোদ ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ না জানানোতে উদ্বেগ প্রকাশ করে কিয়েভ। তিনি বলেন, ইউক্রেনকে ছাড়া আয়োজিত বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করতে একমত হওয়ার কথা জানায় ট্রাম্প। তাদের মধ্যে ফোনালাপের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়।
ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপে ইউরোপীয় দেশগুলো আশঙ্কা করেছে, তাদের বাদ দিয়েই হয়তো এমন একটি শান্তি চুক্তি হতে যাচ্ছে, যা তাদের নিজেদের নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলবে। বিশেষত সেটি যদি রাশিয়ার অনুকূলে হয়।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ বন্ধে ‘কার্যকর আলোচনায়’ থাকবে ইউক্রেন ও ইউরোপীয়রা
তবে তাদের এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, সৌদিতে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার কেবল সূত্রপাত হতে যাচ্ছে। অগ্রগতি হলে অবশ্যই ইউক্রেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হবে।
রুবিও সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেছেন মুখপাত্র ব্রুস। তিনি নিশ্চিত করেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার শুরু হয়েছে কেবল। ক্রমান্বয়ে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবে ওয়াশিংটন।
৩৮ দিন আগে